ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসি; বড় দুই দলের খেলা আর আমার ভাবনা

আগামীকাল রোববার বাংলাদেশ সময় রাত দশটায় ম্যান ইউনাইটেড নিজের মাঠে মুখোমুখি হবে অন্যতম শিরোপা প্রত্যাশী চেলসির। এই খেলায় পুরো তিন পয়েন্ট পেলে ম্যান ইউনাইটেড ফিল স্কলারির চেলসির সাথে পয়েন্ট ব্যাবধান কমিয়ে নিয়ে আসবে মাত্র ১ পয়েন্টে যদিও ম্যান ইউনাইটেড চেলসি থেকে দুইটি খেলা কম খেলেছে। দর্শকে ঠাসা ওল্ড ট্র্যাফোর্ডও আশা করে মধ্য সপ্তাহের ডার্বির সাথে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের তুলনায় কাল পারফরম্যান্সে আমূল পরিবর্তন ঘটবে। রুনি, রোনাল্ডো, বারবাতভ মূল একাদশে ফিরলে অবশ্য ইউনাইটেড সম্পূর্ন অন্য দলে পরিনত হবে। আর এই খেলার জন্যই ফার্গুসন তারকা খেলোয়ারদের বিশ্রামে রেখে ছিলেন।

গত সপ্তাহের এফ এ কাপের বিরতির পর চেলসি ও ইউনাইটেড দুই দলই আবার মৌসুমের মূল উদ্দেশ্য প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। এফ এ কাপের খেলায় নিজের মাঠে নীচের লিগের দল সাউথ এন্ড এর সাথে চেলসি ১-১ ড্র করেছে। হঠাৎ করেই নিজের ঘরের মাঠ তাদের জন্য ‘Achilles hill’ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় চেলসি গত ১১ ম্যাচে মাত্র ১টিতে জয় পেয়েছে। তাই চেলসিও নিজেদের ভয়ঙ্কর বাজে ফর্মের ইতি টানতে চাইছে। বাজে ফর্ম কাটানোর জন্য অবশ্যই এইটা কোনো আদর্শ খেলা না। কিন্তু প্রতিপক্ষের মাটিতে চেলসি অন্য দলে পরিনত হয়। রাজধানীর বাইরেই তারা তাদের ১২টি জয়ের ৯টি জয় পেয়েছে।

সাস্পেন্সন থেকে ফিরে জন টেরী নিশ্চয়ই চেলসির মূল ডিফেন্সকে শক্তিশালী করবে। আর বিগত তিন মাস মাঠের বাইরে বেশীরভাগ সময় কাটালেও অভিজ্ঞতার জন্য পর্তুগীজ কারভালহো তার সংগী হবে। ফুল ব্যাকে অবশ্যই বসিঙ্গওয়া ও আশ্লে কোল, গোল পোষ্টে পেট্রো চেক এই মুহূর্তে লিগ সেরা। তাই চেলসির মূল আশা রক্ষনভাগেই। অন্য দিকে ইউনাইটেড গোল কিপার ভ্যান দার সার দারুন গোলরক্ষক হলেও ইদানীং হঠাৎ হঠাৎ ভয়ংকর সব ভুল করে বসেন। কিন্তু মূল ডিফেন্সে রিও ফার্ডিনান্ডের ইঞ্জুরী থেকে ফিরে আসা দলকে আত্মবিশ্বাস যোগাবে। তার সাথে ভিদিচের সব সময়ই ভালো বোঝাপড়া। সেট-পিস (কর্নার ও ফ্রি কিক)গুলোতে এই দুইজন গোল রক্ষার পাশাপাশি দলের পক্ষে গোল করেও বসেন। রাইট ব্যাকে ব্রাজিলিয়ান রুকি রাফায়েল মধ্যমাঠের খেলোয়ার হলেও রক্ষনভাগে ভালোই করছে। ইংলিশ লিগের রাফ এন্ড টাফ স্টাইলের সাথে বেশ ভালো মানিয়ে নিয়েছে। তাকে কখনোই টিপিক্যাল ব্রাজিলিয়ান চকলেট ডিফেন্ডার (নরম কোমল, রক্ষন ফেলে আক্রমনে সহায়তা করাই যাদের কাজ )মনেই হয়না। আর লেফট ব্যাকে এভ্রাও সাস্পেন্সন কাটিয়ে ফিরছে। কিন্তু একসাথে ওরা চারজন অনেকদিন খেলে নাই, তাই আমি মনে করি চেলসি একটা গোল আদায় করে ফেলতে পারে।

মধ্যমাঠ হলো বড় খেলাগুলোর মূল লড়াই এর জায়গা। এইখানেও আমি চেলসিকে এগিয়ে রাখবো। বালাক, ডেকো আর ল্যাম্পার্ডের অভিজ্ঞতা আর ফর্ম ইউনাইটেডের ক্যারিক,এন্ডারসন কিংবা বুড়ো স্কলস থেকে ভালো। চেলসি ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে ওবি মিকেল কে খেলাবে যার দায়িত্ব হলো কৌশলে কিংবা ফাউল করে হলেও প্রতিপক্ষের আক্রমন ভাঙ্গা। তাই সে আক্রমনে কোনো সহায়তা করবে না। চেলসিতে কোনো উইঙ্গার নাই। তাই ওদের আক্রমনে কোনো width থাকে না। সবগুলো আক্রমন ঘটে narrow ভাবে মাঠের মাঝখান দিয়ে যা ডিফেন্ড করা সহজ। অন্য দিকে ইউনাইটেডের মূল শক্তি তাদের width. উইঙ্গার হিসাবে আছে বিশ্বের সেরা রোনাল্ডো, নানি এবং গিগস। এই তিনজন হলো প্রকৃত উইঙ্গার। এরা সহজেই প্রতিপক্ষের রক্ষনভাগকে ছড়িয়ে ফেলে; ফলে স্ট্রাইকারদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যায়।

মধ্যমাঠে একজন বেশী খেলানোর জন্য আক্রমন ভাগে চেলসি মাত্র একজনকে দিয়ে শুরু করবে। ১৬ গোল নিয়ে লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা আনেলকাকে তাই বেঞ্চে বসে থাকতে হবে। একক স্ট্রাইকার হিসাবে দ্রগবার উচ্চতা ও শক্তিশালী উপস্থিতি চেলসির ভরসা। অন্যদিকে রুনি আর বারবাতভ খুব দারুন জুটি। ইউনাইটেডের ছড়ানো আক্রমনের সাথে ওরা বেশ মানিয়ে যায়। বারবাতভের টেকনিক বেশ ভাল তাই নিজের পায়ে অনেকক্ষন বল রাখতে পারে ও ফাইনাল পাস দিতে পারে। সহযোগী রুনির রয়েছে গতি, রোনাল্ডো ও নানির গতির সাথে তাল মিলিয়ে সহজেই গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষনকে ভাংতে পারে সে। চেলসির যেহেতু উইঙ্গার নাই তাই বসিঙ্গওয়া এবং এশ্লে কোল আক্রমনে সহয়ায়তা করতে উপরে উঠে আসবে; যা রক্ষনে ফাঁক তৈরী করবে এবং দ্রুত গতির ইউনাইটেডকে পালটা আক্রমন করতে সুবিধা দিবে। তাই চেলসির তুলোনায় ম্যান ইউনাইটেদের আক্রমন পরিকল্পনা অনেক সৃজনশীল হবে।

কালকের খেলার মত বড় খেলায় ট্যাকটিক্স অনেক জরুরী একটা বিষয়। আর এইখানেই ইউনাইটেড অনেক এগিয়ে। প্রায় বিশ বছর ধরে ইউনাইটেডের দায়িত্ত্বে আছে আলেক্স ফার্গুসন। অন্যদিকে স্কলারি অসাধারন কিছু খেলোয়াড়ের সাহায্যে বিশ্বকাপ জিতলেও একজন ট্যাকটিশিয়ান হিসাবে আমার তাকে ততটা উঁচু মানের মনে হয় না। আমি মনে করি কাল চেলসি যদি জিততে চাইতো ওরা ৪-৫-১ এর বদলে ৪-৪-২ তে খেলতো। মিকেল কে বসিয়ে সহজেই বালাক কে ওই দায়িত্ত্ব দেয়া যায়। একজন জার্মান হিসাবে বালাক ভালই খেলতে পারতো একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসাবে। মাঝমাঠের ডান দিকে খেলার জন্য ডেকো যথেষ্টই সামর্থ্য রাখে আর জো কোলকে খেলানো যায় বাম দিকে (জাতীয় দলে সে ওই পজিশনেই খেলে)। সেই ক্ষেত্রে সহজেই দ্রগবা ও আনেলকাকে খেলানো যায়, দ্রগবা যখন তার বিশাল উপস্থিতিতে ভিদিচ অথবা ফার্ডিনান্ডকে ব্যাস্ত রাখত ওইটাই আনেলকার জন্য জায়গা তৈরী করতো। এমনকি ল্যাম্পার্ডও সুযোগ পেত বেশী।

আর লিগের দ্বিতীয় ভাগে শুরু হয় মাইন্ড গেম। মাঠের বাইরে থেকেই প্রতিপক্ষকে আর রেফারীকে ঘায়েল করার চেষ্টা। গতকাল বেনিটেজ ফার্গুসনকে আক্রমন করে বসেছে। ইউনাইটেডের ফ্যান ছাড়া বেশীরভাগ ফুটবল ফ্যান এতে খুশী। ফার্গুসন তা করে যাচ্ছে অনেক বছর ধরে। যেমন ফার্গুসন আগামী কালের খেলা সম্পর্কে কটাক্ষ করে বলেছে চেলসির ম্যানেজম্যান্ট গত ৪/৫ বছরে বেশ কয়েকবার বদলিয়েছে, তাই চেলসির ম্যানেজম্যান্ট সব সময় চাকরী হারানোর ভয়ে থাকে। কথা আসলেও সত্য, চেলসির বাজে পারফরম্যান্সের জন্য এই মুহূর্তে স্কলারি চাকরী নিয়ে বেশ চিন্তিত। আর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে গত বছর বড়দল গুলোর সবাই ভুগেছে বাজে রেফারিং এ। আর্সেনালের এবুইয়ে, চেলসির মিকেল, লিভারপুলের মাশকেরানো সবাই লাল কার্ড দেখেছে নিম্নমানের রেফারিং এর শিকার হয়ে। কারন খেলার আগে থেকেই ফার্গুসন অভিযোগ শুরু করে, খেলা চলাকালীন ৪র্থ রেফারীর উপর চাপ দেয়, বিরতির সময় অভিযোগ করতে করতে রেফারীকে নিয়ে মাঠ ছাড়ে। আর এইসবই আজকাল ধূর্ত ফার্গুসনের ট্যাকটিক্সের অংশ।
skolari o ferguson

স্যার আলেক্স ফার্গুসন মনে করেন নিজের মাঠের পারফরম্যান্সই ম্যান ইউনাইটেডের শিরোপা জিতার মূল অস্ত্র। নিজের মাঠে এখন পর্যন্ত ম্যান ইউনাইটেড হারিয়েছে মাত্র দুই পয়েন্ট তাও নিউক্যাসেলের সাথে মৌসুম শুরুর প্রথম দিন। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত সবগুলো ম্যাচ থেকেই জয় তুলে নিয়েছে তারা। যদিও শীর্ষে থাকা লিভারপুল থেকে এই সপ্তাহান্তের খেলাগুলোর আগ পর্যন্ত ওরা পিছিয়ে আছে মাত্র ৭ পয়েন্ট কিন্তু দুটি খেলা কম খেলেছে। বাকী ওই দুটি খেলা নিচু সারির দল উইগান আর ফুলহামের সাথে এবং দুটি খেলাই হবে নিজের মাঠ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। সুতরাং এই খেলা গুলোয় জয় আশা করাই যায়। কিন্তু ফিকশ্চারের জ্যাম লাগার একটা সম্ভাবনা আছে। যেমন গত সপ্তাহের মাঝামাঝি ডার্বির সাথে (ইউনাইটেড হেরেছে ১-০)কার্লিং কাপের খেলা ছিলো, এখন ১১ তারিখে চেলসির সাথে প্রিমিয়ার লিগের খেলা, আবার ১৪ তারিখ উইগানের সাথে প্রিমিয়ার লিগের খেলা এভাবে আগামী বেশ কয়েক সপ্তাহে সপ্তাহ প্রতি দুটি খেলা খেলতে হবে। তাই সবসময় একই রকম ভালো খেলা সম্ভব হবে না। আর তখনই পা পিছলানোর আশংকা।

কিন্তু কি হবে কালকের খেলার ফলাফল! আসলে খেলাটার সব অংশেই ড্র লেখা আছে। চেলসি আসবে না হারার পণ করে আর ইউনাইটেড ভাববে আমরা তাদের জিততে দিতে পারি না। এইদিকে লিভারপুল আজকে স্টোক সিটির সাথে ড্র করে পয়েন্ট হারানোতেই দুই দলই ড্র তে সন্তুষ্ট থাকবে। এই ধরনের খেলাগুলো সাধারনতঃ একটু সাবধানী বিরক্তিকর খেলার জন্ম দেয়। কিন্তু অবশ্যই বিতর্কিত কিছু সিদ্ধান্ত হবে। হয়তো একটা লাল কার্ড থাকবে। ড্র লিভারপুল কিংবা আর্সেনাল এর জন্যও ভালো ফলাফল। স্কাই স্পোর্টস এর ধারনা ২-১ এ ইউনাইটেড জিতবে। ইউনাইটেড একটু এগিয়ে থাকলেও আমার মন এবং মাথা দুইটাই বলছে ১-১। দেখা যাক!

১,৯৮২ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আর চেলসি; বড় দুই দলের খেলা আর আমার ভাবনা”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    চমৎকার ডিটেইল প্রিভিউ :clap:
    এহসান ভাইকে :salute:
    বস, ভয়ে ভয়ে প্রেডিকশন করি 😀
    ম্যান ইউ - ০৩ চেলসি - ০২ :thumbup:
    মিল্লা গ্যালে আমারে মিষ্টি খাওয়াইবো জুনা 😀 😛


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    চেলসিরে দেখি কেউ দেখতে পারে না। খুব ভাল।

    স্কলারি বেকুব ন্যাশনাল টিমের কোচিং ছাইড়া ক্লাবে আসছে, ওর ক্লাবের পরিবেশ বুঝতেই লাগব মিনিমাম একটা মৌসুম। আমার ধারনা চেলসি এবার কোন কাপই পাবে না।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    একজন আর্সেনালের সাপোর্টার হিসেবে আমি মনে প্রানে চাইব আজকের খেলাটা যেন ড্র হয়, লিভারপুল গতরাতে ড্র করেছে, আজ ম্যান ইউ,চেলসি পয়েন্ট ড্রপ করলেই হয়।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : এহসান (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।