নব্বইয়ের হ্যামলেট (যোবায়ের-কথন)

পর্ব-সাজ্জাদ
ফারজানা তাবাসসুম বলছি

০০০০০০০
– হ্যালো যোবায়ের সাহেব বলছেন।
– বলুন
– দেখুন, আমি …… বলছি। গত দশদিন ধরে আপনি যেখানে যেখানে যান, ক্যান্টিন, দুলু ভাইয়ের দোকান, হল, হলের ক্যান্টিন, সবখানে আমরা একটা মেসেজ দিয়েছি, আপনি কি এটা পাননি। আপনার হলের প্রভোষ্ট এবং ডিন কেও মেসেজ দেয়া ছিল।
– পেয়েছি, কিন্তু দরকার মনে করিনি, এনিওয়ে, পেয়ে তো গেলেন, এখন বলুন কি চান?
– আপনার সংগে একটু সামনাসামনি কফি খেতে চাই। কালকে আসুন এখানে।
– আমাকে ডিক্টেট করবেন না, আচ্ছা রাখি।

০০০০০০০
– হ্যালো যোবায়ের সাহেব।
– আবার আপনি।
– সাজ্জাদকে বেশি বিশ্বাস করাটা কিন্তু বোকামি হচ্ছে। মিছিলে যাননি, এটা কিন্তু জিসান, মিনহাজ কেউ পছন্দ করেনি। খারাপ অবস্থাতো, কেউ কাউকে বিশ্বাস করে না।
– অনেক খবর রাখেন দেখি। শুনুন, এরা আমার কাছের লোক, আমাকে না বলে কিছু করেনা।
– রাখতে হয় যোবায়ের সাহেব রাখতে হয়। এত বড় একটা ইস্যু, চোখ তো রাখতে হয়ই, আমরা তো চাকুরি করি। আচ্ছা আপনার বাসায় হাজার দুয়েক টাকা পাঠানো হয়েছে। আপনি তো অনেকদিন যান না, বাসার খবর রাখেন না, একটু টানাটানি হচ্ছিল, টাকাটা পাওয়াতে আপনার মায়ের খুব সুবিধা হয়েছে। আমরা বলেছি আপনি পাঠিয়েছেন, এখন ব্যাস্ত, আসতে পারছেন না, আরও বলেছি, এটা টিউশনি করে কামিয়েছেন। আর কিছু করেনা বললেন, যোবায়ের সাহেব, কালকে রাতের মিটিং কিন্তু আপনাকে ছাড়া হয়েছে, সাজ্জাদ সভাপতিত্ব করেছে। আপনার অনুমতি ছিল কি?
– দেখুন, এসব করে লাভ হবে না। অনুমতি ছিল, আমি পার্টি অফিসে ছিলাম।
– লাভের জন্য করি নাই, আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড জানতে গ্রামে গিয়ে দেখি এই অবস্থা। কষ্ট লাগলো চাচা চাচিকে দেখে। দায়িত্ববোধ থেকে করেছি। আর মিটিং এর কথা বলছেন, আপনার পার্টি অফিসের মিটিং ঠিক হয়ে ছিল চার দিন আগে থেকেই, হঠাত করে এই মিটিংটা ডেকেছে সাজ্জাদ, কারন ও জানে আপনি ওইদিন থাকবেন না। আপনি কিন্তু পিছাতে বলেছিলেন, কাজ কি হয়েছে? জিসান, মিনহাজ ওদেরও তো বলেছিলেন আপনার অসুবিধার কথা। কেউ তো শুনলো না।
– দেখুন, আমার কথা যদি কেউ নাই শুনে তাহলে আপনি আমার পিছনে খামখা সময় কেন নষ্ট করছেন। টাকা পাঠানোর জন্য ধন্যবাদ, এখন রাখি কেমন।

০০০০০০০০০০০
– যাক আসলেন তাহলে। আমি তো আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম।
– আপনার কিছু কিছু তথ্য বিভ্রান্তিকর, তবু আসলাম কারন সাজ্জাদ সর্ম্পকে আপনার অনুমান সঠিক, সে আমাকে সরিয়ে দিতে চাইছে। তবে এখনো সময় আছে, কারন তৃনমূল কর্মিদের সমর্থন, আর পার্টি আমাকেই চিনে, ক্যাম্পাস বলতে আমাকেই বুঝে।
– যাক এতদিন পরে আপনার আর আমার একটা হিসাব মিলল। তো কি খাবেন, চা নাকি কফি। খেতে খেতে কথা বলি।

০০০০০০০০০০০
– সাজ্জাদ কালকের কার্ফু এর সময়কার কি প্ল্যান।
– আগের মতই, সাংস্কৃতিক গোষ্টি গান করবে, পথ নাটিকা আছে, শিক্ষকরা মৌ্ন মিছিল করবে।
– ছাত্রদের মিছিলের কি অবস্থা, ছাত্র হবে তো, ঈদানিং একটু কম কম মনে হয়।
– কি যে বলেন না যোবায়ের ভাই, বরং আপনাকে একটু বিভ্রান্ত লাগে।
– একটু তো টেনশন হয়ই, পুরা কন্সটিটিউশনের এগেইন্সষ্টে তো।
– যোবায়ের ভাই, এইগুলা কি বলেন, সব পার্টির একদাবি, মিডিয়া, ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, সংবাদকর্মী, দল, লিগ সব এক কাতারে, আপনি জানেন এইগুলা, কত কষ্ট করে এই জায়গায় আসছি আর আপনি এখন এইগুলা কি বলেন।
– কালকে বক্তব্য কার কার।
– বড় দুই দলের ছাত্র বিশয়ক সম্পাদক আসবেন, ডিনস কমিটির চেয়ারম্যান আর ছাত্রনেতা অই সময় যারা যারা থাকবেন। আর যোবায়ের ভাই, আপনি ঠিক থাকেন, এইটা ছাত্র আন্দোলন, এর গতি ছাত্ররাই ঠিক করবে, আমি আপনার কাছ থেকে সব শিখেছি, আপনি বিভ্রান্ত হলে এই আন্দোলন গতি হারিয়ে ফেলবে।
– আরে না, কি যে বল, গতি হারাবে না, আমি তো মরেও যেতে পারি, তোমরা আছ না।
– যোবায়ের ভাই, আপনি ঠিক থাকেন, এখন অনেকে অনেক কথা বলবে, কিন্তু আমরা আমাদের কাছ করে যাব। ইটস আ ওয়ান ওয়ে রোড, জিততেই হবে।
– হুমম সাজ্জাদ, সিমস আই হেট পলিটিক্স।
– আমরা সবাই তাই, কিন্তু তীর ছোড়া হয়ে গ্যাছে, ফিরার উপায় নাই।

০০০০০০০০০০০
– যোবায়ের ভাই আপনার বক্তৃতা অস্পষ্ট। দিক নির্দেশনা নেই।
– মিনহাজ, আমি আর একটু দেখতে বলেছি, সরকার দাবি বিবেচনা করবে বলছে, আমাদের সময় দেয়া দরকার।
– আপনার কথা বিভ্রান্তিকর। গত মাসে আপনি ছাত্র জমায়েতে আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। এখন ছাত্রদের বিভ্রান্ত করছেন।
– মিনহাজ তুমি আমার চেয়ে এইসব বেশি বুঝ না নিশ্চয়। আর আমার সামনে চড়া গলায় কথা বলবানা। তোমাদের …… ক্ষমতা আমার জানা আছে।

০০০০০০০০০০
– যোবায়ের সাহেব, আপনি মনে হয় ছাত্রদের উপর আপনার কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলেছেন। আপনার কথা শুনছেনা তারা।
– এভাবে হবে না। শক্তি প্রয়োগ করতে হবে।
– শক্তি প্রয়োগে কিছু হয়না। গত তিন বছর কিছু হয়নি, রেকর্ড তাই বলে।
– এবার হবে, আমি থাকব।
– আপনি কি বলতে চান স্পেসিফিক্যালি বলুন।
————————————————-
– আপনার মাথা খারাপ হয়ে গ্যাছে যোবায়ের সাহেব। একটু বসুন, চা বা কফি দিতে বলি। নিচে গাড়ি আছে, বলে দিচ্ছি, যেখানে নামতে চান নামিয়ে দেবে।
– এইটাই একমাত্র রাস্তা।
– রাস্তা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি চা খান, একটু ঢাকার বাইরে থেকে ঘুরে আসুন। আমরা তিনদিন পরে আবার কথা বলি। ও আর হ্যা, কেউ কি নেই আপনার সংগে।
– আছে কয়েকজন, মধ্যম সারির, বিভিন্ন হলে থাকে।
– অসুবিধা নাই, নেক্সট জমায়েতের আগে কিছু একটা প্ল্যান করে ফেলব, আপনি যান, বিশ্রাম করুন।

০০০০০০০০০০০
– স্যার, কত কিছুদিন থেকে একজন লোক ফ্ল্যাটের আশপাশে ঘুর ঘুর করে, আপনাকে খুজে।
– আমাকে খুজে এইটা বুঝছিস কিভাবে?
– স্যার আপনার নাম কইছে? কইছে সাজ্জাদ সাহেব এইখানে আসেন কিনা?
– তাই নাকি, তারপর।
– আমি কইছি, মাঝে মাঝে আসে, আপনারে দেওয়ার জন্য চিঠি দিছে একটা।
– দেখি চিঠি দে, বেকুব কোথাকার।

০০০০০০০০০০০০
– অনেক দিন পরে তাই না সাজ্জাদ।
– যোবায়ের ভাই, কেন খুজছেন বলেন।
– ঘৃনা হচ্ছে নাকি আমাকে?
– স্বাভাবিক, আমি এসেছি কারন আমি আপনার মত বেঈমান নই, আমার এই অবস্থানের পিছনে আপনার আবদান আমি ভুলিনি।
– শুনে খুব ভালো লাগল। ভাবছিলাম তুমি কি ভাবে নিবে?
– সব শালা কি আর মীরজাফর হয় যোবায়ের ভাই, এনিওয়ে কেমন আছেন?
– আর থাকা, জানই তো।
– কি চাচ্ছেন বলুন এবার।
– তুমি খুব শার্প সাজ্জাদ, আমাকে দেশের বাইরে যাবার একটা ব্যাবস্থা করে দাও।
– দুমাস পরে এইখানে আসবেন। সব রেডি থাকবে। তবে একটা শর্ত আছে।
– অসুবিধা নাই, আগামী তিন বছর আমি দেশে আসব না।
– তিন না, যোবায়ের ভাই, আগামী দশ বছর, আপনি দুই টার্ম পরে আসবেন।
– ঠিক আছে, তুমি বাড়ির খোজ খবর রাখিও।
– আর একটা প্রশ্ন
– বল
– মিছিলে এলোপাতাড়ি গুলি করলেন ক্যানো? তাও আবার দাংগা পুলিশ নিয়ে?
– কেউ কিন্তু মারা যায়নি।
– যেতে পারত।
– সাজ্জাদ, মানুষ ভুল করে, কারন সে মানুষ, আমি আসব দুইমাস পরে, বেচে আছি যেহেতু, দেখা হবে নিশ্চয়।
– আপনার সংগে দেখা করতে চাই না। অন্য কেউ আসবে, আপনার কাজ হয়ে যাবে।

আপডেটঃ পছন্দ হচ্ছে না। মনে হয় কিছু অদল বদল করতে হবে।

২,০৩৫ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “নব্বইয়ের হ্যামলেট (যোবায়ের-কথন)”

  1. গল্প বলার ধরন টা পছন্দ হইছে। :clap:
    প্রতি পর্বে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করতেছেন মনে হয়! দারুন। ব্লগ তাইলে জমলো এইবার। :clap: :clap:

    কিছু বানান ঠিক করতে হবে মনে হয় ভাইয়া 🙂 । একটু দেখবেন।

    জবাব দিন
  2. তানভীর (৯৪-০০)

    এই আঙ্গিকে লেখাটা পড়ব আগে বুঝতে পারিনাই। লেখাটা নিঃসন্দেহে ভাল হচ্ছে। ঘটনাপ্রবাহ বা সংলাপের প্লট পরিবর্তন কি একটু দ্রুত হয়ে গেল? নাকি আমি একটু টিউবলাইট হয়ে গেছি! 😕
    চালিয়ে যান ভাইয়া! :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আশা করছিলাম জিসানেরটা আগে পামু... 🙁
    যাইহোক,বরাবরের মতন... :clap:
    তয় তানভীর ভাইয়ের সাথে একমত...একটু বেশী ফাস্ট।


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আহ্সান (৮৮-৯৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।