বন্ড… জেমস বন্ড!!!

কালকে একটা সিনেমা দেখলাম। ভাবলাম একটা রিভিউ দিয়ে দেই সিসিবিতে। কিন্তু এইখানে তো দেখি ফ্লিম মেকার অর সিনেমা বোদ্ধাদের আড্ডাখানা। যাই হোক শুরুতেই বলে রাখি এই রিভিউটা আমি লিখতেসি একজন আম পাব্লিকের চোখে। অনেকদিন পর সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখলাম। Torrent আর Rapidshare এর এই যুগে সব ডাউনলোড করেই দেখা হয়ে যায়।

সিনেমার নাম Quantam of Solace. লেটেস্ট জেমস বন্ড সিনেমা। জেমস বন্ডের সিনেমা সব সময়ই অনেক আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে রিলিজ হয়। এইবারও কোনো ব্যাতিক্রম ছিল না। আর আমি যখনই সিনেমা দেখি আশার বেলুনটাকে ছোট রাখার চেস্টা করি। আর সিনেমারে বিভিন্ন অংশে ভাগ করে ফেলি। তাহলে কয় টাকা উসুল হইল ওইটা হিসাব করা সোজা হয়।

শুরু করি ছবির শুরু দিয়ে… Casino Royal আমার ভাল লেগেছিল। কিন্তু এর ল্যাক অফ একশান আমারে খুব হতাশ করসিলো। আমি সিনেমা দেখে ভাবসিলাম, কেনো এইটা সিনেমা জেমস বন্ড সিনেমা। তাস খেলে একশান হবে তো অন্য সিনেমায়; জেমস বন্ড সিনেমায় থাকবে হাই অক্টেন একশান।
ঝাকা নাকা এক কার চেসিং দিয়ে এই সিনেমার শুরু। কিন্তু আজকাল হরহামেশাই এইসব কার চেসিং দেখা যায়; এমনকি হিন্দি ডন সিনেমাতেও ভাল কার চেসিং ছিল। যাই হোক এই সিনেমাতে জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সবখানেই চেসিং ছিল। এছাড়াও ভালই একশান scene দেখাইসে। এরচেয়ে বেশি আমার দরকার ছিল না। স্টান্টবাজি গুলাও যথেস্ট শিহরিত হওয়ার মতো ছিল।

সিনেমার কাহিনীও ভাল। একটু typical জেমস বন্ড সিনেমার কাহিনী। কখনই মনে হই নাই, কাহিনী আগাচ্ছে না। এই ইটালী, এই লন্ডন, এই অস্ট্রিয়া, এই বলিভিয়া কাহিনীতে ভালই গতি ছিল। কিন্তু সিনেমাটা হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেসে। ১ ঘন্টা ৪৬ মিনিটেই সিনেমাটা শেষ না করে আরেক টু টানা যাইতো। যেহেতু ২ ঘন্টার সিনেমা দেখে আমরা অভ্যস্ত। তাই কাহিনীর শেষটা খুব তাড়াহুড়ায় শেষ হইলেও হত। হয়তো এইখান থেকেই পরবরতী সিনেমা শুরু করার প্ল্যান আসে।

সিনেমার location গুলা ভাল হইসে। location দেখে আসলেই মনে হইসে আমরা ল্যাটিন আমেরিকা অথবা ইটালীতে আছি। স্পিড বোটের একশানগুলা দেখে মনে হইসে 3rd world এর কোন মাছের বাজার। অবশ্যই ওই sceneগুলোর Location, ফরেস্ট গাম্প এর জেলেপাড়া থেকে ভিন্ন ছিল।

এবার বলি ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর ওভারঅল সাউন্ডের কথা। ওভার অল সাউন্ড নিতান্তই গড়পরতা মনে হইসে। আশলে আমি আরেকটু ধুম ধারাক্কা মারকা সাউন্ডের আশা করসিলাম। আসলে ট্রেইলারগুলো খুব বিভ্রান্তিকর ছিলো। হাবভাবে খুব আকশান এর প্রতিশ্রুতি ছিল। তাই ভেবেছিলাম এইটা হইল ডলবি সাউন্ডে দেখার মত ছবি। যদিও আজকাল সব সিনেমাই ওই ধাচেঁর, তারপরও হঠাৎ হঠাৎ flat মনে হইসে। কিন্তু OST টা জোশ হইসে মানতে হবে। কিন্তু আমরাতো জেমস বন্ড এর OST ভালই আশা করি সবসময়। OST এর ভিজুয়ালাইজেশনটা ফাটাফাটি লাগসে। বলিভিয়ার মরুভুমি আর বন্ড গার্ল এর শরীরের ভাঁজ খাঁজ এর মন্তাজ দেখানোর চেস্টা হইসে। ঠিকমত সুড়সুড়ি না লাগলেও মজ়া লাগসে।

ক্যামেরার কাজ একটু কম বুঝি, কিন্তু HD ফরম্যাট এর সিনেমা, তাই প্রিন্ট খুব ঝকঝকে, বন্ড গার্ল এর শরীরের ভাঁজ খাঁজ দেখার জন্য আদর্শ , যদিও ওই ধরনের(মানে বড়দের দৃশ্য) তেমন কোন ক্লোজ শট নাই। ইটালীর বন্ড বেইজ dungeon এর দৃশ্যগুলোতে হঠাৎ হঠাৎ লাইট খুব কম ছিল। কিন্ত এই এরিয়াতে আমার কথা বলা একদমই মানায় না। সুতরাং আর কিছু লেখা ঠিক হবে না।

এবার বন্ড গার্ল । ইউক্রেনের Olga Kurylenko এর নেট এ অনেক রগরগে ফটো আছে। Olga Kurylenko হলো প্রথম বন্ড গার্ল যে কিনা সিনেমাতে বন্ডের সাথে ঘুমায় নাই। একজন বন্ড মুভি লাভারের জন্য খুবই হতাশাজনক ঘটনা। ছেঁড়ির গায়ের বাক ভাঁজ ভালই ছিল কিন্তু গায়ে সবসময়ই কাপড় ছিল। একটা জেমস বন্ড সিনেমাতে শুধু টাইট কাপড়ই যথেস্ট না। সিনেমাতে আরও আছে Jemma Allerton, নিতান্তই টিভি অভিনেত্রী। বিবিসি এর ‘টেস অফ ডারবাভিলস’এ দেখসি। যার যৌন আবেদন আমার কাছে শূন্যর কাছাকাছি মনে হইসে। এই মহিলার বন্ডের সাথে অর্ধনগ্ন একটা মুহুর্ত আছে। যদিও খুশী হবার মত কিছুই না। আর এইজন্যই এই সিনেমা বন্ড সিনেমা হলেও 18 রেটেড না হয়ে 12A হিসাবে রেট করা হইসে। বন্ড Daniel Craig রে আমার ভালই লাগে। আমার কাছে পিয়ারস ব্রসনান এর চেয়ে ভাল মনে হয়। কিন্তু এর আগের বন্ডের সাথে তুলনা না করাই ভাল। সিনেমাতে একবারও craig বলে নাই বন্ড… জেমস বন্ড। কিন্তু সিনেমার শেষে ‘M’ যখন বলসে ‘I want to you back Bond’, তখন বন্ড উত্তর দিসে ‘I never left’ আহা! তখন কিন্তু ওরে বন্ডের মতই লাগসে।

আমরা যদি পিছনে ফিরে তাকাই বলা যায় Quantum of Solace offers next to no solace। কিন্তু যদি বন্ডের প্রতিশোধ আগুন এর নাটোকীয় চিত্রনাট্যের কথা, বুদ্ধিদীপ্ত প্রযুক্তি নির্ভর ন্যারেশনের কথা ভাবি, এইটা এতটা খারাপ না। বসুন্ধরা অথবা মধুমিতায় দেখলে ঠিকই ভাল লাগবে এবং টাকাও উসুল হবে।

সিনেমাটা আমার ভাল লাগার আরো কারন ছিল। আমি সিনেমা হলে ঢুকার আগে Nando’s এর পেরি পেরি চিকেন খেয়ে ঢূকসি। এছাড়া সিনেমাটা দেখসি শুক্রবার রাতে। শুক্রবারে পরের সপ্তাহান্তের কথা চিন্তা করে আমার মন সবসময় ভাল থাকে। এর আজকে ম্যান ইউনাইটেড হারসে, মনটা আরো ভালো!!

অফিসিয়াল ওয়েবসাইতে হলো এখানে

৩,৭৫৫ বার দেখা হয়েছে

৪৫ টি মন্তব্য : “বন্ড… জেমস বন্ড!!!”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    Olga Kurylenko হলো প্রথম বন্ড গারল যে কিনা সিনেমাতে বন্ডের সাথে ঘুমায় নাই

    উল্টা দুই গার্ল আছে দেইখা আশায় আশায় আছিলাম :(( :(( তবে মহিলারাও নাকি এইবার সেরম একশন সিন মারছে? ড্যানিয়েল ক্রেইগরে ব্রসনানের চেয়ে আসলেই ভাল্লাগে, বসের চেহারায় চোয়ালে বন্ড বন্ড ভাব আছে আসলেই :clap:
    বস্, আরেক আম আদমি কমেন্টাইলাম। ডিভিডি প্রিন্ট আইবার আশায় আছি আমরা দেশি ক্যাডেটরা 😉


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    এটা ঠিক যে- ডেনিয়েল ক্রেগরে বন্ড হিসাবে ভাল মানাইছে...কিন্তু আমার পিয়ারস ব্রসনানরে বেশি ভাল লাগত...ওর 'গোল্ডেন আই' সেরা বন্ডগুলোর একটা...ব্যাটা চরম ইস্মার্ট!! :clap:


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
    • এছাড়া সিনেমাটা দেখসি শুক্রবার রাতে।
      আজকে ম্যান ইউনাইটেড হারসে, মনটা আরো ভালো!!

      ঠিকই তো আছে। বুঝতে সমস্যা হলো কেনো এটাই বুঝলাম না।

      আর সিউল
      এর পর থেকে বাংলায় কমেন্ট করার জন্য অনুরোধ করা হলো। এবং নামের পাশে কলেজে অবস্থান সময়কাল টাও।

      জবাব দিন
    • এহসান (৮৯-৯৫)

      এইটা আজকের কথা। সিনেমা দেখসি শুক্রবার কিন্তু খেলা দেখার সময় রিভিউটা লিখেছি। না এর আগের ৪টা ম্যাচে হারে নাই। লাস্ট হারসিলো এনফিল্ডে... বেশি আগে না...এই সিজনেই... I do agree Arsenal sucks but Man U sucks most yenni!!

      জবাব দিন
    • @সিউল
      তুমি আমাদের bangla problem সেকশনটা ঘুরে দেখো। ওইখানে যাবতীয় তথ্য আছে বাংলা লিখার ব্যপারে।
      তোমার কলেজে অবস্থান সময়কাল আমি ঠিক করে দিয়েছি। আর সময় থাকলে "রেডবুক"টাও পরে ফেলো। 😀

      জবাব দিন
    • ব্লগ এডজুট্যান্ট

      @সিউল
      মন্তব্য আপত্তিকর হওয়ায় তা মুছে ফেলা হয়েছে। আপনি রেডবুক পড়তে এবং তা মেনে চলতে অসম্মতি জানিয়েছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। আপনি নিজের পথ খুঁজে নিতে পারেন।

      ব্লগে আমাদের সিনিয়র এবং জুনিয়র সবাই আছেন। আশা করি আমরা মন্তব্য করার সময় সেটা মাথায় রাখবো।সহনশীলতা দেখাবো।
      অনাকাঙ্খিত কোন পরিস্থিতি কারো কাম্য নয়।

      ধন্যবাদ।

      জবাব দিন
  3. মান্নান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    এহসাহ ভাই, আমি আগামীকাল ফক্স সিনেমা হলে যাচ্ছি এইটা দেখতে। তাই আর আপনার লেখাটা পড়লাম না । টিকেটের টাকাটা হালাল করতে হবেতো। লাস্ট উইকে নুমেট্রো তে হিন্দি মুভি দেখলাম 'ফ্যাশন' । মুভিটা ভালো লেগেছে। সবাইকে দেখতে অনুরোধ করলাম।

    জবাব দিন
  4. সাইফ (৯৪-০০)

    এহসান ভাই ,আমি তিন দিন আগে থেকে টিকেট বুক করে রাখসি,কাল্কে দেখব বলে,যাই হৌক,আপনি লিখেছেন বলে ধন্যবাদ,আশাহত হ ওয়ার সম্ভাবনা নাই,আত্র বন্ড এর ছবি খারাপ হইলেই বা কি সময় পার হয়ে যায়,

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    বর্তমানে ব্লগটি পড়ছেনঃ
    সদস্যঃ 3 জন অতিথিঃ ১ জন
    তানভীর (৯৪/ঝ)
    জুনায়েদ কবীর(৯৫-০১)
    মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ...তিনজনই বৃক্ষ।কবীর ভাই,গাছের এট্টা ইমোটিকনের ব্যবস্থা করেন। 😀

    জবাব দিন
  6. আজকে ডিভিডি কিনতে গেছিলাম, কিন্তু ভালো প্রিন্ট আসে নাই। পরে রবার্ট ডি নিরো'র ৮টা ছবির কালেকশন নিয়া চইলা আসছি। 😀

    যদিও ওই ধরনের(মানে বড়দের দৃশ্য) তেমন কোন ক্লোজ শট নাই।
    ধুর মিয়া কি খবর দিলেন এইটা।মুভি দেখনের মজা ৭৫% গেলো গা

    মাসরুফের মতো আমিও একটু হতাশ হইলাম। তবে দেখবো। কারন আমার কাজই হলো ছবি দেখা। 🙂 🙂

    এহসান ভাই
    খালি ম্যান ইউ রে পচাইয়া লাভ নাই। লিভারপুল যেদিন হারবে সেদিন কিন্তু তাইলে আপনার খবর আছে। 😉 😉

    জবাব দিন
  7. সামি হক (৯০-৯৬)

    ছবিটা দেখে বড়ই আশাহত হইসি তিনটা কারণে

    ১ বন্ড এর ছবিতে বন্ডগাল দের নিয়ে কিছু টুকিটাকি সিন থাকবে যা এই ছবিতে নাই।
    ২ বন্ড এর ভিলেইনরা মরার সিনগুলা বেশ অ্যাকশন প্যাকড হয় এই ছবিতে তা অনুপস্থিত
    ৩ ছবিটা হটাত করে শেষ হয়ে গেছে আরও কিছুক্ষণ টানা যেতো। স্পেশালই আরো বেশি গায়ে বাজছে যখন লেইস্টার এ নতুন ওপেন হওয়া একটা সিনেমা হলে দেখেতে গেছি মুভিটা তখন মনে হইসে শালার পয়সা উশুল হইল না।

    তবে ক্রেইগরে জোশ লাগছে বন্ড হিসাবে।

    জবাব দিন
  8. মরতুজা (৯১-৯৭)

    ইংল্যান্ডের পোলাপাইন সব আগে আগে এইটা দেইখা ফালাইয়া আমগো মজা নস্ট করতাছে। আমগো এহানে এহনো মুক্তি পাই নাই। আমি এই ঘৃন্ন কাজের তীব্র পরতিবাদ জানাই। লগে তীব্র পরতিবাদ জানানোর একখান ইমোক্টিনও চাই।

    জবাব দিন
  9. তারেক (৯৪ - ০০)

    এইটা আমাদের এখানেও মুক্তি পায় নাই। :((
    তবে ওলগা লেইখা গুগল ইমেজে সার্চ দিতেই মন ভাল হয়ে গেলো। 😀
    দেখতে হবে।
    *
    আপনারা কেউ জানেন কি না, কোয়ান্টাম অব সোলেসের একটা প্রিভিউ দিছিলো কয়েকদিন আগে প্রথম আলোতে। লিখছিলো, আসছে বন্ডের নতুন মুভি- কোয়ান্টাম মেথড!!! =))


    www.tareqnurulhasan.com

    জবাব দিন
  10. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    বন্ডের কোন সিনেমাই দেখা হয়নাই। তবে অচিরেই শুরু করতেছি। ডিভিডি একটা নিয়া আসছি, এটাতে ক্যাসিনো রয়েলের আগের ৪টা সিনেমা আছে। ঐগুলা আগে শেষ করি। ততদিনে সোলেসের ভাল প্রিন্ট এসে পড়বে।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কুচ্ছিত হাঁসের ছানা

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।