শক্তিমান লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর নির্মম আক্রমণের পরপরই লেখা এই কবিতাটি। আমার হাতে তখন “আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম”? ‘আজকের কাগজ’ পত্রিকার সাহিত্য পাতায় প্রকাশিত হয়েছিলো এই কবিতাটি, তখনও তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন। সেই হত্যাকান্ডের মডেলেই সাম্প্রতিক আর সব চাপাতি হত্যাকান্ডগুলি বাংলাদেশে এখনো জারি হয়ে আছে। কাপুরুষোচিত এই কর্মকান্ডগুলির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে শক্ত অবস্থান নেয়ার সময় এখনিই।
অভিশাপ
হুমায়ুন আজাদ, আমি আপনার দিকে আর তাকাতে পারিনা;
কারণ, আমার এই জোড়াচোখে আজ দৃষ্টিশক্তি নেই।
আমি দেখতে পাইনা, আমার কন্ঠে শব্দও নেই কোনো;
তাতে আমার কোনো কষ্টও নেই;
স্বস্তি শুধু এতটুকুই, যে আমাকে আর আপনার খলবলে শরীরে
ঘাতকের চাপাতির নির্মম আঘাতের চিহ্ন দেখতে হবে না।
উনত্রিশ ফেব্রুয়ারীর বিকেলে শেষবারের মতো
আপনার বধ্যবেদীতে গিয়ে কাঁদতে চেয়েছি,
অথচ কি আশ্চর্য! আমার অশ্রু আমাকে বারণ করলো,
আপনার রক্তের একটি কণাও যেন
আমি মুছে না ফেলি আমার লবনাক্ত জলে।
যখন রিক্সায় ফিরছি, তখন চারপাশের কিছুই যেন আর শুনতে পাইনা;
টিএসসির কাছাকাছি আসতেই কানে ভেসে আসে চিৎকার,
মোহাররমের নিরর্থক নিষ্ফল মাতম আর প্রতিবাদের মিছিল
একাকার হয়ে মিশে যায় রাজপথে।
কারা যেন হাহাকার আর স্লোগানে স্লোগানে মাতিয়ে দিচ্ছে ক্যাম্পাস;
আমি তখন জেনেছি, যেমনটা আপনিও জানেন হয়তো,
আপনার সেদিনের সেই ঘাতক দাঁড়িয়ে ছিলো
সেই মিছিলের সবচেয়ে সামনের সারিতে!
আমি কাউকে বিশ্বাস করিনা,
আমরা ওদের কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারিনা।
উনত্রিশ ফেব্রুয়ারীর সেই রাতে আমি ঘুমুতে পারিনি;
আমার একপাশে আমার সন্তান ঘুমায়, তার পাশে ওর মা;
আর অন্য পাশে সাথে জাগে,
“আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম ?”
আশ্চর্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টা আপনি!
আপনার লেখার পাতায় পাতায়
যেন শান দিয়ে নিয়েছিলো ঘাতক তার চাপাতির,
কি নির্মমভাবেই না আপনি জেনে গিয়েছিলেন,
“মৃত্যুর সময় দেখে যাবো একটি পুরোপুরি গুন্ডা
আমাকে শাসন করছে, ধন্য হবে আমার মৃতদেহ” ।
এই উদ্ভট উটের দেশে কেউই আপনার বন্ধু না!
এই দেশে আপনার দাঁড়ানোর মতো প্ল্যাটফর্ম একটিও ছিলো না।
সব নেতা, আমলা, ব্যবসায়ী, পুলিশ, আর্মি,
বুদ্ধিজীবি-সহকর্মী শিক্ষক-ছাত্র সবাই আপনার শত্রু!
কারণ, আপনি ওদের কাউকেই ছেড়ে কথা বলেননি।
এ হতভাগা দেশে প্ল্যাটফর্ম না থাকলে ভেসে যেতে হয়!
চাপাতির আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হতে হয়!
হুমায়ুন আজাদ, আপনি সেরে উঠুন, বেঁচে উঠুন,
প্রবলভাবে জেগে উঠুন,
বিধ্বংসীভাবে বেড়ে উঠু্ন,
দেহে, শক্তিতে আর লেখণীতে,
ওইসব মানবকীটেরা উচ্চতায়
আপনার পায়ের একটি আঙ্গুলেরও যেন সমান না হয়,
ওদের চাপাতির চেয়ে আপনার আঙ্গুলের একটি নখও যেন হয়
শতগুন ধারালো,
আপনার চোখের দৃষ্টি যেন জ্বালিয়ে দেয়
ওইসব মানব-পশুদের।
আমাদের অভিশাপ সেইসব ঘাতকদের জন্য,
অপঘাতে মৃত্যু হোক ওদের।
সারা শরীরে দগদগে ঘা হোক ওদের ,
কুষ্ঠরোগে ওদের চামড়ায় পচন ধরুক,
ওরা যেন চোখে না দেখে,
কানে না শোনে,
ওদের কন্ঠনালী শুকিয়ে যাক…
পৃথিবীর সমস্ত জটিল আর দূরারোগ্য ব্যাধি
ওদের অকাল যন্ত্রণাদগ্ধ মৃত্যু এনে দিক,
ওদের স্ত্রী-সন্তান কিংবা বৃদ্ধ বাবা-মার চোখের সামনে
ওদের পচনশীল শরীর মাটির সঙ্গে মিশে যাক।
ওদেরই রক্তাক্ত মৃত্যু হোক সহ-ঘাতকের চাপাতির কোপে।।
আবৃত্তি শুনে মনটা বিষণ্ন হয়ে গেল। অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।
ব্লগে স্বাগতম, ভাইয়া। নিয়মিত লিখবেন আশা করি। অন্য কোন উপলক্ষে আপনাকে স্বাগতম জানাতে পারলে আরো বেশি ভালো লাগতো।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ, ভাইয়া, এক্টা সমস্যা হয়েছিল যেটা মিটে গেছে এক্ষুনি। যাকগে, কবিতাটা তোমার ভাল লেগেছে জানলাম। তোমার জন্য অনেক শুভকামনা।
বিষণ্ণ মুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে শুনছিলাম তোমার অভিশাপ, ভাইয়া। এতো চমৎকার পাঠ শুনে জোরসে তালিয়া বাজিয়ে ব্লগে তোমাকে বরণপত্র দেবার কথা ছিল আমার! অথচ দেখো ভাইয়া, মূকবধিরত্ব পেয়ে বসেছে এবেলায় 🙁
প্রকাশক আর ব্লগারদের ওপর গতকালের পাষবিক তান্ডবলীলায় শোকাহত হওয়ার বদলে লজ্জা, ঘৃণা আর ক্রোধের মিশেলে ভয়াবহ মানসিক যাতনায় আছি। অভিশাপ নয়, চাপাতি বা ছুরিতে নয় আমার এখন আগুনমুখো ড্রাগন হয়ে সব পোড়াতে মন চাইছে!
তোমার কন্ঠের সাথে জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়ের সাযুজ্য খুঁজে পেলাম, ভাইয়া :clap: :clap:
ব্লগে সুস্বাগতম। আরো অনেক অনেক লেখা আর পাঠ চাই তোমার থেকে।
সাবিনা, ওমর আনোয়ার বলছি। আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি, আজ সকালে আমার সিডি থেকে এই কবিতাটা (অভিশাপ) পোষ্ট করেছিলাম। তোমাকে অনেক আগে এইটা ফেসবুকে শুনিয়েছিলাম জয়ন্তর কন্ঠে। এটা কি করে মুজতবা সেলিম এর নামে পোষ্ট দেখাচ্ছে? কিছুই বুঝছি না আমি। ব্যাপারটা ক্যাম্নে হইলো?
Pride kills a man...
এটা অনাকাংঙ্ক্ষিত সম্পাদনা বিভ্রাট ছিলো। এজন্য আন্তরিকভাবে দু:খিত
জি, সাবিনা আপা, আপ্নি আমাকে ভাইয়া ভাইয়া ডাকছিলেন তো সকালে, শুন্তে ভালই লাগছিলো। যাকগে, টেকনিক্যাল সমস্যাটা মিটে গেছে এক্ষুনি। ক্যাম্নে, সে প্রশ্ন আমাকে করো না...
লগ আউট হয়ে গিয়েছিল।
ঘৃনা জানাতে ও অভিশাপ জানাতে আবার লগ ইন করলাম।
এবং জানিয়ে গেলাম।
আবৃত্তি ও লিখা - দুইটাই অসাধারন হয়েছে।
সাথে সাথে কিছু দুঃখ স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
সেটাই ভোগাচ্ছে......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ, পারভেজ ভাই। ভাল থাকবেন।
Pride kills a man...
আমার বউ বলেছে এইসব প্রতিবাদ, মানববন্ধন করে কিচ্ছু হবে না।
দেশে গিয়া জামাতি/মৌলবাদি চাপাতি ধারীদের এক সাইড থেকে পিটাইতে পিটাইতে বংগোপসাগরে নিয়া ফেলতে হবে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:thumbup: :thumbup:
আমার সময়ে সকালবেলা সেলফোনে শুনতে পারিনি। জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠ শুনলে বুঝতে পারতাম এটা আপনার এলবাম।
প্রতিবাদী কবিতা প্রতিবাদী কণ্ঠে খুব ভাল লাগলো ওমর ভাই।
তবে আশাহত হয়ে পড়ছি। সরকারের রহস্যজনক নিষ্ক্রিয়তায় অবাক হচ্ছি --- পরিষ্কারভাবেই এতসব মৃত্যু এবং সরকারী মুখপাত্রদের শিশুসুলভ মূর্খ আচরণ প্রশ্রয় দিচ্ছে মৌলবাদীদের।
ফেসবুক দেখলে বোঝা যায় আইসিস এর সমর্থন এ দেশে কত বেশি ---- আইসিস এর অগ্রযাত্রা ইসলামেরই যেন অগ্রযাত্রা।
বাংলাদেশের কোন আশা যে দেখতে পাচ্ছিনা এটা পরিষ্কারভাবেই আমার সমস্যা। বুড়ো হয়ে গেছি। তরুণরা কি কোন পথ দেখাতে পারে? তাকিয়ে আছি সেদিকে।
'আশ্চর্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টা' সত্যি সত্যি বলে গেছিলেন --- 'সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে', সবকিছুই।
চাপাতির কোপের মতোন ধারালো সব শব্দেরা
সজোরে আঘাত করলো আমার নির্বিকার চিত্তে।
অবিরাম চলমান এক দীর্ঘ ট্রেনের মতোন
ধারালো সব খঞ্জর কোথা থেকে সেই যে এলো !
ধীরে ধীরে গ্রাস করে নিচ্ছ যেনো এক একটি
বিবেকের স্টেশান। মা ন ব তা নামের শব্দটি
খান খান হয়ে হয়ে উঠছে যেনো বস্তাবন্দী
টুকরো টুকরো শরীরের একখানা লাশ !
আদপে এক নয়, একের পর এক, একের পর
একনাগারে, সারিবদ্ধ লাশের মিছিল অথবা
বিস্তীর্ণ কোনো সেমেটারি, যার পরিধিটা
যেনো হুবহু আমারই দেশের মানচিত্রের মতোন।
মানু্ষেরা বুঝি শুধু সৎকারে ব্যস্ত, নতুবা লোবান
আর কর্পুরের সুবাস গায়ে মেখে সেলাইবিহীন
পোষাকের রেশনঘরে সারিবদ্ধ, অপেক্ষমান।
কখন আমাকে ডেকে নেবে ধারালো আঘাত।
অপেক্ষায় অধীর বসে আছে এক অন্ধকার আসমান।
- কবিতা ও পাঠ নাড়িয়ে দিয়ে গেলো।
:boss: :boss:
আমাকে রক্তাক্ত হয়ে এরকম পৈশাচিক মৃত্যুকে বরণ করতে একজন ঘাতকের একটিমাত্র ধারালো অস্ত্রই যথেষ্ট। লক্ষকোটি সংবেদনশীল, সহমর্মী মানুষ হয়তো আছেন আমার চারপাশে, কিন্তু স্পটে গিয়ে আমাকে রক্ষা করবার মত সময়, সুযোগ আর সাহসিকতা কজনের আছে? যখন রাষ্ট্র-রাজনীতি-আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, আমার মেরুদন্ডহীন বন্ধু-সহকর্মী-প্রতিবেশী-পথচারী কেউই আমাকে এই নির্মমতা থেকে রক্ষা করতে অপারগ, তখন আমার চিন্তা তো আমাকেই করতে হবে। আমাকে আরো সাবধানী হতে হবে, দূরদর্শী-ধুরন্ধর হতে হবে, হয়তো বৈধ অস্ত্রধারী হয়েই চলতে হবে! "মুক্তমনা" মন উড়ে যাক বলাকা হয়ে আর দেহটি পড়ে থাক রক্তাক্ত হয়ে খোলা আকাশের নীচে প্রকাশ্য জনারণ্যে - সেইটিও তো আমার কাম্য নয়। (সম্পাদিত)
Pride kills a man...
"মুক্তমনা" মন উড়ে যাক বলাকা হয়ে আর দেহটি পড়ে থাক রক্তাক্ত হয়ে খোলা আকাশের নীচে প্রকাশ্য জনারণ্যে - সেইটিও তো আমার কাম্য নয়।
একটু বুঝিয়ে বলবে, ওমর? দিন দিন আমার বোধবুদ্ধি বিলুপ্তি হওয়ার পথে দেখছি।
ব্যাখ্যাটা উপরের লাইনগুলিতেই পরিষ্কার দেয়া আছে সাবিনা। যেমনটা আমি "অভিশাপে"ই বলবার চেষ্টা করেছি, "আমি কাউকে বিশ্বাস করিনা" আমরা
কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারিনা। অনেক হতাশাজনক শোনালেও এটা সত্যি যে, আমাদের নিরাপত্তার উপায়-প্রণালী আমাদের নিজেদেরকেই খুঁজে বের করতে হবে।
Pride kills a man...
তোমার ব্যাখ্যা পড়েছি ওপরেই। তবুত্ত মুক্তমনা শব্দটির ওপর কোটেশন মার্ক দেখে ভাবছিলাম অন্তর্নিগূঢ় অন্য কোন অর্থ আছে কিনা।
ধন্যবাদ, ওমর।
আমাজনের পিরানহা কিংবা আফ্রিকার নরখাদক
শেষ পরিণতি প্রিয়জনের
ধারালো দাঁত।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
দেশের সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের কোনটিই কিন্তু তাঁদের প্রিয়জনেরা ঘটায়নি। কারা এইসব করছে সেটি দিনের আলোর মত পরিষ্কার। তুমি কি বলতে চাইলে আমি ঠিক বুঝতে পারিনি, মুস্তাফিজ।
ঘাতকদের নৃশংসতা পিরানহা কিংবা নরখাদক তুল্য। শেষটা হোক সগোত্রীয় কারো ধারাল দাঁতে। প্রিয়জনের বদলে সগোত্রীয় হবে।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
কবির মৃত্যু : লোরকা স্মরণে (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়)
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...