একটি জন্মদিন সংক্রান্ত পোস্ট

বিখ্যাত লোকের সংগে কোন কিছু মিলে যাওয়ার অনেক মজা। আমার এক ভাইয়া, চেহারা একদম অনিল কাপুরের মত, অনিল কাপুর তখন আবার বম্বের হিট নায়ক, মাধুরীর সংগে তার হট হট হিট হিট সব ছবি বেরুচ্ছে, আমরা গোগ্রাসে গিলছি। এক দো তিন, চার পাচ ছয় সাত ……… নাম্বার কাউন্টিং এর গানটা দেদারছে বাজছে হোটেল-রেস্তোরায়, মাধূরী পোস্টার দেদারছে সাটা পড়ছে আমাদের মত উঠতি যুবকের রুমের দরজার উলটো দিকে। এই রকম গরমাগরম সময়ে ভাইয়া গোঁফ রাখা শুরু করলেন। একদম অনিল কাপুরের মত। ভাইয়ার সংগে যখন হাটি ঢাকার রাস্তায়, মেয়েরা আড়চোখে তাকায়। ইস সবার কপাল কি আর এক রে ভাই, সবাই কি অনিল কাপুর “লুক-এ-লাইক”। বুকটা টন টন করে উঠত, ইসরে, কি ভাগ্য ভাইয়াটার……………

আমাদের বাসায় যতদিন বাবার রাজত্ব ছিল, আমরা জন্মদিনে কোন রকমের হাউ-কাউ করতাম না। কেক-কুক কাটতাম না, উইশ করতাম না, সাদামাটা একটা দিন ছিল, একই রকমের সূর্য্য, একই রকমের বাতাস-আকাশ। আম্মা হয়ত একটু ভালো রান্না করতেন, ব্যস এটুকুই। জন্মদিনে যে কার্ড গিফট করা যায় এটা জানলাম এস, এস, সি পাশের পরে, ছুটিতে, প্রাইভেট পড়তে গিয়ে। আমাদের সময় এস এস সি এর পরে পড়াশুনায় হঠাৎ করেই একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসত। সিলেবাসটাই ছিল অন্যরকম। এটার সংগে মানিয়ে নেয়ার জন্যই আমাদের বাইরের স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়া, বাইরের স্কুলের নোট নেয়া, সিলেবাসের আদান-প্রদান করতে গিয়ে বাইরের মেয়ে মহলের মধ্যে একটা ভালো সার্কেল তৈরী হল, তখন প্রথম লক্ষ্য করলাম, জন্মদিনের একটা ভালো গুরুত্ব আছে, কার্ডের আদান-প্রদান, হালকা-পাতলা গিফট এবং জন্মদিন মনে রাখতে পারাটাও বিরাট ব্যাপার। আমিও বাসায় জন্মদিন আয়োজন করলাম একবার, কিছু বন্ধু-বান্ধবী আসলো, নিজের বাসায় আব্বাকেও দাওয়াত দিয়ে আনলাম, বান্ধবী চলে আসবে এটা মনে হয় বাবা ভাবেননি। মনে হয় অবাক এবং বিরক্ত হয়েছিলেন বেশ। একেতো জন্মদিনের মত ফালতু একটা জিনিস, তার উপর আবার বান্ধবীর মত আস্ত একটা সম-বয়সীর মত মেয়ের সংগে আড্ডা?! হিসেব মিলানো কষ্টই ছিল মনে হয় তার জন্য। তবে তিনি আমাকে বকেননি এটার জন্য।

আমাদের সন্তানেরা অবশ্য তাদের বাবাদের এতটা নিরাসক্ত হিসেবে পায়নি। আমরা সবাই, নিজেদের সন্তানের জন্য দিনটি ভালো করার জন্য চেস্টা করি, নিজেদের সাধ্যমত, ঘরোয়া ভাবেই, হয়ত কেক কেটে, বা অন্য কোন ভাবে, কিন্তু পালিত হয় নিয়মিতই। সন্তানেরাও তাদের বাবার জন্মের দিনটা মনে রাখার চেস্টা করে। এই যেমন আমার মেয়ে, জিহান, তার মায়ের কাছে আবদার করে খাতায় একটা গোলাপ ফুল একেঁ নিয়ে তার উপরে কাঁচা হাতে লিখে দিয়েছে “সোনা বাবা”। এরপর আমাকে উপহার দিয়েছে সেটা।

Bday

সেদিক থেকে আমরা বাবা-মাকে বঞ্চিতই করে রেখেছিলাম হয়ত, আমি তো বাবার জন্মদিন জানিই না কবে ছিল, জানা যে দরকার, এটাও মনে হয় নি কখনো।

আরেকটা রেওয়াজ ছিল, রাশি নিয়ে মাতামাতি। বিচিত্রার প্রথম সংখ্যাটা বের হত ঢাউস, সবগুলো রাশির তাবৎ বর্ণনা, বছরটা কার ভালো যাবে, কার খারাপ যাবে, কোন সরকার জিতবে, কে হারবে, কার বিয়ে হবে, কার বিয়ে ভাংবে, কার সংগে কার বিয়ে হবে, কারটা হবে না, কে হিট কে ফ্লপ, কার চরিত্র কি রকমের, কোন চরিত্রের সংগে কোন চরিত্রের ভালো মিল, কার পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো হবে, কে প্রেমে পড়বে, কার ব্যবসা ভালো হবে, মোদ্দা কথা যাবতীয় সমস্যার সমাধান সেই একটা সংখ্যাতেই পাওয়া যেত। আমরা পুরো কাড়াকাড়ি করে সেই সংখ্যাটা পড়তাম। সেখানে বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মদিন দেয়া হত। সেখানেই আমি আবিস্কার করি, আমার সংগেও একজন বিখ্যাত ব্যক্তির মিল আছে, জন্ম তারিখের মিল।

একদিক থেকে এবার আমি ভাগ্যবানই বলা যায়। পুরো একটা দিন সরকারী ছুটি, বিখ্যাত লোকের সংগে কোন কিছু মিলে গেলে কিছু লাভ আছে দেখা যাচ্ছে। এই যেমন আজকে, যার সংগে কাড়াকাড়ি করে আমি বিচিত্রার রাশিফল পড়তাম, সেই বন্ধু ফোন করে আমার দীর্ঘায়ূ কামনা করল, কথা বললো প্রায় দশ-এগার মাস পরে। মনে হচ্ছে আজকে সরকারী ছুটি আছে বলেই হয়ত তার আমার জন্মদিনটা মনে আছে। মনে হচ্ছে বলছি কারন, তার জন্মদিনটি আমি ভূলে গেছি, হতে পারে আমার ভালোবাসাটা তার জন্য অনেক কম, বা দিনটা বিখ্যাত কোন দিন নয়, মনে রাখার মত।

নিজের জন্মদিনটির কথা ভুলে গিয়েছি, অনেক হয়েছে এমন। অন্য আর একটা স্বাভাবিক দিনের মতই হয়ত চলছে, হঠাৎ হয়ত মা খাবার টেবিলে আমার প্রিয় খাবারটি দিয়ে আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন আজ আমার জন্মদিন, হয়ত বা কোন বন্ধু মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দিয়ে বুঝাতে চেয়েছে তার ভালবাসাটা আমার জন্য কত গভীর। তবে ১৯৮৭ সালের এইদিনটি একটা বিশেষ দিন ছিল আমার জীবনে, কারন এদিন আমরা ক্যাডেট কলেজের ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছিলাম।

দিনটা এবারো ভূলে গেলে সমস্যা হত না কোন, কিন্তু যেহেতু মনে আছে, তাই মনে হল, সিসিবির সংগে শেয়ার না করাটা অন্যায় হবে।

কংগ্রাচুলেশন্স ফয়েজুর রহমান, ওরফে ফজু মল্লিক (কপিরাইট এহসান), তুমি সাফল্যের সংগে বড় কঠিন এই পৃথিবীর বুকে আরেকটি বছর পার করতে পেরেছো, এজন্য তোমাকে টুপিখোলা অভিনন্দন। ;))

তুমি আরেক বছর বুড়ো হয়েছে।

তোমার সাফল্য কামনা করি।

৭,১১১ বার দেখা হয়েছে

১১৬ টি মন্তব্য : “একটি জন্মদিন সংক্রান্ত পোস্ট”

  1. আশহাব (২০০২-০৮)

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ ভাই 😀 আপনি আরো অনেক বছর বেঁচে থাকুন আমাদের বড় ভাই হয়ে 🙂 আপনার সাফল্য কামনা করি |


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  2. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    ফয়েজ ভাই, আপনার লগে কথা নাই......
    রংপুর আইসা দেখা না কইরা গেছেন গা 🙁
    থাউক আগে হেফি বাড্ডে দিয়া লই 😀
    হেফি বাড্ডে ফয়েজ ভাই :hug:
    আরও বুড়ো হন, শতেক সন্তানের জনক হন, কামরুল ভাইয়ের সাথে তিন প্রহরের বিলে ঘুইরা আসেন, ইত্যাদি ইত্যাদি :party:

    জবাব দিন
  3. শরিফ সাগর (৯৭-০৩)

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ ভাই। আপনার সার্বিক শান্তি কামনা করছি।

    জিহান মামনির উপহারটা খুব পছন্দ হইছে।রেখে দিয়েন, ও বড় হলে আর আপনি বুড়ো হলে সেটা দেখে দুজনেই এক অমোঘ ভাল লাগায় পুলকিত হতে পারেন।
    (কল্পনা থেকে কইছি কিন্তু, অভিজ্ঞতা না)

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বার্থডে প্রিফেক্টরা কই? ঘটনা কি রকিব, মাস্ফ্যু? আমাদের ফয়েজ আরো বুড়া হইলো, তোমরা কেউ মনে রাখলা না!! না, প্রিন্সিপাল হিসাবে তো মনে হচ্ছে আমার মান-সম্মান্ও কিছু থাকলো না! ~x(

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ। আমাদের সবার ভালোবাসায় ভালো থেকো। আর মামনিটাকে আদর দিও।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. আহমদ (৮৮-৯৪)

    হ্যাপী বাড্ডে বড় ভাই (বুড়া ভা কিন্তু কই নাই :frontroll: )

    ইয়ে মানে ... আপনার কপিরাইট দোয়াটা যেন কি? ওইটাই ধইরা নেন সিসিবির তরফ থেকে আপনার জন্য গিফট।


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ। আমাদের সবার ভালোবাসায় ভালো থেকো। আর
    মামনিটাকে আদর দিও-
    ইতি
    তোমার বড় ভাই
    সানাউল্লাহ লাবলু
    :grr: :grr:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  7. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ ভাই। আমাদের সবার ভালোবাসায় ভালো থাইকেন । আর
    মামনিটাকে আদর দিয়েন-
    ইতি
    আপনার ছোট ভাই
    কাইয়ূম

    😀 কুক?


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  8. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    শুভ জন্মদিন ফয়েজ ভাই। আমাদের সবার ভালোবাসায় ভালো থাইকেন । শতেক/সহস্র সন্তানে আপনার পোষাবে বলে মনে হয় না। তাই লক্ষ সন্তানের জনক হন।
    আর মামনিটাকে আদর দিয়েন-
    ইতি
    আপনার ছোট ভাই
    মেহেদী 😀

    জবাব দিন
  9. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    সুখবর! সুখবর! সুখবর!

    জন্মদিনের কেক্কুক খাওয়ার জন্যে ফয়েজ ভাই ডলার পাঠাইছেন।
    আগামীকাল বিকাল ৫টায় কাইয়ুম ভাইয়ের বাসায় পার্টি হবে।
    আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে সবার প্রতি দাওয়াত রইলো। :grr:

    বিস্তারিত জানার জন্যে কাইয়ুম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করছি। 😉


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  10. রাশেদ (৯৯-০৫)

    আরে ফয়েজ ভাই যে, অনেকদিন পর সিসিবিতে ঢুকেই এই পোস্টটা পড়লাম 😀 যদিও মনে হয় অনেক দেরী হয়ে গেছে কিন্তু তারপরেও জন্মদিনের শুভেচ্ছা রইল 😀 আমার বাড়ি চট্টগ্রাম তাই বলা যায় না যে কোন দিন কেক কুক খাইতে হাজির হইতে পারি 😉

    অফটপিকঃ অনেকদিন খেরোখাতা পড়া হয় না 🙁


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।