একটি স্ফটিকের পতন…

একটা আকাশ। সেখানে অনেক মেঘ, কালো। আর অনেক নিচে তোমার পৃথিবীতে ঝড়োবাতাস। গাছপালাগুলো মাটিতে প্রায় নুয়ে পড়ছে। পরাজিত হচ্ছে বারবার ওই মেঘমিছিলের সাথে লড়াইয়ে। আকাশ জুড়ে বিজলি খেলছে। মুহুর্তেই আকাশটার বুক চিড়ে দিচ্ছে অসম্ভব শক্তির এক একটা বজ্র। আর নিচে একটা শালিক, শান্ত ডানায় ভর করে উড়ে চলছে দিন শেষে তার নীড়ে। হঠাৎ বাতাস থেমে যায়। বৃষ্টির সেই ঝড়ের হাজারো মেঘের ভিড় থেকে প্রথম ফোটাটি মুক্ত হয়ে পড়তে শুরু করে এক অনন্ত যাত্রায়। প্রতি মুহুর্তে অতিক্রম করছে এক একটি বায়ুস্তর আর বেড়ে যাচ্ছে তার পতনের গতি। হঠাৎ ফোটাটি আবিষ্কার করে ঠিক তার নিচেই শালিকটার ডানা।

একটা ছলাৎ শব্দ। ভেজা শালিকটার ডানা চুয়ে আরও বিশুদ্ধ হয় সে। পড়তে থাকে আবারো। ভেবেছিল মাটিতে আছড়ে পরাটা অন্যান্য বারের মতই সাদামাটা হবে। কিন্তু না। মর্ত্যের পৃথিবী থেকে সেই ঝড়ের আকাশটা যে একটা জলপরী দেখছিল। অবাক হয়ে ভাবছিল কেমন হবে বৃষ্টির প্রথম ফোটাটি ?

আর সেই ফোটা, পানির গুটি কয়েক অনুর ভিড়ে অবাক চোখে তাকিয়ে দেখে জলপরীটাকে। একটা উজ্জ্বল আল ঠিকরে বের হচ্ছে তার শরীর থেকে। সেই আলো পানির ফোটার মাঝে প্রতিফলন-প্রতিসরণে একটা স্থিতি লাভ করে। যে মুর্তিটার আবছা অবয়ব গড়ে উঠে তাতে কি যে মহিমা, বলতে পারিনা। নিজেকে সংবরন করতে না পেরে সেই ক্ষুদ্র অসহায় ফোটাটি কিসের তানে যেন মুক্তার মত সেই ছায়াটার দিকে পড়তে থাকে। না, শুধু অভিকর্ষই না। সে টানে আরো কিছু ছিল।যাকে অতিক্রম করতে না পেরে ফোটাটি পরাজয় স্বিকার করে, আলতো করে স্পর্শ করে জলপরীর কপাল। তারপর গড়িয়ে পড়ে চিবুক বেয়ে থুতনির ঠিক নিচে। জলপরীর শরীর স্পর্শে সুবাসিত হয় সেই একটি মাত্র ফোটা। শিহরিত হয় জলপরীও তার স্পর্শে, একটা শীতল অনুভুতিতে। কিন্তু ফোটাটিকে নিজের ঠোটে মেখে নেয়ার আগেই নিষ্টুর পৃথিবী টেনে নেয় তাকে। জলপরীর পায়ের কাছে ধুলার মাঝে হারিয়ে যায় সে। শেষ হয় তার দীর্ঘতম পতনের। আর উপরে জলপরী হয়ে থাকে নির্বিকার। বুকের বা পাশটায় যেখানে হৃদপিন্ডের অবস্থান, সেখানটায় একটা চিনচিনে ব্যাথা অনুভব করে সে। যদিও পরক্ষনেই মিলিয়ে যায় সেটা। তারপর আকাশ থেকে ঝড়ে পরে অজস্র বৃষ্টির স্রোত। অসংখ্য ঝাপটায় ভিজিয়ে দেয় জলপরীর শুধু ঠোটই না, সারা দেহকে। খানিক আগের বেদনাতা মিলিয়ে যায় নিমিষেই।তোমরা কি জানো সেই হতভাগ্য প্রথম ফোটাটি কে?
সেটা আমি।

আমি জানিনা আর কতবার নিয়তির রোদে পুড়ে বাষ্প হতে হবে আমায়। কতবার ভুপাতিত হতে হবে তোমাদের রংগীন পৃথিবীতে। কিন্তু আমার খুব সাধ হয়, খুউব। যেন আমার প্রতিটা পতন হয় সেই শুভ্র কপালটায়, যেখানে ভালবাসার চুমুতে কষ্ট মুছেছিলাম।

৮৪৪ বার দেখা হয়েছে

৯ টি মন্তব্য : “একটি স্ফটিকের পতন…”

মওন্তব্য করুন : আদীব (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।