দু’টি গানের ইতিবৃত্ত

সংগীত সাধনার বিষয়, ভালবাসার বিষয়। কখনো কখনো সঙ্গীত পরিশ্রমের বিষয়ও । যার প্রমাণ আমরা পেয়েছি সিলেট ক্যাডেট কলেজের ২০০৭ এর ৫ম পুনমিলনীতে। ওল্ড ক্যাডেটস এসোসিয়েসন সিলেট (ওকাসের) নিবেদিত প্রাণ বড় ও ছোট ভাইয়েরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন Reunion এর প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে তখন রংগমঞ্চে আবিভাব ঘটে সবুর ভাইএর। আমাদের কলেজের ৫ম ব্যাচের এই ব্ড় ভাই দেশে এসেছেনই শুধু Reunion এ অংশগ্রহন করার জন্য। ৮ নভেম্বর আমাদের Reunion, আর তিনি ওকাসের অফিসে পদধুলি দেন ৫ নভেম্বর বিকাল ৫টায়। সাথে ছিলেন ৯ম ব্যাচের নাজমূল ভাই।একথা সেকথার পর তিনি জানতে চাইলেন আমাদের ওকাসের কোন theme song আছে কিনা? আমরা বল্লাম না ভাইয়া নাই, এরপর তিনি বল্লেন এই Reunion উপলক্ষে কোন song করা যায় কিনা? আমরা অত্যন্ত উতসাহের সাথে বল্লাম না ভাইয়া করা যায় না। কারণ হাতে সময় আছে মাত্র ২দিন। এরমধ্যে গান লেখা, সুর করা, music করা, গাওয়া আর সবশেষে recording আসলেই সম্ভব না।

সবুর ভাই আমাদের চেয়েও উতসাহিত হয়ে বল্লেন , ধর একজন গান লিখল আজ রাতেই, কাল সকালে ধর সুর দেয়াও হয়ে গেল এরপর সন্ধায় recording করলেই তো হয় , তাই না?
ভাইয়ার ধর তক্তা মার পেরেক ধরনের কথা শুনে আমরা এইবার একটু ভয় পেয়ে গেলাম। কারণ গান লিখবে, এমন কবি / গীতিকার তো আমাদের মাঝে এখনো জন্ম হয় নাই। তাছাড়া এই শেষ মুহূতের ব্যস্ততার মধ্যে শিল্পী খুজে বের করাও কঠিন। আর খুজবেই বা কে? আমরা ঝেড়ে কাশলাম, ভাইয়া গান লেখার মানুষই তো খুজে পাচ্ছি না ।
ভাইয়া ধমক দিয়া বল্লেনঃ “ধুর মিয়া ,তোমারে কি রবীন্দ্র সঙ্গীত লিখতে কইছি? ক্যাডেট কলেজের গানে আবার গীতিকার লাগে নাকি? কলেজে যা যা ভাবতা আর বলতা সেইগুলাই একসাথে লেইখা ফেল, তারপরে সুর দিয়া গাইলে দেখবা অইটাই গান হইয়া গেছে।“

গান লেখার এই সহজ সূত্র পেয়েও আমরা খুব একটা উতসাহ বোধ করি না কারণ গান গাওয়ানোর জন্য ২/৪ জন গাতক ম্যানেজ করা গেলেও recording করানোটা আমাদের কাছে এক কথায় যাকে বলে সম্ভবনা। কারণ recording ব্যাপারটা স্টুডিওতে করাতে হয় এই তথ্য ছাড়া আমরা আর কিছুই জানি না। কোথায় সে স্টুডিও, ক্যাম্নে বুকিং দেয়, খরচ পাতি কেমন কিছুই আমাদের ধারণা নাই। অতএব গান recording না করানো গেলে আর এত পরিশ্রম করে যে কোনই লাভ নাই সেই কাচের মত স্বচ্ছ সত্যটা আমরা ভাইয়ার কাছে জোড় গলায় তুলে ধরি , এবং নিশ্চিত হয়ে যাই যে ভাইয়া এইবার theme song চ্যাপ্টারের সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। আমরা বিজয়ীর ভংগীতে ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে থাকি। তিনি সিগারেট এর প্যাকেটটা টেবিলে রেখে, নিজে একটা নেন, আমরাও আয়েশী ভঙ্গীতে একটা করে সিগারেট নিয়ে তাতে আগ্নি সংযোগ করি। কেঊ কেঊ অনাগত theme song এর অদেখা সুর, কথা, শিল্পী নিয়ে আনমনে ভাবতে থাকে আবার কেঊ কেউ হয়ত ঝমেলা থেকে মুক্তির আনন্দে গুন গুন করতে থাকে । ওকাস অফিসের ধোয়ায় আচ্ছন্ন ছোট্ট রুমটা আরো আছন্ন হতে থাকে। এরই মাঝখানে হঠাত সবুর ভাই বলে উঠেন , “তাইলে recordingটাই একমাত্র সমস্যা? ”আমরা সবাই বলি জ্বী ভাইয়া।
“হু ‘এইটা কোন সমস্যা না’,-সবুর ভাই ঘোষনা করেন, “ কারণ আমার নিজেরই স্টুডিও আছে। কাল কখন তোমরা recording করতে চাও বল। স্টুডিও রামপুরায়। আসার আগে আমারে একটা ফোন দিবা খালি। “
আমরা টাস্কি খেয়ে একে অপরের দিকে তাকাই। ভাবটা এমন যে, এইটা কি হইল ? এইটা কি সমাধান নাকি আরো জটিল সমস্যা, আমরা ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। Reunion এ theme song থাকবে, অভিনব একটা ইভেন্ট যোগ হবে এইটা ভাবতে যেমন আনন্দ লাগছিল তেমনি ভয় পাচ্ছিলাম কিভাবে এত্ত অল্প সময়ে ওকাস আস্ত একটা গান প্রসব করবে ? শেষপযন্ত গান লেখাই হয়ত হবে না, আর যদি লেখা হয়ও সুর করবে কে? সুর করা সম্ভব হলেও গাতক না পাইলে গাবে কে? এইসব ভাবতে ভাবতেই কাজে নেমে গেল, ওকাসের কমী বাহিনী । আমাদের অনুরোধে সবুর ভাইয়ের সাথে আসা নাজমূল ভাই ওকাস এর থীম সং হিসাবে একটা গান বা কবিতা লিখে দেয়ার অংগীকার করলেন। আর আমরা অঙ্গীকার করলাম ১৬তম ব্যাচের অনুপ ভাইয়াকে দিয়া ঐ গান সুর করাবো। প্রয়োজনে তার বাসায় গিয়া বসে থাকবো। তারপর কিভাবে কি হইল সেটা আলোচনার বিষয় না। বিষয়টা হল ৬ তারিখ আমরা যখন সবুর ভাইএর স্টুডিও থেকে recording শেষ করে বের হই তখন রাত ৩টা বাজে, আর recording এ ঢুকেছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা ৬টার দিকে।

ঐদিন মোট ২টা গান recording করা হয়। ১ম টা ওকাসের থীম সং আর ২য় টা 5th reunion song. গান ২টাই দিয়া দিলাম। ভাল না লাগলেও ভাল বইলেন প্লীজ।

অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যারা গান দুটির জন্ম দিয়েছেন তারা হলেন-
* সবুর ভাই ৫ম ব্যাচ – ধারণা, উতসাহ, পৃষ্ঠপোষকতা
১। অনুপ ভাই ১৬ তম ব্যাচ – সুর, সঙ্গীত ও মূল শিল্পী
২। নাজমূল ভাই-৯ম ব্যাচ – ওকাস থীম সং এর গীতিকার
৩। কাউসার – ২৪ তম ব্যাচ – 5th reunion song এর গীতিকার
৪। শাওন (২০তম ব্যাচ, সামীউর ও সাইফ ২২তম ব্যাচ)- এরা সাইড ভোকাল মানে সহশিল্পী ।

১,৭৫৯ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “দু’টি গানের ইতিবৃত্ত”

  1. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    রি-ইউনিয়নের গানটা দারুণ। নস্টালজিক। :boss:

    তুই তো দেখি ভালোই গান গাস :grr:


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  2. জিহাদ (৯৯-০৫)
    আমরা অত্যন্ত উতসাহের সাথে বল্লাম না ভাইয়া করা যায় না। কারণ হাতে সময় আছে মাত্র ২দিন

    :khekz: :khekz:

    গানটা এখনো শোনা হয়নাই। শুনে মন্তব্য করবো 😀


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  3. ফরিদ ভাই, কালকের পোস্টে যাদের নিয়া বললাম যে কমেণ্ট কইরাই খাল্লাস, লেখা নাই-----------

    তাদের দুইজন আজকেই পোস্ট দিয়া বসছে B-) B-) B-)
    কাকতাল নাকি আমার কথায় জানিনা। তয় ভাব বাড়লো আমার 😀 😀

    গল্প শুইন্না সবুর ভাইরে :salute:

    আপনারেও :salute:

    গান শুনিনাই এখনো, শুইন্না আসি 🙂 🙂

    জবাব দিন
  4. শাওন (৯৫-০১)
    বিষয়টা হল ৬ তারিখ আমরা যখন সবুর ভাইএর স্টুডিও থেকে recording শেষ করে বের হই তখন রাত ৩টা বাজে, আর recording এ ঢুকেছিলাম সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা ৬টার দিকে।

    ফরিদ,
    মনে আছে সেই দিনের কথা......যখন বের হই তখন গাড়ি আর পাওয়া যায়না....পথে আবার দুই দফা টহল পুলিশের নানা জিজ্ঞাসা...আমিতো ভয় ই পাইয়া গেছিলাম...রিইউনিয়নটা না আবার মিস হয়!! ....বাসায় যাওয়ার কোন উপায় ই নাই এত্তো রাতে...তাই সোজা ইউনিভির্সিটির হলে...পৌছতে পৌছতে ভোর সাড়ে ৪টা............রাতে আবার সিলেট রওনা দিতে হবে (ওকাস এর অগ্রবর্তী দল হিসাবে)..কি ব্যাস্ততার মাঝেই না কাটছিলো পরের কয়টা দিন..আর কামরুল ভাইতো এতই ব্যস্ত ছিল স্যুভেনীর আর ডিরেক্টরির এডিট ও প্রিন্টের কাজ নিয়ে যে বেচারী কেউ যাতে কাজে ডিস্টার্ব করতে না পারে তাই ফোন ই বন্ধ করে রাখছিলো


    ধন্যবাদান্তে,
    মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান শাওন
    প্রাক্তন ক্যাডেট , সিলেট ক্যাডেট কলেজ, ১৯৯৫-২০০১

    ["যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি"]

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কামরুল হাসান (৯৪-০০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।