খেরোখাতা – আমার সকাল (ছুটির দিন ছাড়া)

(সর্তকীকরনঃ এটা বিবাহিত এবং বাবাদের জন্য লেখা, অন্যরা পড়তে পারেন, আপত্তি নাই)

মাঝে মাঝে কিছুদিন এমন আসে সব কিছু ঠিকঠাক লেগে যায়। সকালের ঘুম ভাঙ্গে একদম ঠিক সময়ে। সকালের প্রাতঃক্রিয়া, নাস্তা। এর আগে একটু “জগিং” এর মত। খবরের কাগজ আসে একদম “খাপের খাপ” টাইমে। নাস্তা খেতে খেতে হেড-লাইনের উপর একটু নজর বুলিয়ে নেয়া। নাস্তার মেনুটা হয় ভীষন পছন্দের। কোলষ্টারেল বেড়ে যাচ্ছে বলে ডিম না দেয়ার হুমকি থাকেনা তাতে। চায়ের লিকার একদম “পারফেক্ট” । সব কাপড় ঠিক জায়গায় ঠিক মত। অফিসের ড্রাইভার ব্যাটাও রাস্তায় জ্যামের অজুহাত দেখায় না।

অবশ্য সাংসারিক জীবনে একার ঘুম ভাংগা দিয়ে কোন কিছুই হয় না, বউ এর সব কিছুও ঠিক থাকা লাগে। ঠিক থাকতে হয় বাচ্চার ঘুম থেকে উঠার ব্যাপারটিও। স্কুলে যেতে হবে যে। এটা একটা “চেইনের” মত। কোথাও একটু উলটা পালটা হলেই ছন্দ পতন। শান্ত সকাল নিমেষেই অশান্ত।

ব্যাপার হচ্ছে যে, সবকিছু ঠিক থাকেনা প্রায়ই। না থাকাটাই স্বাভাবিক। অনেকগুলো বিষয় জড়িয়ে আছে, একটা না একটা “গুবলেট” হবেই হবে। বাচ্চা ঠিক মত ঘুম থেকে উঠতে চাইবেনা, বাথরুমে পানি নেই, লোডশেডিং এর জন্য পানি উঠানো যাচ্ছে না, নাস্তায় পছন্দের মেনু নেই, কাপড় নেই ঠিক জায়গায়, ড্রাইভারের রাস্তায় জ্যাম, পত্রিকার খবর নেই। কিংবা হয়ত সবকিছু ঠিকই আছে, আমারি ঘুম থেকে উঠতে মন চাচ্ছেনা। এরপর শুরু হয় সময় কে বাগে আনার জন্য দৌড়, বউয়ের ভাষায় “হুড়ুম, হাড়ুম”।

কত ছোট এই জীবন, আর কত অজস্র আশা আমাদের। সব আশা কি এক জীবনে পুর্নতা পায়? নাকি পাওয়া উচিৎ? পুর্নতা পেলে বেচে থাকব কি নিয়ে? জীবনের হিসাব একটু একটু করে বদলে যায়। বছর শেষের হিসাবে দেখি, যা করতে চেয়েছি, তার থেকে অনেকটাই সরে এসেছি। মাত্র এক বছরের হিসাবেই এত উলট-পালট। জীবনে শেষের হিসাবে কত কিছু যে বদল হবে? হয়ত যেতে চেয়েছিলাম উত্তরে, পশ্চিমে গিয়ে বসে থাকব, খুবই স্বাভাবিক। এইই মেনে নেয়া। এইই জীবন। জীবন খাতার হিসাব।

অনেক না মিলানোর মাঝেই একটা মিল তৃপ্ত রাখে আমাকে। বাসায় ফিরে হাসিমাখা মুখ দেখি মা-মেয়ের, রাতে তারা জড়াজড়ি করে ঘুমায়, সকালে ঘুম থেকে উঠে দুজনেই ঝিম ধরে জড়াজড়ি করে থাকে কিছুক্ষন। যদিও জানি, আর অল্পক্ষন পড়েই শুরু হবে দু’জনের “ফাইটিং”, আর শুরুটা হবে “দাত ব্রাশ” কিংবা “হরলিক্স” খাবার মত অতি সাধারন কোন বিষয় নিয়ে।

অনেক না পাওয়ার মাঝে এ এক পরম পাওয়া হয়ে উঠে আমার।

৪,৪১৩ বার দেখা হয়েছে

৯১ টি মন্তব্য : “খেরোখাতা – আমার সকাল (ছুটির দিন ছাড়া)”

    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      আইজকা লেখার মুড একদমই নাই। ইন-ফ্যাক্ট কয়েকদিন থেকেই মুড খারাপ, বুঝতে পারছিনা।

      এটা লিখলাম মুড ভাল করার জন্য। দেখি, ওয়েটিং, মুড ভাল হয় কিনা?

      btw তোমার বাচ্চার কি খবর?


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)
    (সর্তকীকরনঃ এটা বিবাহিত এবং বাবাদের জন্য লেখা, অন্যরা পড়তে পারেন, আপত্তি নাই)

    কবে যে এই লেখার জন্য উপযুক্ত হবো... :dreamy:

    অসাধারন লাগল খেরোখাতা :boss: :boss: :boss:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. তাইফুর (৯২-৯৮)

    ফয়েজ ভাই ... আগেও বলছি, খেরোখাতা, খেরোখাতাই। আপনার অসাধারণ লেখার গূণে আটপৌড়ে দিনলিপিই কত চমৎকার ফুটে উঠে ...
    আমার বউ আপনার লেখা পড়ে বলে উঠল ... আহা! আমাদের যদি এমন একটা মেয়ে হত ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        @ কামরুল,

        মোবাইলে এ্যালার্ম দিবা, আমার বউ কি আমারে ঘুম থেইক্যা ডাকে নাকি? এইটা তো কই নাই।

        আমিও ঘুম থেকে উঠি এ্যালার্মের ধাক্কায় 😀

        @ জিহাদ, ক্লাস মিস তো ভাল জিনিস, কোন ব্যাপার না।

        গ্রাজুয়েশনের মজাই তো ফাকি তে। কি ক্লাস, কি সেশনাল


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    ফয়েজ ভাই, লেখা নিয়া একরাশ মুগ্ধতা ছাড়া আপনাকে আর কিছু বলার নাই :salute: :hug: আর এইবার ইনশাল্লাহ আপনার কাছে বিফোর লাঞ্চ রিপোর্ট করতাছি বন্দরনগরীতে খুব শিগগিরই 🙂


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)
    অনেক না পাওয়ার মাঝে এ এক পরম পাওয়া হয়ে উঠে আমার।

    আমারও একই কথা... :thumbup:
    তয় আমি কিন্তু সিসিবি'র কথা বুঝাইছি... 😀

    ফয়েজ ভাই, আপনারে স্যালুট দিতে ইচ্ছা করতেছে... ;;)
    দিয়াই ফালাই... :salute: :salute: :salute:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)
    এটা বিবাহিত এবং বাবাদের জন্য লেখা,

    ক্লাস আছে, তাই তারাহুরা করে কাপড় পরার ফাঁকে সিসিবি'তে ঢু মেরেছি। কিন্তু ফয়েজ ভাইয়ের লেখার শুরুটা দেখে হতাশ......

    বস, আমাদের জন্যেই লিখেন, (সময় পাইলে আর কি)

    এখন দৌড়াই ক্লাসে


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  6. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    ভাই আপনারে ভস মাইনা বইসা আছি। অনেকগুলা লাইন পছন্দ হয়েছে। এতগুলা আর কোট করতে ইচ্ছা করল না। আমি দেখেছি যে একটা কাজ ভুল হয়ে গেলে সারাদিন ভুলে কাটে। একদিন সকালে শেভ না করে বের হয়েছি আর সন্ধায় দাওয়াত ছিল। ওই শেভের জন্য আমরা ফুল ফ্যামিলি দাওয়াতে দেরি করে ফেলছিলাম।

    জবাব দিন
  7. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    খেরোখাতা 'ঝাকানাকা' :tuski:
    বস,
    আপনার যেকোন লেখা-কবিতা বা খেরোখাতা- পড়লেই আমার 'কমলা রঙের নরম রোদ' ধরণের একটা অনুভূতি হয়...খুব ভালো লাগে :boss:


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  8. ওবায়দুল্লাহ (১৯৮৮-১৯৯৪)

    বস,

    আপনের ঝাকানাকা খেরোখাতা পইড়া
    মনটা চইল্যা গেলো হাজার মাইল উইড়্যা।

    এখন করি কি উপায়... 😕 😡

    এত সুন্দর করে অকৃত্রিম ভালবাসাটুকু শব্দবনী করেন দেখতেই মনটা কেমন করে ওঠে।
    :salute:


    সৈয়দ সাফী

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।