বাবা হবার গল্প…

অনেক দিন ধরেই সিসিবি পড়তেসি। আর চিন্তা করতেসি কিছুতো একটা লিখা দরকার। কিন্তু আমি কখনই লেখক ছিলাম না,এমনকি কলেজেও না। ছিলাম পাঠক। ইঊনিভারসিটিতে গিয়ে হয়েছিলাম কথক। আর এখন আমি হইলাম শুধু দেখক। শুধু সিনেমা আর ফুটবল দেখি। কখনই ক্লান্ত হইনা। যেহেতু এইটা লিটল ম্যাগ না…একটা অনলাইন ব্লগ; সুতরাং আমার কাঁচা লেখাটাও সাহস করে দিয়ে দিলাম।

এবারের ঈদটা ছিল একটু অন্য রকম। আসলে ঈদের দুইদিন আগ থেকেই হাসপাতালে ছিলাম। এমনিতেই লেইস্টারে আমার কোনো আত্তীয়-সজন নাই। গত নয় মাস খুব কস্টে গেছে। এরই মধ্যে ইংল্যান্ডের ঈদ শেষ। বউ ডেলিভেরী সুটে চিল্লাইতেসে। একটা কচি গোরি ডাক্তার আমার বউরে দেখতেসে। বাচ্চা নাকি বেশী নড়াচড়া করতেসে না। আমরা ইচ্ছা করেই বাচ্চা ছেলে না মেয়ে এইটা আগে জানি নাই। আমি ডাক্তাররে বললাম বেশি নড়েচড়ে না…অলস… এইটা একটা মেয়ে। সেই কচি গোরি ডাক্তার বলে, যেহেতু মা কে খুব জালাচ্ছে, সুতরাং এইটা ছেলে। আমারে কয় বাজি হয়ে যাক। এরপর আমার বউরে জিগায় বিভিন্ন প্রশ্ন, বউ উত্তর দিবার আগেই আবার আমার দিকে তাকায়। তার ধারনা এখানকার গুজরাটী মহিলাদের মত আমার বউও ইংরেজি পারে না। আমি আমার বউরে জিগাইয়া ডাক্তাররে উত্তর দেই। বউ ব্যাথা ভুলে আমার দিকে আগুন চোখে তাকাইয়া থাকে। যাই হোক টানা তিন দিন টেনশনে কাটানোর পর অবশেষে হঠাৎ করেই ডাক্তাররা ceaser করার পর আমার ছেলের জন্ম হলো।। ততক্ষনে বাংলাদেশে ঈদ শুরু হয়ে গেছে। এযে কি আনন্দের মুহুরতো তা বলে শেষ করা যাবে না অথবা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। “আজ আমার মেঘে মেঘে রংধনু… আজ আমার মেঘে মেঘে রঙ”।
এটাই কি সৃষ্টির আনন্দ কিনা আমি জানি না। কিন্তূ এইটুকু জানি এইটা আল্লাহের অশেষ নেয়ামত আমাদের জন্য। আমার সত্যিকারের ঈদ শুরু হল। কিন্তু তখন অনেক রাত আর আমিও ওয়ারডে এ থাকতে পারব না। বেরসিক ডাক্তার আমার রাত দেরটায় বাসায় পাঠিয়ে দিল। বাসায় আসর পর আমার আর ঘুম আসে না আবার ক্লান্তিও লাগে না। এই দিকে আমি সেই রাতের লিভারপুল আর পিএসভির খেলা মিস করেছি। কি আর করা ডাউনলোড করে খেলা শেষ করলাম। সবাইরে অবাক করে দিয়ে রবি কীন লিভারপুলের হয়ে তার প্রথম গোল করেছে। আস্তে আস্তে বাংলাদেশে ভোর হয়ে আসলো, দেশে ফোন করে সবাইরে ঈদ মোবারক আর আমার বাবা হবার খবর দিলাম।
আজকাল সারারাত জেগে থাকি এর সকাল বেলা অফিসে দৌড়াই। বিকালে বাসাই ফিরে ছেলের গায়ের ঘ্রান শুকঁলে সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। প্রবাসে কস্টের দিন গুলোও আজকাল অনেক রঙ্গিন লাগতেসে।

ছেলেতো হলো। এবার নাম রাখার পালা। একটা ছেলের আর একটা মেয়ের নাম আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম। নাম রাখলাম ঈসা কাজী। কিন্তু কারোরই নাম বেশি পছন্দ হচ্ছে না। বাবা মার কোনো সমস্যা নাই। তাই আমরাও আর কাউরে পাত্তা দিতে রাজি না। আমার এক হিন্দু বন্ধু আশা করসে আমি তো আতলামি মারকা একটা সুন্দর বাংলা নাম রাখব। ও আমারে জিগায় এইটা কি হযরত ঈসা এর ঈসা নাকি। আমি বললাম হা। ও হতাশ হয়ে বলে ডাক নাম বল!! আমি বললাম একটাই নাম। বলে তোর দুইটা নাম, তোর বোনের দুই নাম। তোর পোলার কেন একটা নাম। এরপর এক জুনিয়র ভাই জিগায়, ভাইয়া নাম কি রাখসেন।
নাম বলার পর বলে , অর্থ কি।
আমি বলি, নবীর নাম। আর কোনো অর্থ নাই।
কয়, অর্থ ছাড়া নাম হয় নাকি!!।
আমি কইলাম, তোমার নামের অর্থ কি। বলে ‘কামর’ মানে চাদ, ওইযে সূরা রাহ্-মানে আসে না!!(আসলে আমি পরে খেয়াল করসি সুরা রাহ-মানের আগের সুয়ার নাম সুরা কামর) আর হাসান মানে সুন্দর। কামরুল হাসান মানে সুন্দর চাদ। আমি ভাবি আমাদের দেশে কানা ছেলের নাম হয় পদ্দলোচন। আমি কইলাম তুমি তো অমাবস্যার চাদ।
কয়, ভাইয়া আপনি আমারে কাইল্লা কইলেন!! আমি কই নামের অর্থ মিলাতে চাদ কইতে চাইলে তো… এইটাই কইতে হবে।


গত শনিবার আমার ছেলের স্পর্শকাতর অংশের বারতি চামড়া ফেলে দিলাম। অবাক ব্যাপার হলো এখানকার হাস্পাতালে ওই কাজ করে না। পরে দুরের এক শহর থেকে এক মুসলমান ডাক্তার এসে ওই কাজ করে গেল। ওই ব্যাটা মাত্র ৩/৪ মিনিটেই কাজটা সেরে ফেলল। আমারে কয় ৭০ পাউন্ড দেন। এইটার জলুনিটা মনে হইসে মরতুজার এয়ারপোরট টিপস থেকেও বেশী।

বাবা হবার সবচেয়ে বড় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হইল নিজের ফ্রি টাইম কমে যাওয়া। লিখাটা আরেকটু বড় করতে চাইলেও পারতেসি না। আর প্রথম লেখা। সুতরাং এখানেই থামা উচিত।
সবশেষে একটা প্রিয় গানের লিঙ্ক দিলাম ইউটিউব থেকে…

৩,৭২০ বার দেখা হয়েছে

৩৭ টি মন্তব্য : “বাবা হবার গল্প…”

  1. ১.
    এই কামরুল হাসান কিন্তু আমি কামরুল হাসান না। আমার সঙ্গে একে কেউ মিলানোর চেষ্টা করবেন না। এই টা কে এহসান ভাই জানে।
    (ভাইজান, চান্স পাইয়া এমন বাশটা দিয়া দিলেন। ) :grr: :grr: :grr:
    ২.
    ইসা'র বাবা-মাকে অভিনন্দন। সঙ্গে সিসিবির সব চাচা-ফুপীদেরও। আমরা আরো চাচা হইতে চাই। 😉 😉
    ৩.
    এহসান ভাই, সিসিবিতে লেখক হিসাবে স্বাগতম। এবার তাইলে হাত-পা খুইলা লিখতে বসেন। 🙂 🙂

    জবাব দিন
  2. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    ভাতিজা ঈসা রে আমার ভালবাসা।এট্টু বড় হইলেই ওরে আমি কুস্তি শিখামু।
    এহসান ভাই-কনগ্রেটস বস!
    অফ টপিক-কামরুল ভাই,এত সুন্দর কইরা আপনের মত ফিচলা মানুষরে কেউ বাঁশ দিতে পারে এইটা এহসান ভাইরে না দ্যাকলে ঝানতাম না।উনারে ম্যানইউ-চেলসির ভিয়াইপি টিকেট ফিরি গিফট করতে ইচ্ছা কর্তাছে 😀

    জবাব দিন
  3. এহসান (৮৯-৯৫)

    @ মাশরুফ,

    আমি চেলসি আর ম্যান ইউ দুইটার একটারেও দেখতে পারি না। কিন্তু খেলা দেখি ওই গুলা হারে নাকি দেখার জন্য। লিভারপুলের কিসু্ ফ্রি দিবা নাকি বল।

    জবাব দিন
  4. সামিয়া (৯৯-০৫)

    :party:
    কাচ্চা বাচ্চা হওয়ার কথা শুনলে আমার যে এত আনন্দ লাগে বইলা বুঝাইতে পারব না...
    এহসান ভাই আপনাকে আর ভাবীকে বিশাল অভিনন্দন... :salute:
    পুচ্চাটারে আমাদের দিয়া দেন...আমরা পাইলা পুইষা গুন্ডা বানাই 😀 :frontroll:
    (আর পুচকাকে সিসিবির সদস্য বানাইতে দেরী কইরেন না)

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।