গল্প:ক্ষয়

(লোকালটকের একটি নিক নার্ভাস নাইন্টিজ এর ব্লগ টাইটেল দেখে গল্পটির প্লট আমার মাথায় আসে। তাই লেখাটা লোকালটক ওরফে ফিউশন ফাইভকে উৎসর্গ করলাম)

শাহবাগের মোড়ের আলম ভাইয়ের মুড়ি ভর্তা খেতে গিয়ে মরিচ চিবিয়ে ফেলল রফিক। ঝালে মুখে দাউদাউ করে জ্বলা আগুন আর চোখ দিয়ে নামা ফসফরাস মেশানো পানির দ্বিমুখী আক্রমনে দিশেহারা হয়ে রফিক এদিক ওদিক তাকালো। ফজলে নুর তাপসের চাদখানা মুখ দেখতে পেল। ইদানিংকার সুপারস্টার তাপসের চেহারা আগে কখোনো খেয়াল করে নাই। ইদানিং অবশ্য তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। বোমা হামলায় গাজী হয়ে যে স্ট্যাটাস তিনি পাচ্ছেন শহীদ হলে তাকে নিয়ে উন্মত্তার পরিমান কল্পনা করেই রফিকের গা শিউড়ে উঠল। ক্ষুদ্রতম আওয়ামী সংগঠনও রঙ্গীণ পোস্টার ছাপাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি নিয়ে বিশ্বব্যংকের দাড়ে দাড়ে ভিক্ষা করা বাংলাদেশে হঠাৎ এত কালার প্রিন্টারের কালি কোন মহত্তর দেশসেবকের পশ্চাৎদেশ দিয়ে বের হল সেটা নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি করা দরকার। বাসে উঠার জন্য মোড় পেরোতেই প্রস্রাবে ভেসে যাওয়া ফুটপাথ দেখে রফিকের ভীষণ পেচ্ছাপ পেয়ে গেল। যদিও প্রতিদিন এই নোংরামোর পাশ দিয়ে হেটে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের কেন উন্নতি হয় না তার মুলসুত্র আবিষ্কার করে রফিক ইউরেকা ইউরেকা বলে ফেলেছিল। আজকে অবশ্য তার আদর্শগত অবস্থানকে ন্যাংটো করে রফিক দেয়ালের পাশে দাড়িয়ে পরল। পেচ্ছাপ দেয়ালে ছিটকে যে বিমূর্ত ছবি তৈরী করেছে রফিকের শিল্পী স্বত্তা তার প্রশংসা না করে পারল না। সে কিছুটা কসরৎ করে এই ক্ষণস্থায়ী শিল্পের উন্নতির ইচ্ছায় আশেপাশের দেয়ালেও আরেকটু পেচ্ছাপ পেইন্ট ব্রাশের ছিটের মত ছড়িয়ে দিল। ঘন ফেনিল পেচ্ছাপের জোয়ার ফুটপাথ পেড়িয়ে রাস্তা দখলের মিছিলের চেষ্টা করল যদিও মানুষের অভ্যন্তরের আবর্জনার তুলনায় কমই মুতে থাকে ফলে এ যাত্রা রাস্তাটি বেচে গেল পেচ্ছাপের শ্রেনী সংগ্রামের হাত থেকে।

মানুষে গাদাগাদি বাসে উঠে তীব্র অস্বস্তি ধামা চাপা দিল সে পাশে গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকা ললনার উপস্থিতির সুখে। যদিও ললনার চেহারা দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু তার সুডৌল নিতম্বটি তার হাতের কার্যকর ব্যাসার্ধের মাঝেই আছে। ছোট কামিজ ভীড়ে অনেক খানি উঠে গিয়ে আটোসাটো সালোয়াড়ে নিতম্বের নকশাটা উপভোগ্য। নিখুঁত গড়নের নিতম্বের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে তার স্পর্শে হাতটা ডুবানোর জন্যে হাতের পেশী গুলো বিদ্রোহ করে উঠল। সেই স্পর্শের ইচ্ছা ক্রমেই চলমান নৌকা হতে জলস্পর্শের মত কোমল থেকে ভেঙ্গেচুড়ে একাকার করে দেবার মত তীব্র হল। কিন্তু নিজেকে শেষমুহুর্তে লাগাম লাগানোর জন্যে সরে গিয়ে দাড়াল। আগুন কে নেভানোর চেয়ে পালানো সহজতর। নিতম্ব হতে চোখ সড়িয়ে নিয়ে আশেপাশে চোখ দিতেই চোখে পড়ল অসংখ্য দর্শক, যারা চোখে মুখে কামনার প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে কলিসিয়ামের দর্শক হয়েছে, রক্তের ঘ্রাণ, রক্তের তেষ্টা। রফিকের মন ঘৃণায় রি রি করে উঠল আশেপাশের মানুষদের প্রতি। নিজের দৃষ্টি সে গর্বিতভাবে অন্যদিকে ফেরাল।

বাস জ্যামে আটকে আছে অনেকক্ষণ। পাশে থেমে আছে একটা সি এন জি। তার মাঝে কপোতীর ঠোটের রস খেতে ব্যস্ত জনৈক কপোত। এতক্ষণের প্ল্যাকার্ড ঝোলানো লোকেরা গভীর আগ্রহে তাকাল সিএনজির ভেতরের প্রেমোদ্যানে। কয়েকজন বাকাঁ হয়ে দেখার চেষ্টা করল ঠোট চোষা ছাড়া আর কোন দৃশ্য তাদের চোখে পরে কি না। যখন ছেলেটির হাত ময়েটির ওড়নার নীচে হারিয়ে গেল তখন লোকগুলোর চোখে চাপা উল্লাস আর সিএনজির দিকে অখন্ড মনোযোগ দিয়ে শুরু করল তরুন সমাজের অবক্ষয় এবং এর সাথে আধুনিক ধর্মহীনতার আলোচনা। সবাই একবাক্যে মেনে নিল কিভাবে রসাতকে যাচ্ছে দেশ।যদিও রফিক দেখল বাস হঠাৎ চলতে শুরু করায় ভারসাম্য হারানোর সুযোগ নিয়ে একটি হাত চলে যাচ্ছে নিতম্বের দিকে, রফিক দেখল কিভাবে হাতটি স্বাদ নিল নিতম্বের জলতরঙ্গের। রফিক আবারও নিজেকে নৈতিকভাবে সুপিরিয়র ভেবে মানুষের ভন্ডামী আর মুখোশ পরার কারন বিশ্লেষণে রত হল। এই দেশে সুযোগে সকল মানুষ করে নেয় চুরি। বাসের ভীড়ে এনোনিমাস স্তন, বা পাছায় দেয়া হাতের অভাব পরে না। সবগুলো ক্ষেত্রে ক্ষুদ্রতম চুরি বা অনৈতিকতায় সবাই সবাইকেই পেছনে ফেলে। দখল ছাড়ে না ন্যুনতম কমিশনের। ব্যক্তিপর্যায়ের সততা শুন্যের কোঠায়। অথচ একটি চুম্বনে তারা সমাজসংস্লারক বনে যায় আর দেশ রসাতলে যাবার ফতোয়া দেয়।রফিক সিদ্ধান্তে পৌছায় অজ্ঞতা আর অন্ধকার মানুষকে চুড়ান্তরুপে অনুভুতিশূন্য করে তুলেছে। তাদের সকল অনুভুতি জমেছে শিশ্নের লাল মাথায়। যৌনতা ছাড়া আর কোন নৈতিকতা তারা ভাবতে পারে না। একটি চুম্বনেই তারা শিশ্ন ঘষে স্থলন ঘটায় সমাজের ভিত্তিমুলের সমস্যার উপাদান গুলো। রফিকের হঠাৎ বমি পেতে থাকে।

বাস থেকে নেমে তার মনে হয় তার কাছে ভাড়া চাওয়া হয় নাই। তবে আবার উঠে ভাড়া দেবার মত নৈতিকতা সে যোগাড় করতে পারে না। রাস্তা দিয়ে অন্যমনস্ক হাটে।

বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই সশব্দে সেলফোনটি চিৎকার চেচামিচি শুরু করে। মিলির ফোন।
“কই তুমি?”
”বাসায় আসছি”
“একটু আসবা? আমি পার্লারে যাব”
“যাও, এককিলোমিটার দুরের পার্লারে নিয়া যাবার জন্যে আমি পাচ কিলোমিটার জার্নি করতে পারব না”
“আমার কোন কাজেই তোমাকে পাওয়া যায় না। জানতাম আসবা না”
“কাজে যদি আসলেই দরকার হত আসতাম”
“কেয়ারশুন্য থকালে আর মুখে দশবার ভালোবাসি বললেই হয় না”
“কেমনে হয়?”
“খালি আমি দেখে এখনও তোমারে রাখছি…………..”
“রেখো না”
মিলি ফোন কেটে দেয়।
রফিক বাথরুমে ঢুকে। হাজার হাজার টাকার রং চামড়ার উপরে ঢালার যৌক্তিকতা সে আজও বুঝতে পরে নাই। এরচেয়ে এক্রেলিক রং পার্মানেন্টলি লাগিয়ে দিলেই হয়, যদি নিজের চামড়া নিয়ে মানুষ এতই ইনসিকিউরিটিতে ভোগে।
রফিক চারদিকে কেবল ক্ষয় দেখতে পায়। ক্ষয়মান স্রোত দানবের মত স্রোতের ফেনায় হাসি দুলিয়ে রফিকের দিকে তেড়ে আসে। রফিক নিজের মাঝে টের পায় সেই ক্ষয়ের ভোতা শব্দ। ক্ষয় আশ্রয় করে পরজীবির মত তার স্বত্বাকে। রফিক নিজেকে আবিষ্কার করে যেখানে তার ছায়াটিও ক্ষয়ে নি:স্ব হয়ে যাচ্ছে। সে একাবোধ করে খুব। ক্ষয়ের সমুদ্রে হাবুডুবু খেয়ে পেটভরে বাতাস খাবার স্নৃতি মনে করার চেষ্টা করে। সুবুজ ঘাসে দৌড়ে দৌড়ে ঘুড়ি ওড়ানোর কথা মনে পরে তার। ঘুড়িগুলো আকাশে দেবদুতের মত উড়ে বেড়াত। আর নীল প্রেক্ষাপটে একেকটা রাজপুত্রের মত গর্বিত দেখাত তাদেরকে। রফিক হাত দিয়ে শিশ্নটা চেপে ধরে। নাড়াচাড়া করে। পাগলের মত একটুকরা বিদ্যুত খুজে বেড়ায়। এই ক্ষয়ের সমুদ্রে নৌকার খোজে দ্রুত নাড়াতে থাকে শিশ্নটা। মনে হয় একটি বাধভাংগা পুলক তাকে দেবে ক্ষয়ের সনুদ্রে একটুকরা প্রতিশ্রুত জমি। অথচ ঘুমানো শিশ্নটা আড়মোড়া ভাঙ্গে না। রফিক আতঙ্কিত চোখে দেখে শ্যামলা অসমান জমিনে বালিশ পেতে অপুষ্ট শিশুর মত শুয়ে আছে তার শিশ্ন।

বাথরুম থেকে বেড়িয়ে রফিক তার সেলফোনে আসা ম্যাসেজ দেখতে পায়।
“বাসায় কেউ নাই। তুমি এখনই আস”

ঝগড়া এবং অন্যান্য ক্ষয়জাত চেতনা তার মনে নতুন সুড়ঙ্গ খোড়ার আগেই জড়িয়ে ধরে সে মিলিকে। মিলির দুইঠোটের ফাকে ঠোট গুজে দিয়ে খোজে ঘাসের উপরে শিশিরের মত কোমল মধু। ধ্বংসচেতনা কেবল সৃষ্টি দিয়েই ঢাকা যায়। মিলির পেলব শরীরে যে কবিতার সৃষ্টি সেখানে ক্ষয়ের কোন প্রবেশাধিকার নেই। সে সৃষ্টি করতে থাকে মিলির শরীরে নানা কবিতার ঝাকঁ। চুমু খেতে খেতে সে জাপটে ধরে মিলির নিতম্ব। তার খাজে খাজে জমা কবিতার সন্ধান করে। নিতম্ব ধরে মিলিকে নিজের দিকে টানে। মিলির শরীর বিজয়ী তীরন্দাজের ধনুকের মত বাকা হয়ে যায়। রফিক খুজতে থাকে তার কবিতা। এতো সৃষ্টির সময়। পৃথিবীতে সকলকিছুকে অস্বীকার করা যায়। সৃষ্টির সময়ে লেজ গুটিয়ে পালায় ক্ষয়রা।
সৃষ্টির আনন্দে ঘুম হতে জেগে উঠে রফিকের শিশ্ন বিদ্রোহী যোদ্ধার মত।

“সামু ব্লগে দেখেছিলাম জনৈক ব্লগার নার্ভাস নাইন্টিজ এর ব্লগ টাইটেল ‘স্বপ্ন সম্ভবা’। এটার মানে কি? মানুষ স্বপ্নকে গর্ভে ধারন করে? মাথায় যেহেতু স্বপ্নের বাস, সেহেতু স্বপ্নসম্ভবা মানুষের মাথা কি বেঢপ বড় হয়ে যায়? মাথার উপরে একটা অপুর্ব নাভী গজায়? হামাগুড়ি দেয় স্বপ্নরা এর ভেতরে? আমাদের রক্ত মাংসে চুষে সে বড় হয়? সদ্যজাতের জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সেটা কি আমরা করি? খেতে দেই স্বপ্নকে? আজ কত মানুষ দখলাম। সবার মাথা স্বাভাবিক। কারও মাথায় দেখি নাই ফুলের মত নাভী। আমার মাথায় হাত দিয়েও কোন নাভী পাই না। সদ্যজাতের অভাব থেকেই কি ক্ষয়? মাথায় নাভীর অনস্তিত্বের জন্যেই এই ক্ষয়ের সমুদ্র? আচ্ছা যখন সন্তানের জন্ম ঘনিয়ে আসে তখন কি যেন একটা নিশানা দেখা যায়… ও হ্যা , ইংরেজী সিনেমায় দেখেছি প্রেগন্যান্টরা জন্মের সুচনার সময় বলে ‘মাই ওয়াটার ব্রোক’। স্বপ্নের জন্মেও কি ভাঙ্গে জল? ”

মিলির খোলা স্তনের ফাকে মাথা রেখে ঘুমানো রফিক হঠাৎ চিৎকার করে উঠে ‘মাই ওয়াটার ব্রোক’

২,৬২০ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “গল্প:ক্ষয়”

  1. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ব্যক্তিপর্যায়ের সততা শুন্যের কোঠায়। অথচ একটি চুম্বনে তারা সমাজসংস্লারক বনে যায় আর দেশ রসাতলে যাবার ফতোয়া দেয় খুব পছন্দ হল কথাগুলো :thumbup: :thumbup:

    জবাব দিন
  2. নাঈম (৯৪-০০)

    হোসেন, চমৎকারভাবে আমাদের সমাজের বেশীর ভাগ মানুষের চরিত্র তুলে ধরেছ। আমাদের ব্যত্তিগত সততা আসলেই শূন্যের কোটায়। আমরা এ গল্পের নায়কের মত অন্যের ক্ষয়টা ভালোই বুঝি এবং নিজের ক্ষয়টা বুঝলেও কিছু করতে পারি না।

    হোসেন, তোমার পরের গল্পে দেখতে চাই কেউ একজন এই ক্ষয়কে জয় করছে। আসলে সমস্যা সবাই ধরতে পারে, কিন্ত কাউ সমাধান দিতে চায় না...(নাকি, কাউ সমাধান চায় না?)।

    সমাজের গোড়াতেই অনেক পরিবর্তন দরকার। আমাদের সমাজপতি বা মিডিয়া যেই পরিবর্তন চায় সেই পরিবর্তন না। আমাদের এই ক্ষয়ের উৎসে গেলেই বুঝা যাবে কি পরিবর্তন করা দরকার।

    যাই হোক, হোসেন অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। বেশ ভালো হাত আছে বুঝা যায়। আরো লেখা আশা করি...পরিবর্তন নিয়ে লেখা।

    জবাব দিন
    • হোসেন (৯৯-০৫)

      আসলে সমাজ পরিবর্তনের উদ্দেশ্য লেখা হয় না। আমার প্রিয় বিষয় আসলে মানব মন। পরিপার্শ্বের বিষয়গুলো এসেছে মনের উপরে কিভাবে চাপ প্রয়োগ করে সেটা দেখানোর জন্যে। মনের এনাটমীটাই প্রধান এখানে। সমাজের স্ট্রাকচার নিয়ে গভীরে যাইনি। বরং মনের উপর তার প্রভাবটাই আমার আলোচনার বিষয় ছিল।

      ধন্যবাদ পড়ার জন্যে।


      ------------------------------------------------------------------
      কামলা খেটে যাই

      জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ভালো লিখেছো। :thumbup:

    প্লটের রূঢ়তা বুঝাতে শব্দ চয়নে মাঝেমাঝে অশ্লীল মনে হয়েছে, তবে আবার এটাও মনে হয়েছে এর দরকার আছে, কিছু কিছু জিনিস রূঢ় ভাবেই ফুটিয়ে তোলা দরকার।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রাজী (১৯৯৯ - ২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।