খেরোখাতাঃ তোমাকে অভিবাদন

আচ্ছা কতদিন কাটালাম ঝিম ধরে? এখন কটা বাজে ঘড়ির কাটায়?

অফিস থেকে বের হয়ে যাবার সময় হয়ে গেছে। এইতো আর কিছুক্ষন পর ল্যাপটপ গুটিয়ে ফেলব। রুটিন মাফিক জানতে চাইব রনির কাছে, কোন কিছু বাকি আছে কিনা। বরাবরের মত মাথা ঝাকিয়ে ও বলবে “এভরিথিং আন্ডার কন্ট্রোল”। এ্যাকাউন্টের সামনে দাঁড়িয়ে জানতে চাইব, কোন ভাউচারে সই বাকি আছে কিনা, জানি বরাবরের মত মাথা নাড়বে শোয়েব, “না, বাকি নেই”। হেটে বের হয়ে যাব অফিসের গেট দিয়ে, দাড়িয়ে সালাম দিবে গার্ড আংকেল, টেনে ধরবে দরজাটা। হয়ত লাউঞ্জে বসে থাকবে সজল কিংবা সঞ্জয়, গাড়ি রেডি আছে জানাবে। আমি স্মিত হেসে বলব, “দরকার নেই, রিক্সা নিয়ে যাব”, বরাবর যেমন করে বলি।

বাদামতলী থেকে হেটে যাব সোজা পশ্চিমে, বিস্কিট নিতে হবে কি, জিহান আনার পছন্দ করে, গতকাল একটা কিনেছি, খেয়ে নিশ্চয় শেষ করতে পারেনি ও, শারমিন বলেছিল মটরশুটি যদি পাই, কিছু যেন কিনে নেই, খুব মজা নুডুলস দিয়ে খেতে, চোকো চোকো নিতে হবে, প্রতিদিন যেমন নেই, দুইটা নিলেই হবে, জিহানের হাতে দিলে খুব খুশি হবে, কপাল ভালো থাকলে দু-তিনটা আদর পেয়ে যাব গালে। আমার সমস্ত দিনের ক্লান্তি চলে যাবে তাতে। দুপুরে একবার কথা বলেছি, মা-মেয়ে বেশ ফুর্তিতে আছে মনে হল। স্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউ ছিল আজ, কিছুই নাকি জানতে চায়নি “সিলভার বেলস” এর মিসেস।

এর মাঝেই, সব সময়ই স্বস্তির শ্বাস ফেলব আমি একটু একটু করে। এটা হবে একদম নতুন, যদি জীবনের বয়স ধরি দুবছর। আমার বুকে চেপে বসা চাপটা নেমে যাচ্ছে আস্তে আস্তে।

দু বছর কে চালালো দেশটা? প্রতিরক্ষা বাহিনী? উপদেষ্টা পরিষদ? নাকি কোনো ফিরিস্তা ছিল এর পিছনে। যেই থাক, তাতে আমার এখন খুব বেশি কিছু যায় আসে না। কারন আগামী কাল যখন ঘুম থেকে উঠব, শারমিনের নিজস্ব ভালবাসা মাখানো লাঞ্চ বক্স হাতে নিব, অফিসে আসব, সিসিবিতে ঢু মারব, তখন তারা সব অতীত হয়ে যাবে। আরও অনেক অতীতের মত। অতীত নিয়ে কে অত মাথা নাড়ে। স্মৃতি বড় প্রতারক। অনেক ঠেকে শিখেছি।

কিন্তু আমি একটা জিনিস করতে চাই। আমি আমার এই অতীতকে মনে রাখতে চাই। অনেক শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরন করতে চাই কিছু নাম, যারা ইচ্ছে করলেই নীতিহীন রাজনীতির সুযোগে দেশটাকে আরও পিছিয়ে দিতে পারতেন। অতীত ইতিহাস সব সময় তাদের কাছেই ছিল। এসব করার জন্য যুক্তিগ্র্যাহ কোন কারন লাগে না। তাদের কারন ছিল। কিন্তু তারা তা করেননি। কেন করেননি, তার ব্যাখ্যা আমার কাছে অত জরুরী কিছু নয়। করতে পারতেন, কিন্তু করেননি, এটাই আমার স্বস্তি। সুখের চেয়ে স্বস্তি ভাল লাগে আমার। জরুরী অবস্থার সংগে আমি কেন যেন ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মিল খুজে পাই, অনেক যত্নে থাকা যায়, কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় যেতে যায় না। আমার কাছে সুস্থ অবস্থাই ভাল, বাইরে ঘুরব, বেড়াব, চিৎকার করব, যা-ইচ্ছা-তাই খাব, পেটের অসুক করবে, দুর্ঘটনা ঘটবে, হাত কাটবে, মাথা ফাটবে। কিন্তু আমি এভাবেই বেড়ে উঠতে চাই, বেড়ে উঠার যে কষ্ট আছে তা পেতে চাই। যতদিন থাকব, মাথা উচু করে থাকব।

মানুষের মন বড় প্রতারক। আমি তাই আমার কৃতজ্ঞতা লিখে রাখলাম আমার খেরোখাতায়।
আমাকে সুস্থ করে দিলেন যারা, তাদের সবাইকে অভিবাদন। তোমরা ভাল থাক। সুখে স্বস্তিতে ভরে যাক তোমাদের পরবর্তী জীবন।

তোমাদের সবাইকে শ্রদ্ধা আর :salute: ।

৩,৭৪৪ বার দেখা হয়েছে

৫৮ টি মন্তব্য : “খেরোখাতাঃ তোমাকে অভিবাদন”

    • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

      আমার পোষ্ট না পইড়া কমেন্ট করলে শাস্তি আছে এইটা তোমারে বুঝি কই নাই না?

      যাও জলদি দুইটা পোষ্ট দাও, ৫০ হোক রংপুরের। ব্যাট উঠাই একটু।


      পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

      জবাব দিন
      • মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

        বস ফাষ্টো হওয়ার পরে, পড়লাম পুরোটা। কমেন্টও কিছু লিখেছিলাম। কিন্তু শেষ করার আগেই ম্যানেজার একগাদা কাজ ধরিয়ে দিলো।

        পুরোটা পড়ে কি যে ভাল লাগলো। আপনার লেখাগুলোর মমতা এত। যখন পরিবারের গল্প বলেন তখন এমন একটা পরিবারের জন্য মন খাঁ খাঁ করে, যখন দেশের গল্প বলেন তখন ছুটে দেশে যেতে ইচ্ছা করে।

        কিন্তু আমি এভাবেই বেড়ে উঠতে চাই, বেড়ে উঠার যে কষ্ট আছে তা পেতে চাই। যতদিন থাকব, মাথা উচু করে থাকব।

        সব কথার এককথা । চ্যালেন্জ্ঞের মাঝেই দেশটাকে এগিয়ে নিতে চাই। তাতেই প্রকৃত গৌরব, প্রকৃত বিজয়।

        রংপুরের ৫০ তমটা আপনার জন্য বরাদ্ধ করলাম। মাঝের গুলা দিতে পারি কিনা চেষ্টা করব।

        জবাব দিন
  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    উপদেষ্টামণ্ডলীরা আজ অফিস থেকে বিদায় নেবার সময় অন্যরা কি বলেছিল??? :dreamy:
    'ধন্যবাদ স্যার...আবার আসবেন????' :-B

    বড় ভাই সম্মান জানালেন, আমরা কি আর চুপ থাকতে পারি???? O:-)
    :salute: :salute: :salute:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. রহমান (৯২-৯৮)
    মানুষের মন বড় প্রতারক। আমি তাই আমার কৃতজ্ঞতা লিখে রাখলাম আমার খেরোখাতায়।
    আমাকে সুস্থ করে দিলেন যারা, তাদের সবাইকে অভিবাদন। তোমরা ভাল থাক। সুখে স্বস্তিতে ভরে যাক তোমাদের পরবর্তী জীবন।

    :thumbup: :thumbup: :thumbup:

    বস্‌, এজন্য আপনাকেও :salute:

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    কবে ভালবাসা মাখানো লাঞ্চ বক্স হাতে অফিসে যাব, গিয়ে সিসিবি পড়ব :((
    কবে চকোলেট কিনে বাসায় যাব, সিলভার বেলস্ এর মিসেস এর কাছহে যাব 🙁
    কবে বুকে একটা চাপ নিয়ে সেটাকে আস্তে আস্তে নেমে যেতে দেখব 🙁
    কবে এরকম মমতা মাখানো একটা খেরোখাতা লেখবো 🙁

    নাহ এই সরকারের আলমে আর মনে হয় হইলোনা :bash: :bash:

    যারা এতদিন দেশটাকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে নেবার চেষ্টা করেছেন, যারা ভবিষ্যতে চেষ্টা করবেন তাদের সবার জন্য :salute: :salute:
    ফয়েজ ভাইকে :salute: এইরকম একটা লেখার জন্য


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  4. রায়হান আবীর (৯৯-০৫)

    *

    ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।

    *

    কারন আগামী কাল যখন ঘুম থেকে উঠব, শারমিনের নিজস্ব ভালবাসা মাখানো লাঞ্চ বক্স হাতে নিব, অফিসে আসব, সিসিবিতে ঢু মারব

    একদম আপনার মতো না- তবে আমার জীবনটাও একটা বৃত্তে আটকা পড়ে আছে। সারারাত নেটে থাকি- সেখানে দুই একটা সাইট খোলা থাকে। বারবার রিফ্রেশ করি। ভোরের দিকে ঘুমাতে যাই- দুপুরে উঠি। কিভাবে কিভাবে কেটে যায় বিকেল সন্ধ্যা- তারপর আবার রাত, আবার ভোর।

    *

    দেশটাকে যারা ভালোবাসের তাদের জন্য বিনম্র শ্রদ্ধা।

    জবাব দিন
  5. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)
    জরুরী অবস্থার সংগে আমি কেন যেন ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মিল খুজে পাই, অনেক যত্নে থাকা যায়, কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় যেতে যায় না। আমার কাছে সুস্থ অবস্থাই ভাল, বাইরে ঘুরব, বেড়াব, চিৎকার করব, যা-ইচ্ছা-তাই খাব, পেটের অসুক করবে, দুর্ঘটনা ঘটবে, হাত কাটবে, মাথা ফাটবে। কিন্তু আমি এভাবেই বেড়ে উঠতে চাই, বেড়ে উঠার যে কষ্ট আছে তা পেতে চাই। যতদিন থাকব, মাথা উচু করে থাকব।

    একেবারে মনের কথা, যদিও নিজে কখনও এভাবে ভাবতে পারিনি। আপনি ভাবিয়ে দিলেন।

    জবাব দিন
  6. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    বাদামতলী থেকে হেটে যাব সোজা পশ্চিমে, বিস্কিট নিতে হবে কি, জিহান আনার পছন্দ করে, গতকাল একটা কিনেছি, খেয়ে নিশ্চয় শেষ করতে পারেনি ও, শারমিন বলেছিল মটরশুটি যদি পাই, কিছু যেন কিনে নেই, খুব মজা নুডুলস দিয়ে খেতে, চোকো চোকো নিতে হবে, প্রতিদিন যেমন নেই, দুইটা নিলেই হবে, জিহানের হাতে দিলে খুব খুশি হবে, কপাল ভালো থাকলে দু-তিনটা আদর পেয়ে যাব গালে। আমার সমস্ত দিনের ক্লান্তি চলে যাবে তাতে। দুপুরে একবার কথা বলেছি, মা-মেয়ে বেশ ফুর্তিতে আছে মনে হল। স্কুলে ভর্তির ইন্টারভিউ ছিল আজ, কিছুই নাকি জানতে চায়নি “সিলভার বেলস” এর মিসেস।

    এরুম হয় নাকি ফয়েজ ভাই... ;;)

    জবাব দিন
  7. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    অনেকদিন পর খেরোখাতা পেলাম।
    অনেক অনেক ভালো লাগছে।

    অবিরাম যারা দিন বদলের চেষ্টায়রত তাদের জন্য :salute: :salute: ।

    আমার এমআইএসটি ক্লাসমেটদের মধ্যে আমার থাই পকেটে রাখা নোটবুক নিয়ে বেশ হাস্যরস চালু আছে। ওটা নাকি আমার মেকাপ বক্স 😕 !! কিন্তু পোলাপানগুলারে ক্যামনে বোঝাই যে,

    মানুষের মন বড় প্রতারক।

    আর সেজন্যই তো লিখে রাখার প্রয়াস 🙂 ।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  8. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    কাল সন্ধ্যায় পোস্টটা দিলেন তাই পড়ার সুযোগ হয়নি।
    আজ পড়লাম এবং আপনাকে :salute: :salute: :salute:
    মমতার অক্ষরে লিখেন আপনি..............


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  9. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)
    জরুরী অবস্থার সংগে আমি কেন যেন ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মিল খুজে পাই, অনেক যত্নে থাকা যায়, কিন্তু কেউ স্বেচ্ছায় যেতে যায় না। আমার কাছে সুস্থ অবস্থাই ভাল, বাইরে ঘুরব, বেড়াব, চিৎকার করব, যা-ইচ্ছা-তাই খাব, পেটের অসুক করবে, দুর্ঘটনা ঘটবে, হাত কাটবে, মাথা ফাটবে। কিন্তু আমি এভাবেই বেড়ে উঠতে চাই, বেড়ে উঠার যে কষ্ট আছে তা পেতে চাই। যতদিন থাকব, মাথা উচু করে থাকব

    বস জটিল লিখছেন :salute: :salute: :salute:


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  10. তাইফুর (৯২-৯৮)

    আপনার খেরোখাতা'র সবচেয়ে বড় আকর্শন মনে হয় এইটাই ... সব বর্ননা চোখের সামনে ভেসে উঠে ... জিহান'কে স্পষ্ট দেখতে পেলাম ... চকো চকো খাচ্ছে ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : তানভীর (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।