দ্যা গ্রেট এস্কেপ

মৌমাছির গুঞ্জন শুনে চোখ খুলব, কিন্তু সাবধান হবার আগেই বিষাক্ত হুলে প্রাণ ওষ্ঠাগত। ব্যাথা পেতে হয় এই সব ক্ষেত্রে। মজা হচ্ছে এই ব্যাথার ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোটা যৌক্তিক আবার অযৌক্তিক। যৌক্তিকতা আসে ব্যাথার তীব্রতা আর জ্বর চলে আসার বিরক্তিকর আশংকা থেকে। অযৌক্তিক কারন সম্ভাব্যতার পরিমান ক্ষুদ্র। জানি শুন্যের মুখোমুখি হলে যাতনা কত, কিভাবে চার হাত পা ছুড়ে দিয়ে অসহায়ের মত ছেড়ে দিতে নিজেকে অসীমতটীয় চিন্তায়। তাই বলে কি মোকাবেলা করব না অভ্যন্তরীন প্রশ্ন সমূহের?
সামনে দাড়াতে কষ্ট হয় বেশ, নিরাপদ আয়েশ আবেশ উল্টে পালটে ফ্র্যাক্টাল জ্যামিতি হয়ে যায়।

এখন কি ভাবছি আমি এই খুব বেশী সাধারন সময়ে। আমি অনেক ভাবি,মস্তিস্ক আমার কাছে একরকম স্নায়ু উদ্দীপক মাদকের মত যাতে ঘন্টার পর ঘন্টা আমিডুবে থাকতে পারি,নিজস্ব মনবিশ্বে ক্লান্তিহীন বিচরন!ভীষন এলোমেলো লাগে কারন ঠিক কি যে গুছিয়ে নিব জানি না।
খুব ক্লান্ত লাগছে ,না কোনো হতাশাবাদী এরিস্ট্রোকেটিক ভাবের ভার্চুয়াল ক্লান্তি নয়,শারারীক ক্লান্তি।
আবজাব চিন্তাগুলোকে পাত্তা দিতে একদম ইছা করে না,

অনেক রাত এখন।চিরচারিত নিউজপ্রিন্ট আর বল পয়েন্টের নিষিদ্ধ মাখামাখি ছেড়ে ছাপোষা অতি ফিফা খেলা হেতু ‘w’ ’a’ ’s’ ’d’ মুছে যাওয়া কীবোর্ডে হাত পিশছি অনবরত।সামান্য কিছু বিক্ষিপ্ত আলোর ঘোলাটে অনুপ্রবেশ কাস্টায়রনের জানালার গ্রীলের ফোকর গলে; একটা বিশাল, টবের সাথে বেমানান, গাছের পাতা স্ক্রীনের ডানদিকে জিভ বের করে বামহাত ঢোকাচ্ছে চিন্তাসুত্রের এলোমেলো ডিজাইনএর সর্পিল গোলকধাধায়। মায়ের আইডিয়া,চোখের কাছাকাছি সবুজ থাকলে চোখের দার্শনিক উন্নতি হবে!হায়রে কতবার অন্ধ হয়ে যেতে ইচ্ছে করেছে আমার,এত দৃশ্য সকাল থেকে সন্ধ্যা চোখের অস্তিত্ব কে নিদারুন উপহাসে হাস্যকর করে তোলে!

কি লিখব?

মুখোশ এটে রাস্তায় এলোমেলো হাটল রাজকুমার, একবার দাড়াল দুই টাকার চানাচুরওয়ালার কাছে, একবার কাকলীর ওভারব্রীজের পাশে সাড়িবেধে দাঁড়ানো ফেরিওয়ালা আর নগ্ন পাগলটার কাছে,একবার স্লীভলেস তরুনীর কড়া প্যারিস ফ্রাগ্রেন্সের ব্যাসার্ধের মাঝে আর দেড়কোটি দীর্ঘশ্বাসের সুবিশাল চৌড়াস্তার বিস্তীর্ন । তার চোখ খুলে আসে না আভিজাত্য থেকে। সে তাকায়, দেখে না। ডুবে যেতে দেখেনা একটি জনপদ কিভাবে বিবর্তনের উলটোপথে হাটছে, কিভাবে কর্পোরেট প্রভুরা পাতে অন্ন গেজিয়ে সস্তা মদ তৈরী করে নিরন্ন মানুষটার কাছেই বিক্রি করছে।রাজকুমার ভোজবাজীর মত উবে যায় ক্ষীণতর হৃদস্পন্দনের অর্কেষ্টায় ঢাকা চৌরঙ্গীর মাঝ থেকে।

নাহ রাজকুমার দরকার নেই, দীর্ঘশ্বাসের জয় হোক। এবার পালাব আমি, পালাব এলোমেলো থেকে…………………………

আমি সদর দরজা পেড়িয়ে নোংরা গলিতে হোচট খেলাম
নিঃশ্বাস চেপে আকুলিবিকুলি খাবি খাওয়া ফুসফুসে পাম্প করে
সজোরে প্রবেশ করলাম সীসা মেশানো বিষবাষ্প আজলা ভরে,
শহরের ব্রাত্য সৌরভ পাশ কাটিয়ে গলির আবাসিক খুপড়ি
সারির আকরিক অশুদ্ধির জানালাগুলির
ওপাশ হতে ভেসে আসা নাগরিক দ্ব্যার্থতার হুংকার কানে মেখে
আবিস্কৃত হলাম রাজপথে
পেড়িয়ে গেলাম পার্ক রেস্তোরার অজস্র কপোত কপোতী মুখোশের
ফাঁপা প্রেমাতুরতার হাস্যকর যাত্রাপালার ট্রাম্পেট মিঊজিককে
রাস্তায় রাস্তায় বাড়ানো শূন্যপাকস্থলীর হাতের বিপরীতে মনুষ্য
সফিস্টিকেশনের বমনার্ত অহংকারের পাশ দিয়ে দৌড়ের সময়
সারা অভ্যন্তর হতে অপমানবীয় আশীর্বাদ শুনলাম প্রত্যাদেশের মত

হাঁপড়ের মত হাপাতে ভাগ্যাহত হতে পাশ কাটালাম সত্যভাষনের
সৌর রোদের সামনে জমা ঘন কৃষ্ণাভ বর্ষণমেঘের আহত মিছিল
সদ্যজাতের পাশে দানব পৃথিবীকে রেখে দৌড়াতে থাকলাম
ফুটপাথের বাস্তবতার মাঝখান দিয়ে
প্রতিবেশে অনেক বিষ ,বিষক্ষয়ের আশায় প্রতিবেশের গাঢ়
বুনোটে দ্রবীভূত হবার আশায় দৌড়ালাম
জীবন্মৃতের ডিকম্পোজড মাংসের মত খসে যাক কবিতারা
শুকিয়ে যাক দারফুরের অনাহারের মত

দৌড়াচ্ছি পথে মিশে যাচ্ছি জৈবনিক কোলাহলে
অসীম উতকেন্দ্রিকতার উপবৃত্তীয় পরিসীমায়;
তোমার বুকে জন্মানো কবিতার কাছ থেকে ।

২,৩২৭ বার দেখা হয়েছে

২৭ টি মন্তব্য : “দ্যা গ্রেট এস্কেপ”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ছোটা আন্দালিব 😀

    কিছু মনে করিস না। তোর কবিতা পুরাপুরি বুঝতে আমার আরো দুইবার জন্মগ্রহণ করতে হইবো । 🙁

    অসীমতটীয়

    এইটা শব্দটা কি তোর ফ্যাক্টরীতে তৈরী নাকি? :dreamy:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সামান্য কিছু বিক্ষিপ্ত আলোর ঘোলাটে অনুপ্রবেশ কাস্টায়রনের জানালার গ্রীলের ফোকর গলে; একটা বিশাল, টবের সাথে বেমানান, গাছের পাতা স্ক্রীনের ডানদিকে জিভ বের করে বামহাত ঢোকাচ্ছে চিন্তাসুত্রের এলোমেলো ডিজাইনএর সর্পিল গোলকধাধায়।

    বাপ্রে :boss: :thumbup:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    এরকম এক একটি লেখা
    আমাকে শুধু হতচকিত মুগ্ধতাই দ্যায়না,
    আরো একটি, হয়তো বা এমনই,
    কবিতা লিখে ফেলার দুর্লঙ্ঘ্য উদ্দীপনায় মাতায়.....

    সাধুবাদ জানাচ্ছি সর্বান্তকরণে....

    জবাব দিন
  4. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    বেশ সুন্দর লিখেছ হোসেন। টি এস এলিয়টের দ্য লাভসং অফ জেই আলফ্রেড প্রুফ্রকের কথা মনে করইয়ে দেয়, বা জীবনানন্দের "হাইড্র্যান্ট খুলে নিয়ে কুষ্ঠরোগী চেটে নেয় জল" কবিতাটা। প্রুফ্রকটা পড়ে ফেলতে পার, বেশ মজাদার। এখানে পাবে, http://www.bartleby.com/198/1.html এটা পড়ে মজা পেলে পড়ে ফেলতে পার হলোম্যান। http://aduni.org/~heather/occs/honors/Poem.htm

    জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    জটিলস্য জটিল......।। :boss:

    কিন্তু এত হতাশা কেন আসল বুঝলাম না, এটা কি বয়স জনিত কোন ব্যাপার নাকি কোন ঘটনা এর পিছনে......।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আদনান (১৯৯৪-২০০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।