ফুটবল প্যাচাল ০১

হ্যান্ডবলঃ খুব বিভ্রান্তিকর একটা বিষয়। হাত দিয়ে বল ঠেকানো হয়েছে নাকি বল এসে হাতে লেগেছে। পেনাল্টি বক্সের ভিতরে ডিফেন্ডিং দলের কারো (গোল রক্ষক ছাড়া) হাতে বল লাগলেই আক্রমনকারী দলের সবাই চেঁচিয়ে উঠে পেনাল্টিরর জন্য। অন্যদিকে অপরদলের দাবী তা ছিলো একটা অঘটন মাত্র।

দুইদিন আগে মোহামেডান চট্টগ্রাম আবাহনীকে তথাকথিত বিতর্কিত পেনাল্টি গোলে হারিয়েছে। চট্টগ্রাম আবাহনীর কোচ মোহাম্মদ কাশেম অভিযোগ তুলেছেন রেফারির বিরুদ্ধে, “হাতের ওপরের অংশে লাগলে পেনাল্টি হয়, এরকম কোথাও দেখিনি আমি।” রেফারি মিজানুর রহমানের এই সিদ্ধান্ত গেছে মোহামেডানের পক্ষে, স্বাভাবিকভাবেই তারা খুশি। তা প্রকাশও পেয়েছে সাদা-কালোর কোচ মারুফুল হকের কথায়, “সিদ্ধান্ত দিয়েছেন রেফারি। তবে আমারও মনে হয়েছে বলটা তাদের কোনো এক খেলোয়াড়ের হাতের নীচের দিকে লেগেছে।”

আমার ধারনা এই দুই দলের কোচ কেউই আধুনিক হ্যান্ডবল রুলের সাথে পরিচিত না এমনকি ইদানীং কালের ফুটবল খেলা নিয়মিত দেখেন না। যদি দেখেনও হয়তো কমেন্ট্রি শুনেন না, আবার কমেন্ট্রি শুনলেও হয়তো ইংরেজী বুঝেন না। শুধু মাত্র হাতের কনুই এর নীচে বল লাগলেই পেনাল্টি হবে এইটা অনেক পুরোনো ভুল ধারনা। কারন ফিফা রুলে শুধু হাতের কথা লেখা আছে, কোথাও বলা নাই শুধু Fore arms এ বল লাগলে পেনাল্টি হবে কিংবা উর্ধ্ব বাহুতে বল লাগলে পেনাল্টি হবে না।

ফিফার Laws of the Game 2005 এ ১২ নম্বর আইন বলছে, ‘a free-kick or penalty will be awarded if a player “handles the ball deliberately (except for the goalkeeper within his own penalty area)”.

ফিফা রুলের বিভ্রান্তিকর বিষয়টা হলো সেখানে Deliberately কিংবা স্বেচ্ছায় শব্দটার কোনো সংজ্ঞা কোনো সহযোগী ডকুমেন্টে বলা হয়নি। যদিও ফিফা রুলের ৬৭ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে হ্যান্ডবলের পরবর্তী ঘটনা হিসাবে “A caution or dismissal is not normally required.”

ইচ্ছাকৃত আর অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল নিয়েই আজকাল ম্যানেজাররা তর্ক বিতর্ক করছেন। কোথাও কিন্তু কনুই এর উপরে অথবা নিচে বল লাগা নিয়ে তর্ক হচ্ছে না। কিছুদিন আগেই লিভারপুল আর রিয়াল মাদ্রিদের খেলায় রিয়াল মাদ্রিদ, গ্যাব্রিয়েল হাইঞ্জ আর স্পেনিশ মিডিয়ার দাবী বল লেগেছিলো ডিফেন্ডার এর স্কন্ধে (shoulder)। তাই পেনাল্টির সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো। আর ব্রিটিশ মিডিয়ার দাবী বল লেগেছিলো হাতে। ফুটবল ধারভাষ্যকারী ক্লাইভ তিডেসলীতো আরেক ডিগ্রী সরেস। তার দাবী “the penalty given when the ball hit Gabriel Heinze on the shoulder was morally right as Heinze ‘moved his arm towards the ball so there’s an element of it being deliberate’।

হতে পারে আমাদের খেলোয়াড়রা স্কিলফুল না হয়তোবা শারিরীক গঠনেও আমার একটু পিছিয়ে তাই আমরা খেলার মূল নিয়ম কানুন গুলোই জানবো না তা মেনে নেয়া কঠিন। আগে অনেক শিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলেরা (যেমন সালাহউদ্দীন) ফুটবল খেলতে আসতো। এখন বেশীরভাগ খেলোয়াড়ই আসে অজ পাড়াগাঁ থেকে। তাই খেলোয়াড়রা কিছু না জানলেও তথাকথিত বড়দল মোহামেডান এর কোচ বা ম্যানেজারদেরতো তা জানা উচিত।

প্রাক্তন রেফারী David Elleray মতে রেফারীরা বল হাতে লাগার মুহূর্তে খেলোয়াড়ের হাত অথবা বাহু কোনো অস্বাভাবিক অবস্থায় আছে কিনা তা তারা খেয়াল করেন। তার মতে “Referees look at two specifics – did the hand or arm (খেয়াল করুন এখানে হাত অথবা বাহু দুইটাই বলা হয়েছে) go towards the ball or in a manner which would block the ball, or is the hand in a position where it would not normally be?”

সহজ কথায় এখানে দেখার বিষয় দুইটা। প্রথমতঃ খেলোয়াড় ডিফেন্ড করার জন্য হাত ছড়িয়ে দিয়েছে কিনা যা আসলে অবৈধভাবে তার শারিরীক ব্যাস বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিতীয়তঃ খেলোয়াড় তীব্র গতির শট থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য হাত তুলেছে কিনা। বিতর্ক হওয়া উচিত শুধু এই বিষয়ে। কিন্তু আমরা মূল বিষয় ছেড়ে অন্য বিষয়ে বিতর্কেই জড়িয়ে পড়ি বেশী। বিডিআর বিদ্রোহের কারন কিংবা বিদ্রোহীদের না খুঁজে তাদের শাস্তি দেয়া ফেলে রেখে আজো আমরা তর্ক করছি রাজনৈতিক সমাধান ভালো হয়েছে না সামরিক অভিযান ভালো ছিলো। অতীত নিয়ম কানুন, অতীতের ঘটনা, অতীতের অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক ছেড়ে আমরা কবে যে সামনের দিকে তাকানো শিখবো তা বিধাতাই জানে!

রেফারেন্স

১,৩৭৮ বার দেখা হয়েছে

১৩ টি মন্তব্য : “ফুটবল প্যাচাল ০১”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ধণ্যবাদ এহসান ভাই, এতো সুন্দর ভাবে ব্যখ্যা দেবার জন্য। ওই ম্যাচের পর কোচদের উদ্ধৃতি যখন প্রথম দেখি তখনই এই কথাগুলো মনে এসেছিল, ভেবেছিলাম উল্লেখ করবো কিন্তু রেফারেন্স ঘাটাঘাটির অলসতায় সেটা আর করা হয়নি ( আবাহনীর সমর্থক বলেই হয়ত, মোহামেডানের হলে মনে হয় ঠিকই করে ফেলতাম :P)
    খেলাটা আমি বিটিভিতে লাইভ দেখেছিলাম তবে স্বভাবতই বিটিভির ক্যামেরার গুনে বলটি আসলে কোথায় লেগেছিল তা বোঝার উপায় ছিল না। তবে চট্টগ্রাম আবাহনীর খেলোয়ারেরা যখন রেফারির কাছে তখন তারা সবাই দাবি করছিল বল হাতে নয়, কাধে লেগেছে... আর আমাদের বিজ্ঞ কোচেরা হাতের উপরের অংশ আর নিচের অংশের বিতর্কে মেতে উঠল (জাফর ইকবালের "হাত কাটা রবিন" এর কথা মনে পড়ে গেল) বিশেষ করে মোহামেডানের কোচ...যে কিনা যে নাকি বই-পুস্তক আর ইন্টারনেট ঘেটে কোচিং এর জ্ঞান অর্জন করেছে আর নিজেকে নাকি ওয়েঙ্গার, ফার্গুসন আর মোরিনহোর বিভিন্ন গুনাবলির সমষ্ঠি হিসেবে তৈরি করতে চায় 😀 ।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    সিলেটের ২০০ তম পোস্ট এবং একই সঙ্গে এহসান ভাইয়ের রজত জয়ন্তী পোস্টের অভিনন্দন। :hatsoff:

    এহসান ভাই ব্যাট তুলেন। ;;;

    বাচ্চালোগ তালিয়া বাজাও। :clap: :clap:

    বিস্মিল্লাহ হির রাহমানির রাহিম, অল ক্রেডিট গোজ টু সিলেট ক্যাডেট কলেজ বয়েজ............ (কপিরাইট- শওকত মাসুম ভাই 😉 )


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।