দিনলিপি – ২ ঘাস খেয়ে গরু হওয়ার স্বপ্ন

গুজরাতের আগুন নিয়ে শোনা গল্প মাথার চারপাশে শীতলপাটি বসিয়ে আরামে আয়েশে নিদ্রা যায়। রাজার প্রবল শখ শিকারের, দুর্বল হরিণের গায়ে একটা ধনুক বিধিয়ে দেবার আর প্রবাহিত লাল রক্তে সূর্যের প্রতিফলান দেখার। মন্ত্রী মোসাহেবী চালে তেলতেলে মুখে একটা চৈনিক হাসি ফুটিয়ে আশ্বিনের রমন তাড়িত কুত্তার মত জিভ বেড় করে রাজার সামনে পেশ করে তার মেরুদন্ডের ডারউইনী অর্জন। রাজার অন্যমনস্ক জিজ্ঞাসা
“আজ বৃষ্টি হবে?”
রাজার শিকারের ইচ্ছায় পানি ঢেলে দেয়ার ভয়েই হোক আর মাথার উপরে গনগনে মধ্যাহ্নের সূর্যটার জন্যেই হোক মন্ত্রী তড়িৎ জবাব
“না রাজমশাই, আপনাকে দেখলে মেঘ লুকাবে আকাশের কোটরে, আকাশ যে আপনার গুনকীর্তনেই মুখে ফেনা তুলে ফেলছে”
অরণ্যে গহীন বাঁকে একটা গাধা আর তার মালিক ধোপা আনন্দে বগল বাজাতে বাজাতে চলছিল। তাদের নেই কোন সাম্রাজ্যবাদ বা সামন্ততন্তরের নৃতত্বিক পাঠ। রাজার মনে আবার খচখচ। ধোপাকে শুধায়
“আজ বৃষ্টি হবে?”
ধোপা এই বেঢপ ভুঁড়িওয়ালার কোন মহিমা বুঝতে অক্ষম হয়ে এবং তার তার অজ্ঞতার নিশানা পেয়ে কিছুটা খুশি হয়েই জানায়
“আজ অবশ্যই বৃষ্টি হবে”

মহাকাশের উচ্চতম বিন্দুতে বসে ঈশ্বর তার পেয়ারের পৃথিবীর উদ্দেশ্যে কিছু কলকাঠি নাড়লেন। যদিও এই পৃথিবীতে মানুষ যখন ব্যাপক কামড়া কামড়ি করে রীতিমত মাংশাসী বনে যায় তখন তিনি রোমান সম্রাটের মত কলিসিয়ামে বসে মজা দেখেন আর রক্তের হোলিতে উত্তেজনায় তার ঐশ্বরিক জিভ বেড়িয়ে পরে।
বৃষ্টির প্রবল ছাটে যখন রাজকীয় পোষাকগুলো বরবাদ হল তখন রাজা তার টেনিস বলের মত মস্তিস্ক দিয়ে বুঝতে সক্ষম হলেন তার মোসাহেব মন্ত্রী তার জন্যে হেরেমে অনেক নারী জোগাড় করে দিতে পারলেও বুদ্ধিতে ব্যাপক কাঁচা। আর যেহেতু এইসব আগ্নেয় নারীদের তিনি বয়সজনিত কারনে ঠিক সামলাতে পারেন না, তাদের রাগ মোচনের আগেই হুলুস্থুল করে তার স্থলন হয়ে যায়, সেহেতু মন্ত্রীর এই পারদর্শীতা উপেক্ষাই ভালো।
মন্ত্রীত্ব পেয়ে অবশ্য ধোপা পুরোদস্তুর বুরোক্র্যাট বনে যায়, তার পেটে গজায় যমজ সন্তানের গর্ভবতীদের মত ভুড়ি আর জিভটা আশ্বিনের যৌনতাড়নায় কাতড়ানো কুত্তার মত লম্বা। রাজার টেনিস বলে আবারও হালকা আন্দোলন হওয়ায় ধোপা ওরফে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করে
“তুমি কিভাবে বুঝেছিলে সেদিন বৃষ্টি হবে”
অল্প সময়ে অসীম ক্ষুধা সহ আরো অনেক আমলাতান্ত্রিক বৈশিষ্ঠ্য অর্জন করলেও এখনও কিভাবে অন্যের ক্রেডিট নিজে লোভীর মত বাগিয়ে নিতে হয় তা এখনও ধোপা শিখে নাই, তাই তার বেকুবপনার ফলাফল হিসেবে সে সত্য বলে উঠল, যেটা কিনা বুরোক্র্যাসির প্রথম দোষ।
“আমার গাধা আমায় বলেছিল, ও এসব আগেই বোঝে”
রাজার টেনিস বলে ধোপার দরকার ফুরিয়ে গাধার দরকার তৈরী হয়েছে, এই সত্যটা অবিশ্বাস্যভাবেই দ্রুত চলে আসল। ধোপার স্থলাভিষিক্ত হয়ে গাধা তার ভবিষ্যত দেখার দিব্যদৃষ্টি রাজকীয় নীতিনির্ধারনে ব্যবহার করতে লাগল।
খবরে প্রকাশ এভাবে গুজরাতের মন্ত্রীসভা পরিপূর্ন হয়েছিল গাধাতে। তারা গুজরাতের আগুন নেভাতে পারে নি কিন্তু আশ্বাস দিয়েছিল
“বৃষ্টি হবে, বৃষ্টি হবে।”

আজকে আমি অন্ধকার দেখি চারদিক যখন সঙ্গম অতৃপ্ত, আর শান্তিপ্রিয় শিশ্নের অধিকারী কর্তাব্যাক্তিতে চারদিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ হচ্ছে। আমি খবরের কাগজ খুললে প্রতিটি খবরে গরুদের হাম্বা আর গাধাদের শরীরের নোংরা গন্ধ টের পাই। টিভি খুললে দেখি পোশাক চড়িয়ে গরু গাধারা গম্ভীর মুখে তাদের পৌরুষ চলে যাবার গল্প এবং রমাকান্ত কবিরাজর কাছ থেকে শিশ্ন মোটা করবার মহৌষধের বিবরণ দিচ্ছে। রাস্তায় বের হলে হঠাৎ দেখি যানবাহন আটকে আছে, ট্রাফিক পুলিশ তটস্ত। কিছুক্ষণ পর দেখি পতাকা উড়িয়ে এক গাধা যাচ্ছে তার বৃষ্টি সম্পর্কিত ভবিষ্যত বানীর মুলা আমার দেশের মানুষের সামনে ঝুলাতে ঝুলাতে। আমার রক্ত বিষ হয়ে উঠে এই গরু আর গাধাদের রাজত্বে। তাদের গন্ধে আর যত্রতত্র তাদের অপুষ্ট সঙ্গমজাত মোসাহেব দের দেখে আমার গলদেশে জুড়ে কবিতার স্থলে অসুস্থ বমি জমা হয়। রক্তের রং ক্রমেই সাদা হয়ে যায় টিকটিকির মত।

তাই ভাবছি আজ নতুন জন্ম নিতে হবে বেচে থাকার জন্যে।

ইদানিং ঘাস খাই খুব আর নির্বোধ গরু হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখি। বঙ্গদেশে গরুদের জন্যে সকল লক্ষীই হাত পেতে বসে আছে। রাষ্ট্র এবং সমাজযন্ত্র এখন সংকরিত গরুর গোয়াল।

(গুজরাতের গল্পটি তৎকালীন সময়ে একজন পশ্চিম বাংলার কবির কবিতা থেকে নেয়া। কবির নাম ভুলে গেছি।)

১,৫৫৬ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “দিনলিপি – ২ ঘাস খেয়ে গরু হওয়ার স্বপ্ন”

  1. মনসুর আহমেদ (৯৪-০০)

    এই

    টেনিস বলের মত মস্তিস্ক

    সম্পন্ন রাজা কি আমরাই না!!
    আমরা, দেশের সরবময় ক্ষমতার অধিকারি জনগন , যারা এই সব

    মন্ত্রীসভা পরিপূর্ন (হয়েছিল)করেছি গাধাতে
    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : হোসেন (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।