লক্ষ্যভ্রষ্টার লক্ষ্যভেদ? নাকি লক্ষ্যভেদীর লক্ষ্যভ্রষ্ট?…

“লক্ষ্যভ্রষ্টা” – বাবামা শখ করে কেনইবা এমন অদ্ভূত একটা নাম রেখেছিলো তার? লক্ষ্যভ্রষ্টা নিজেও সেটা আবিষ্কার করতে পারেনি এতকাল। দেখতে অপরূপাই সে। সঙ্গত কারণেই অহম তার সঙ্গী হলেও সেটা ছিলো অনাবিল। সব কিছুই তো উদ্দাম চলছিলো, যেমনটা চলবার কথা। কিন্তু গত বছর দুয়েক হলো লক্ষ্যভ্রষ্টার বাবামা অনেক চেষ্টা করেও কিছুতেই যেন ওর বিয়ে দিতে পারছিলেন না। কন্যাদায়গ্রস্থ পিতামাতা মোটেও নন তারা। ধনী বাবামার একমাত্র কন্যা সে। তার ওপরে এমন রুপের বাগান যাদের ঘরে, মৌমাছি তো সেখানে বিচরনশীল হবারই কথা! তবুও ওর বিয়ে না হবার কারণটা কিছুতেই কেউ যেন বুঝে উঠতেও পারছে না। বরং ঘটনাটা যেন ক্রমশই রটনা হয়ে ব্যাপারটাকে আরো জটিল করে তুলছিল দিন দিন।

অবশেষে একদিন জানা গেলো, চল্লিশোর্ধ এক বিবাহিতা মহিলার সাথে বছর তিনেক হলো লক্ষ্যভ্রষ্টার দারুণ ভাব জমে গেছে। নামের আরেক অদ্ভূত অকারণ-সামঞ্জস্যতাই হয়তো তাদের বয়সের বিশাল ব্যবধানকে অনায়াসেই অতিক্রম করে বন্ধুত্বকে করেছিলো গাঢ়। সধবা এই নারীর নাম “লক্ষ্যভেদী”। কারনে অকারণে লক্ষ্যভ্রষ্টা আর লক্ষ্যভেদীর দুজনের ঘরে বাইরে অনেক যাওয়া আসা, মিল-মোহাব্বত। লক্ষ্যভেদী কখনো লক্ষ্যভ্রষ্টার বন্ধু, কখনো দিদি, কখনোবা বৌদি, আবার কখনো কখনো মায়ের মতোও। যতক্ষন ওরা পাশাপাশি থাকে, টুকুর টুকুর গল্প যেন চলতেই থাকে।

“অনামিকা” লক্ষ্যভ্রষ্টার একসময়কার বান্ধবী। একই কলেজে পড়তো। পড়ালেখায় আর দেখতে শুনতে সে লক্ষ্যভ্রষ্টার ধারে কাছেও ছিলো না কখনোই। বছর দুয়েক হলো বিয়ে করে পরবাসী হয়ে গেছে অনামিকা।স্বামী বিদেশে বড় চাকরী করে। স্বামী আর তিন সন্তান নিয়ে মহাসুখেই আছে সে এবং সেটা ওর সঙ্গে একবার কথা বললেই বেশ বোঝা যায়। অনামিকা দেশে বেড়াতে এসেছে কয়েক সপ্তাহের জন্য। লক্ষ্যভ্রষ্টার সাথে দেখা হয়েই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো তার। নানান প্রশ্ন জাগলো ওর মনে। কোনোরকম ভণিতা ছাড়াই একদিন সে একরকম সরাসরিই জিজ্ঞেস করে বসলো ওকে, “তোর বিয়ে হচ্ছে না কেন, বলতো”? কথায় কথায় কারণটাও অনামিকা আবিষ্কার করে ফেললো হঠাতই। বিয়ের প্রসংগ বা সম্বন্ধ এলেই সেই লক্ষ্যভেদীর সুপরামর্শেই নাকি লক্ষ্যভ্রষ্টা শুধু সামান্য দুটো শর্ত ছুড়ে দিতো ওর ‘পাণিপ্রার্থী’ হবু স্বামীর কাছে। লক্ষ্যভেদী ওকে শিখিয়ে দিয়েছে হবু স্বামীকে বলতে, তাকে বিয়ে করতে হলে দুটো শর্ত মেনে চলতে হবে। প্রথম শর্তঃ “স্বামীগিরি কখনো যেন সে তার ওপর ফলাতে না আসে”, আর দ্বিতীয়তঃ “ফ্রি ফ্রি গৃহপরিচারিকার দায়িত্ব নিয়ে সে তার ঘরসংসারও সামলাতে পারবে না কোনোদিন, এবং এই কাজে তাকে সবসময়ই একজন কাজের লোককে নিয়োগ দিতে রাখতে হবে”। ব্যস, আর যাবে কোথায়। বেচারা মৌমাছি-পাত্র এক দৌড়েই পগার পাড়। লক্ষ্যভেদীরও তো দোষ নেই কোনো। বসন্তকালের গীত কি আর গ্রীষ্মকালে গাইলে চলে! যে সূত্রটি লক্ষ্যভ্রষ্টাকে ওর শেখানোর কথা ছিলো বিয়ের অন্তত একযুগ পরে, সেটা যে সে বিয়ের অনেক আগেই শিখিয়ে ফেলেছে তাকে!বেচারীর কপাল কি আর এমনিতেই পুড়ছিলো?!

অবশেষে, অনামিকার সুপরামর্শে একদিন লক্ষ্যভ্রষ্টারও বিয়ে হলো, সংসার হলো। ডাক্তার স্বামীর ঘরে সে এখন চার সন্তানের জননী! লক্ষ্যভেদীকে অবশ্য আজও ভোলেনি সে। অপেক্ষায় দিন গুনছে। এক যুগ হতে আর কত বাকী? লক্ষ্যভেদের সেই অভিপ্রেত-অনাবিল-প্রশান্তি আনমনেই অনুভব করে দিন পার করে চলে সে…

গল্পের সারমর্মঃ লক্ষ্যভেদীতে ছেয়ে গেছে দেশটা, অথচ আশ্চর্যজনকভাবে একটা লক্ষ্যভ্রষ্টারও দেখা মিলবে না কোথাও – যে সাহস করে শর্ত ছুড়তে জানে!

৮৫০ বার দেখা হয়েছে

৫ টি মন্তব্য : “লক্ষ্যভ্রষ্টার লক্ষ্যভেদ? নাকি লক্ষ্যভেদীর লক্ষ্যভ্রষ্ট?…”

মওন্তব্য করুন : রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।