রকস্টার

অনেক দিন পর একটু আয়েশ করে সিনেমা দেখলাম। আসলে অনেক দিন সিনেমাই দেখা হচ্ছে না। গত দুই বছরে দুইটা সিনেমা দেখেছি একটা হলো জিন্দেগী না মিলে দোবারা আর কয়েকদিন আগে দেখলাম রকষ্টার, আর হাতের কাছে রাখসি ওই ইরানী ছবিটা যেটা এইবার অস্কার নমিনেশন পেয়েছে। কয়েকদিন ধরেই ভাবছি ‘রকষ্টার’ নিয়ে একটা রিভিউ লেখবো। কারণ অনেকেই সিনেমাটা দেখে ফেলেছে তাই সবার মতামত জানতে পারবো। সিনেমটা দেখার পর পরই কামরুল আর মামুন ভাই এর সাথে কালেরকন্ঠ অফিসে দেখা হয়েছিলো। তখন দেখি ব্যস্ত দুই মানুষ এখনো ঐ ছবিটা দেখে নাই। তাই পার্ট মাইরা ওদের দেখার অনুরোধ করেছিলাম।

‘রকষ্টার’ সিনেমাটা শুরু হয়েছে জটিল একটা গান দিয়ে ‘না দা পারিন্দে’। সিনেমার ন্যরেশনটা ব্যতিক্রমী লেগেছে। এক বসায় না দেখলে কন্টিনিউটি নিয়ে সমস্যা হয়। শুরুতে গান দিয়ে সিনেমা শুরু এরপর ফ্ল্যাশব্যক করে পুরো সিনেমা দেখার একই স্টেজে একই গানে সিনেমাটা শেষ হয়। যেনো পরিচালক একটা লম্বা গানের মিউজিক ভিডিও বানিয়েছেন। এ আর রাহমানের গান হচ্ছে এই সিনেমার Soul। আর রাহমানের সুর আর মোহিত চৌহানের গলা গানগুলোকে দারুণ করেছে। অনেকদিন পর কোনো সিনেমার গানকে কাহিনীর সাথে একদম মিশে যেতে দেখলাম। সিনেমাটায় অনেক গান। কোনো গানকেই আমার আরোপিত মনে হয়নি। সিনেমার গান গুলোর মধ্যে খুব কমই রক গান আছে। এতে রকস্টার জর্ডান পুরো ইন্ডিয়া থেকে ইউরোপ ঘুরে বেড়ায় আর ভিন্ন স্বাদের দারূণ সব নাম্বার গেয়েছে ফোক, অল্টারনেটিভ, সুফী বা কাওয়ালী, ইলেক্ট্রো পপ থেকে ইউরোপিয়ান জিপ্সী নানা রকম এ আর রহমান ক্ল্যাসিক। এর প্রায় সবগুলো গান মোহিত চৌহানকে গাওয়াবার সিদ্ধান্তটাও যথার্থ। সিনেমার মিউজিকে কিংবা প্রোমোগুলোতে ‘না দা পারিন্দে…’ কিংবা ‘তুম কো…’ বেশী শোনানো হলেও সূরা ইয়াসীনের কিছু শব্দ দিয়ে গাওয়া ‘কুন ফায়া কুন…” কাওয়ালী টোনে দারূন আর আমার ফেবারিট হলো কার্নিভাল জিপ্সী ‘হাওয়া হাওয়া…”। বলা যায় সবগুলো গানই ভালো এবং বারবার শুনার মত। আমার শুনতে শুনতে কিছুদিন পর পর একেকটা গান নতুন করে ভালো লেগেছে।

সিনেমার কাহিনীটা একজন খেয়ালী রকস্টারের। অনেকের মতে ষাটের দশকের আমেরিকান ব্যান্ড The Doors এর লীড ভোকাল ও গীতিকার জিম মরিসন দ্বারা পরিচালক অনুপ্রানিত হয়ে এই সিনেমা বানিয়েছেন। জিম মরিসন আসলে ছিলো আমাদের আজম খানের মত পপ আইকন কিন্তু অনেক অল্প বয়সেই মাত্রারিক্ত ড্রাগ ও উচ্ছৃংখল জীবন যাপনের জন্য মাত্র সাতাশ বছর বয়সে জিম মরিসন মারা যান। সিনেমার প্রথম ভাগ অসাধারণ লেগেছে। কাহিনীতে গতি ছিলো। মনে হয়েছে Woody Allen এর কোনো সিনেমা দেখেছি। প্রথম ভাগে নায়িকার বিয়ে ছিলো। কোনো বিগ বাজেটের হিন্দী ছবিতে বিয়ে মানেই একটা মিউজিক্যাল কালারফুল বিয়ের সিডি (সঞ্জয় বন্সালী কিংবা সুরুজ বরজাতিয়া মার্কা) কিন্তু এই সিনেমায় সচেতনভাবেই একটা কাশ্মীরি বিয়েকে কাহিনীর ব্যাক ড্রপ হিসেবেই দেখানো হয়েছে। তাই রকস্টার সিনেমার শুরুটায় কাহিনীর প্রয়োজনীয় Full of life ness এবং enthusiasm ছিলো। কিন্তু সিনেমাটা দ্বিতীয়ভাগে এসে কিছুটা ঝুলে গিয়েছে। কারণ এ পর্যায়ে এসে ইমতিয়াজ আলী টিপিক্যাল হিন্দী পরিচালক হিসেবে রকস্টার জর্ডানকে জিম মরিসন না বানিয়ে দেবদাস বানিয়ে ফেলেছেন। (এই লাইনটা একটা রিভিউ থেকে কপি করা)।

সিনেমার পরিচালক ইমতিয়াজ আলী এই সিনেমায় ওভারঅল দারুণ করেছেন। উনার আগে দুইটা ছবি দেখেছি ‘জাব ওয়ে মেট’ আর ‘লাভ আজ কাল’। ‘জাব ওয়ে মেট’ সুপার হিট ছিলো কিন্তু কারিনা কাপুর ছাড়া ওই সিনেমায় আমার কিছু ভালো লাগে নাই কিন্তু ‘লাভ আজ কাল’ আমার বেশ ভালো লেগে ছিলো। এই সিনেমাগুলো যে ইমতিয়াজ আলী বানিয়েছে আগে জানতাম না। আমাদের পরিচালক কামরুল জানাইলো এই লোক নাকি সব সময় ভালো সিনেমা বানায়। আমার এই সিনেমার শট সিলেকশান দারুণ লেগেছে। ইমতিয়াজ আলী মনে হয় বরফ কিংবা কাশ্মীর পছন্দ করেন তাই ‘জাব ওয়ে মেট’ এর মত এই সিনেমায় কিছু আইস বার্গ কিংবা স্নো এর লং শট আছে। সিনেমায় মনি রাত্নাম এর দিল হ্যায় ছোটাসা… টাইপের কিছু লং রেঞ্জের দারুণ শট আছে যেমন লম্বাআআআআআআ একটা ব্রীজের উপর নায়ক দৌড়ে নায়িকার কাছে ছুটে যাওয়ার দৃশ্যটা। আর কন্সার্ট গুলোর ভিজুয়ালাইজেশন ও বেশ ভালো লেগেছে। সিনেমায় রকস্টার জর্ডানের ড্রেসগুলো দারুণ। কন্সার্টের পোস্টারগুলো অছাম; দেখলে মনে হয় either its done by সামিয়া or ফাঁকিবাজ কাইয়ুম।

সিনেমার পাত্র-পাত্রী নির্বাচন ভালো হয় নাই। রানবীর কাপুর দারুণ কাজ করেছেন, মনে হয়েছে আর কেউ এর চেয়ে ভালো করতে পারতো না। এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য ইতোমধ্যে রানবীর কাপুর ইন্ডিয়ান অস্কার ফিল্ম ফেয়ার জিতেছেন। কিন্তু সিনেমার সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো নায়িকার কাস্টিং। জঘন্য অভিনয় যাকে বলে তা করেছেন এই নতুন আমেরিকান মডেল নায়িকা নার্গিস ফাকিরী। আসলেও ফকির মার্কা তার অভিনয়!!

সিনেমার শেষটা ট্র্যাজিক তাই সিনেমা শেষে একটু মন খারাপ হতেই পারে কিন্তু আমার সিনেমাটা ভালো লেগেছে।

২,৬৯৫ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “রকস্টার”

  1. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    এহসান ভাই, কেমন আছেন? অনেকদিন পর।

    রকস্টার দেখেছি। আমার কাছে নার্গিস ফাকিরী-র অভিনয় দেখে মনে হয়েছে ক্যাডেট কলেজগুলার স্টেজে এর থেকে ভালো অভিনয় করে মেয়ে সেজে ওঠা ছেলেরা।

    ফাকিরী ছাড়া ছবিটার আর সবই ভালো লেগেছে।

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    রকস্টার দেখি নাই...ইচ্ছাও নাই...রানবীর কাপুর রে ওভাররেটেড লাগে... :thumbdown:

    এহসান ভাই, অনেক দিন পর...কেমন আছেন?


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  3. মুসতাকীম (২০০২-২০০৮)

    দেখি নাই, দেখমু কিনা ডাউটে আছি 🙁
    এহসান ভাই মেলা দিন পর, আছেন কেমন?


    "আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"

    জবাব দিন
  4. সামি হক (৯০-৯৬)

    এহসান ভাই অনেকদিন থেকে ছবিটা নামায়ে রাখসিলাম। আজকে আপনি রিভিউ লিখসেন দেখে ভাবলাম রিভিউ পড়ার আগে দেখি ছবিটা। এমনিতেই লিভারপুলের কান্ড কারখানা দেখে মেজাজ খারাপ ছিল, ছবি দেখে আরো মেজাজ খারাপ বাড়ল।

    গান, রনবীরের অভিনয় আর কাশ্মীরের কিছু শট ছাড়া তেমন কিছুই পাইলাম না ছবিতে। কাহিনী খুবই বস্তা পচা লাগছে, রকস্টার হওয়া কি এতোই সোজা? ইন্ডিয়াতে তো এখনও একটা রকস্টার পয়দা হল না

    জবাব দিন
    • টিটো রহমান (৯৪-০০)

      সামি ভাই, ইন্ডিয়ার প্রচলিত ছবির তুলনায় এটা অনেক ভােলা....হিসেবটা এর বাইরে করলে দুবর্ল আছে! বিশেষত গল্প বলার ঢংটা বেশ ভালো...হুট করে একেকটা বিষয় এসেছে।যেনো বড় একটা ফিল্মকে কেটে কেটে করা...যদি ইচ্চে করে এটা করে তাহলে...গ্রেট।
      সবচে বড় দুর্বলতা নায়িকার বিদেশী ছাপটা লুকােত পারেনি...অনেকটা এরকমবাংলাদেশের কিছু নাটক দেখা যায় েকানো মডেলকে দেখা যায় গ্রামের মেয়ে চরিত্রে কিন্তু মাথায় তাদের হেয়ার কালার লেগে থাকে:)


      আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

      জবাব দিন
      • সামি হক (৯০-৯৬)

        টিটো আমার এক্সপেক্টেসন মনে হয় বেশী ছিল। হিন্দী ছবির প্রচলিত ধারা কে ভাঙ্গার চেষ্টা ছিল, কিন্তু ভাংতে পারে নাই এইটার জন্য আমার কাহিনী ভালো লাগে নাই। একজন রকস্টার হতে হলে, তার প্রেম করতে হবে, তার কষ্ট পেতে হবে এগুলা বলে গল্পটা অনেক হালকা করে দেওয়া হয়েছে বলেই আমার মনে হয়েছে।

        তুমি যে বললা দেখে মনে হয় একটা বড় ফ্লিমকে কেটে কেটে করা সেইখানেই হয়তো অনেক কাহিনী হারিয়ে গেছে।

        জবাব দিন
        • এহসান (৮৯-৯৫)

          সামি আমি খেলা দেখে মজা পাচ্ছি না। কেনীর অতিরিক্ত হেন্ডারসন প্রেমে আমি বিরক্ত। কিন্তু কিং বেলামীর পারফরম্যন্সে খুশী। ডেম্বা বা কে বাদ দিলে ওরে সাইনিং অফ দ্য সিজন বলা যায়।

          টিটো ঠিক বলেছো, গতানুগতিক সিনেমার চেয়ে অনেক ভালো। মুজিক খুবই ম্যাস্মেরাইজিং।

          জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    কত্তো বছর পর এহসান ভাইয়ের মুভি রিভিও 😮

    রকস্টার দেখা হয়নি এখনো, শীঘ্রই দেখতে হবে।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  6. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    অনেকেই বলতেছে ছবিটা নাকি ভালো হইছে। দেখার ইচ্ছে আচ্ছে যদি হাতের কাছে পাই। 😀


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  7. আদনান (১৯৯৭-২০০৩)

    দেখতে বসেছিলাম, খানিকটা দেখে উঠে যেতে বাধ্য হয়েছি। :thumbdown:
    ব্যন্ড মিউজিক নিয়ে এর থেকে উন্নতমানের বলিউড ছবি দেখে ফেলেছি ROCK ON... হলিউডের গুলি তো ধরলাম না!
    গানের ব্যাপারে বললে - এ আর রহমানের রক ধাঁচের মিউজিক বোঝার কথা! 😐

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।