গত ৬ই অক্টোবর রায় হওয়ার পর ফেলানীর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা ভয়ংকর অমানবিক এবং পৈশাচিক ছবিটা প্রায় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এভাবে বার বার এই ছবিটা দেয়ার মানে কি? আমরাই বা এত অমানবিক কেন? একবার চিন্তা করুনতো ফেলানীর বাবা মার কথা। তাদের কেমন লাগছে পত্রিকায় বার বার এই অস্বাভাবিক ছবিটা দেখতে? লেখার সাথে ছবি দিতে হবে ভাল কথা কিন্ত তাই বলে বার বার এই ছবিটা কেন? ফেলানীর পরিবারের কাছে কোন পারিবারিক ছবি নেই? বা একটা প্রতিকী ছবি কি লেখার সাথে দেয়া যায়না? আজকে ফেলানীর পরিবার যদি সমাজের উচু লেভেলের কেউ হত তাহলে কি বার বার এই অস্বাভাবিক ছবিটা প্রকাশ হত? নাকি ফেলানীর পরিবার গরিব বলে এমন হচ্ছে? বুঝালাম ঐ ছবিটা প্রকাশের দরকার ছিল কারন দেশের এবং বিশ্বের মানুষকে সীমান্ত পরিস্থিতি বোঝানোর জন্য কিন্তু সেই সময় তো গত হয়েছে অনেক আগেই তাহলে কেন আবার সেই দু:খটাকে বার বার মনে করিয়ে দেয়া। অনেক টিভি চ্যানেলে দেখেছি মৃত মানুষের ছবি ঝাপসা করে রাখা হয় বা অস্বাভাবিক মৃত ব্যাক্তির মুখমন্ডল দেখানো হয়না। এখানেও কি সেরকম কিছু করা যেত না? এই ছোট মেয়েটি আপনার,আমার মেয়ে হতে পারতো বা বোন হতে পারতো। কেমন লাগতো তখন কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকা আপনার বোন বা মেয়ের ছবি দেখতে? আমরা কি মৃত ব্যাক্তিকে একটু সম্মান জানাতে পারিনা? অনেকেই আমার বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন সেগুলো নীচে তুলে ধরলাম।
“অনেকেই বলেছেন এ ছবিটা দেশপ্রেম জাগায়, ঘুনে ধরা মরচে পড়া দেশের প্রতি ভালবাসাকে জাগ্রত করে, ঘুষখুর কে প্রশ্নে ফেলে, দেশ বিক্রেতার বিবেককে কষাঘাত করে।”
” গত ৪২ বছর ধরে পাকিস্তানিদের বর্বরতার ছবি আমাদেরকে ও আমাদের ভবিষৎ প্রজন্মকে ওদের অত্যাচারের কথা মনে করিয়ে দেয়! ওদের প্রতি তীব্র ঘৃণার সৃষ্টি হয়, ঠিক তেমনি এই ছবিটা সব সময় দেখতে চাই, কিভাবে আমার বোনটাকে মেরেছে! ”
“এই ধরনের ছবি দেয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ব্যাবসায়ী ও ভারত দরদিদের বেশি বেশি করে দেখান উচিত।”
“ফেলানীর ঝুলন্ত দেহ বাংলাদেশের সাথে ভারতের সমস্ত অন্যায়ের প্রতীকী ছবি।”
এবার আবার আমার কথাতে আসি।নিজের দেশপ্রেম জাগাতে ফেলানীর কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলানো ছবি রাখতে হবে? আমাদের মনে ঘৃণা এবং ক্রোধ জন্মানোর জন্য বার বার এই ছবিটা প্রদর্শন করতে হবে?এই ছবি না দেখলে আমাদের মনে দেশ প্রেম জাগবেনা? মুক্তিযুদ্ধের যেসব মাবোনেরা নির্যাতিত হয়েছিলেন তাদেরকে কি হাতে ছবি নিয়ে ঘুরতে হবে যে,দেখো পাকিস্তানীরা আমাদেরকে কি করেছে। এসব দেখে পাকিস্তানীদের ঘৃণা কর। এসব না দেখলে কি আমাদের মনে ঘৃণা ক্রোধ জন্মাবেনা? আর ফেলানীতো ছিল ১৪বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক একটা মেয়ে। আমরা কিরকম অমানবিক। যেখানে ফেলানীর লাশ গুলি করে অনেক্ষন ঝুলিয়ে রাখার জন্য এবং না নামানোর জন্য দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে সেখানে আমরা কিনা এই ঝুলন্ত লাশটিকে অন্যের কাছ থেকে কৃপা পাওয়া এবং নিজেদের ঘৃণা ক্রোধ জন্মানোর জন্য ব্যবহার করছি!!!! যা হবার তা হয়েছে। একবার শুধু ফেলানীর মা বাবার যায়গায় নিজেদের বসান।কেমন লাগবে বার বার বিভিন্ন যায়গায় এই ছবিটা দেখতে। সন্তান তো গেছে তাদের। তারাই ভাল বুঝতে পারছে কেমন লাগছে তাদের।
এই ছবি দিলে ডিউরেক্সের মতো আরাম কইরা চুষীলগিরি @@@ যায়।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
(সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
রাজীব ভাই,আপনি যদি আরো সরাসরি কমেন্ট করেন তাহলে বুঝতে সুবিধা হয়।
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি
গণমাধ্যমকে থামানোর মত কোন প্রাকৃতিক, মানবিক শক্তি এই "গনতান্ত্রিক" পৃথিবীতে আছে বলে আমার জানা নেই! 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
ধন্যবাদ মোকাব্বির। একটা মজার সত্য কথা বলার জন্য।
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি
ভাইয়া,
আমি পুলিশে চাকুরি করি, তাই মৃতদেহ দেখা আমার রুটিন কাজগুলোর একটি।প্রায় তিন বছর হয়ে গেলো , তাও কেন জানি এই দৃশ্য ঠিক সহজে নিতে পারিনা।লাশ দেখলেই বুকের ভেতরে হাহাকার জাগে-আহারে, না জানি কোন মায়ের সন্তান!
অথচ সবচাইতে খারাপ লাগে যখন ডেডবডির কাছে তার আত্মীয়স্বজন যখন বুকফাটা আর্তনাদ করে আহাজারি করছে, ঠিক তখনই ক্লিক ক্লিক করে মৃত ব্যক্তির মা/বোনের কান্নারত ছবি তোলা হচ্ছে-নিউজটতে কিছুটা 'ইমোশনাল টাচ" দিতে।
মানুষ হিসেবে নিজের উপর খুব ঘৃণা ধরে জানেন?
অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।সোজা প্রিয়তে 🙂
ধন্যবাদ ভাই।তুমি তোমার একটি মানবিক গুনাবলি উম্মোচন করেছ এটাই বা কয়জন করে।
যুক্তি,সঠিক তথ্য,কমন সেন্স এবং প্রমাণের উপর বিশ্বাস রাখি