আয় মন, নস্টালজিক হই!

ক্লাস সেভেনের সেকেন্ড টার্মে। তখন আমরা সকাল-বিকাল ড্রিল করি। অথরিটির দয়া যেদিন উপচে পড়ার পর্যায়ে চলে যায় সেদিন বিকেলে গেমস করি। এমন এক উপচে পড়া দয়ার বিকেলে গেমসের সময়ে অ্যাথলেটিক্স গ্রাউন্ডের কোনার আম গাছ থেকে তিনজন ক্লাস সেভেন আম পাড়ছিল। এ পাড় থেকে গ্রাউন্ড সুপার তাদের নাম জানতে চাইলে ক্লাস সেভেনের আমরাও নাম বলে দিলাম জসীম, কাশেম এবং রুবেল। বিজয়ীর হাসি মুখে নিয়ে নাম লিখে নিয়েছিলেন গ্রাউন্ড সুপার, ক্লাস সেভেনের বাচ্চা পোলাপান এক টোকাতেই নাম বলে দেয়! পরবর্তীতে এই নামের কাউকে পাওয়া যায় নি, সিলেট ক্যাডেট কলেজে এই নামের কোন ক্যাডেট কখনো এসেছিল কিনা তা নিয়ে পরের দিন গেমস এর মার্চ আপে ডাউট দিয়েছিলেন সিএসএম সার্জেন্ট আলিউর।

এস,এস,সি এইচ সি পরীক্ষার সময়গুলোতে একটু যত্ন-আত্তি চায় মন।পরীক্ষার দিন সকালের ব্রেকফাস্টে যেদিন লেট হত, না খেয়েই পরীক্ষা দিতে যেতাম সেদিন ।যখন ফিরতাম ততক্ষণে লাঞ্চ শেষ। হয়তো আলতাফ ভাই নজরে রাখতেন সকালে না খেয়ে পরীক্ষা দিতে গেছি।মুরগীর ভাল অংশটা তাই আলাদা করে রেখে দিতেন আগে থেকেই। সময়ে-অসময়ে হঠাৎ করেই কোন স্যারের কাছে “কেমন আছ” শুনেই চোখের সামনে কতজনকে ইমোশনাল হয়ে যেতে দেখেছি। বাইরে থেকে যাকে দেখলে কাঠখোট্টা পাথর বলেই মনে হয়।

ক্যাডেট কলেজে গিয়েছিলাম জীবন শিখতে। ছোট বয়স থেকে সেখানে বাস্তবতা-অবাস্তবতা দেখেছি শিখেছি। যেই বয়সে বাবা-মা জুতার ফিতা বেঁধে দেওয়ার কথা, সেই বয়সে জুতা পলিশ করে সেটা দিয়ে নিজের দাঁত দেখেছি। যে বয়সে নাগরদোলায় চড়ার কথা ছিল সেই বয়সে ইডি ড্রেস পড়ে টারজান সুইং এর দড়ি ধরে ঝুলেছি। চুলে জেল মেখে মফস্বলের সেরা সুন্দরীদের সাথে প্রাইভেট পড়ার বয়সে সম্ভুদা-অনীল দা আমাদের মাথায় নির্মম বুলডোজার চালাত। ফাস্টফুডে বসে সবাই যখন মুরগীর রানে কামড় দিচ্ছিল তখন আমরা বালতি ভরে ক্যান্টিনের সামনে চানাচুর খাচ্ছিলাম। মধ্য রাতে বৃষ্টি নামলে কাঁথা গায়ে ঘুমানোর কথা থাকলেও তখন আমরা শ্যাম্পু মাথায় দিয়ে ভিজতে নামতাম। হাউসে এসে গোল্ডলিফ টানতাম, না থাকলে স্টারই সই। দুপুরের কড়া রোদে লজ্জাবতির কাটার উপরে কিংবা আরবিসি রোডের উপর অথবা ড্রেনে নেমে ফ্রন্টরোল দিয়েছি । ঘেমে গেছি,কষ্ট পেয়েছি আবার সব শেষ করে হাসিতে গড়াগড়িও দিয়েছি। কষ্টকে হাসির আড়ালে লুকানো শিখেছি। এখন পর্যন্তও দিজ মেথড ইজ ওয়ার্কিং লাইক নাথিং!

২০০২ সালের ৭ মে যেই জীবন শুরু হয়েছিল, নিজের অজান্তেই সেই জীবনের প্রেমে পড়ে গেছিলাম। ৭ মে’র সেদিন চকচকে সুনীল আকাশটা মন-প্রাণ উজার করে তিপ্পান্নটা “পিস” উপহার দিয়েছিল। তাদের সাথে করেই হেটে চলেছি তখন থেকে এখনও। কষ্টের মধ্যে দিয়ে যে সম্পর্কগুলো গড়ে উঠে তাতে ইমোশন জড়িত থাকে।যত্নে গড়া হয় সম্পর্কগুলোকে । ২৭ তম ব্যাচের সপর্কগুলো যত্নে গড়ে তোলা, হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে আস্তে আস্তে বড় হওয়া।চোখে বুজলেই মনে করতে পারি ২৭ তম ব্যাচের একেক জনের সম্পর্কের রসায়নের রাসায়নিক বিক্রিয়াটি ঠিক কোন পথ ধরে ইকুইলিব্রিয়ামে যেয়ে পৌছেছে। বারটা বছরকে কেমন যেন খুবই অল্প মনে হচ্ছে আজ। এই তো সেদিনের কথা। নবজন্মের কথা! জন্মদিনের শুভেচ্ছা নিও প্রিয় ২৭ তম ব্যাচ। তুমি মানেই আমি, আমি মানেই তু্মি।

ক্যাডেট দিবস
ক্যাডেট নং: ১৩৫৩
২৭ তম ব্যাচ
তিতুমীর হাউস
সিলেট ক্যাডেট কলেজ।

কয়েকজন অভাগা ক্যাডেট এই ছবিতে নাই!!!

কয়েকজন অভাগা ক্যাডেট এই ছবিতে নাই!!!

৮ টি মন্তব্য : “আয় মন, নস্টালজিক হই!”

মওন্তব্য করুন : দিবস (২০০২-২০০৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।