খেরোখাতা – আমি আর আমার একলা আমি

ব্যস্ততার হাড়িটা দূরে সরিয়ে আজ বরং কিছু লিখি।

এরকম আগেও হত, বিশেষ করে যখন একা থাকতাম, সি এম এইচে বা কলেজের হাসপাতালে। আমার যখন চিকেন পক্সের গুটি বের হচ্ছে হচ্ছে অবস্থা, মাহমুদের তখন গুটি প্রায় শুকিয়ে গেছে, ছাড়া পাবে দুদিন পরেই। সি এম এইচের আইসোলেটেড ওয়ার্ডের ভয়ংকর সময়ের কথা ভেবেই কিনা, ও ওর কবিতা লেখার খাতাটা আমাকে দিয়ে দিল, অথবা আমিই জোর করে নিয়ে নিলাম, মনে নেই, ক্লাস নাইনে পড়ি তখন, স্মৃতি পাতা বড় বেশি ধূসর ঠেকছে।

প্রথম লিখেছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকতে, ওয়াল ম্যাগাজিনের জন্য, বায়েজিদ ভাই স্কড লিডার, হাউস কালচারাল প্রিফেক্ট, স্কড মার্চ করানোর আগে সবার কাছে লেখা চাইলেন, ওয়াল ম্যাগাজিনের জন্য। আর প্রপার ক্যাডেট হিসেবে, বাবা বলে দিয়েছিলেন বড় ভাইদের কথা শুনতে, আমি ঢাউস সাইজের একটা কবিতা লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। কবিতাটা ছাপানো হয়নি, তবে স্কডের একমাত্র আমিই একটা লেখা জমা দিয়েছিলাম বলে বায়জিদ ভাই আমার নামে একটা কার্টুন ছাপিয়েছিলেন, বিনিময়ে ৩০ টাকার কুপন পুরোটাই সাবার করে নিয়েছিলেন।

দারুন লিখতেন বায়েজিদ ভাই, বন্ধুরা মিলে “নদী” নাম দিয়ে একটা প্রকাশনীও খুলেছিলেন, বই মেলায় স্টল দিয়েছিলেন, এখন আর দেখি না নদী কে সেভাবে। কে জানে, কই সবাই?

জ্যোতিষী, কবে যে ফলবে তোমার কথা,
করতল চিঁড়ে আমি বাড়িয়ে দিয়েছি রেখা

দারুন একটি কবিতার দারুন দুটো লাইন, আজও মনে আছে, হয়ত ভুলভাল আছে কিছু। বায়েজিদ ভাইয়ের লেখা। বায়েজিদ ভাইই তো, নাকি অন্য কেউ, মাসুদ ভাই?

কৈশোরের অনুভূতিগুলো কি দারুন ছিল, কি দারুন নীতিবান, কি অসাধারন বোধ, ভালোবাসা, ঘৃনা, হতাশা। কি তীব্র, কি তীব্র সব। তীব্র বাতাস, তীব্র রোদ, তীব্র সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা।

কি অসাধারনত তীব্র ছিল সে সময়ের নীলাকাশ, সাদা মেঘ।

মিস করি, দারুন দারুন মিস করি সব।

১।

প্রথমটুকু নাম্বারিং করিনি, তাই এটা প্রথম। আমার ইচ্ছা। যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

বাবা যেদিন সবার সামনে ঘোষনা করে দিলেন তার ছোট ছেলে, মানে আমি, মোটেই ডায়নামিক নই, স্থবির পরিবেশ আমার ভালো লাগে, আমার সেদিন খুব খুব রাগ রেগেছিল বাবার উপরে। আমি ডায়নামিক না হলে এই দুনিয়ার কেউ ডায়নামিক না, আর বাবা আমাকে এত বড় অপবাদ দিল!

আমি ক্যাডেটে পড়ি, আমি ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়াই, আমি কার্টুন দেখি, টারজানের মতই প্রায় নারিকেলের ডাল ধরে ঝুলাঝুলি করি, আমার ক্লাবে আমি লংজাম্পে সেরা, কেউ পারে না, মারামারি লাগলে আমি ভয়ে পালিয়ে যাই না, ক্ষুর বাহিনী-কুড়াল বাহিনী যেই হোক, আর আমাকে বলে আমি নাকি স্থবির?

আমার খুব কান্না পেয়েছিল।

ভাড়া বাসায় থাকি এখন, বাসা বদলাতে হয়, নতুন এলাকাতে যাই, সবকিছু নতুন। পুরাতন কলিগ চাকুরী ছেড়ে চলে যায়, অফিসে আমার বসার জায়গা বদল হয়, আমার ভালো লাগে না, আমি পুরাতন বাসার কেয়ারটেকার বেলাল ভাইয়ের সংগে ফোনে কথা বলি, পুরাতন কলিগদের সংগে কথা বলি, ঢাকা গেলে পুরাতন অফিসে যাই, সুযোগ পেলে পুরাতন বাসার সামনে দিয়ে ঘুরে আসি এক চক্কর, আর মনে মনে ভাবি, আমি একসময় এখানে ছিলাম।

বাবা ঠিক বলেছিলেন, তিনি আমাকে বকেননি এতটুকু। আমি আসলে স্থবিরতা পছন্দ করি, সবকিছু স্থবির হয়ে যাক তা হয়তো চাই না, বদলাক, কিন্তু এমন ভাবে বদলাক যাতে আমি মানিয়ে নিতে পারি, কিংবা মানিয়ে নেয়ার মত যথেস্ট সময় হাতে থাকে।

কথা আবোল তাবোল হয়ে যাচ্ছে। টিউন চেঞ্জ করে একটা গান শুনি বরং, অনেক বার শুনেছেন, আবার শুনুন।

Get this widget | Track details | eSnips Social DNA
৩,৮৫৮ বার দেখা হয়েছে

৭৩ টি মন্তব্য : “খেরোখাতা – আমি আর আমার একলা আমি”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    খেরোখাতা রক্করে।
    খেরোখাতা তো সিরিজিই। আবার সিরিজ হবে কেন। এরকমই ভাল।
    ভাইয়া ভাল আছেন? আপনার মত লেখতে পারলে বড় ভাল হত, মন খারাপ হলেই ভাল করার একটা উপায় পেতাম।

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      @ আশিক (তোমার জবাব দিন অপশন্টা কাজ করছে না)

      কবিতার থিম টা মনে আছে, জ্যোতিষীর কাছে গিয়ে একজন জানতে পারে তার হাতের আয়ু রেখা অনেক বড়, প্রেম রেখা অনেক ছোট, প্রেমহীন জীবন কাটবে অনেকটা সময়, এর পরে সেই যুবক করতল চিড়ে প্রেম রেখা বাড়িয়ে নিয়ে জ্যোতিষীকে খুঁজে বেড়াচ্ছে, নতুন করে হাত দেখানোর জন্য, না পেয়ে নিজেই নিজের ভবিষ্যৎ বলছে, কারন তার প্রেম রেখা এখন অনেক দীর্ঘ।

      @জুনা, পাত্থর দেখাইলি ভাইডি আমারে


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
  2. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    খেরোখাতা পড়লে কেমন জানি আমগাছের ডালে পিড়ির দুপাশে পাকানো দড়ি দিয়ে বানানো দোলনায় দুলছি বলে মনে হয়।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ ভাই, অনেকটা আলসেমি ধরেছে আমার। বড় কমেন্ট করা হয়না ইদানিং। কিন্তু সত্যি কথা কি জানেন? আপনার খেরোখাতা দেখলে আমার বুকটা কেঁপে উঠে... একধরনের দুলুনি ফিল করি চারপাশে... পুরোটাই ভালোলাগায়... আলহামদুলিল্লাহ, আপনি ছিলেন!!

    প্রিয়তে যোগ, ৫তারা... তবু তো খায়েশ মিটে না... 🙁
    আপনার এই সুন্দর লেখাগুলো সরাসরি আমার ব্যক্তিগত ব্লগের "প্রিয় লেখাগুলো" পৃষ্ঠাতে লিংক সহকারে চলে যায়... অবসরে বারে বারে পড়ি। আন্দা ভাইয়ের ইদানিংকার সহজ চিঠি টাইপ লেখাগুলা, আপনার খেরোখাতা সঅঅঅঅব গুলোই...

    এরকম একলা আরো হন... সেটাই চাই 😀

    জবাব দিন
  4. কৈশোরের অনুভূতিগুলো কি দারুন ছিল, কি দারুন নীতিবান, কি

    অসাধারন বোধ, ভালোবাসা, ঘৃনা, হতাশা। কি তীব্র, কি তীব্র সব। তীব্র বাতাস, তীব্র রোদ, তীব্র সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা।

    কি অসাধারনত তীব্র ছিল সে সময়ের নীলাকাশ, সাদা মেঘ।

    মিস করি, দারুন দারুন মিস করি সব।

    :dreamy: :dreamy: :dreamy: :dreamy:
    অদ্ভূত এক্সপ্রেশন... অসাধারণ হৃদয়স্পর্শী...

    জবাব দিন
    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      ত্যালে কাম হইবো না সাকেব, কাফফারা দিতে হইবো। আরে ব্লগের কাফফারা কি জান তো, নতুন পোস্ট

      তোমারে একটা টিপস দিবার পারি, তোমার বউরে সিসিবি ট্যাবলেট খাওয়াই দাও, তাইলে যদি তোমারে ব্লগে ডুকতে টুকতে দেয় :grr:


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শরিফ সাগর (৯৭-০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।