তুমি আমার নও

বাড়ী থেকে বেড়িয়ে জোরে একটা দৌড় দিয়েও বাসটা ধরতে পারলোনা ইমরোজ। আরো ৫০ গজ বাকী থাকতেই বুঝলো লাল-সাদা রঙের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’ লেখা গড়ীটা তার গতি পেয়ে গেছে। থেমে গেলো ইমরোজ । তাকিয়ে দেখলো দুটো গেটেই সবাই বাদুড়ের মত ঝুলছে। বাসটা ধরতে পারলেও তাতে উঠতে পারতো বলে মনে হয়না। ইমরোজ বাস ধরতে না পারলেও ঠেলা-ঠেলি করে, দাঙ্গা করে উঠতে তার ভালো লাগেনা। সবাইকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যাবার মত শক্তি তার আছে। কিন্তু সবাইকে মাড়িয়ে সে এ কাজ করতে চায়না।
দশ সেকেন্ড দাড়িয়ে থেকে বাসটার চলে যাওয়া দেখলো। কি আর করা! এখন হয় মিনিবাসে চড়ে যেতে হবে, না হয় স্কুটার নিতে হবে। পাবলিক বাসে উঠলে সময়মত ক্যাম্পাসে পেঁৗছে ক্লাস ধরতে পারবেনা। ঠিক করলো স্কুটারই ডাকবে।
এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে বাস স্টপেজের কাছে পেঁৗছেই দেখলো আরো একজন মানুষ চলে যাওয়া বাসের তাকিয়ে রয়েছে। মেয়েটি ঘুরে দাড়াতেই তার চোখে চোখ পড়লো। ওদের মাঝে দুরত্ব হবে দশ ফুটের মত। চৈতী! অভ্যাস মত তার মুখটা ওপর-নীচে ঈষৎ নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েই তার চোখ থেকে চোখ ফেরাতে পারলোনা ইমরোজ। চৈতীর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো সাগর-সমান একটা শস্য ক্ষেতের মধ্যে দিযে কার দিকে যেন দৌড়ে যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই তার শরীরের ভেতর একটা শক্তিশালী দৈবীক তরঙ্গ বয়ে গেলো। ঐ চোখে গত দু’বছরে সে অনেকবার তাকিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই তাকিয়েছে। আজকের চাউনি এ্যাকেবারেই নতুন, এ্যাকেবারেই অন্যরকম।
ইমরোজের বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো শেষ হয়ে আসছে। আর ক’দিন পর’ই পরীক্ষা, তারপর চলে যাবে এই কোলাহল ছেড়ে আরেক কোলাহলে। চৈতীকে সে দেখছে দু’বছর ধরে যখন চৈতী একই বিভাগে নতুন ক্লাস শুরু করেছিল। ইমরোজের গত ক’বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে চৈতী ছিল একটা ধাক্কা, একটা প্রানের ছোঁয়া। অনেক দেবীতুল্য মেয়ে সেখানে প্রতি বছরেই ভর্তি হয়, কিন্তু কখনো কাউকে দেখে এমন ধাআ লাগেনি। আহামরী সুন্দরী নয সে, তবে ইমরোজের মনে হয়েছে সামান্য পরিচর্যা করলেই গ্রীক পুরানের দেবী আফ্রোদাইতি’র পাশে জায়গা কওে নিতে পারবে চৈতী। আফ্রোদাইতি কত সুন্দরী ছিল ইমরোজ তা জানেনা, তবে তার যতগুলো ছবি সে দেখেছে, তা থেকে মনের মধ্যে একটা চেহারা এঁেক নিতে তার অসুবিধে হয়নি। চৈতীর সাথে আফ্রোদাইতির একটা অস্বাভাবিক মিল আছে।
স্বাভাবিক ভাবেই পরিচয় হয়েছে। দেখা হয়েছে অনেকবার। ক্যাম্পাসের করিডোরে, টিএসসিতে, ব্রিটিশ কাউন্সিলে, চটপটির গাড়ির পাশে। যতবার ওর দিকে তাকিয়েছে, ততবারই মাথা নেড়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। তার শুভেচ্ছার উত্তরে চৈতী তাকে হাসি দিয়ে ভিজিয়ে দিয়েছে। এই হাসির পর ইমরোজ আর ঠিক থাকতে পারতো না। অদম্য একটা আকর্ষণ তাকে ভিতরে ভিতরে এলোমেলো করে দিত। জানতো কাছে টানতে চাইলেই ঘনিষ্ঠতা বাড়বে। তবুও কখোনো কাছে টানেনি। কারন চেতী সঙ্গীহীন নয়, তার ভালোবাসার মানুষ আছে। ফাহিম। ওদের দু’জনকে ক্যাম্পাসের সব জায়গায় একসাথে ঘুরে বেড়াতে দেখেছে। সম্পর্ক ধ্বংস করতে চায়না ইমরোজ। মানুষকে সুখী দেখতে সে ভালোবাসে।
চৈতীর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝলো ধরা পড়ে যাবে।চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে হাত তুলে একটা স্কুটার থামালো। কপাল ভালো এমন সময় একটা স্কুটার খালি ছিল। ক্যাম্পাসে যাবার ভাড়া কত জেনে নিয়েই চৈতীকে চোখের ইশারায় ডাকলো। নিজের সাহসের প্রশংসা করলো সে। তাকে অবাক করে দিয়ে চৈতী “মন্ত্রমুগ্ধের” মত স্কুটারে উঠতে এলো। ইমরোজ তার আগেই উঠে বসেছিল। চৈতী উঠতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে ওর গায়ের ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লো। সামলে নিলো সংগে সংগেই, তবে লজ্জা পেলো, অপ্রস্তুত হলো। চৈতী ওদের দু’জনের মাঝে একটু ফাঁক রেখে বসার চেষ্টা করেও সফল হলোনা। হালকা একটা বেলী ফুলের ঝাপটা ইমরোজের মুখে বাড়ি খেয়ে একেবারে মাথার ভিতরে গিয়ে থমকে রইলো। চৈতীর শরীর থেকে উষ্ণ দূ্যতি তার গায়ের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। গাড়িটা চলা শুরু করলো কট্ কট্ শব্দে। রাস্তায় অন্যান্য গাড়ির শব্দ, অনেক কোলাহল- কোনো কিছুই আর ইমরোজের কানে ঢুঁকছেন। সে আর কিছু চিন্তা করতে পারছেনা, তবে বুঝতে পারছে সে একটা অন্যরকম বোধের ভেতর দিয়ে হাঁটছে।
স্কুটারের দূলুনী যেনো দু’জনের মাঝে উষ্ণতা আরো বাড়িয়ে দিলো। পথে একটাও কথা হলোনা। যেন, কথা বললেই মুহুর্তগুলো হারিয়ে যাবে। কলা ভবনের পেছন দিকের ফটকে এসে থামতেই চৈতী কোনো কথা না বলে এক পলক তাকিয়ে নেমে গেলো। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে দোতলায় গিয়ে ইমরোজ দেখলো তার ক্লাস শুরু হয়ে গ্যাছে। আর ঢুকতে ইচ্ছে করলোনা। ক্লাসের ভিতর তাকিয়ে মনে হলো সবাই আজ খুব রংচঙ্গে কাপড় পড়ে এসেছে। চৈতী তার ক্লাসে ঢুকে গ্যাছে। কয়েকবার কড়িডোওে এমাথা-ওমাথা করলো। চৈতীর ক্লাসের ভেতর দু’বার তাকালো, দু’বারই দেখলো চৈতী তার দিকে স্থির তাকিয়ে রয়েছে। ইমরোজ বুঝে গ্যালো আজ সে ধরা পড়ে গ্যাছে। ক্লাসের পুরো সময়টা বারান্দার রেলিং-এর ওপর বসে কাটিয়ে দিলো।
ততক্ষণে ফাহিমের ক্যাম্পাসে চলে আসার কথা। চৈতীর ভালোবাসার মানুষ। আটটার ক্লাস শেষ হতে না হতেই ফাহিম ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাস ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। তারপর চৈতীকে নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দিকে হারিয়ে যায়। আজ তাকে চোখে পড়ছেনা। অসুখ করেনি তো ? না এসে ভালোই হয়েছে।
চৈতীকে দেখলো ক্লাস থেকে বেড়িয়ে তার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে ঘুরে বারান্দা দিয়ে অন্যদিকে হাটা শুরু করলো। ইমরোজ বুঝলো। কোনোদিকে না তাকিয়ে কিছুটা দুরত্ব রেখে চৈতীর পিছে পিছে হাঁটতে থাকলো। সিঁড়ি দিয়ে নেমে কলাভবন থেকে বেরিয়ে রেজিস্টার বিল্ডিং এর মাঠের রাস্তায় যখন পড়লো, চৈতী তখন তার হাটার গতি কমিয়ে দিয়েছে। মনে হলো ইমরোজকে তার পাশে আসার একটা সুযোগ করে দিল। পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সে আবার চলা শুরু করলো। একসাথে হাঁটছে, চোখা-চোখি হচ্ছে, কথা হচ্ছে না। চৈতী হাঁটতেই থাকলো। ভাইস চ্যান্সেলরের বাড়ির সামনে দিয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিল হয়ে শহীদ মিনারের পাশ ঘেঁষে দোয়েল চত্বরে গিয়ে দাড়ালো দু’জন। চৈতীর যেনো হাঁটার নেশা পেয়েছে। ইমরোজও কিছু বলছে না; ওর সাথে হাঁটতে ভালো লাগছে। এ্যামন ভাবে সে কারো সাথে কখনো হাঁটেনি। নেশা গ্রস্থের মত টানা আড়াই ঘন্টা ক্যাম্পাসের সব পথ শেষ করে চেতী বাস স্ট্যান্ডের দিকে রওনা দিলো। দু’জনের কাউকেই কথা বলতে হচ্ছে না। একজনের ভাষা আরেকজন বুঝে যাচ্ছে। দু’জনেই বারোটার বাসে চড়লো। ইমরোজ ছেলেদের মধ্যে গিয়ে সীটে বসলো, চৈতী মেয়েদের দিকটাতে এমন ভাবে দাড়িয়ে রইল যেন ইমরোজ তাকে দেখতে পায়। তার প্রতি ইমরোজের মগ্নতা সে টের পেয়ে গ্যাছে।
পরদিন সবার সাথে দু’জনেই বাসের জন্য অপেক্ষা করছে। বাস এলো। সবাই উঠলো। চৈতী আর ইমরোজ উঠলোনা। বাস চলে যেতেই ইমরোজ ওর কাছে এগিয়ে গ্যালো। আজ দু’জনেই বেশ সহজ।
চৈতী বললো – “স্কুটার না, রিঙ্া নেব।”
ইমরোজ বললো ু- “ক্যাম্পাসে যাবনা।”
ফাহিমের কথা দু’জনেই ভুলে গ্যালো। আর পিছন ফিরে চাইতেই ইচ্ছা করলো না। পারলোও না।
তারপর দু’মাস কেটে গেলো উন্মত্যতায় – অপ্রকাশিত এক মহাকাব্যের অক্ষরে – অক্ষরে। ঘন্টার পর ঘন্টা একে অপরের দিকে অপলোক তাকিয়ে থাকা, চিবুকে চিবুক, ওষ্ঠে ওষ্ঠ, রোদে পোড়া, বৃষ্টিতে ভেজা – এসব নিয়ে ইমরোজ চৈতীর মাঝে বুঁদ হয়ে রইল। তার ক্লাস বন্ধ হয়ে গ্যাছে – এখন পরীক্ষা। চৈতীর উৎসাহে পড়াশোনার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে সে। সারারাত জেগে পড়ে। তবে তার আগে চৈতীর কাছে একটা করে চিঠি লেখে প্রতিরাতে। পরদিন তাকে দেয়।
এরই মধ্যে দু’জনেই দু’জনের বাসায় যাওয়া-আসা শুরু করেছে। বাবা-মা’দের সাথে পরিচয় হয়েছে। উভয় পরিবারই তাদের হাসি-মুখে বরণ করেছে। একদিন ইমরোজ যায় চৈতীদের বাসায়, পরদিন চৈতী আসে ইমরোজের আঙ্গীনায়।
ফাহিমকে নিয়ে তাদের অনেকবার কথা হয়েছে, কিন্তু কথার শেষ হয়নি। সেই দিনের পর চৈতীকে ফাহিমের সাথে কয়েকবার কথা বলতে দেখেছে ইমরোজ। দূর থেকে। প্রতিবারই ফাহিমকে মাথা নিচু করে চলে যেতে দেখেছে। ব্যাপারটা তার কাছে কষ্টদায়ক মনে হয়েছে। তাকে নিয়ে কথা পেরেছে চৈতীর কাছে। চৈতী বলেছে –
“ইমু, ওর প্রসঙ্গ আর আমাদের মাঝে টেনোনা।ফাহিম আমার জীবনে ছিল, এখন আর নেই। আমি তোমাকে ভালোবাসি।”
“কিন্তু তার ভালোবাসাকে তুমিতো উপেক্ষা করতে পারো না, পারো ?”
“দেখ , ভালোবাসা মানে কোন দাসত্ব নয়; আমি …….।”
“কিন্তু……।”
“কোন কিন্তু নয় ; সে অনেক ভালো ছেলে। কিন্তু আমি জীবনে ভালোবাসা চাই ; ত্যাগ নয়, স্বপ্ন চাই।”
ইমরোজ এ’নিয়ে আর কোন কথা বলেনি। চৈতীর মাঝে ডুব দিয়েছে – তার প্রতিটা ভঙ্গীমায় কবিতা খুঁজে পেয়েছে ; চিৎকার করে সারা দুনিয়াকে আবৃত্তি করে শুনিয়েছে। এভাবেই সে চৈতীর জাগতিক ও পরা-জাগতিক অনুভবকে পঁূজি করে ভেসে বেড়ালো, পাখিদের গানে-গানে, প্রজাপতির পাখার রঙে।
একদিন বিকেলে চৈতীদের বাসার ছাদের হলুদ সূর্যটা যখন কমলা রং নিয়ে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লো, ইমরোজ পরদিন দেখা হবার বাসনা আর প্রতিজ্ঞা নিয়ে চৈতীদের গেট ঠেলে বেড়িয়ে এলো। ডানে মোড় নিয়ে সদও রাস্তায় উঠতেই গলির মুখে একটা জটলা চোখে পড়লো। মনে মনে সে একটা রিঙ্া চাইছিল, জটলা নয়। অভ্যেস মত কাছে গেলো- ভিড় ঠেলে এগিয়ে গিয়েই দেখলো একজন মানুষ হাত-পা এলিয়ে চোখ বন্দ করে পড়ে আছে। মুখ থেকে তার ফেনা বেরুচ্ছে। ফেনার কারনে প্রথম দৃষ্টিতে চিনতে কষ্ট হলো। তারপর মানুষটার চেহারা প্রস্ফুটিত হলো।
ফাহিম !
মূহুর্তেই বুঝে গেলো কি ঘটেছে। দেরী না করে একটা রিঙ্া ভাড়া করে, সবাইকে সরিয়ে কাছেই আল-মদিনা ক্লিনিকের দিকে রওনা দিল। ডাক্তার জানালেন অনেক গুলো ঘুমের বড়ি খেয়েছিল , কিন্তু কোন বিপদ হয়নি। ইমরোজ তাকে সময়মত ডাক্তারের কাছে নিয়েছিল। ভাবলো চৈতীকে একটা ফোন করবে, কিন্তু এ ঘটনা দেখার পর মনটা এতোই ভার হয়ে আছে যে সেই ইচ্ছে চলে গেলো। ফাহিমকে ক্লিনিকে রেখে বাড়ি ফিরে আর কিছুই করতে পারলোনা ইমরোজ। বাড়ির ছাদে গিয়ে সারারাত নিজের সাথে সওদা করলো। ভালোবাসা কি পন্য ? কখোনোই না। তারপরও তাকে এই সওদার আনুষঙ্গিকতা শেষ করতে হবে। একটা মানুষ তার জন্য মরতে বসবে তা হতে পারে না। চৈতীকে ফাহিমের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। মন চাইছে না, কিন্তু মনোজগত বলছে – “ফিরিয়ে দাও।”
এ্যাতো তাড়াতাড়ি চৈতীকে উৎসর্গ করে দিতে হবে ইমরোজ ভাবতে পারেনি। আরেক জনের হৃদয় বাঁচাতে গিয়ে নিজের হৃদয় ভাংতে হবে। এই কষ্টের কাজটি করতে হবে। চৈতীকে আর কথা বলার সুযোগ দেয়া যাবেনা, নিজের সিদ্ধান্তটা ওর ওপর চাপিয়ে দিতে হবে। পরদিন চৈতীর সাথে দেখা হবে। সারারাত ধরে ভাবলো কিভাবে বলবে কথাগুলো।
চৈতীকে তার বাসার সামনে থেকে রিঙ্ায় তুলে নিয়েই বললো – “চলো তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাই।” চৈতী হেসে মাথা নেড়ে সায় দিলো। কিছুক্ষনের মধ্যেই আল-মদিনা ক্লিনিকের সামনে থামতেই সে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। ক্লিনিকের সামনে দাড়িয়েই ইমরোজ ওকে সব বললো – ফাহিমের কি হয়েছিল। দু’জনেই ফাহিমের কেবিনে গিয়ে দেখলো তার মা আর ছোট বোন বসে আছেন। বাবাও এসেছিলেন। চৈতীকে ফাহিমের প্রেমিকা হিসেবেই তাঁরা সবাই চেনেন। ওর মা চৈতীকে ধরে কেঁদে ফেললেন। সান্তনা পেয়ে কান্ন্া থামিয়ে তার মেয়েকে নিয়ে কেবিনের বাইরে চলে গেলেন চৈতীকে ফাহিমের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়ে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে চৈতী বিরক্ত, তারপরও ফাহিমের কাছে গিয়ে বসলো। ফাহিমের মুখে কথা নেই। হয়তো ইমরোজকে দেখেই কোন কথা বলছে না। ইমরোজ’ই নিরবতা ভাঙ্গলো –
“চৈতী, ফাহিম তোমাকে ভালোবাসে, সেজন্যই এমনটা করেছে। আমার মনে হয় ওর কথাগুলো তোমার শোনা উচিত।”
চৈতী কোন কথা বললো না। সে বুঝতে পারছে ইমরোজ কোন দিকে এগুচ্ছে। ইমরোজ থামলো না। ফাহিমের দিকে তাকিয়ে বললো –
“চৈতীকে ভালো না বেসে আমি থাকতে পারিনি। আমার এই ভালোবাসা তোমাকে দু:খ দেয়ার জন্য নয়, এ ছিল আমার প্রানের তাগিদে। এখন বুঝতে পারছি তোমাকে কষ্টে রেখে আমার ভালোবাসা প্রান পাবে না।”
“চৈতী কথা বলার জন্য মুখ খুললেও, ইমরোজ থামিয়ে দিলো। বললো –
“আমাকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমাদের তিন জনেরই প্রাণের তাগিদে। চৈতী, আমি বুঝে গ্যাছি – তুমি পুরোপুরি আমার নও। এই দ্বিধা মনে নিয়ে তোমার তোমায় ভালোবাসলে তোমায় ঠকানো হবে।”
চৈতীর চোখের কোন বেয়ে জলের ধারা স্পস্ট হতেই সে বললো – “চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
দু’জনে যখন ক্লিনিকের বাইরে এসে দাড়ালো, চৈতী ইমরোজের হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বললো – “আমাকে একটা কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়ে তুমি মহান মানুষের মতো বেড়িয়ে যাচ্ছো। তোমার এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম, কিন্তু মনে নিলাম না। আমাদের দেখা আবারো হবে।”
ইমরোজ চৈতীর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

৪,৭০৫ বার দেখা হয়েছে

৪১ টি মন্তব্য : “তুমি আমার নও”

  1. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    চৈতী চরিত্র পড়ার পর আবারো মনে হলো "মেয়েদের স্বয়ং ঈশ্বর ও বুঝতে পারে নাই আমি তো কোন ছাড়"
    কেনো ফাহিম কে ছেড়ে আসলো? কেনো কি হলো? ধুর মাথা ঘুরে।

    জবাব দিন
  2. মইনুল (১৯৯২-১৯৯৮)

    সুন্দর গল্প ইকরাম ভাই ........
    ওদের তিনজনের জন্যই খারাপ লাগলো .... তবে ফাহিমের মতন মানুষদের বুঝতে পারা উচিত কখন সন্মানের সাথে পিছু হটে আসতে হয় (bow out with honor যেটাকে বলে) .......

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হায়রে মেয়ে মানুষ :no:

    আচ্ছা, চৈতি যেখানে ফাহিমের সাথে রিলেশনশীপই চালিয়ে যেতে পারলো না, সেখানে সারা জীবনের সংসার কিভাবে চালাবে?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  4. যেসব লাইন খুব ভাল লেগেছেঃ

    সে অনেক ভালো ছেলে। কিন্তু আমি জীবনে ভালোবাসা চাই ; ত্যাগ নয়, স্বপ্ন চাই।”

    ভালোবাসা কি পন্য ? কখোনোই না।

    এখন বুঝতে পারছি তোমাকে কষ্টে রেখে আমার ভালোবাসা প্রান পাবে না।”

    “আমাকে একটা কষ্টের মধ্যে ঠেলে দিয়ে তুমি মহান মানুষের মতো বেড়িয়ে যাচ্ছো। তোমার এ সিদ্ধান্ত আমি মেনে নিলাম, কিন্তু মনে নিলাম না। আমাদের দেখা আবারো হবে।”

    অসম্ভব ভাল লাগল।আশা করি আরও ভাল ভাল লেখা পাব।
    ভাল থাকবেন।

    জবাব দিন
  5. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    চৈতির উচিত ছিলো সম্পর্কটা ভেংগে আরেকটা সম্পর্কে জড়ানো। তবে এরকম চরিত্র বাস্তবে অনেক আছে।
    কাহিনীটা হয়তো অভিনব নয় কিন্তু কী হয় সেটা জানার আগ্রহে গল্পটা একটানে পড়ে ফেললাম।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।