গুরুরঙ্গ ০১

আমরা ক্লাস সেভেনে যখন আসলাম তখন একজন স্যারকে দেখতাম ডাইনিং এর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতে। পরে জানলাম উনি মেস ওআইসি। আরও জানলাম আমাদের ভাসানী হাউসেরই এক ব্যাচমেটের দূরসম্পর্কের নানা। ছোটখাট একজন লোক। খুব আন্তরিকতার সাথে বায়োলজী পড়াতেন। শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক হঠাত্‍ একদিন ক্ষেপে উঠলেন যখন ডাইনিং এর এককোনা থেকে কেউ পোকা বলে চেচিয়ে উঠল। একটু পর পর একেক জায়গা থেকে পোকা শব্দটি ভেসে আসছে আর স্যার ক্রমাগত ক্ষেপে যাচ্ছেন। একসময় মনে হল পুরো ডাইনিং ভেঙ্গে পড়বে পোকা শব্দটিতে। আমি ভয়ে ভয়ে পাশে বসা গাইডকে জিজ্ঞেস করলাম সবাই এমন করছে কেন? উনি মিটিমিটি হাসি দিয়ে বললেন পোকাকে বীট দেওয়া হচ্ছে। আমার তো আক্কেল গুড়ুম পোকাটাইবা কে আর বীটই বা কি।

আরও কিছুদিন পর অনেক কিছুর মানে শিখে ফেলেছি। পোকা কার নাম, বোতল কার নাম, ফেকু কার নাম তা মুখস্ত হয়ে গেছে। স্যারদেরকে হরদম সেইসব নামেই ডাকা হত। মাঝে মাঝে আসল নামটাই ভুল হয়ে যেত। এর মাঝে একদিন বায়োলজীর স্যারটা আমাদের হাউসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আমাদের ৩টা হাউস একই বিল্ডিং এ। উপরে সিরাজী, দোতলায় তিতুমীর, নিচে ভাসানী। এর ভেতরে শুধু ভাসানী হাউসে গ্রীল দেয়া। ৩তলার তারিকরা স্যারকে দেখে চেচিয়ে উঠল পোকা পোকা। বলেই হাওয়া। স্যার থমকে দাঁড়ালেন। এদিক ওদিক খুঁজলেন। কাওকে না পেয়ে আরও ক্ষেপে উঠলেন। স্যারের গলায় একটা ক্যারেকটারিস্টিক টোন ছিল, সেই টোনে চেঁচাতে লাগলেন, কোন শুওরের বাচ্চা বললিরে সাহস থাকলে সামনে এসে বলে যা বেয়াদবের দল। আর তারিকরা তখন উপরে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।

একদিন ঘটল সবচেয়ে রোমহর্ষক ঘটনা। আমরা ক্লাস নাইনে উঠেছি। সবারই দুটো করে পাখা গজিয়েছে। কারও কারও আরও কয়েকটা বেশি। সেরকম একজন আমাদের আসিফ। ওরও একটা পেটেন্ট নাম আছে বোগদা। এক বর্ষাকালের নাইট প্রেপে গেল কারেন্ট চলে আর আমরা হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠলাম। আসিফের আতিশয্য মনে হয় একটু বেশিই ছিল। সে আরেকজন ক্লাসমেটের হাতে টান মেরে বলল চল দোস্ত পোকাকে বীট দিয়ে আসি। সেই ক্লাসমেট তার হাতটা ধরেই থাকল। একটুর জন্যও আলগা হলনা চাপটা। এর মাঝে কারেন্ট চলে এল আর আমরা ভূত দেখার মত উঠলাম। স্যার আসিফের হাত ধরে আছে আর আসিফের অন্য হাতটা স্যারের ঘাড়ে। এরপর বগলের তলা থেকে ছাতাটা বের করে স্যার আসিফকে এমন পেদানোই পেদালেন তা আমাদের আজও মনে আছে। স্যারের এই নামকরনের কারণ অবশ্য আমরা খুঁজে পাইনি তবে টীজ করার জন্য স্যার ছিলেন সবার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এমনকি আমাদের ফিফটীন ব্যাচের আসিফ কবির ভাইতো পত্রিকাতে গল্পই লিখে ফেললেন ‘পোকা’ নামে। আমরা আমাদের সেই হাউসমেটের নাম দিলাম পোকার নাতি। জুনিয়র একটা ব্যাচের নভিসেস প্যারেড ছাউনিতে বসে দেখছি। আমাদের মাঝে হঠাত্‍ সুন্দর একটা ফুটফুটে বাচ্চার আবির্ভাব হল। জানতে পারলাম পোকার ছেলে। বদমাশ ক্যাডেটগুলো তাকেও রেহাই দিল না। নাম দিল মাকড়। পোকার ছেলে মাকড়।

৪,০০৮ বার দেখা হয়েছে

৪৬ টি মন্তব্য : “গুরুরঙ্গ ০১”

  1. আশহাব (২০০২-০৮)
    আমাদের মাঝে হঠাত্‍ সুন্দর একটা ফুটফুটে বাচ্চার আবির্ভাব হল। জানতে পারলাম পোকার ছেলে। বদমাশ ক্যাডেটগুলো তাকেও রেহাই দিল না। নাম দিল মাকড়। পোকার ছেলে মাকড়।

    :khekz: :khekz: =))
    ভাই, ছেলে দেখলেই সুন্দর মনে হয় :grr: :duel:


    "Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
    - A Concerto Is a Conversation

    জবাব দিন
  2. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    :khekz: :khekz: :khekz:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমরা কেলাস সেভেনে থাকতে স্ট্যাটিস্টিক্সের এক স্যার ছিলেন মেস ওয়াইসি,উনার ডাক নাম ছিল গরু- প্যারেড গ্রাউন্ডের সামনে দিয়ে উনি আর উনার ছেলে যাওয়ার সময় যথারিতি জনৈক ক্যাডেটের মন্তব্য- ওই দেখ গরু আর তার বাছুর যায়... 😮 😮

    জবাব দিন
  4. আমীন (০১-০৭)

    মজার ব্যাপার হল-আমার বায়োলজি ছিল না।তো একবার স্যার আমার নামে কাকে জানি বলছে আমি নাকি খুব বাজে।খালি শয়তানিতে পাকা আর বায়োলজি পরীক্ষায় নাকি ফেল করি।হা হা =)) হা

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফখরুল (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।