পঞ্চ ভৌতুক

[ভৌতুকঃ ছোট  সাইজের হাসির গল্প যেমন কৌতুক, তেমনি ভৌতুক হল  দু’তিন কথায়  ভয়ের  অথবা ভুতের অদ্ভুত  গল্প]

কলিং বেল

প্রতিদিন বিকেলে কলিং বেল বাজিয়ে ভেগে যাওয়া হতচ্ছাড়াটাকে ধরার জন্য মিতু আজ আট ঘাট বেঁধে বসে ছিল। ঝট করে দরজা খুলে যা দেখল তার জন্য কিন্তু সে একেবারেই তৈরী ছিল না। পাশের ফ্ল্যাটের হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাটা হাসতে হাসতে তার চোখের সামনেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল না?

 

পকেটমার

বাসের ভীড়ে লম্বা-দাড়ী, হুজুর টাইপের নুরানী মানুষটাকে টার্গেট করার পর থেকেই মনটা একটু কেমন কেমন করছিল ঝানু পকেটমার দুলালের। তাই বুড়োর ঢোলা আলখাল্লার পকেট থেকে মানিব্যাগটা আলগোছে তুলে আনতে গিয়ে যখন দেখল আঙুলগুলো  ঐ পকেটেই রয়ে গেছে, প্রথম গালিটা সে নিজেকেই দিল।

 

রাতলিপি

বাসা ভরা মানুষের  চিল্লাচিল্লিতে সারাদিন একটুও ঘুমাতে পারিনি। সন্ধ্যের দিকে একটু চোখ বুঁজেছি, খুলে দেখি মাঝরাত পেরিয়ে গেছে ! হুড়মুড়িয়ে বোতল থেকে বেরিয়ে বাসি মুখেই শ্মশান ঘাট দৌড়ালাম … ভয় দেখানোর চাকরিটা বুঝি গেল!

 

আয়না

জমিদারবাড়ীর সাজঘরের উজ্জল আলোয় দেয়াল জোড়া আয়নার সামনে একা বসে সংলাপ  আওড়াচ্ছিল নায়িকা। পেছন থেকে নিষ্ঠুর সবল একটা হাত নাক মুখ চেপে ধরল তার। মারা যাবার আগে ভয় পাওয়ার চেয়ে অবাকই বেশী হয়েছিল বেচারা— আয়নায় সে ছাড়া আর কেউই যে নেই!

 

ডিনার

হারাধনের দশটি ছেলে বাড়ি ফিরে আসে

একটি তাঁদের খাবার হলো

বাকি ন’জন হাসে।

৪,১০১ বার দেখা হয়েছে

২২ টি মন্তব্য : “পঞ্চ ভৌতুক”

  1. সাইদুল (৭৬-৮২)

    প্রথম আর শেষটায় সবচেয়ে বেশি ভয় পাইছি। প্রথমটা পড়ার পর একটু কান পেতেছিলাম দরজায়।কয়েকদিন আমার দরজায়ও কল বেল বাজাতো কেউ একজন, দরজা খুলে তাঁকে পেতাম না।

    মন্তব্য হচ্ছেঃ ইহা অতিশয় চমকপ্রদ ফাঁকিবাজি। গল্প গুলি এখন বড় কর। অসাধারণ গল্প হবে একেকটা। আমরা অনেকক্ষণ ধরে ভয় পেতে চাই


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  2. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    খুবই ভালো লাগলো। আগামীর দিনগুলিতে এই রকম রচনার কাটতি বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। এত ছোট পরিসরেও কিন্তু লেখাকে শিল্পের পর্যায়ে উন্নীত করা যায়। পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গল্পটির লেখক মার্কিন সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। গল্পটি মাত্র ৬টি শব্দে লেখা।

    For sale. Baby shoes. Never worn.

    বাচ্চার জন্য জুতো কেনা হয়েছিল, কিন্তু সেই বাচ্চাটা পৃথিবীর আলোই দেখেনি। ৬ শব্দে গর্ভে মারা যাওয়া শিশুর জন্য মায়ের অনুভূতি। কী ভীষণ বেদনাদায়ক, তাই না! এ ধরনের গল্পগুলো ‘ফ্লাশ ফিকশন’ হিসেবে পরিচিত। এগুলো এক একটি সম্পূর্ণ গল্প যা শুরু হতে না হতেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু তার রেশ পাঠকের ভেতর থেকে যায়।
    আরেকটি ‘ফ্লাশ ফিকশন’-এর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ‘Knock’ নামের এ গল্পটির লেখক Fredric Brown (ফ্রেডরিক ব্রাউন)। পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম ভূতের গল্প। ফ্রেডরিক ব্রাউনও একজন আমেরিকান লেখক।

    The last man on Earth sat alone in a room. There was a knock on the door…


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  3. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    ভাবনার মজা পুর্নোদ্যমে ছিল কিন্তু পাঠের মজা কম পড়লো যেন।
    মাঝে মাঝে এরকম জিনিষ পেলে মন্দ হয় না কিন্তু বেশী হলে আবার সমস্যা.........
    ভাল একটা প্রচেষ্টা...
    সাধু! সাধু!!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  4. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    নামকরণ বেশ চমকপ্রদ! উপস্থাপনাও।

    কিন্তু খুব বেশি ছোট, আচমকা শেষ হয়ে গেল মনে হল। আরেকটু বড় হলে আরো ভাল লাগত। (অবশ্য আমি ভুতের গল্প ভয় পাই)।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  5. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অসাধারন লাগলো সাদিক ভাই, একেবারে ইউনিক! ছবি শব্দ মিলিয়ে দারুন উপস্থাপনা।

    আরো চাই 🙂


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : কাজী সাদিক (৮৪-৯০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।