ডিনার করে নাইট প্রেপ এর জন্য একাডেমি যাচ্ছি দেখি হাউস মাষ্টার রুমের সামনে এডু দাড়ায় আছে। উহু, ফাড়া কাটে নাই।
-“ইউ ফয়েজ, কাম অন, কাম অন, আস্ক ইউর ফ্রেন্ড টু কাম”।
– “হুম”?
– “ইউর গেমস ফ্রেন্ড, হুম হ্যাভ ডিসকাসড লাষ্ট নুন”।
-“ওকে”।
আবার শুরু হল শান্টিং। এইবার অপরাধ, আমাদের ম্যাক্সিমাম কমপ্লেইন সঠিক নয়। তদন্তে এইটা প্রমানিত হয়েছে। অতএব শাস্তি অবধারিত।
আমরা এডু স্যারকে বুঝাই। আচ্ছা, ম্যাক্সিমাম কমপ্লেইন সঠিক নয়, কিন্তু কিছু তো সঠিক, তাই বা কেন হবে?……….স্যার কে একটু কনফিউজ মনে হয়। আরো কনফিউজ করে দেবার আপ্রান চেষ্টা করি আমরা। জয় আমাদের সুনিশ্চিত। পরিবেশ অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে।
এর মধ্যো নাইট প্রেপ শেষ, ফ্রি আওয়ার শেষ, লাইটস অফের বাশি পরে যায়।
লাইটস অফের বাশি পরপরই সিনিয়র ব্লক থেকে শুরু হয়ে যায় “হো—-যা—মাল—-হো”। আমরা জনা সাতেক ছাড়া, সব ব্যাচ মেট এডু স্যারের গুষ্টি উদ্ধার করে হো—-যা—মাল—-হো দেওয়া শুরু করছে।(এইখানে বলি হো—-যা—-মাল—-হো একটা গালি বিশেষ, যিনি একবার খেয়েছেন এবং বুঝতে পেরেছেন এইটা গালি, তিনি আর এইটা খাইতে চাইতেন না)।
-“ব্যাপারকি ব্যাপারকি, তোমাদের ব্যাচমেটরা চিল্লায় ক্যান?” এডু স্যার জানতে চান।
-“স্যার অনেকক্ষন ধরে আটকায় রাখছেন তো, নিশ্চয় অনেক পানিসম্যান্ট দিয়েছেন, এইটা ভাবছে ওরা”।
-“এইজন্য শিয়ালের মত হুক্কা হুয়া করবে নাকি সবাই”। এডু স্যার আবার পুরানা ফর্মে ফিরে যান। রণ মুড।
-“ফয়েজ, আস্ক ইউর ফ্রেন্ড ফর ফলিন, ওয়িদিন টেন মিনিটস, আন্ড ইউ কাম ওয়িথ পিটি ড্রেস”।
আমি একদৌড়ে তিতুমীরে গিয়ে রেজাকে আর ওমর ফারুকে গিয়ে কামালকে বলি সবাইকে রাস্তায় ফলিন করতে। এরপর নিজে পিটি ড্রেস পরে রাস্তায় নামি। রাত তখন প্রায় ১২ টা।
সবাইকে ফলিন করার পর আমরা যারা এডু স্যারের সামনে ছিলাম তাদের আলাদা করেন উনি। এরপর চেরী গাছের ডাল ভেঙ্গে বেত বানান কয়েকটা।
-“মাহমুদ”। চিতকার করেন উঠেন, চিতকার মানে চিতকার, ভয়াবহ অবস্হা।
-“ইয়েস স্যার”।
স্যার একদৌড়ে মাহমুদ এর কাছে যান। এরপর হাটুর নিচে একের পর এক বেতের বাড়ি।
-“স্যার আমি কিছু করি নাই তো, ঘুমায় ছিলাম”।
স্যার কোনো কথা শুনেন না। মনের সুখে পিটান মাহমুদ রে কিছুক্ষন। এরপর ধাক্কা দিয়ে বের করে আনেন বাইরে।
-“ঊমেদ আলি উমেদ আলি” হাউস বেয়াড়া উমেদ ভাইকে ডাকেন।
-“জ্বী স্যার”। মিন মিন করে উমেদ ভাই, এই ব্যাটাও ভয়ে আধমরা।
_ “দেখতো হাউস মাষ্টারের রুমে ভাল বেত আছে কিনা”?
-“আছে স্যার”। একদৌড়ে উমেদ ভাই বেত এনে দেয় তিনচারটা।
_”যাও প্রতি হাঊসে গিয়ে বারান্দার লাইট গুলো জ্বালাও।“
বারান্দার লাইট জ্বালানোর কারন আর কিছুই না, যাতে জুনিয়ররা সিনিয়রদের ধোলাই দেখতে না পারে।
_”মনোয়ার”।
-“স্যার আমি কিছু করি নাই”, কিসের কি, মনোয়ারের পায়ে বাড়ি তিন চারটা মারা শেষ ওর পুরা কথা শেষ করার আগেই। ওকেও ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন স্যার, নিয়ে আসেন মাহমুদ এর পাশে।
-“মাসরুর”
মাসরুর কোন কথা না বলে একদৌড়ে এসে দাঁড়ায় মনোয়ার, মাহমুদ এর পাশে। ওর দৌড়ের ভংগি দেখে এত দুঃখেও ফিক করে হেসে ফেলি কয়েকজন, মাসরুরে ট্রিক্স অবশ্য মার থেকে বাচাতে পারে না নিজেকে।
এরপর একই স্টাইলে আলাদা করা হয় আরো কয়েকজনকে। বাকিদের কান ধরে দাড়া করানো হয় হাউসের দিকে মুখ করে।
এরপর শুরু হয় চড়া গলায় গালি। গালি দিতে দিতে হয়ত স্যারের কারো কথা মনে হয়। চিতকার করে তার নাম ধরে ডাকেন আর প্রথমেই পায়ে সপাসপ দশ বারোটা বাড়ি দেন।
লুতফর ছিল ফলিন এর একবারে মাঝামাঝি। আবছা মত কয়েকবার যেন মনে হল সে স্যার কে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। মিন মিন স্বরে কয়েকবার স্যার স্যারও করেছে। কিন্ত পাত্তা পায়নি। লুতফরের পাশে যে দাঁড়িয়ে ছিল সেই পাত্তা দেয়নি টয়লেট ইস্যু মনে করে, আর স্যার তো অনেকদুরের কথা।
স্যারের তখন গরম গরম তর্ক হচ্ছে রেজার সংগে, রেজা প্রচন্ড নীতিবান একটা ছেলে, ষ্ট্যান্ড ছিল এস, এস, সি তে, তিতুমীরের হাউস প্রিফেক্ট, সবাই মোটামুটি সম্মান করে ওকে।
-“স্যার স্যার” লুতফুরের আওয়াজ একটু উপরে উঠে, পাশের জন্য ওকে একটা ধমকও দেয়, এইটা একটু জোরে হওয়ার কারনে আমরা অনেকেই ধরতে পারি, লুতফুর কিছু একটা বলতে চায়।
-“স্যার স্যার” শেষেরবার অনেক জোরোই স্যারকে ডাকে ও।
– তিন লাফে স্যার ওর কাছে যায়, ভাবে কিছু ইনফরমেশন পাবে হয়ত।
– “স্যার”, লুতফুর ডান হাতে একবার কান ধরে, …একবার ছাড়ে, …আবার ধরে, “স্যার” তোতলানো শুরু করে এইবার।
-“আরে বাবা সমস্যা বলো না”।
_”স্যার, সাপ স্যার সাপ, সাপ” আংগুল তুলে দেখায় ও। তারপর আবার কান ধরে।
-“এ্যা, কি বল,”? স্যার দৌড়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়, অইটাই সবথেকে সেফ জায়গা ধারে কাছে।
-“সাপ, কই, কই সাপ”!!!! স্যার জানতে চান।
মুহূর্তের মধ্যো আমরা আইল্যান্ডে উঠার জন্য ঠেলাঠেলি শুরু করি। এদিক ওদিক দৌড় দেই কয়েকজন। এডু স্যারকে ঠেলাও মেরে বসে কেউ কেউ। গুরুগম্ভীর পরিবেশটা নিমিশেই একটা ভীতসনস্ত্র পরিবেশে পরিনত হয়। সবাই মিলে সাপ খুজি।
-“কই সাপ কই”, সবাই নিজেদের পায়ের কাছে সাপ খুজি।
_”স্যার ওই যে, জাহাংগীর হাউসের ইন্টারমিডিয়েট ব্লকের লাইটের নীচে যে রুমটা আছে ওইটার জানালা দিয়ে প্যাচায় প্যাচায় আছে। মনে হয় রুমে ডুকবে”। লুতফর স্পেসিফিক করে সাপের পজিসন। পজিসন মত আমরা তাকাই এবং আরে কি আশ্চর্য সাপই তো।
-“সাপ, সাপ সাপ”, আমরা চিতকার শুরু করি।
-“উমেদ আলি উমেদ আলি, তুমি দেখো না, ক্যাডেট এর রুমে সাপ ডুকছে, যাও লাঠি নিয়ে যাও, সাপ টা মারো”। আইল্যান্ডের উপর থেকে হুকুম দেন স্যার।
উমেদ ভাই ইয়া বড় ১২ ফিট লাঠি নিয়ে সাপ টাকে খূচিয়ে বের করার চেষ্টা করে।
_”এই উমেদ, বেকুব, কি কর? সাপ টাকে মারো?” স্যার ভয় পাচ্ছেন বুঝা যায়, নিজের জন্য নয়, রুমের ক্যাডেট গুলোর জন্য, রাত প্রায় দুইটা, রুমের ক্যাডেট তখন গভীর ঘুমে।
-“স্যার এইটা ক্যাডেট সাপ, উমেদ ভাই এই সাপ মারতে পারবে না, ক্যাডেট লাগবে”। স্যার কে বুঝানোর চেষ্টা করে অতি সাহসী মাসরূর।
-“ওহহ স্যার এইটা দারাস সাপ, বিষ নাই”। উমেদ ভাই নতুন তথ্য পাচার করে। দারাস সাপ দেখে উনার সাহসও টু দ্য পাওয়ার ইনফিনিটি হয়ে গেছে। দুই মিনিটের মাথায় মারা যায় সাপটা।
-“ওকে বয়েজ গেট ফলিন”। এডু হুকুম দেয়। আগের সুরটা আর নেই। উনিও বুঝতে পারে আর জুত হবে না। পাচ মিনিটের মধ্যো ছুটি পাই আমরা।
ফলাফল……… দিনের শুরুতে যা ছিল তাই।
প্রিফেক্ট এর হিপে বাড়ি খাওয়া নিয়ে যে আন্দোলনের সুত্রপাত, একটি নিরীহ দারাস সাপের মৃত্যু দিয়ে তার সমাপ্তি।
অনেক দিন পর উমেদ আলীকে মনে পড়ে গেল... :)) আর আমাদের কলেজে সাপ একটা common problem ছিল..... বিশেষ করে পেয়ারা garden এ। আর কেন জানি জাহাংগীর হাউসেই বারবার সাপ হানা দিত... 🙂 সুন্দর লিখার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া..।
উমেদ আলী ভাই কি আরও মোটা হয়েছে নাকি? এখনো কি হাউস মাষ্টারকে তেলের উপর রাখে?
আমরা কলেজ থেকে চলে আসার আগে উনি মোটা ফিগারেই ছিলেন....হে হে... হাউস মাস্টারকে তেল না মেরে কি আর হাউস বেয়ারার কোন উপায় আছে.. 😀 !!!!
এডু তো মন্দ জ্বালায় নাই আপনাদের।
ক্লাস টুয়েলভে থাকতে আমাদের এডুও (মেজর মাকসুদ) একবার আমাদের হাউসরে রাত দুপুরে তাং করছিল। তবে সেটা স্বাদে আর একটু সুমিষ্ট 😀 । সময় করে সেটাও ছেড়ে দিব 😛 ।
আর সাপ? ভয় পাইছি.... 😕
Life is Mad.
দাড়াসে ভয় পাইলা। কালবাউস, চন্দ্রবোড়া সবই মারা পড়ছিল। নাইট গার্ডের হাতে বল্লম তুলে দিয়েছিল এই এডু সাপের হাত থেকে বাচার জন্য।
এত্ত ঘটনার পরে একখান সাপ তাও আবার দাড়াস। রূদ্ধশ্বাসে অপেক্ষা করছিলাম কি নাকি হয়। সাপটা কখন আসে।
চমৎকার লেখা ভাইয়া।
আমরা যারা সিলেটের পোলাপান তাদের সাপ এর আরো বেশি কাহিনী আছে। তাও পাহাড়ী সাপ।
হমমম, এফ সি সি তে আমাগো নরমাল সাপের [বিষ অলা বা ছাড়া] লগে লগে গুইসাপ, অজগর [14 ফুট দেখছি হাইয়েস্ট] লইয়া পর্যন্ত ডিল করন লাগছে 😕
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
কবে বলবে, আই মিন লিখবে?
ওরে বাবা, অজগর, কি বল?
এই তাইলে কাহিনী।
আপনাদের ব্যাচ মনে হয় দশ কলেজেই খুব কষ্ট করছে সিনিয়র অবস্থায়। আমাদের সিলেটেও আপনাদের ব্যাচটা (যদিও আমরা পাইনাই,শুনছি ভাইয়াদের কাছে)ইলেভেন আর টুয়েলভ পুরা দৌড়ের উপরে ছিলো।
সাপ নিয়া কাহিনী আমাদের কলেজেও অনেক। এমনকি রুমের টেবিলের ড্রয়ার খুলেও হঠাৎ হঠাৎ সাপ পাওয়া যেতো।
ঝিনাইদহ মনে হয় ভালো ছিল, সিওর না। আন্দাজ করতাম।
বললাম না, ওরা গরুর দুধ খাইত। মাইরের ভয়ে কইতে পারতেছিনা কিছু কথা।
কামরুল, কওতো ব্লগে জেসিসি কয়টা?
আমি আছি-প্রাউড বৃক্ষ! B-)
ডিরেক্টরি অনুযায়ী ২৫২ জন সদস্যের মধ্যে ২৪ জন জেসিসি।
তবে খুব এক্টিভ আছে মাত্র দুই জন।
একজন তো ইতিমধ্যে প্রাউড বৃক্ষ(!)বলে পরিচয় দিছেই। আর একজন জুনায়েদ কবীর।
বিফোর এন্ড আফটার দ্য ব্রেক - দুইটাই জটিল। :boss:
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ, তোমার হাত তো দারুন।
ফয়েজ ভাই,
জটিল হইছে।
তবে আপনাদের কষ্টের দিনগুলার মত কষ্ট আমরা কখনও পাইনি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে...
ভাই
"হো—-যা—মাল—-হো” এর কাহিনীটা একটু বলেন।
একবার উমেদ আলি ভাইরে জিগাইলাম, আপনের ভুরির ওজন কত? উমেদ আলি ভাই কয়, আমি কি জানি?? আমার বউ রে জাইয়া জিগান গা......
:khekz: :khekz: :khekz:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ফয়েজ ভাই,
আপনাদের ব্যাচ, বিশেষ করে যে কয়টা নাম আগে কইলেন তাগো নিয়ে ইরাম ঘটনা বেশ কয়েকটাই মনে পড়তাছে। :)) করডোরে বাত্তি জ্বালায়াও পুরোপুরি আড়াল করা যায় নাই।
সিনিয়রদের পাঙ্গানি দেখার অপরাধে আগে :frontroll: দিয়া লই।
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
তোমরাই তো মনে হয় তখন টেনে ছিলা, কার রুমে সাপ ঢুকছিল অইটা জানো নাকি?
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না