দিনলিপি – ৪: বমনার্ত সময়ে প্রেম আকড়ে মহাসমুদ্র পথে টিকে থাকা

বাসে করে যাচ্ছিলাম। অচল জনপদ সাঁই সাঁই করে জানালা ছুয়ে পেছনে পরে যায়, আর অস্তগামী অগ্নিকুন্ডটা তার যৌবন অতিক্রান্ত ঠোটপালিশ দেখিয়ে আদায় করতে চায় যেন সামান্য কিছু আকর্ষণ। ডিভানের নরম প্রেক্ষাপট নয়, বলধা গার্ডেনের কাঁটাবসনো ঝোপের পেছনে সামান্য স্থায়িত্বের কিছু অনুভুতিশূন্য শিশ্ন হলেই চলে যাবে তার। এ পৃথিবী হতে উঠেই গেছে ভালোবাসার স্পর্শ, শিঁড়দাড়ায় চুমু কিংবা স্তনের বোঁটায় ফোটা ফুলে অর্ঘ্য ঢালা, কেবল ডটেড কন্ডমে পর্দা করা নপুংসক শিশ্নই যথেষ্ঠ ঐ অস্তগামী সূর্যটার।

আমার গা গুলিয়ে বমি আসে। পেটের জারক রসে সাতঁড়ে বেড়ানো পার্থিব অস্তিত্ব গুলো দেহের মেটাবলিজমে অংশ নিতে অস্বীকার করে। আমি বুঝে পাই না কার এই দোষ। আমি কোষাভ্যন্তর পর্যন্ত চলেছে পচনের মিছিল নাকি জানালার পাশ দিয়ে দৌড়ে বেড়ানো অচল জনপদে লেগেছে মড়কের অশ্বমেধ যজ্ঞ। তবে বমি পায়। খুব বেশী বমি পায়।

বিভিন্ন মিথ্যার পাশাপাশি বসবাস করে আর যাপিত জীবনের অমোঘ ধর্ষনের ঠেলায় নষ্টের ঔরসে গর্ভধারন করে আমার স্বত্তা। আমি ধীরে ধীরে একটি জাতি অথবা একটি পৃথিবীতে নিজস্ব গোলকে আবদ্ধ হতে দেখি। মানুষকে নিস্পৃহ হতে দেখি। ফুটপাথের মলমুত্রে ভাসা বাস্তুহারা শরীর দেখি। আমার হৃদপিন্ড কাঁপে না। আমি এড়িয়ে যাই সযত্নে। দেয়ালে দেয়ালে মতাদর্শিক চিকামারা দেখি। আমি মতাদর্শের বিশাল কৌটার মাঝে অবস্থান করতে দেখি মেগাসিটি ঢাকার সম্পূর্ন পয়:নিস্কাশন ব্যবস্থা। ঘেন্নায় আমার গা গুলিয়ে ওঠে।

আমি আবদ্ধ হই নিজস্ব গোলকে। বিনোদন আর এন্টারটেইনমেন্ট। এন্টারটেইনমেন্ট। মানুষ কাকে ভোলায়? নিজেকে অথবা নিজস্ব অক্ষমতাকে? কুত্তা জাতি হিসেবে কতটুকু অসফল? মাঝে মাঝে ভাবতে বাধ্য হই।

চারদিক থেকে ধেয়ে আসছে সব। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্বব্যাঙ্ক, আইএমএফ, টাল্লো, কনকো ফিলিপস, বসুন্ধরা সিটি, বাকাঁ হয়ে মোটর সাইকেলে ব্যালেন্স রক্ষা করা মেয়ের/ছেলের পশ্চাৎদেশের উর্ধ্বাংশ, পারসোনা, ফারজানা শাকিল, মিলা, ফুয়াদ, ব্রিটনী স্পিয়ার্স, ভায়াগ্রা, সেলফোনের ভিডিওতে গোপনে ধারন করা মেয়ের শীৎকার, কাসেম বিন আবু বকরের ফুটন্ত গোলাপ, খালেদা, হাসিনা, তারেক, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, জগন্নাথ হলের ছাত্রদের দিকে তাক করা রাইফেলের নল, ম্যাকডোনাল্ডস, আমি খেই হারিয়ে ফেলি।

রিকশায় পাশাপাশি বসা অবস্থায় চমকে গিয়ে আমি ও কে জড়িয়ে ধরি। ও লজ্জায় লাল হয়ে আমাকে সরিয়ে দেয়। আমি তবুও ওর স্পর্শের জন্যে ব্যাকুল হয়ে পরি। ওর ঠোটে চেপে ঠোট বসাই। ওকে কাছে টানি। ওর ঘ্রাণ নেই। ওর পালকের মত কোমল শরীরের স্পর্শে শিউড়ে উঠতে চাই। আমার অনেক বমি পায়। চারপাশের ধেয়ে আসা অবয়ব দেখে ভয় পাই। আমি ওর মাঝখানে লুকিয়ে চিরকাল ভালবাসা চুষতে আর চিবুতে চাই। আমি ওর কাছ থেকে সরতে চাই না।

ভালবাসা ছাড়া কোন সত্যকে আবিস্কার করতে ব্যর্থ হই আমি। আর অস্বীকার করি এই ভাগাড়ে অন্যান্য শুভ’র অস্তিত্ব। সকল রং কেবল অস্তগামী সূর্যের মত বিগতযৌবনা বেশ্যা ছাড়া আর কিছু মনে হয় না।

আমি সাঁতড়াতে ভুলে গেছি। অথচ সবাই মিলে আমরা আজ মেগাসিটির পয়:নিষ্কাশন প্রনালী ।

১,১৭৬ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “দিনলিপি – ৪: বমনার্ত সময়ে প্রেম আকড়ে মহাসমুদ্র পথে টিকে থাকা”

  1. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    মানুষ কাকে ভোলায়? নিজেকে অথবা নিজস্ব অক্ষমতাকে? কুত্তা জাতি হিসেবে কতটুকু অসফল? মাঝে মাঝে ভাবতে বাধ্য হই।

    :clap: :thumbup: :thumbup:


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।