আবু জর আল গিফারীঃ ডাকাত থেকে সাহাবী

মক্কা যে গিরিপথের মাধ্যমে বাকী পৃথিবীর সাথে যুক্ত ছিল সেটা ছিল ওয়াদান ভ্যালী এবং সেখানেই ছিল গিফার গোত্রের বাস। অত্যন্ত দুর্ধর্ষ এই জাতি মক্কা এবং সিরিয়ার মধ্যে যে সকল বানিজ্য বহর চলাচল করত তাদের জিম্মি করে চাঁদবাজী করত । বানিজ্য কাফেলা তাদের দাবী পূরণে ব্যর্থ হলে তারা মালামাল আর ধনসম্পদ লুন্ঠন করত । জুনদুব ইবন্ জুনাদা নামে এই গোত্রের ভয়ংকর এবং ক্ষিপ্র একজন নেতা ছিল, যাকে মানুষ আবু জর ডাক নামেই বেশী চিনত।

লোকটি সমগ্র আরব অঞ্চলে তার সাহস এবং স্থিরচিত্তের জন্য বিখ্যাত ছিল। লোকজন তাকে সেই মানুষ হিসাবেও জানত যে মানুষ আরবের সকলে যে ধর্মবিশ্বাস নিয়ে জীবনধারণ করে সে তাকে মিথ্যা বলে মনে করত।

ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে খবর পৌঁছাল যে, মুহাম্মাদ নামের একজন ব্যক্তি মক্কায় নিজেকে আল্লাহর নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। একথা শোনার পর তার অন্তরে খেলে গেল এক অদ্ভূত আলোড়ন। মন বলল এই লোকটিই হয়ত সে, যে এ জাতিকে মূর্তিপূজা এবং পাপাচার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবে। এ জনকে ও জনকে জিজ্ঞেস করেও তিনি কোন সদুত্তর পেলেন না। অস্থির মনের ব্যাকুলতা আরো বরং বেড়ে গেল। মন বলল আর তো বিলম্ব করা যায় না। বিশ্বস্ত কাউকে দিয়ে নিশ্চিত খবর তার চাই।

তাঁর ছোট ভাই এর নাম ছিল আনিস। বড় ভাই এর অস্থিরতা তার চোখেও ধরা পড়েছিল। আনিস নিজেও বড় ভাইকে গভীরভাবে ভালোবাসতো। আবু জর একদিন তাকে ডেকে নিয়ে বললেন, ”তুমি মক্কায় চলে যাও। ওখানে গিয়ে চুপি চুপি সে লোকটিকে খুঁজে বের করবে যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। সাবধান থেকো, ওখানকার মানুষ জানতে পারলে তোমাকে এমনকি মেরেও ফেলতে পারে। লোকটি কি কি বলে তুমি তা মনোযোগ দিয়ে শুনো, বিশেষ করে সে কথাগুলো, যা সে আল্লাহর পক্ষ থেকে পেয়েছে বলে বলছে। দ্রুত যাও আর ফিরে এসে আমাকে সব জানাও।”

আনিস দেরী না করে বেরিয়ে পড়ল। মক্কার বিপদসংকুল পরিস্থিতি। নতুন নবীর দাবীদার মুহাম্মাদের সন্ধান করা অত্যন্ত বিপজ্জনক। সংশয় আর শংকার মধ্যেই আনিস একদিন খুঁজে বের করলো মুহাম্মাদকে (আল্লাহর করুনা শান্তি তাঁর উপর বর্ষিত হোক)। আনিস তাঁর কথা শুনলেন, তারপর মক্কা থেকে তিনি দ্রুত ওয়াদান এর পথে রওয়ানা হলেন।

ইতিমধ্যেই আবু জর অস্থির হয়ে উঠেছেন। মক্কা-ওয়াদান পথে তার উদ্বিগ্ন দৃষ্টি আনিসের আগমন পথের প্রতীক্ষায় ছিল। একদিন দেখা গেল আনিস ফিরে আসছে। ছুটে গেলেন তিনি আনিসের কাছে। উদ্বিগ্ন আবু জর জিজ্ঞেস করলেন,
”কি দেখলে ওখানে, দেখা হয়েছিলো তাঁর সাথে?”
”হ্যাঁ। একজন মানুষকে ওখানে সত্যিই আমি পেয়েছি যে নিজেকে আল্লাহর প্রেরিত নবী বলে বলছে। সে কবি নয় এবং সে মানুষকে কেবল সত্য ও সৎকাজের দিকে ডাকছে।”
”মানুষজন তার সম্বন্ধে কি বলছে?”
”তারা তাকে যাদুকর, মিথ্যাবাদী আর কবি হিসাবে বলছে।”
”তুমি আমার কৌতুহল মেটাতে পারলে না। তুমি কি আমার পরিবারের দিকে খেয়াল রাখতে পারবে যদি আমি নিজেই মক্কা যাই আর সেই নবী বলে দাবীদার লোকটির সবকিছু নিজেই দেখে আসি?”
”হ্যাঁ। তবে সাবধান, মক্কার লোকদের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন।”

আর দেরী না করে আবু জর বেরিয়ে পড়লেন। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত যৌবন তার। জীবনে কতবার মানুষের সম্পদ লুট করার জন্য ক্ষিপ্র গতিতে ঘোড়া ছুটিয়েছেন, আর আজ তিনি চলেছেন এক মহাসত্যকে গ্রহণ করে নেবার জন্য। প্রখর সূর্য, গভীর রাতের নিকষ কালো অন্ধকার সবকিছু পেছনে ফেলে অকুতোভয় মানুষটি এগিয়ে চললেন মক্কার দিকে।

মক্কায় পৌঁছেই তীক্ষ্মধী আবু জর বুঝতে পারলেন শুধুমাত্র মুহাম্মাদের সাথে দেখা করার চেষ্টার কারণে তিনি অত্যন্ত অনিরাপদ ও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন এবং এজন্য তিনি কঠিন সতর্কতা অবলম্বন করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিলেন। আবু জর লক্ষ্য করলেন কুরাইশরা মুহুম্মাদের আনুসারীদের নির্মম শাস্তি দিচ্ছে আর কে কে মুহাম্মাদের কাছে আসছে তা দেখার জন্য চতুর গোয়েন্দাবাহিনী নামিয়েছে। আবু জর জানতেন যে এ অবস্থা তাকে মোকাবেলা করতে হতে পারে, তাই তিনিও প্রস্তুত ছিলেন। বুদ্ধিমান আবু জর এজন্য কোন লোকের কাছে মুহাম্মাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা থেকে বিরত রইলেন। পরিস্থিতি উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তিনি রাতে কাবাঘরের এক কোণে শুয়ে পড়তেন। একদিন আলী ইবন্ আবী তালীব তাকে দেখে ভাবলেন তিনি নিশ্চয়ই একজন আগন্তুক। আলী তাঁকে তার বাড়ীতে যাবার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন। আবু জর মেহমান হিসাবে চললেন আলীর বাড়ীতে। রাত যাপন করে তিনি সকালে আবার কাবার কাছে চলে এলেন, তবে আবু জর বা আলী কেউ কাউকে কোন প্রশ্ন করলেন না।

মুহাম্মাদ নামের নবী বলে দাবীদার লোকটির দেখা পাবেন বলে পরদিন সারাদিন তিনি কাবার কাছে খুঁজে খুঁজে কাটিয়ে দিলেন। কিন্তু দেখা পেলেন না। রাতে আবার চলে এলেন কাবার মসজিদে ঘুমাতে এবং আজও আলী ইবন্ আবী তালিব দেখলেন তাকে। আজ আলী বললেন, “এখনওকি সে সময়টা হয়নি যখন মানুষ বাড়ীর দিকে যায়, চলুন।”

আবু জর আজও আলীর সাথে তার বাড়ীতে গেলেন এবং আজও দুজনের কেউ কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।

এমনিভাবে তৃতীয় দিন এল। আজও আলীর মেহমান হয়েই আবু জর এসেছেন আলীর বাড়ীতে। আজ আলী জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি আমাকে বলবেন কেন আপনি মক্কায় এসেছেন?”
”আমি আপনাকে তখনই বলব যখন আপনি আমার সাথে এই প্রতিজ্ঞা করবেন যে, আমি যা চাই তার সঠিক সংবাদ আপনি আমাকে দেবেন আর কাউকে তা জানাবেন না।” আলী রাজী হলেন। আবু জর বললেন,
”আমি মক্কা থেকে অনেক দূরের পথ পাড়ি দিয়ে এখানে এসেছি একজন লোকের খোঁজে, যার নাম মুহাম্মাদ, যে নিজেকে নবী বলে পরিচয় দিচ্ছে। আমি শুধু তার সাথে একটু দেখা করে তার কিছু কথা শুনতে চাই।”

আনন্দে আলীর চেহারা উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। আলী বললেন, ”আল্লাহর শপথ, তিনি সত্যিই নবী।” আলী তাকে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এবং তিনি যে শিক্ষা দিচ্ছেন তার থেকে কিছু আবু জরকে শোনালেন। অবশেষে তিনি বললেন, ”কাল সকালে আমি আপনাকে মুহাম্মাদের (সাঃ) কাছে নিয়ে যাব। আমি যেখানে যাব আপনি দূর থেকে আমাকে অনুসরণ করবেন। আমি যদি আপনার জন্য বিপজ্জনক কোন কিছু দেখি তাহলে আমি মূত্রত্যাগ করার ভাব করে থেমে যাব। যদি আমি চলতে থাকি আপনি আমাকে অনুসরণ করবেন এবং আমি যেখানে প্রবেশ করি আপনিও সেখানে প্রবেশ করবেন।”

সে রাতে আবু জর এর ঘুম হল না। এতদিন ধরে যে মানুষটিকে দেখার জন্য তিনি হন্যে হয়ে ঘুরছেন কাল তাঁরই সাথে দেখা হতে যাচ্ছে। আর তিনি যদি আল্লাহর নবীই হয়ে থুকে তাহলে কী সৌভাগ্যময় দিন তার আসতে যাচ্ছে কাল।

পরদিন কথামত আবু জর চললেন আলীর সাথে রাসুল মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে দেখা করার জন্য। আলীর সাথে দূরত্ব বজায় রেখে তিনি আলীর পদচিহ্ন অনুসরণ করতে লাগলেন। কোন বিপদ ছাড়াই একসময় তারা পৌঁছে গেলেন কাঙ্খিত গন্তব্যে। কত কথা আবু জর যেন ভেবে রেখেছিলেন মুহাম্মাদকে জিজ্ঞাসা করার জন্য, তার কথাগুলো একটু যাচাই করে নেবার জন্য, কিন্তু আজ যখন তিনি মুহাম্মাদ নামের এই লোকটির সামনে এলেন, তার আগেই আল্লাহ্ ঈমানের আলো আবু জরের অন্তরে ঢেলে দিয়েছিলেন। প্রথম দেখাতেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি বললেন, ”আপনার উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি বর্ষিত হোক হে আল্লাহর রাসুল।” ”আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ্”।

রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, আবু জরের চেয়েও সুন্দর ভাষায় সে সম্বোধনের জবাব দিলেন, ”তোমার উপরও আল্লাহর শান্তি, রহমত ও করুণা বর্ষিত হোক।” ”ওয়ালাইকুম আস্সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ্ ওয়া বারাকাতুহু”। আর এভাবেই আবু জর হলেন প্রথম মানুষ যিনি আল্লাহর রাসুলকে সেই কথাগুলো দিয়ে সম্বোধন করলেন যা পরবর্তিতে মুসলিমদের জন্য সম্বোধন রীতি হিসাবে নির্ধারিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে স্বাগত জানরালেন এবং ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তিনি তাকে কুরআন থেকে কিছু বাণী পড়ে শেনালেন। আবু জর মোটেও দেরী করলেন না, সত্যের আলো তার হৃদয়ে আল্লাহ্ প্রজ্জ্বলিত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ্ ও তার রাসুলকে বিশ্বাস করে সাক্ষ্যের উচ্চারণ তার মুখ থেকে উচ্চারিত হলো। আর ভাগ্যবান এই লোকটি এভাবেই প্রথম দিককার মুসলিমদের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হলেন, যাদের সীমাহীন মর্যাদার কথা স্বয়ং আল্লাহ্ ঘোষনা করেছেন। এরপরের কথা আমরা আবু জরের মুখ থেকেই শুনব।

“এরপর থেকে আমি রাসুল, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর সাথে মক্কায় থাকতে লাগলাম। তিনি আমাকে ইসলাম এবং কুরআন শিক্ষা দিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে বললেন, ”তোমার ইসলাম গ্রহণের কথা তুমি এখানে মক্কার কাউকে জানিও না। আমার ভয় হয়, তা জানলে ওরা তোমাকে মেরে ফেলবে।”

আবু জর তারুণ্যদীপ্ত দুঃসাহসিক মানুষ। ইসলাম গ্রহণের আগেও তিনি কাউকে কখনও ভয় পাননি, বরং এ লোকটির সাহস আর পৌরুষ সবাইকে অবাক করেছে। আজ ঈমানের তেজ তার অন্তরে। তিনি কি কাউকে ভয় পেতে পারেন? আবু জর বললেন, ”যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্ত্বার শপথ ইয়া রাসুলাল্লাহ্, আমি ততক্ষন পর্যন্ত মক্কা ত্যাগ করব না যতক্ষন না আমি কাবার প্রঙ্গনে কুরাইশদের মাঝখানে গিয়ে যে সত্য আল্লাহ্ আমাকে দিয়েছেন সে সত্যের ঘোষণা না দেব।”

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) নিশ্চুপ রইলেন। আমি কাবার মসজিদে গেলাম। কুরাইশরা সেখানে বসে ছিল এবং নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। আমি তাদের মাঝখানে গিয়ে পৌঁছালাম এবং আমার গলার সর্বোচ্চ আওয়াজে বললাম, ”কুরাইশগণ, আমি তোমাদের ঘোষণা করছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।”

আমার কথার সাথে সাথে তাদের মধ্যে বিস্ময়কর প্রতিক্রিয়া হল। তারা লাফ দিয়ে উঠে পড়ল এবং বলতে লাগল, ”একে এখনই ধর, সে নিজের দীন ত্যাগ করেছে।” তারা আমাকে ধরে ফেলল, আমার উপর চড়ে বসল আর আমাকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে মারতে লাগলো। তাদের সেই বীভৎস মার আমাকে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিল। ঠিক সে সময় আব্বাস বিন আবদুল মুত্তালিব, যিনি রাসুলুল্লাহর চাচা, আমাকে চিনতে পারলেন। তিনি আমার উপর আচ্ছাদনের মত ঝুঁকে পড়লেন এবং আমাকে তাদের মার থেকে রক্ষা করলেন। তারপর তাদের বললেন, ”তোমাদের ধ্বংস হোক, এ তোমরা এ কি করছ? তোমরা কি গিফার গোত্রের একজন লোককে মেরে ফেলছ অথচ তোমাদের ব্যবসা ও বাহনগুলো গিফার গোত্রের উপর দিয়েই মক্কা থেকে বের হবে।” আব্বাসের এ কথায় তারা আমাকে ছেড়ে দিল।

এ ঘটনার পর আমি রাসুলুল্লাহ্, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক, এর কাছে ফিরে গেলাম। যখন তিনি আমার ক্ষতবিক্ষত অবস্থা দেখলেন তখন বললেন, ”আমি কি তোমাকে বলিনি মক্কার লোকদের সামনে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা না দেবার জন্য।” আমি বললাম, ”ইয়া রাসুলাল্লাহ্, এ কাজটি করার জন্য আমি মন থেকে চাইছিলাম এবং তা আমি পূরণ করেছি”।
”তোমার জাতির কাছে ফিরে যাও, আর তুমি যা দেখেছ ও যা শুনেছ তা তাদেরকে জানাও। তাদেরকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দাও। আল্লাহ্ হয়তো তোমার মাধ্যমেই তাদেরকে কল্যাণের দিকে নিয়ে আসবেন এবং তাদের মাধ্যমে তোমাকে পুরস্কৃত করবেন। আর যখন তুমি শুনবে যে আমি প্রকাশ্যে চলে এসেছি, তখন তুমি আমার কাছে চলে এসো।”

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর এ আদেশের পর আমি আমার জাতির কাছে চলে এলাম। আমার পৌঁছানোর খবর পেয়ে আমার ভাই আমার কাছে ছুটে এল। ”আপনি কি করলেন সেখানে?”, সে আমাকে জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম যে, আমি মুসলিম হয়েছি আর মুহাম্মাদ যে শিক্ষা দিচ্ছেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। ”আমি আপনার ধর্ম আর মতের বিরুদ্ধে নই, আজ থেকে আমিও মুসলিম আর বিশ্বাসী হিসাবে ঘোষনা করলাম।”

দুই ভাই এরপর তাদের মায়ের কাছে গেল এবং মাকে ইসলামের দাওয়াত দিল। মা বললেন, ”তোমাদের দু ভাইয়ের বিশ্বাসের সাথে আমার কোন দ্বিমত নেই। আজ থেকে আমিও ইসলামে প্রবেশ করলাম।”

সেদিন থেকেই এ বিশ্বাসী মুসলিম পরিবারটি গিফার গোত্রের লোকদের অক্লান্তভাবে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চলল। ফলশ্র“তিতে গিফার গোত্রের অধিকাংশ লোক ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নিল।

আবু জর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) মদিনায় হিজরতের আগ পর্য়ন্ত ওয়াদান মরুভূমিতে তাঁর গোত্রে অবস্থান করতে লাগলেন। বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধের সময় পর্য়ন্ত এ গোত্রটি ওয়াদান মরুভূমিতে অবস্থান করতে লাগল। অবশেষে রাসুল (সাঃ) এর নির্দেশে আবু জর এরপর মদিনায় চলে এলেন। আবু জর রাসুল (সাঃ) এর কাছে অনুমতি চাইলেন সর্বক্ষন তাঁর একান্ত সান্নিধ্যে থাকার জন্য এবং তাঁর ব্যক্তিগত কাজে লাগার জন্য। রাসুল (সাঃ) তাঁকে অনুমতি দিলেন এবং তার সাহচার্য ও কাজকর্মে সবসময় সন্তুষ্ট ছিলেন। রাসুল (সাঃ) প্রয়ই আবু জরকে অন্যদের থেকে অগ্রাধিকার দিতেন এবং যখনই তার সাথে দেখা হত তিনি তার দিকে তাকিয়ে হাসতেন আর তাঁকে বেশ প্রফুল্ল দেখাত।

সময় বয়ে চলল এবং একদিন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করলেন। আবু জর এরপর আর মদিনা থাকতে পারলেন না। প্রতিটি মুহূর্তে রাসুলের (সাঃ) শূন্যতা তাকে ভীষন আবেগপ্রবন করে তুলত। রাসুলের (সাঃ) যে অভিভাবকত্ব আবু জরকে ছায়ার মত আগলে রেখেছিল তার অভাব তাকে প্রতিটি সেকেন্ডে যেন বিদ্ধ করছিল। আবু জর মদিনা ত্যাগ করলেন এবং আবু বকর এবং উমার এর পুরো খিলাফতকাল তিনি সিরিয়ার মরুভূমিতে নিভৃতে কাটিয়ে দিলেন।

উসমান ইবন্ আফফান (রাঃ) এর খিলাফতকালে আবু জর দামাস্কাসে অবস্থান করছিলেন। দুনিয়ার প্রতি চিরকাল উদাসীন আবু জর লক্ষ্য করলেন মুসলিমরা পরকাল বাদ দিয়ে দুনিয়া এবং বিলাসিতার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। তিনি এতে অত্যন্ত ব্যথিত হয়ে পড়লেন। উসমান (রাঃ) তাকে মদিনায় ডেকে পাঠালেন। মদিনায় এসেও আবু জর মুসলিম সমাজের বিলাসিতায় মজে যাবার চিত্রই দেখলেন। অবিশ্বাস্য রকম দৃঢ় ও সারাজীবন একই রকম দুনিয়াবিমুখ এ লোকটি মুসলিমদের এ পরিবর্তন সহজভাবে নিতে পারলেন না। এর ফলে শাসক খিলাফতের সাথে তাঁর দ্বন্দ্ব বাড়তে লাগল, এমনকি আবু জরের দৃঢ় দুনিয়া বিমুখতায় মুসলিম সমাজে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা দেখা দিল। এহেন অবস্থায় খলিফা উসমান তাঁকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁকে মদিনার কাছে নির্জন আল-রাবাতাহ্ মরুভূমিতে চলে যাবার জন্য অনুরোধ করলেন। আবু জর লোকালয় থেকে অনেক দূরে রাবাতাহ্য় চলে গেলেন এবং সেখানে প্রাণপ্রিয় রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাহ্ আঁকড়ে ধরে বাস করতে লাগলেন। মরুভূমিতে তাঁর বসবাসকালীন জীবনে একবার এক লোক তাঁর সাথে দেখা করতে এল। অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে সে লক্ষ্য করল আবু জরের বাড়ী প্রায় শূন্য, কোন সম্পদ বলতে সেখানে কিছু নেই। লোকটি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ”আপনার সম্পদ কোথায়?” তিনি উত্তর করলেন, ”পৃথিবীর পরের জীবনে আমার একটি বাড়ী আছে। আমার সব উত্তম সম্পদগুলো আমি সেখানে পাঠিয়ে দিয়েছি।” লোকটি বুঝল আবু জর কি বুঝাতে চাচ্ছেন। ”কিন্তু যতদিন আপনি এ দুনিয়াতে আছেন, ততদিন আপনার কিছু সম্পদ থাকা উচিৎ”। আবু জর উত্তর করলেন, ”যিনি এ পৃথিবীর মালিক, তিনি তো আমাকে এ সম্পদের কাছে ছেড়ে দেবেন না”।

একবার সিরিয়ার আমীর দূত পাঠিয়ে আবু জরকে তাঁর প্রয়োজন মেটানোর জন্য তিনশো দীনার পাঠিয়ে দিল। আবু জর এই বলে আমীরের দেয়া দীনার ফেরত পাঠালেন যে, ”আমীর কি এ দীনারগুলো দেবার জন্য আমার চেয়ে বেশী চাহিদাসম্পন্ন ভৃত্য আর কাউকে খুঁজে পেলেন না?”

৩২ হিজরী। আবু জরের মৃত্যুর সময় উপস্থিত হয়েছে। নির্জন মরুভূমিতে তিনি আর তাঁর স্ত্রী একা। রাবাতাহ্ ছিল এমন একটি যায়গা যেখান দিয়ে সাধারণত একেবারেই লোক চলাচল হত না, তার উপর সে সময়টা এমন ছিল যখন কোন বাণিজ্য কাফেলাও যাতায়াত করত না।। মৃত্যুপথযাত্রী আবু জরের অবস্থা দেখে তাঁর স্ত্রী ব্যাকুল হয়ে পড়লেন কোন সাহায্যের আশায়। স্ত্রীর এ অবস্থা দেখে আবু জর বললেন, ”চিন্তা করো না, আমি রাসুলাল্লাহ, তাঁর উপর আল্লাহর করুণা বর্ষিত হোক, কে বলতে শুনেছি, তোমাদের মধ্যে এখানকার একজনের মৃত্যু হবে নির্জন মরুভূমিতে। কিন্তু তার মৃত্যুর সময় মুমিনদের একটি দল সেখানে উপস্থিত হবে। আমি নিশ্চিত সে ব্যক্তিটিই আমি, কারণ সেদিন আমরা যারা সেখানে উপস্থিত ছিলাম তাদের সবাই মৃত্যুবরণ করেছেন। কেবল আমিই বাকী। তুমি পথের দিকে খেয়াল রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল মিথ্যা বলেন নি।” আবু জর কিছুক্ষনের মধ্যেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। আবু জরের স্ত্রী একবার স্বামীর কাছে আরেকবার উঁচু টিলার উপর উঠে দূরে খেয়াল করতে লাগলেন। এ অসময়ে কে আসবে এই অপ্রচলিত পথে এই চিন্তায় তিনি অস্থির হয়ে পড়লেন। অবশেষে দূরে দেখা গেল ধুলোর ঝড় তুলে একদল লোক এদিকেই আসছে। কাফেলাটি এসে আবু জরকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল এ লোকটি কে? তাঁর স্ত্রী উত্তর করলেন, আবু জর। লোকেরা বলল, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাহাবী আবু জর? তাঁর স্ত্রী বললেন, ”হ্যাঁ।” লোকেরা অত্যন্ত অস্থির হয়ে বলল, ”আমাদের জান কুরবান হোক”। তারা দ্রুত আবু জরের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করলেন। প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ্ ইবন্ মাসউদ (রাঃ) তাঁর জানাজার সালাত পড়ান।

এমনিভাবে আবু জর ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেছেন দুনিয়াবিমুখ হয়ে কেবলমাত্র আল্লাহ্ আর তাঁর রাসুলের আনুগত্যের মাধ্যমে। একদিন যে লোকটি ওয়াদান ভ্যালীর আতঙ্ক আর ত্রাসের নাম ছিল, সে ব্যক্তিটিই একদিন নির্লোভ আর দুনিয়াবিমুখতার দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন। ঈমানের মাধ্যমে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা তাঁর অন্তরকে এমনই পরিবর্তন করেছিলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) কে তিনি এতই ভালবাসতেন যে তাঁর মৃত্যুর পর যখনই তিনি রাসুলের (সাঃ) কথা মনে করতেন, তখনই অঝোর ধারায় কাঁদতেন। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যপার এই যে এই দুর্ধর্ষ মানুষটি সম্পর্কেই রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেন, ”আকাশের নীচে এবং পৃথিবীর উপর আবু জরের চেয়ে বিশ্বাসী ও সত্যবাদী আর কেউ নেই”।

৬,৯১০ বার দেখা হয়েছে

৪৩ টি মন্তব্য : “আবু জর আল গিফারীঃ ডাকাত থেকে সাহাবী”

  1. আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

    DO YOU KNOW THE TOP 10 RICHEST PEOPLE ON EARTH?

    10. Mukesh Ambani- Net Worth: $27.0 Billion.
    09. Eike Batista- Net Worth: $30.0 Billion.
    08. Amancio Ortega- Net Worth: $31.0 Billion.
    07. Lakhsmi Mittal- Net Worth: $31.1 Billion.
    06. Lawrence Ellison- Net Worth: $39.5 Billion.
    05. Bernard Arnault- Net Worth: $41.0 Billion.
    04. Warren Buffett- Net Worth: $50.0 Billion.
    03. Bill Gates- Net Worth: $56.0 Billion.
    02. Carlos Slim Helu- Net Worth: $74.0 Billion.
    and:
    01. The ONE who prays two Rak'ah, before Fajr:

    The Prophet (ﷺ) said: "The two Rak'ah before the Dawn (Fajr) Prayer are Better than this World and ALL it contains.''
    [Sahih Muslim] (সম্পাদিত)


    Smile n live, help let others do!

    জবাব দিন
  2. রফিক (৯৩ - ৯৯)

    পড়ার পর কিছু প্রশ্নঃ
    ১। দুনিয়াবিমুখ আবু জর কেন তার স্ত্রী কে সাথে নিয়ে গেলেন?
    ২। যাচাই বাছাই না করে নতুন একটা ধর্ম গ্রহন এর কাহিনি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?

    সরি ভাইয়াঃ আমার মনে হয় এসব অযৌক্তিক গল্প বাদ দিয়ে বাস্তব জীবনে ইসলাম এর উপকারিতা নিয়ে আমাদের এখানে আলোচনা করা উচিত। :frontroll:

    জবাব দিন
    • ১। ইসলামে দুনিয়া বিমুখতা মানে স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করা নয়।
      ২। তোমার কাছে 'কাহিনী' বলে মনে হলেও এটা সত্য।

      তোমার পরামর্শ শুনলাম, কিন্তু নিলাম না। এখানে সাহাবীর জীবনী আলোচনা করেছি, 'জন আব্রাহামের' নয়।

      বানোয়াট অনেক গল্প অলী-বুজুর্গের নামে দেশে প্রচলিত আছে, তবে সাহাবাদের জীবনী নয়। তা বিশুদ্ধভাবে ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে। আমার ভুল হয়েছে রেফারেন্স উল্লেখ করিনি, এখন করে দিচ্ছি।

      * বিশ্বনবীর সাহাবী- তালাবুল হাশেমী
      * আসহাবে রাসুলের জীবন কথা- ডঃ আবদুল মা'বুদ
      (এ বইগুলোতে রেফারেন্সের বিস্তারিত উল্লেখ করা আছে)

      জবাব দিন
      • রফিক (৯৩ - ৯৯)

        ১। ইসলামে দুনিয়া বিমুখতা মানে স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করা নয় - আমার মতে স্ত্রীর চাইতে সন্তানের প্রতি আমাদের দায়িত্য বেশী।
        ২। তোমার কাছে ‘কাহিনী’ বলে মনে হলেও এটা সত্য।- আমি সুন্নি মুসলমান, আপনি ? আবু জর আল গিফারী কে নিয়ে শিয়াদের গল্পটা একটু অন্যরকম -> বিশুদ্ধভাবে ইতিহাসে সংরক্ষিত আছে কথাটা তাই মানতে পারলামনা।

        জবাব দিন
        • ১। কথার মানে ঠিক বুঝলাম না। 'দুনিয়া বিমুখতা' প্রসঙ্গে 'স্ত্রীর চেয়ে সন্তানের প্রতি দায়িত্ব বেশী'.........??
          ২। আমিও তোমার মতোই সুন্নী। শিয়াদের রেফারেন্সের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সুন্নীদের তো বটেই, নিজেদেরও মতবিরোধ আছে।

          ইসলামের বিখ্যাত সব ঐতিহাসিক যেমন ইবন হিশাম, তাবারী, তাবরানি, ইবন কাসীর......ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে সত্যটা তুলে আনার জন্য বেশ কিছু মানদন্ড ঠিক করে নিয়েছিলেন যা পৃথিবীর আর কোন ইতিহাসবিদ করেননি। যেমন- যার থেকে ইতিহাস নিচ্ছেন সে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও সৎ কিনা, তার উৎস কি, তার উৎসের সাথে তার যে প্রত্যক্ষ সাক্ষাত হয়েছে সে ব্যাপারে কোন চরিত্রবান সাক্ষী আছে কিনা, প্রতিটি উৎসের সাথে পূর্বের উৎসগুলোর প্রত্যক্ষ যোগাযোগের প্রমাণ আর সাক্ষী আছে কিনা ইত্যাদি। এ মানদন্ডের ভিত্তিতে সাহাবাদের জীবন আর ইসলামের ইতিহাস উঠে এসেছে। আর তাই মুসলিম ঐতিহাসিকদের দ্বারা লিখিত ইসলামের ইতিহাস পৃথিবীর আর সকল ইতিহাসের চেয়ে তাই অধিকতর বিশুদ্ধ বলে স্বীকৃত। আজ যদি তুমি থিওফ্রাস্টাস, আলেকজান্ডার বা অ্যারিস্টটলের কোন বাণী শুনে চমকৃত হও, সেটা আদৌ তাদের কথা কিনা তা নিয়ে ভেবে দেখার যথেষ্ট অবকাশ আছে। তার চেয়ে আবু জর আল গিফারীদের জীবনী ও ইতিহাস অনেক বিশুদ্ধই পড়ছো।

          তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, ইসলামের নামে প্রচলিত পীর-ফকির-বুজুর্গের উদ্ভট কিচ্ছা দিয়ে ভরা আমাদের এই দেশ। ধর্ম ব্যবসায়ীদের বানানো সে সকল বানোয়াট কাহিনীর সাথে ইতিহাসের সম্পর্ক তুমি খুঁজে পাবেনা এবং কোন অথেন্টিক রেফারেন্সও পাবেনা। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে খুঁজে নেয়"। (সহীহ বুখারী, মুসলিম)। তারপরও তারা এমন সাহস কিভাবে পায় জানিনা।

          জবাব দিন
  3. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আমার কাছে আসহাবে রাসূল আছে। পড়া হয় নাই এখনো।
    মুসলমানরা লাকি যে তাদের নবী তাদের দুনিয়াবিমুখ হইতে বলেন নাই।
    মালিবাগের ঐখানে আবু জর গিফারী কলেজ দেইখাই বুঝছিলাম কোন বিখ্যাত আলেম হবেন।
    তার কাহিনী পড়ে ভালো লাগলো।
    খালি তার দুনিয়াবিমুখতা মাইনা নিতে পারলাম না।
    নবী দেদারসে তার সঙ্গীদের ভবিষ্যত বইলা গেছেন আর অন্যদের মানা করছেন। অবশ্য নবী বইলা কথা। তাদের জন্য আলাদা নিয়ম। এইজন্য যখনি কোরান পড়ি তখনি কনফিউজ হইয়া যাই কথাটা কাকে বলা হইলো নবী রে না আমজনতারে!
    তবে আপনার লেখায় আরেকটা জিনিস উইঠা আসছে; উসমানের সময় বিলাসী জীবন যাপন।
    যে কিনা নবীর উচ্চ পর্যায়ের সাহাবী, ২ মেয়ের স্বামী, সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী, কোরান একত্রকারী সে কিভাবে বিলাসী জীবন যাপন করে।
    উসমানের দিকে তাকাইলেই ইসলাম কি জিনিস তা বুঝা যায়।
    ব্যাপারটা এভাবে দেখা যায় সাহাবী হইয়াও উসমান আরাম আয়েশে দিন গুজ্রান করলেন আর গিফারী সাহেব গেলেন মরুভুমিতে।
    কোরান পইড়া আপনি হইলেন ইস্লামের সেবক আর আমি হইলাম নাস্তিক।
    আফসোস।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • শরিফ (০৩-০৯)
      কোরান পইড়া আপনি হইলেন ইস্লামের সেবক আর আমি হইলাম নাস্তিক।

      আপনার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক এবং দোয়া করি একদিন আপনি আপনার ভুল বুঝতে পারবেন এবং আল্লাহর পথে ফেরত আসবেন । আমিন ।

      জবাব দিন
      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        আপাতত তার কোন সম্ভাবনা দেখি না।
        তবে যদি কোন দিন সেরকম সম্ভাবনা থাকে তবে তা জানাবো। লেখা আকারে লিখবো ওপেন চ্যালেঞ্জ।
        আবার নাম দিতে পারি বিশ্বাসীর দর্শন।
        তুমি কি আবিরের বই পড়ছো অবিশ্বাসীর দর্শন?
        না পড়লে পইড়ো।
        সুম্মা আমিন।


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
    • আসহাবে রাসুলের জীবনকথা পড়ে দেখো, ভালো লাগবে। পড়ে চিন্তা করে দেখো, আশা করি আরো ভালো লাগবে।

      সাহাবাদের ভেতর উসমান অনেক আগে থেকেই ছিলেন শ্রেষ্ঠ ধনীদের মধ্যে একজন। তুমি ভুল করছো, উসমানের বিলাসী জীবনের কথা আমি লিখিনি। উসমানের খিলাফতের সময় মুসলিম জনগনের বিলাসী জীবনের কথা বলেছি। উসমান সারা জীবন একইভাবে জীবন কাটিয়েছেন, বরং খলিফা হবার পর তার ব্যবসা কমে গিয়ে আয় আগের চেয়ে কমে গিয়েছিলো। কেউ যদি সৎ উপার্জন করে, যাকাত-উশর আদায় করে আর অপচয় না করে তাহলে তার ধনী কিংবা বিলাসী জীবন যাপনে কোন বাধা ইসলামে নেই। আবু জর সাহাবীদের ভেতর সবচেয়ে দুনিয়া বিমুখ ও সম্পদহীন ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃকে তিনি তেমনই দেখেছেন। তাই তিনি সামান্য বিচ্যুতিও সহ্য করতে পারতেন না। মানুষ তাঁকে যেমন ভালোবাসতো, তেমনি তাঁর ভয়ে অস্থির থাকতো। এজন্যই উসমান রাঃ তাঁকে রাবজায় যেতে অনুরোধ করেছিলেন আর তিনি বিনা কথায় তা মেনে নিয়েছিলেন।

      কুরআন পড়ে কারো ঈমান বাড়বে আর কারো অবাধ্যতা বাড়বে তা আল্লাহই বলেছেন কুরআনে। এ কথার অন্যথা হবার নয়। একটা কথা মনে রেখো দেড় হাজার বছর আগে যখন কুরআন নাজিল হয়েছিলো সারা পৃথিবীতে তখনকার পাওয়া বইগুলো খুঁজে দেখো, তা ছিলো কি অবাস্তবতায় ভরা। এ অঞ্চলের প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরানো বই চর্যাপদের বয়স এক হাজার বছর, কুরআনেরও চারশ বছর পরের হলো এ বইটি। দুটি বই একসাথে তুলনা করে দেখো। আধুনিকতা কাকে বলে তা তোমাকে দেখাবে কুরআন। দেড় হাজার বছরের আগের কিন্তু মনে হচ্ছে যেন আজই এসেছে আমার জন্য।

      অফটপিক ঢাকা ভার্সিটির পলিটিকাল সাইন্সের অধ্যাপক ডঃ হাসানুজ্জামানের প্রসঙ্গে বলি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সারির নাস্তিকদের একজন, যিনি ইসলামে রিভার্টেড হয়েছেন। সৌভাগ্যক্রমে তাঁর সাথে একবার আমার দেখা হয়েছিলো। আলাপ প্রসঙ্গে বললেন- "কুরআনের ভুল খুঁজে বের করার জন্য আমি এর ইংলিশ ট্রান্সলেশন নিয়ে বসলাম। যেটা ভুল ভেবে কোট করবো বলে দাগিয়েছি তা আবার পড়ে দেখি এতো ভুল হতে পারেনা। এভাবে পুরোটা পড়লাম। কিছু কথা খুবই দাগ কাটলো। এবার কলম নিলাম ভালো লাগা কথা দাগানোর জন্য। এক সময় দেখলাম পুরো ট্রান্সলেশনই দাগিয়ে ফেলেছি। আল্লাহর করুণা, তিনি আমাকে এভাবে ভাবতে দিয়েছিলেন"। সে যে শুরু তার স্টাডি, তা বোধ হয় আজও চলছে। সারা বিশ্ব ঘুরে ঘুরে তিনি ইসলামের ঐতিহাসিকদের রেয়ার এবং বিচিত্র সব বই কালেকশন করেছেন। ভার্সিটির টিচার্স কোয়ার্টারে তাঁর বাসায় দেখেছিলাম সে সব বইয়ের সম্ভার। জার্মানি থেকে আনা একটা ঘুনে কাটা বই (নাম মনে নেই) দেখিয়ে বললেন, "এ বইটার কপি সারা বিশ্বেই খুব কম আছে"। আমার ধারণা তার মতো ইসলামী লিটারেচারের কালেকশন বাংলাদেশে আর কারো নেই। জীবনের সব উপার্জন, সঞ্চয় খ্যপাটে এ লোকটি বই কেনা আর ছাপানোর পেছনে খরচ করেছেন আর তার পরিবারও সানন্দে তা মেনে নিয়েছে। ইসলামের উপর ইংরেজি, বাংলা দুই ভাষাতেই লেখা তাঁর কিছু চমৎকার বই আছে। আমাকে দু-একটি দিয়েছিলেন। কোথায় যে গেছে আর পাচ্ছিনা খুঁজে।

      আল্লাহ হলেন একমাত্র অন্তর পরিবর্তনকারী। আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করুন।

      জবাব দিন
      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        কুরআন পড়ে কারো ঈমান বাড়বে আর কারো অবাধ্যতা বাড়বে তা আল্লাহই বলেছেন কুরআনে। এ কথার অন্যথা হবার নয়

        হে আল্লাহ তুমি মহান। নাস্তিক আছি, তাও তোমারি ইচ্ছায়।
        এই যে এখন একটা হাচি দিলাম, তাও তোমারি ইচ্ছায়।
        তুমি আছো, তুমি আছো।
        লা ইলাহা ইললাললা।


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
        • সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়- এ হলো আল্লাহর উপর একটা মিথ্যারোপ। তাহলে আর ভালো-খারাপ কেনো, শাস্তি-পুরস্কার কেনো? প্রকৃত ব্যাপার হলো এই যে, কোন কিছুই আল্লাহর জ্ঞানের বাইরে নয়। আমি ভালো কাজ করলাম নাকি খারাপ তা আল্লাহ আমার এখতিয়ারে দিয়ে দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী আমার গন্তব্য নির্ধারিত হবে।

          জবাব দিন
  4. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    আর ভাইয়া আপনি সিরিজ আকারে সাহাবীদের জীবনী লিখতে পারেন। অনেক কিছু জানার আছে।
    ধন্যবাদ।


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
    • রফিক (৯৩ - ৯৯)

      আমি আসলে সবাইকে মানুষ হিসাবে দেখি -> মহামানুষ হলেও ওনারা মানুষ এ ছিলেন। আর আমরা সবাই তাদেরকে এলিয়েন বানাতে ব্যস্ত 😛 জীবনী বিশ্বাস করা আর না করাতে কি আসে যায় ?! মানুষ যাকে পছন্দ কর, তার সবকিছুই সুন্দর দেখানোতে ব্যস্ত থাকে -
      এবার তোমার প্রশ্ন - আমার চোখে বিশ্বাস ব্যাপারটা আপেক্ষিক। জীবনী বিশ্বাস করার মত কিছুনা, শুধুই অতীত যা বদলানো যায় না। তবে আমাদের উচিত অতীত নিয়ে নিরপেক্ষ কথা বলা 😀

      জবাব দিন
      • রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

        রফিক একটা কথা কই।
        আমরা বিনা কারণে অতীতের মানুষেরে অযথা প্রশংসা করি।
        একবার আমার বাসায় আইসা এক হুজুর কইতেছিল সাহাবীগো অনেক বুদ্ধি আছিলো।
        না কইলাম মানি না।

        একটা উদাহরণ দেই। রাজা সলোমন রে আল্লা নাকি লোহার ব্যাবহার শিখাইছিলো (কোরানে আছে)
        আমি ভাইবা পাই না ইন্টেল কোম্পানি রে হার্ডওয়ার বানানো কে শিখাইলো!


        এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

        জবাব দিন
        • আল্লাহর শেখানো প্রসঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা কিছু বলি।

          সুরা আর রাহমানে 'আ'ল্লামাহুল বাইয়ান' নামে একটা আয়াত আছে যার অর্থ হলো 'তিনি (মানুষকে) ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন'। আমি চিন্তা করতাম কিভাবে আল্লাহ আমাকে ভাষা শিক্ষা দিয়েছেন, তা তো আমি বাবা-মা'র কাছ থেকেই শিখেছি। নিজের বাচ্চা হবার পর তা বুঝতে পারলাম। আমার দু বছর বয়সী বাচ্চা যখন নেইলকাটার চিনে ফেলে আর 'নিলকাতা' বলে আমরা বাবা-মা'কে চমকৃত করে দেয়, তখন ভাবি- আশ্চর্য, এ শব্দতো আমরা কখনও ওকে শিখিয়ে দেইনি। ওর যে ভোকাবুলারী দেখছি তার বেশীরভাগই আমরা ওকে হাতে কলমে কখনও শিখিয়ে দেইনি। তার ব্রেন অজানা রহস্যময়তার মধ্য দিয়ে দিন দিন শিখে চলেছে। আবার আজ যদি তার ব্রেনের ডেভেলপমেন্ট না হতো কিংবা গ্রহণ করতে অনুপযুক্ত হতো, তাহলে সে বুদ্ধি প্রতিবন্ধীও হতে পারতো। সুস্থ্য একটা মস্তিষ্ক আর তা ব্যবহার করার অনন্য ক্ষমতা আল্লাহ যদি না দিতেন তাহলে হাজার গেলালেও ফলাফল হতো শূন্য।

          প্রতিটি শিশু যেমন মায়ের পেট থেকে পড়ে কোর আই সেভেন বুঝে ফেলে না, তেমনি ব্রেনের মতো অপার রহস্যময় জিনিসটা মানুষ নিজের হাতে বসে বসে তৈরী করে নেয়নি। মানুষের ব্রেনের নিউরনের গঠন আর কাজের সিস্টেম যা আজও রহস্যাবৃত তা নিয়ে পড় আর ভেবে দেখ। ইন্টেল কোম্পানীর হার্ডওয়্যার নিয়েই যে ভাবনা শেষ করে দিয়েছি তা ভেবে লজ্জা পেতে হবে।

          জবাব দিন
  5. রফিক (৯৩ - ৯৯)

    ‘নিলকাতা’ বলে আমরা বাবা-মা’কে চমকৃত করে দেয়, তখন ভাবি- আশ্চর্য, এ শব্দতো আমরা কখনও ওকে শিখিয়ে দেইনি - কি কইলেন ভাই :boss: আমরা বন্ধু মহলে যে খাস বাংলা বলি, আপনার কি মনে হয় আমাগো বাপ মা তা শিখাইছে?
    তার ব্রেন অজানা রহস্যময়তার মধ্য দিয়ে দিন দিন শিখে চলেছে - অজানা কথা টা ঠিক না। ২+২ এ ৪ মিলালেই পেয়ে যাবেন বাবু 'নিলকাতা' কোথায় শিখল 🙂
    রহস্যময় বইলা দাঁড়ি দিয়ে দিলেন - রহস্য উদ্ঘাটনের চেষটা না করলে মানব জাতির খবর আছে 😀

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফাইয়াদ (৮৯-৯৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।