এক শহরের রূপকথা

আমি যখন ছোটো ছিলাম
এক শহরে গিয়েছিলাম,
দেখি সেথায় দিন দুপুরে,
মানুষ রূপে খাসি চরে ।

ছুটছে সবাই ত্রস্ত পায়ে
এদিক ওদিক ডাইনে বায়ে
বুদ্ধি সেথায় মেলছে পাখা,
ভাবনাগুলো মিলিয়ে রাখা
হঠাৎ পেলাম বাচ্চাটাকে,
ক্রিংক্রিঙ্গিয়ে কেবল ডাকে,
তারে শুধাই, “সঙ্গে নিবি?”
অনেক অনেক লজেন্স পাবি ।

লাভ লজেন্সের লোভেই কিনা?
যায় না বাবু আমায় বিনা ।
রওনা দিলাম অচিনপুরে,
সেই শহরটা অনেক দূরে ।

পৌঁছে গেলাম সেই শহরে,
রাখল তারা সবুজ ঘরে ।
ঘুরতে সেথায় নেইকো মানা,
ওমা !এ দেখি চিড়িয়াখানা !

হরেক জাতের পশুর মেলা,
এ দেখি ভাই আজব খেলা!
হনু আছে ,বানর আছে
বনের রাজা সিংহ আছে ।

অদ্ভুতুড়ে সেই শহরে,
ঘোড়ার পিঠে বগা ওড়ে ।
দেয়ালের ওই পিঠ ছাড়িয়ে,
উঠছে টিকি তরতরিয়ে ।

চলছে কোবরা সাপের খেলা,
ওই যে দেখো ওই গরিলা !
হঠাৎ সবাই “ভাগো ! ভাগো!”
ছুটছে সবাই পাল্লা লাগো ।

“কি হয়েছে? আসছে কে ভায়?
দাঁত দিয়ে সে মানুষ কোবায় !
ও বাবারে ! পালাই তবে,
এমন জগত নাইকো ভবে ।

হঠাৎ দেখি একটা জিনিশ !
কেউ কি তোরা তারে চিনিস?
শুধাই তারে “কতোয় যাস হে?
চুপে শুধু মুচকি হাসে ।

বুঝলাম সে ভাড়ায় চলে,
দেখব পরে সময় হলে ।

আজব সকল নিয়ম হেরি,
ছেলের নাম-নি শাত কাদেরি!
এমনও হায় হয়রে ভবে?
কে দেখেছে কোথায় কবে?
হঠাৎ দেখি সবাই অচল,
গরগরিয়ে আসছে রে বল ।

বিনামুল্যে বলের মেলা !
জমবে কষে ক্রিকেট খেলা ।
ধরতে গেলাম একটা যখন
চিৎকারেতে কাঁপল গগন ।
“ধোরনা ভাই ও বলগুলি!”
কেন? নাহয় নাইবা বলি?

যেতে যেতে হঠাৎ পথে,
জোকার এলো সোনার রথে,
সে নাকি আজ লাঞ্চ করেনি,
তাই নাকি আজ চাঁদ ওঠেনি ।

এটা কি জোকস? কেমন কেমন?
এটাই নাকি ডিসপ্রোপোরশন !

হঠাৎ শুনি ঢিশুম ঢিশুম,
হেথায় দেখি সিনেমা ধুম !
শুধাই তোদের নায়ক কে রে?
ওই যে জশিম আসছে তেড়ে ।

মারবে নাকি? পালাই রে ভাই !
এমন শহর জগতে নাই ।

এই শহরের পথের বাঁকে,
ঘেউ ঘেউ করে মানুষ ডাকে !
যে ভাই সেরা সব আকামে,
সবাই চেনে বাংলা নামে ।

শান্তিতে যে নোবেল পাবার,
নাম দিয়েছে তার লুসিফার !
চলতে চলতে তীব্র আলোক,
ঝলসে গেলো হঠাৎ দুচোখ !

দুহাত দিয়ে দুচোখ ঢেকে,
দেখি অনেক কষ্টে থেকে
দাড়িয়ে আছে একটি ছেলে,
মুখখানাতে সূর্য জ্বেলে ।

শুধাই আশে ,”এ কে রে ভাই?”
“এই তো মোদের প্রভার জামাই !”
উরিব্বাবা ! আর কতো কি!
নাম না জানা অনেক বাকি ।

ধুত্তরি ছাই ! এই যে দেখো ,
যাচ্ছি ভুলেই, একটু লেখো।
পার হয়েছি সবুজ; সবাই
চোখ টিপে কয় ওইদিকে ভাই,
দেখবি সেথা এক কাহিনী
লাল ভবনের লালচে রানী!

উমম ! এবার মনের মতন ,
জয় করি চল লাল ওই ভবন ।

ঢুকব নাকি ভাবছি কেবল,
বেরিয়ে এলো একটি ছাগল !
বের করে দেয় পাকড়ে ঘাড়,
ছাগল নাকি পাহারাদার !

ধুর! যাবো না যা লাল ওই বনে,
রানী আছে আর কোন ভবনে?

হলুদে যা । সে বিদেশি
কিন্তু সেথায় রাজা বেশি ।

থাকুক তবে, কাজ নাই ভাই
রাজার সাথে লড়াই বাধাই?

ফুটবলেতে বিপুল ত্রাসে
সর্প নাকি বেরিয়ে আসে ।
মন বলে ভাই কোথায় গেলা
ফুটবল কি সাপের খেলা?

বাস্কেটেতে ‘বাডি’ একাই,
জয় করে সব দেখাই দেখাই,
ভলিবলের কঠিন ঠেলা,
ডজ মেরে কয় ‘এটাই কেলা’ ।

এগিয়ে দেখি তিন জনেরে,
একই সাথে ঘুরে ফিরে,
গুটুর গুটুর গল্প যে বেশ,
তারাই নাকি থ্রী স্টুজেস !

হঠাৎ দেখি রুলার হেঁকে ,
আসছে কে যে একটু বেঁকে
একি আপদ! কোপ দিবে কি?
বাঁচতে চাইলে পালাও দেখি ।

সেই থেকে ভাই ছুটছি কেবল ,
একটুও নয় আবোল-তাবোল ।

সেই শহরের গল্প কথা
কল্প তো নয় সত্য গাঁথা
এই কথা নয় যেমন তেমন
এই দেখো না কাঁদছি কেমন!

ইচ্ছে হলে যেও সেথায় ।
আমায় যেন ডেকো না তায় ।

গল্প লিখো সেই শহরের
গল্প লিখো অনেক ভোরের
গল্পে লিখো তাদের কথা
আমার হৃদয় বাঁধা যেথা

কথা দিয়ে এসেছি ভাই,
তাদের কথা জানবে সবাই ।
দোহাই তোমার লিখতে হবে
সেই ছেলেরা রাগবে তবে ।

হাসির সাথে কান্না ভরে
প্লিজ… লিখে দিও খুবটি করে……

৭৬৯ বার দেখা হয়েছে

৩ টি মন্তব্য : “এক শহরের রূপকথা”

  1. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    তোমার এটা কি ছড়া ক্যাটাগরীতে পরে? আমার তাই মনে হলো। পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছিল মায়েরা বাচ্চাদের ঘুম পাড়ানোর সময় যেরকম আকদুম বাকডুম শোনায় সেরকম কিছু একটা। অনেক ছন্দ আছে। আমি অবশ্য ছড়া বিশেষজ্ঞ নই। ভালো থেক।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    বাহ্‌! জমজমাট রূপকথা।
    লাগামছাড়া কল্পনার সার্কাস দেখা হলো।
    কিছু কিছু জায়গায় ছন্দ ধরে রাখা যায়নি মনে হলো।
    'নিশাত কাদেরি' নামের কোন তাৎপর্য আছে নাকি?

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শিশির (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।