যেসকল সময়ে মনে হয় আত্নহনন ভীষন অযৌক্তিক

এখন সময় খুব প্যাচানো জালের মত মুক্তিচেতনাহীন।তাই বিভিন্ন আটকানো নি:শ্বাসে বাতাস ভারী,অসুস্থ।মনে হয় থ্রেশহোল্ড পেরিয়ে গেছি,ভেঙ্গে যাবো যে কোনোও সময়ে কেবল অপেক্ষায় আছ কখন ভাঙ্গবো।

আত্নহননে উত্সাহী মানুষরা সবসময়েই আত্নহননের সিদ্ধান্ত নেবার পর খুব আয়েশী হয়ে যায়।আত্নহননের কোনও চিন্তা মাথায় না আসলেও অস্তিত্বের প্রশ্ন (কেন দাড়িয়ে আছি বা কেনই দাড়িয়ে থাকব!)সব গুলো ধমনীর কপাটিকাতে আছড়ে পরে নিরন্তর জলোচ্ছাসের শক্তিতে,ক্রোধে।তাই মুখ লুকোতে হয় বালিশে অথবা প্রিয়ার কাম্য বুকে যদি কিছুটাও আলো আস্বাদনের সুযোগ ঘটে।

এইসব আকাশপাতাল বিভ্রান্তিকর চিন্তা করে আমি ভাঙ্গা,ফাটা,বিবর্ন ফুটপাথ দিয়ে হাটছিলাম।হাটার কোনোও কারন নেই কারন গন্তব্য হীন আমি।একটা রিকশা নেব কি না ভাবছিলাম।দুর্দান্ত ঠান্ডা পড়েছে।আমার শীতের বোধ খুবই কম হওয়া সত্বেও(জবরজং vegitable দের যা হয়!)অস্থিমজ্জার ছন্দিত স্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলাম।সময়টা সন্ধ্যা।ফুটপাথে ভাপাপিঠার ভাপে একরকম আনন্দের গন্ধ।চিতই পিঠার সাথে আগ্নেয় ভর্তা।সামনেই একজোড়া(মানুষতো অবশ্যই,অথবা দেখায় মানবিক আকৃতির মতই,যে হারে অমানুষ উত্পাদন জরায়ু কারখানায় বাড়ছে,তাতে সাবধানতাই মূলমন্ত্র)ছেলেমানুষ আর মেয়েমানুষ চিতই পিঠার গোফদাড়িওয়ালা মামার নিকটে ক্রমাগত শীতের আইকন পিঠা সাটাচ্ছে।ঝালে ছেলেমানুষটার তেমন কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না,কিন্তু মোটামুটি আকর্ষনীয় যৌবনজনিত খাজভাজ সম্মৃদ্ধ মেয়েমানুষটার অবস্থা তথৈবচ।চোখ থেকে কয়েকফোটা শোকতাপ হীন অশ্রু মুছে দিচ্ছে মুখের মেকআপস্তুপ।আমি ভাবলাম নীলাভ কষ্টক্ষরণের কি নিদারুন অপচয়।কাদতে ভুলে গেছি কতকাল হল!মেয়েমানুষটার নীচের ঠোট যথেষ্ট আবেদনময়ী,কিন্তু সেটা তো ঐ পাহাড়ী গোত্রভুক্ত ছাগলের বংশধর ছেলেটা ,ফরাসী দাড়িওয়ালা,ঝালে কাবু না হওয়া ছেলেটার সম্পত্তি।(ছেলেটার সম্পত্তি!কি ভীষন পুরুষতান্ত্রিক বোধ!আমি নিজের মাঝে,মস্তিস্কের অন্ধ গলিতে লুকিয়ে থাকা পশ্চাতপদ রাক্ষসটাকে একটা জঘন্য গালি দিলাম)
ছেলেটার বিবর্তনজনিত পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কারন মেয়েমানুষটাকে পছন্দ হয়েছে,তাই ছেলেটাকে কতটুকু নিজের অহংবোধের দশটনী ট্রাকের নীচে ফেলে চিড়ে চ্যাপ্টা,থ্যাতলানো করা যায় সেটাই এখানে প্রাধান্য পাবে।আমিই যোগ্য পুরুষ!!

পাশে দাড়িয়ে পিঠা খাবার ছলে মেয়েমানুষটাকে আরেকটু দেখব কি না ভাবছিলাম।ঠিক তখনই ঐ মিসম্যাচজুটি(আমার মতানুসারে) পিঠাখাওয়ার রণে ভঙ্গ দিলো।একটা রিকশা ডাকলো।ছেলেটা ডানপাশে বসলো,মেয়েটা বাম পাশে।ছেলেটা মেয়েটার হাত নিজের হাতে গুজে রাখলো,চোখে চোখ রাখলো আর রিকশার হুড তুলে দিয়ে কিছু তথাকথিত প্রাইভেসীর ব্যবস্থা করলো।

আর আমি কেনো আত্নহত্যা অযৈক্তিক তার পক্ষে কিছু শক্তিশালী যুক্তি মাথার মাঝে অন্ধ ভিখারীর মত হাতড়াতে লাগলাম।

২,২৬২ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “যেসকল সময়ে মনে হয় আত্নহনন ভীষন অযৌক্তিক”

  1. সাব্বির (৯৮-০৪)

    তোমার লেখার স্টাইল বেশ ভালো এবং আমি বলবো সময়ের তুলনায় অনেক ভালো । সমস্যা হচ্ছে লেখনী দিয়ে বিলাই বাঘ বানাইতে পারবা না। তোমার ভালো লেখাগুলা কোথায় রাখো? লিঙ্ক দাও।

    জবাব দিন
    • হোসেন (৯৯-০৫)

      আমার গদ্য লেখায় বড় একটা সমস্যা আছে। আমি কাহিনী বানাইতে পারি না। মানিকের ছোটগল্প পইড়া হা হুতাশ করি। সেদিন জ্যাক লন্ডনের "এক টুকরা মাংস" পইড়া বসেরে সম্মান দেখানোর জন্যে বসা থাইকা দাড়াইয়া গেছিলাম। আমি ক্যান জানি প্লট পাইনা। তাই নিজেরে লইয়াই লেখি। কে যেন কইছিল সব মাইনষের সব লেখাই আত্নজৈবনিক। ঐ কথাটা খুব হাইপোথেটিক্যাল। আমার জন্যে কথাটা আক্ষরিক ভাবে সত্য।


      ------------------------------------------------------------------
      কামলা খেটে যাই

      জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    আত্নহননে উত্সাহী মানুষরা সবসময়েই আত্নহননের সিদ্ধান্ত নেবার পর খুব আয়েশী হয়ে যায়

    😮 😮

    কিভাবে বুঝলা তুমি?

    বিভাগঃ দিনলিপি, মির্জাপুর

    তুমি আমার মাথা আউলায় দিতেছ বারবার? তোমার হইছেটা কি?

    আগে কখনো বলিনাই, আজকে বলি, তোমার বাংলা শব্দ ভান্ডার ঈর্ষনীয়। আর লেখ মাশাল্লাহ, পুরাই ঝাক্কাস। :boss:


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. জিহাদ (৯৯-০৫)

    হোসেন, কলেজ ম্যাগাজিনে প্রসূতি মা আর নিজের মা নিয়ে একটা গল্প দিসিলি। মনে আছে? ঐটা আমার খুউব ভাল লাগসিল। পারলে এখানে তুলে দিস।

    আর তোর দিনলিপি নিয়া কিছু বলবোনা। ভাবসাব দেখে মনে হইতেসে সবকিছুর পরও সুখেই আছিস 🙂


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  4. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    একটা বিশাল রিপ্লাই লিখেছিলাম তোমার এই পোস্টের জন্য, পোস্ট করতে পাওলামনা নিজের দোষেই, আবার লেখার এনার্জিও পাচ্ছি না। তোমার পরবর্তী পোস্টে লিখব আশা করি।

    জবাব দিন
  5. সামি হক (৯০-৯৬)

    সাবলীল লিখা, ভাই তোমার গল্প লিখার অসাধারণ ক্ষমতা আছে। ফয়েজ ভাই যেমন বলেছে তোমার শব্দভান্ডার অনেক বিশাল আমি ও তাই বলব, সবচেয়ে বড় কথা তুমি জানো কিভাবে তা ব্যবহার করতে হয় অনেকে তা পারে না।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হোসেন (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।