কনফেশন

বাজারে প্রচলিত দুর্নাম আছে আমি নাকি খুবই দৃষ্টিকটু কিংবা শ্রুতিকটুভাবে মুখের ওপর সত্য কথা বলে ফেলি, যেটা নাকি বলা উচিত নয়। ছোটবেলা থেকেই আমি বেকুব প্রকৃতির ছেলে। কথার মারপ্যাঁচ আর কাজ আদায় করে নেয়ার চিকন বুদ্ধি বরাবরই আমার নিরেট শূন্য মস্তিষ্ককে পাশ কাটিয়ে যায়। তাই সোজাসুজি কয়েকটা কথা বলতে চাইছি, যা শুনতে আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।

হ্যাঁ, শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম দিন থেকেই আমি মনেপ্রাণে এর সমর্থক ছিলাম। সশরীরে সেখানে উপস্থিত থেকেছি অন্তত দশদিন। শ্লোগান দিয়েছি, চিৎকার করেছি, গলা ফাটিয়ে গান গেয়েছি, জ্বলজ্বলে মশাল মিছিলের সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছি, আবার কিছু জ্ঞানী লোকের মতে “অগ্নি উপাসনা”-য় সামিল হয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে ঈমান হারিয়েছি।

তবে শাহবাগ আন্দোলন আমাকে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা আরও অনেকের মত “ফেইসবুক সেলিব্রিটি” বানায়নি। দেদারসে বিতরণ হওয়া বিরিয়ানি আর খিচুড়ির একটি নলাও আমার পাকস্থলিতে জায়গা করতে পারেনি। লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা ভিন্ন অন্য কোন দল, মত কিংবা চ্যালাপ্যালার পতাকার নিচে একটি বারের জন্যও আমি দাঁড়াইনি। কেউ আমাকে শাহবাগে যেতে বলেনি, রাজাকারের ফাঁসি চেয়ে কিছু লিখতে বলেনি। সম্পূর্ণ সজ্ঞানে নিজের বিচার বিবেচনার উপর দাঁড়িয়ে আমি রাজাকারবিরোধী আন্দোলনের সাথে সামান্য হলেও যুক্ত থেকেছি।

আন্দোলন ছিনতাই হয়ে গেছে আর আমাদের আবেগ নিয়ে মনোপলি খেলা হচ্ছে- বোকা ছেলে হলেও এটা বুঝতে আমার বেশিদিন লাগেনি। প্রচণ্ড অস্বস্তি, বিরক্তি এবং বিস্ময় নিয়ে খেয়াল করি যে এই আন্দোলনকে আমি আর সমর্থন করতে পারছি না। কারণ কী???

অসংখ্য কারণ আছে। বছর প্রায় শেষ হয়ে আরেকটি ফেব্রুয়ারি যখন হাতছোঁয়া দূরত্বে, তখন নিশ্চয়ই এই কারণ গুলো আর কারো অজানা নয়। তবে আমি ব্যক্তিগত কারণকেই প্রাধান্য দিয়েছি। আমার মনে হয়েছে আমাকে দাবার ঘুঁটির মত ব্যবহার করা হয়েছে। আমি নতুন কোনো মুজিবের উত্থান দেখতে যাইনি, পিচের রাস্তায় আসন গেঁড়ে বসে আমি নতুন কোনো মুক্তিযোদ্ধা সাজতেও যাইনি। আমি আমার “চেতনা” বিক্রি করে পিঠে “শাহবাগী” ট্যাগ লাগাতেও যাইনি। গিয়েছিলাম শুধুমাত্র সুবিচার আদায় করে নিতে। আমি রাজাকারের ফাঁসি চেয়েছিলাম, নতুন কোনো নেতা/নেত্রী/মতবাদের মুরিদ হতে চাইনি।

আপনি স্বীকার করুন আর নাই করুন, একটি শাহবাগ আন্দোলনের জন্ম না হলে কাদের মোল্লার ফাঁসি এই বাংলাদেশে কোনোদিনও হতে পারতো না, এটা ধ্রুব সত্য। কখনো হাস্যকর আর কখনো গায়ে চুলকানি ধরানো কার্যক্রম এখন গণজাগরণ মঞ্চ থেকে বের হচ্ছে জানি। তবে এই মঞ্চের যতটুকু ভালো, যতটুকু আমার চোখে গদিপ্রেম নয় বরং দেশপ্রেম, ততটুকুকে আমি সমর্থন করেই যাবো।

এখন আপনি আমাকে ছাগু/পাগু/ঘাগু/ভাদা/পাদা/লীগ/দল/এরশাদ, যা খুশি ডাকতে পারেন। আই ডোন্ট মাইন্ড। আমি জানি আমি হুজুগে মাতাল নই, আমার মেরুদণ্ড অতটা পুতুপুতু নয়।

ইমরান এইচ সরকার আমার নেতা নয়, হাসিনা-খালেদাও আমার নেতা নয়। আমার নেতা শেখ মুজিব। আমার চেতনা গণজাগরণ মঞ্চ নয়, আমার চেতনা বাংলাদেশ।

৯৮৩ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “কনফেশন”

  1. বাহ, রিফাত। ভাল লিখেছ। স্বচ্ছ চিন্তার প্রকাশ। ইদানিং দেখা যাচ্ছে, যে কোন মতামতের প্রকাশ শেষমেশ সুশীল স্টান্টবাজিতে গিয়ে ঠেকছে। তোমারটা সেদিকে যায়নি। [ খুশি হতে পার ! 🙂 ]

    জবাব দিন
  2. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    আমার নেতা শেখ মুজিব। আমার চেতনা গণজাগরণ মঞ্চ নয়, আমার চেতনা বাংলাদেশ।

    :clap: :clap: :clap:


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  3. হারুন (৮৫-৯১)

    ইমরান এইচ সরকার কবে যে তেঁতুল হুজুরের প্যাদানি খাবে সেই অপেক্ষায় আছি।
    আমি যদি এখন শুধু এইগুলি ছাগু/পাগু/ঘাগু/ভাদা/পাদা/লীগ/দল/এরশাদ হতে চাই তুমি অন্তত মাইন্ড খাবানা, তাইনা


    শুধু যাওয়া আসা শুধু স্রোতে ভাসা..

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোস্তাফিজ (১৯৮৩-১৯৮৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।