খেরোখাতা – ছোট হৃদয়ে, ছোট ছোট আশা

১।

যদি শেষ মূহুর্তে বাস কিংবা ট্রেন ধরতে পারাকে সফলতার মাপকাঠিতে ফেলা হয় তাহলে আমি জীবনে শতকরা ৮৫ ভাগের উপরে সফল একজন মানুষ।

দৌড়ায় দৌড়ায় বাস/ট্রেন মিস করেছি সর্বসাকুল্যে দুইবার, ফ্লাইট মিস করি নাই একবারও। ফ্লাইট মিস না করার পিছনে সবথেকে বড় যে কারন লুক্কায়িত আছে তা হল, বেশির ভাগ টাইমে ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ বিমানে। সকাল নয়টার ফ্লাইট পরদিন বিকাল চারটা অহরহ হয়, বাতিলও হয় প্রায়ই।

এর মধ্যে ট্রেন মিসটা বেশী হৃদয় বিদারক। সূবর্ণ এক্সপ্রেস। ঢাকা চিটাগাং রুটে সবচেয়ে আরামদায়ক হিসাবে আমি পেয়েছি সূবর্ণকেই, এসি সিগ্ধা। তবে টাইমটাই পুরা বিখাউজ, সকাল সাতটায় সূবর্ণ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যায়। বাসার নীচে ড্রাইভার ব্যাটা ছয়টায় হাজির হয়ে গেছে আমার বিখ্যাত ঝাড়ির ভয়ে। বউ-বাচ্চাও জামা কাপড় পড়ে রেডী। আমি নামাজ পড়ে একবার বাথরুমে যাই, আবার পনের মিনিট ঘুমাই, চা খাই, আবার বাথরুম যাই। আয়েশ করে গাড়িতে উঠি, স্টেশনে নামি, দেখি ট্রেন এখনো প্ল্যাটফর্মে আসেই নাই। কইষা গালি দিয়া এটেডেন্ট কে বলি “কিরে ভাই, সূবর্ণের টাইমেরও এখন এই অবস্থা, সাতটা বাজে, ট্রেন এখনো প্ল্যাটফর্মেই নাই” এটেডেন্ট মুচকি হাসি দিয়া আমারে কয়, ট্রেন তো চলে গিয়েছে। আমি তাজ্জব, নাহ দেশটা মাঝে মাঝে বিদেশ হয়ে যায়, আর আমার মত দেশি ভাইয়েরা বিপদে পড়ে। বউ আমার দিকে ট্যারা চোখে তাকায়, ড্রাইভার মুখ ঘুরাই হাসে, আর জিহান করে সাদাসিদা অভিযোগ, “টেন্নটা পচা, আমাদের নেয়নি”।

তবে দৌড়ায়-দৌড়াই ট্রেন বাস ধরছি মেল্লা বার। একবার তো মগবাজারের জ্যামে থেকে গ্রীনলাইনে ফোন, “ভাইরে জামে পড়ছি, আসতে লেট হবে” । গ্রীন লাইন হেব্বী ভাব নিয়া কয় “আপনার জন্য পনের মিনিটের বেশি দেরী করতে পারবো না”। তাই সই, খিচ্চা দৌড় দিল সি এন জি। প্রায় পনের-বিশ মিনিটের মাথায় কাউন্টারে পৌছায় দেখি ব্যাটাদের গাড়ির এসি নস্ট, হুদাই ভাব নিছে আমার সাথে ।

ভাইসব, আচ্ছা এই সব কেন বলছি, বলছি আমি, কারন এবার ঈদে বহুত আরামে আছি, চিটাগাং এ আছি, দৌড়াদৌড়ি নাই, পেপারে মনোযোগ দিয়া বাড়ি ফেরৎ মানুষের দূর্ভোগের খবর পড়ি, আর প্যাটে তালি দিয়া হাসি।

২।

আমরা হইলাম গিয়া মেলা ভাইবোন, আমি আবার সক্কলের ছোট। তাই ফ্যামিলিতে আমার দাম খুব একটা নাই। সারা জীবন বড়্ভাইয়াদের ছোট হওয়া জামা গায়ে দিয়া মাঞ্জা মারছি, আর ছোট যেহেতু, বাপের কাছে কিছু হইলেই নালিশের পর নালিশ। অবস্থা এই পর্যায়ে পর্যন্ত গিয়েছিল যে, আমাকে দেখে ভাইয়েরা দূর্দান্ত কিছু এডভেঞ্চার গোপন করা পর্যন্ত শুরু করে দিয়েছিল। বাপরে কইয়া দিব এই ভয়ে। অনেকটা দুধ-ভাত টাইপ ছিলাম আরকি।

আবার এটা ভাবা মোটেই ঠিক হবে না যে ছোট জন্য প্রচুর সালামী পাইছি। সালামী বেশি পাইতাম না। তবে সালাম করতাম প্রচুর, আরে আমি তো ন্যাদা পোলা, সালামী দিব কেডায়।

তবে এইবার দান উল্টায় ফেলার চেস্টা করছি। জনে জনে ফোন করে সবাইরে চিটাগাং আসার জন্য দাওয়াত দিয়েছি। দুইভাই আর এক বোন-দুলাভাই কবুল বলেছে, চিটাগাং আসবে। এইবার যদি বুঝাই দিতে পারি আমি বড় হয়েছি, তাহলে ঈদ সার্থক হবে। আপনারা সবাই আমার জন্য খাস দিলে দোয়া করবেন কিন্তু।

৩।

ঈদ-পূজা খুব কাছাকাছি। এইটা খুব মজার।

আমার যদি অনেক টাকা হত, তাহলে আমি সবার জন্য কিছু না কিছু কিনতাম। সবাই যাতে ঈদের দিন একটু হলেও ভালো খায়, ভালো জামা পড়ে, একটু আনন্দ করে এইসব হাবিজাবি। ইস আমাদের দেশে কত গরীব লোকজন, সবাই যদি এক দিনের জন্যও হলেও একটু মন খুলে হাসতে পারতো।

এইটা আমার মনের একদম ভিতর থেকে চাওয়া। কোন খুঁত নাই, একশ টাকা বাজি। আমি মানুষটা দূর্গন্ধ-যুক্ত হতে পারি, কিন্তু আমার এই চাওয়াটা অকৃত্রিম।

ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছি। ধীরে রজনী ধীরে।

আচ্ছা সব বাদ দিয়ে একটা গান শুনি আসেন। এ আর রহমানের। আমার খুব প্রিয় একটা গান। আপনার হিন্দীতে অরুচি না থাকলে শুনে দেখতে পারেন।

সবাইকে ঈদ মোবারক। শুভ শারদীয় শুভেচ্ছা।

২,৭৯৩ বার দেখা হয়েছে

৬৮ টি মন্তব্য : “খেরোখাতা – ছোট হৃদয়ে, ছোট ছোট আশা”

  1. হাসনাইন (৯৯-০৫)
    এইটা আমার মনের একদম ভিতর থেকে চাওয়া। কোন খুঁত নাই, একশ টাকা বাজি। আমি মানুষটা দূর্গন্ধ-যুক্ত হতে পারি, কিন্তু আমার এই চাওয়াটা অকৃত্রিম।

    :salute:

    পড়ে আরাম পাইলাম বস।
    ঈদ মোবারক। 🙂

    জবাব দিন
  2. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)
    ফ্লাইট মিস করি নাই একবারও। ফ্লাইট মিস না করার পিছনে সবথেকে বড় যে কারন লুক্কায়িত আছে তা হল, বেশির ভাগ টাইমে ফ্লাইট ছিল বাংলাদেশ বিমানে।

    :)) :)) :)) ফানি!!!

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ ভাই,
    আমার চরম পছন্দের একটা জিনিস এই "খেরোখাতা" ......
    ইফতারের পর সিসিবিতে ঢুকে এইটা দেখে ঝাঁপায়া পড়লাম।
    এবং যথারীতি ভালো লাগলো, আমার আগ্রহ সার্থক।

    আমিও ফ্যামিলির ছোট ছেলে। ৫ভাই বোনের ৪ নম্বর। আমার ছোটটা আমারে তেমন বেইল দেয় না, মাঝে মাঝে আমারে ৫ নম্বরই মনে হয়... আপনার লেখা পড়ে অনেক কথাই মনে হলো...

    আশা করি ভাইবোনদের নিয়ে খুব সুন্দর ঈদ কাটবে।
    অনেক শুভেচ্ছা রইলো শারমিন ভাবী আর জিহানসহ আপনাকে 🙂

    জবাব দিন
  4. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    খাস দিলে দোয়া করি ইনশাল্লাহ এবার ঈদ আপনার সার্থক হবে। আপনার ঈদ সার্থক হলে ছোট ভাইগুলির কথা একটু মাথায় রেখেন, আমাদের দাবী কিন্তু খুব বেশি না... :guitar: :guitar:

    জবাব দিন
  5. ইস আমাদের দেশে কত গরীব লোকজন, সবাই যদি এক দিনের জন্যও হলেও একটু মন খুলে হাসতে পারতো।

    সত্যিই যদি হইতো। আহারে...

    আমরা হেলভেশিয়া কেপ্সি তে চাইর পাঁচশ ট্যাকা অকাতরে দিয়া আসতে পারি, অথচ রিকশাওয়ালা দুই টাকা বেশি চাইলে থাপ্পড় মারতে হাত তুলি। ফকির ভিক্ষা চাইলে কই মাফ করেন।
    ঈদ হবে কিভাবে ওদের?

    তয় আমি রিকশাওয়ালাদের ভালা পাই না।

    জবাব দিন
    • সামীউর (৯৭-০৩)

      ফকিররে ৫০০টাকা দিলেও হে ফকিরই থাকবো। আজকে চ্যানেল ওয়ানের নিউজে দেখাইলো মৌসুমি ফকির গো লাইগ্যা নাকি লোকাল ফকির রা ভিক্ষা পায় না, হেরা প্রতিবাদ জানাইতাসে। আর রিকশাওয়ালারাও তো সব নবাবপুরের নবাব!

      জবাব দিন
      • ফয়েজ (৮৭-৯৩)

        @ সামীউর

        ভিক্ষা-বৃত্তি এখন একটা পেশার মত হয়ে গেছে। তাদেরও সিন্ডিকেট আছে, গ্রুপিং আছে।

        আমি অবশ্য এভাবে দেখিনা ব্যাপার গুলো, আমি দেখি আমি কি করতে পারছি তাদের জন্য, বাকী তারা সেটা ভালোভাবে ব্যবহার করলো কিনা সেটা একান্তই তাদের ব্যাপার।

        এভাবে ভাবলে জটিলতা কমে যায় অনেক।


        পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

        জবাব দিন
  6. সামীউর (৯৭-০৩)

    আজকে সকালে সিলেট আসলাম, ৯টার সময় বাসা থেকে বের হয়ে সায়েদাবাদ কাউন্টারে গিয়ে টিকিট কিনে ৫ মিনিট পরেই বাস, তাও বাসে সাকুল্যে ১৮/২০ জন যাত্রী।সাড়ে ৪ ঘন্টায় সিলেট। উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা বোধ হয় ঈদের আগে এমন পরিস্থিতি কল্পনাও করতে পারে না।

    জবাব দিন
  7. নাজমুল (০২-০৮)

    লেখাটা পড়ে খুব ভালো লাগলো :clap:
    কারন বলতে গেলে আমিও সবচাইতে ছোট আমার বাসায় 😀
    আমার ছোট কোন ভাই বোন নাই B-)
    কিন্তু সমস্যা হইলো কোনো বড় ভাই বোন ও নাই 🙁

    জবাব দিন
  8. দিহান আহসান

    ঈদ মোবারক ভাইয়া 😀

    আপনাদের চাঁদ রাতে ফুন দিসিলাম, কিন্তু বুঝতে পারলাম না, লাইনটা গেলোই না 🙁
    ভালো থাকুন, সবাইকে নিয়ে ভালো মত ঈদ কাটুক আনন্দে 😀

    জবাব দিন
  9. তৌফিক (৯৬-০২)

    ঈদ মোবারক ফয়েজ ভাই। ভালো আছেন? ভাবী আর ভাতিজিকে ঈদের সালাম দিয়েন। অনেকদিন পর আপনার খেরোখাতা পড়লাম। 🙂

    চিটাগং আসলে কিন্তু আপনারে ডিস্টার্ব দিব। 🙂

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।