টুকিটাকি ২

টুকিটাকি ১
১.
প্রিন্সিপাল ছিলেন সোহরাব আলী তালুকদার স্যার, আর ভাইস প্রিন্সিপাল মিজান স্যার। মিজান স্যারের তেল বাজির ক্ষমতা ছিল মোটামোটি তেলেসমাতি পর্যায়ের। যেকোনো পরিস্থিতিতে তিনি প্রিন্সিপালকে তেলে চুবানোর ক্ষমতা রাখতেন। একদিন প্রিন্সিপাল স্যার হাউজে রাউন্ড দিচ্ছেন। সাথে ভাইস প্রিন্সিপাল মিজান স্যার, হাউস মাষ্টার, ডিউটি মাস্টারের এক বিশাল বহর। প্রিন্সিপাল স্যার হঠাৎ ক্লাস ১২ এর এক ক্যাডেটের রুমে ঢুকলেন। এটা ওটা ভুল ধরার পর লকারের দিকে তাকিয়ে দেখেন সেখানে একটা মগে বেশ কয়টা টুথ ব্রাশ রখা। স্যার প্রশ্ন করলেন –
-এত ব্রাশ দিয়ে কি কর?
– স্যার দাত ব্রাশ করি।
-এত্তগুলা ব্রাশ লাগে?
– মানে স্যার সকালে একটা ইউজ করি আর রাতে অন্য একটা ।
-কিন্তু এখানে তো ৪টা ব্রাশ।
– স্যার ২টা ব্যাক আপ হিসেবে রাখছি।
– হুম। মিজান সাহেব, একজন মানুষের এত্তগুলা ব্রাশ লাগে?
– “না স্যার । প্রশ্নই আসে না। আমি স্যার ক্লাশ থ্রীতে থাকতে একটা লাল ব্রাশ কিনছিলাম, সেইটা এখনো আছে। “ – মিজান স্যারের চটপট জবাব।

২।
বসাক স্যার, মানে সুরেশ রঞ্জন বসাক স্যার খুব রাশভারী মানুষ। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন সব মন্তব্য করতেন যে, হাসতে হাসতে আমাদের পেটে খিল ধরে যেত আর যাকে উদ্দেশ্য করে বলতেন তার অবস্থা হতো ছেড়ে দে মা কেদে বাচি। তো স্যার একদিন ক্লাশে এসে আমাদের ইংরেজী বানান লিখতে দিয়েছেন। আমরা লেখা শেষ করে খাতা জমা দিয়েছি। স্যার একে একে সবারটা দেখে দেখে ফেরত দিচ্ছেন, টুকটাক মন্তব্য করছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন। হঠাৎ সামান্য বিরক্ত হয়ে তিনি বললেন এই, এটা কার খাতা হে? আইসক্রীম বানান ভুল করেছে ?
স্যারের একদম সামনে বসা ইমরান হুট করে বলে ফেলল- “স্যার ও মনে হয় কোনোদিন আইসক্রীম খায়নি” ।
স্যার আরো বেশী বিরক্ত হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললেন – “গোবর বানান শিখতে হলে কি গোবর খেতে হয় নাকি? ”

৩।
প্যারেন্টস ডেতে আমাদের এক ক্লাশমেটের ভাই, ভাবী আর ভাতিজি এসেছ। তিন বছরের এই ভাতিজি চাচার এতই ভক্ত যে ছুটি শেষে ওকে সে কলেজে আসতেই দিতে চায় না। নানা ভাবে বুঝানোর চেষ্টা করে যখন সবাই ফেল মারে তখন আমার এই ক্লাশমেট এই ভাতিজিকে বুঝায়- চাচ্চু যদি কলেজে না যায় তাহলে স্যার তাকে মারবে। তুমি কি চাও চাচ্চুকে কেউ মারুক? তারপর নিতান্ত বাধ্য হয়ে ভাতিজি চাচ্চুকে কলেজে যাওয়ার অনুমতি দেয়। যাইহোক এসব কারণে এই “স্যার” প্রজাতি সম্পর্কে ভাতিজির মোটেই সুখকর কোন দৃষ্টিভংগি গড়ে উঠে নি। যাইহোক কলেজে ঘুরাঘুরির এক পর্যায়ে হঠাৎ হাউস মাষ্টারের সাথে দেখা। আমার ক্লাশমেট ভাই ভাবী সবার সাথে স্যারের পরিচয় করিয়ে দিল। স্যার নিজে থেকেই পিচ্চির সাথে কথা বলতে গেলেন। পিচ্চির গাল ধরে আদর করে দিয়ে তিনি বললেন “আররররররর এই ছোট্ট বাবুটা কে? ”
তখন আমার ঐ ক্লাশমেট তার ভাতিজিকে বলল “আম্মু স্যার কে সালাম দাও। বল স্লামুয়ালাইকুম, স্যার তোমাকে অনেক আদর করবে”
– পিচ্চিটা তখন স্যারের হাত থেক নিজেক সরিয়ে নিয়ে অবিশ্বাসের চোখে তার চাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল “এইটা তোমার স্যার হয়? আমি তো ভেবেছি স্যার মানে বাঘ!”

২,৯৫৬ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “টুকিটাকি ২”

  1. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    সোহরাব স্যার এখন আমাদের এখানে বি এস আই স্কুলের প্রিন্সিপাল। সে তো শিশুমহলে দেখি খুব্বি জনপ্রিয়!!! 😮
    বসাক স্যারকে আমরাও পাইসিলাম। তোমার লেখা পইরা বিমলানন্দ পাইলাম!!!!


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
  2. কিবরিয়া (২০০৩-২০০৯)

    =)) =)) :just: :pira:


    যেমন রক্তের মধ্যে জন্ম নেয় সোনালি অসুখ-তারপর ফুটে ওঠে ত্বকে মাংসে বীভৎস ক্ষরতা।
    জাতির শরীরে আজ তেম্নি দ্যাখো দুরারোগ্য ব্যাধি - ধর্মান্ধ পিশাচ আর পরকাল ব্যবসায়ি রূপে
    - রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।