ডাক দিয়ে যাই

আচ্ছা, আমি মরে যাব আর তিনঘন্টা পড়ে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু হবে আমার। আমি জানি আমি নির্দোষ, এবং আমি এও জানি আমার কোন ভুলটার জন্য আমাকে ফাঁসিতে যেতে হচ্ছে। আমার প্রিয়তমা স্ত্রী এবং সন্তান আছে, অথবা আমি মাত্রই বিয়ে করেছি, অথবা আমার বউ অনাগত সন্তানের আশায় দিন গুনছে, অথবা, —–অথবা, এগুলো কিছুই নয়, বেঁচে আছেন শুধু আমার বৃদ্ধ মা-বাবা, তসবী জপে জপে আশায় বুক বাধছেন, হয়তো এই মাঝ রাতেও।

কালকে নতুন একটা দিন শুরু হবে, একটা পুরো নতুন সকাল। হয়তো কুয়াশা থাকবে কিছু প্রথমে, কিংবা ——কিংবা ঝুম বৃষ্টির সকাল, অথবা শুরু থেকেই প্রচন্ড গা-জ্বালানো রোদ। এসব কোন কিছুই কোন অর্থ আর বহন করে না আমার কাছে, কিংবা হয়তোবা করে। কিন্তু কেউ জানছে না আমি মরে যাচ্ছি, না আমার প্রিয়তমা, সন্তান, প্রিয় বন্ধু, বাবা মা, কেউ না। আমি এখন বেঁচে আছি, এবং কিছুক্ষন পড়ে আর থাকবো না, এটাই বাস্তবতা।

চিঠি লিখবো কি এই সময়, শুধু এক লাইনেই, “ আমি চলে যাচ্ছি” কিংবা সাথে আরেকটু যোগ করে “ পারলে ক্ষমা করে দিও” বা আরেকটু যোগ করে “সন্তানদের দেখে রেখো, ওদের বলো তাদের বাপি তাদেরকে খুব ভালোবাসতো। আর তুমি শক্ত থেকে, ওদের জন্য হলেও, কারন এখন থেকে তুমিই বাবা এবং মা”। আরেকটু যোগ করি এর মাঝে “ বাবা মা কে দেখে রেখো” অথবা “তোমাদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারলাম না, পারলে, ক্ষমা করো”।

অথবা হতে পারে আমার নতুন বিয়ে, আমি লিখে দিতে পারি “ তুমি তোমার ব্যাপারে যা খুশি সিদ্ধান্ত নিতে পার”।

আরও কিছু সময় বাকী আছে, কিছু আম খাওয়া যেতে পারে।

ফাঁসির মঞ্চের দিকে যেতে যেতে কি দিতে যেতে পারবো সান্তনা, যারা সরকারী দায়িত্ব পালনের জন্যই আমার ফাঁসি দেখতে এসেছে, আর এখন আমাকে দেখে কাঁদছে। বলতে পারবো কি, “মন খারাপ করো না”, বলতে পারবো কি দরাজ গলায় “ নিংশঙ্ক চিত্তের চেয়ে জীবনে আর বড় সম্পদ নেই – আমি তার অধিকারী। আমি আমার জাতিকে তা অর্জন করতে ডাক দিয়ে যাই” ।

নিজ হাতে ফাঁসির রজ্জুটা কি দিতে পারবো গলায়, এত সাহস কি আমার হবে?

আহারে, কি দেশে জন্মেছি আমি?

২৪ টি মন্তব্য : “ডাক দিয়ে যাই”

  1. তানভীর (৯৪-০০)

    এইটা তাহলে আপনার লেখার নতুন স্টাইলের আউটপুট!

    স্টাইলটা ভালো, কিন্তু লেখাটা এতো ছোট কেন? কেন যেন মনে হল আরও কিছু লিখতে পারতেন!

    আপনাকে দিয়েই হবে ফয়েজ ভাই। :thumbup:

    অফটপিকঃ ফ্যান্টাসী ফুটবলে তো আপনার অবস্থা আমার চেয়েও খারাপ হইতেছে! ;)) ;))

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)

    হুম। আমারো একই অভিযোগ। আরেকটু বড় করা যেত 🙂

    কর্ণেল তাহেরের ফাঁসির সময়টুকুর বর্ণনাটুকু অনেক আগে কোথায়‍ ‍‍যেন পড়েছিলাম। চোখ ভিজে উঠেছিল।


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    "বাঙালী জাতির জন্য উদ্ভাসিত নতুন সূর্যের আর কত দেরী! না, আর দেরী নেই-নেই, সূর্য উঠল বলে। এ দেশ সৃষ্টির জন্য আমি রক্ত দিয়েছি। সেই সূর্যের জন্য আমি প্রাণ দেব যা আমার জাতিকে আলাকিত করবে, উজ্জীবিত করবে এর চাইতে এর চাইতে বড় পুরস্কার আমার জন্য আর কী হতে পারে।"

    (এই চিঠির বানান ও যতিচিহ্নের ব্যবহার তাহেরের)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাহিদ (১৯৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।