খেরোখাতা – তুহিন, এই পোষ্টটা তোমার জন্য

অনেকদিন আগে, একটা চেইন গ্রুপ মেইল পেয়েছিলাম, বয়স অনুযায়ী গর্ব করার মত কাজের একটা লিষ্টি ছিল ওখানে। যতদূর মনে পড়ে অনেকটা এরকম ছিল

৩ বছরঃ প্যান্টে হিসু না করা।
১০ বছরঃ নতুন নতুন বন্ধু তৈরী করা।
১৮ বছরঃ নতুন নতুন বান্ধবী তৈরী করা।
৩৫ বছরঃ টাকা কামানো।
৫৫ বছরঃ নতুন নতুন বান্ধবী তৈরী করা।
৭০ বছরঃ নতুন নতুন বন্ধু তৈরী করা।
৮০ বছরঃ প্যান্টে হিসু না করা।

এগুলো কেন লিখলাম জানি না। কয়েকদিন থেকেই মনটা ভীষন রকমের অন্ধকার হয়ে আছে। মন খারাপ করা যাকে বলে। এই বয়সের সংগে এটা অনেক বেমানান। আর আমিও সেই অর্থে তেমন আবেগ প্রবন লোক নই।

হয়ত মন ভালো করার জন্যই লিখলাম এগুলো।

জীবন টা কেটে যাচ্ছে খড়কুটোর মত, নদীর স্রোতে ভেসে চলা খড়কুটো, শিকড় নেই যার। ভীষন রকমের ভেসে চলা।

অর্থহীন মনে হচ্ছে সবকিছু।

অদ্ভুত ভাবে উলটে যাচ্ছে সবকিছুই। নির্বাচিত সরকার এলে হাওয়া ঘুরবে জানতাম, কিন্তু এত দ্রুত এভাবে ঘুরবে ভাবতেও পারিনি। আমরা আসলেই আবেগী জাতি। আবেগ দিয়ে বাঁধতে চাই সবকিছু, ন্যায় অন্যায় সব। এটাকে আবার ফেলেও দিতে পারিনা, আবেগী বলেই আমরা ভাষার জন্য রক্ত দিতে পারি, বল্লম নিয়ে যুদ্ধে নামি, বাঁশ দিয়ে কেল্লা বানাই, মহিষের শিংগা নিয়ে চিৎকরে করে ডাকি, “জাগো বাহে কোন্ঠে সবাই”, আবেগী বলেই অতি হিসেব ছাড়াই স্বাধীনতার জন্য সবকিছু ছেড়ে দেই।

আমরা আবার শান্তি প্রিয়ও, আর নিজের শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই জন্য শত অন্যায়েও চুপ করে থাকে আমাদের বিবেক। অন্যে চুরি করছে করুক না, আমার জিনিস তো আর সে চুরি করছে না।

নিজের বিবেককে যদি দাঁড়ি পাল্লায় মাপা যেত, বেশ হত। বিবেক মাপার একটা মাপকাঠিতো বেরুত। কিংবা এখনতো আছে একটা, কারও বিবেক বিক্রী হয় পাচ হাজারে, কারও বা এক লাখে, কেউবা কোটির নীচে নামেই না। কেউ খায় চেটে, কেউ বেটে। কেউ খায় গোগ্রাসে, আর কেউবা গুদামে গুদামে।

দূর শালা, মনে হচ্ছে, জন্মেই পাপ করে ফেলেছি বিরাট।

যে শিক্ষক, বুদ্ধিজীবি, কবি ও কেরানী প্রকাশ্য রাজপথেই হত্যার প্রতিশোধ চায় না,
আমি তাকে ঘৃনা করি।

আহা, যদি নিজের রক্তে ভিজিয়ে দিতে পারতাম রাজপথ।

কেউ যদি ভালোবেসে খুনী হতে চান, তবে তাই হয়ে যান। উৎকৃষ্ট সময় আজ বয়ে যায়।

উপরে উল্লেখ্য করা বয়সের পোষ্টে, ১৮ আর ৩৫ এর মাঝামাঝি এ রকম কিছু একটা থাকলে বেশ হত।

২৩ টি মন্তব্য : “খেরোখাতা – তুহিন, এই পোষ্টটা তোমার জন্য”

  1. রবিন (৯৪-০০/ককক)
    আমরা আবার শান্তি প্রিয়ও, আর নিজের শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেই জন্য শত অন্যায়েও চুপ করে থাকে আমাদের বিবেক। অন্যে চুরি করছে করুক না, আমার জিনিস তো আর সে চুরি করছে না।

    :boss: :thumbup:

    জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    উপরে উল্লেখ্য করা বয়সের পোষ্টে, ১৮ আর ৩৫ এর মাঝামাঝি এ রকম কিছু একটা থাকলে বেশ হত।

    ২৫ বছর : নপুংসক হও
    ৩০ বছর : বিবেকের কপাট বন্ধ রাখো
    (প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ)


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    Fantastic! ধন্যবাদ যে তুহিনকে নিয়ে পোস্ট লিখলেন, ও যা করেছে আমি মনে করি ওকে নিয়ে আরও চার পাঁচটা ট্রিবিউট পোস্ট লেখা হলেও সেটা মাত্রাতিরিক্ত হবে না।

    অনেক কথাই ভালো লাগলো, শান্তি বিঘ্নিত হবার ভয়ে গুটিয়ে থাকার যেই ব্যাপারটা বললেন এটাকে আমি শান্তিরক্ষার অদম্য ইচ্ছা না বলে মেরুদন্ডহীনতাই বলি। এটা আমাদের জন্য কষ্টকর যে আমাদের মত superb retardant of rights, reason, law and social value এর উদাহারন বোধহয় মহাবিশ্বে বিরল। আমার মনে হয়না যে আমরা এমন হতে চাই, বা এমন হওয়াটা কখনোই ভালো। পুরুষ বাঁচবে পুরুষের মতো, otherwise, lets loose 'em, chop 'em off, shall we? এটা আমার দর্শন আর কি, ব্যক্তিগত। এটাই স্বাভাবিক যে যত বুড়ো হতে থাকবো এর ধার ততই কমতে থাকবে। তবে অন্তত আমি আমার ক্ষেত্রে এটা কখোনই ঘটতে না দেবার চেষ্টাই করবো।

    জবাব দিন
  4. আদনান (১৯৯৪-২০০০)

    গতকাল পড়ে কি মন্তব্য করব বুঝতেছিলামনা । আজকেও তথৈবচ । জীবনটা অনেক ছোট, আর আমরা সবকিছু সমআধান করতেও পারবনা । যতটুকু সাধ্যে আছে করে যেতে হবে । ভিতরের ক্রোধটাকে একদম নিভিয়ে ফেলবেন না । কি লেখতে কি লেখলাম! ভাল থাকবেন ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুলতপু (৯৬-০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।