প্রলাপ ১৪

Copy of DSC_0613

জাদু বাস্তবতার গল্পে কী থাকে? ঘর! …ঘর পেরুলেই নীল হ্রদ…যতদূর চোখ যায় নীল,নীল…নীলের পর আবার নীল পাহাড়ের সারি…দূরে আরেকটা নীল পাহাড়ের সারি…কাছেরটা গাঢ়,দূরেরটা ঝাপসা…ঝাপসা হতে হতে শেষে আকাশে গিয়ে মেশে নীল।সেখানে লাল আর কমলার এলোমেলো পোচ…হাওয়া লেগে ছড়িয়ে যাওয়া রঙিন মেঘ। এই রঙিন মেঘগুলোই ফড়িঙ হয়।

রঙিন মেঘ ফড়িঙ হয়
আকাশ ছোঁয় হাওয়ার টান
মাচার ‘পর পরীর ঘর
হলুদ রঙ পাখির গান

হলুদ রঙ পাখির গান
মাতাল সুর, আজ ফোটে
হ্রদের পাড়,গা উজার
খায় চুমু কার ঠোটে?

এই কবিতা কবে লিখেছিলাম? সাল হিসেব মনে নেই। অনেক আগে…অ-নে-ক অ-নেক দিন আগে। ক্লাস টেনে পড়ি তখন?ইলিভেনে? কলেজে পড়ি তখন। একটা নীলপরীর সাথে প্রেম করতাম তখন। এখনকার কবিতাগুলো রুক্ষ্ম। তখনকার গুলো প্রেমালু ছিল। পরীটা পরে বিচ হয়ে গেছে। আর সব পরীরা।

একটা জাদু বাস্তবতার দেশে থাকি। হ্রদের পানিতে সাতার কাটতে কাটতে সন্ধ্যা হয়। আমরা ভাসতে থাকি…শুধু নাক চোখ ছাড়া সারাটা পানির নিচে…আমরা চিৎ হয়ে শুয়ে শুয়ে সন্ধ্যা হওয়া দেখি, ঘরে ফেরা পাখি দেখি…ঝাকে ঝাঁকে পাখির দল উত্তর থেকে দক্ষিণে যায়……পূর্ব থেকে পশ্চিমে যায়…আমরা পশ্চিমে দূর পাহাড়ের গায়ে সূর্যের ঢলে পড়া দেখি…সূর্য ডোবে…আমরা লাল বাতির অপেক্ষায় থাকি…লাল বাতিঘরে সংকেতময় বাতি জ্বলে উঠা পর্যন্ত আমরা পানিতে থাকি…তারপর…তারপর?

পানি থেকে উঠে সিগারেট জ্বলে উঠে, বাড়তে থাকে মরা আগুন। লেমন জুস শেষ হয়, ফান্টা শেষ হয়। ঘরে ফিরি। রোবটের মতো পোশাক পাল্টাই…অফিসে যাই…ফিরি রাত বিরাতে…শেষ রাত পর্যন্ত ল্যাপটপে ঢিসুম ঢিসুম মারপিট নইলে কোন দূর দেশের গান বাজে, মুভ্যি চলে…চার্জ শেষ হলে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যায়…আমি ফিরেই ঘুম…। স্বপ্ন দেখি না…কোন দিন না…গত ৯ মাসে দেখিনি…দুঃস্বপ্নও না। মৃতের মতো ঘুমাই। মরে যেতে ইচ্ছে হয়। লোকেন বোসের মত প্রশ্ন করি নিজেকে….

সুজাতা এখন ভুবনেশ্বরে;
অমিতা কি মিহিজামে?
বহুদিন থেকে ঠিকানা না জেনে ভালোই হয়েছে — সবই।
ঘাসের ভিতরে নীল শাদা ফুল ফোটে হেমন্তরাগে;
সময়ের এই স্থির এক দিক,
তবু স্থিরতর নয়;
প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।

১,৪৯০ বার দেখা হয়েছে

৭ টি মন্তব্য : “প্রলাপ ১৪”

  1. অরূপ (৮১-৮৭)

    :thumbup: :thumbup: :thumbup:

    শব্দ থেকে শব্দ ... দ্রুত দৌড়ে গেলো মাথার ভেতর। একটা হ্রদ ... সন্ধ্যার পাখিরা, রঙিন মেঘ ফড়িং কি চমৎকার একটা ছবি তৈরি করল।
    বেশ কয়েকবার পড়লাম ... আবারো পড়ব। দুঃস্বপ্নও না দেখার হতাশাটা শেষ মুহুর্তে ছুয়ে গেলো।

    সময়ের এই স্থির এক দিক,
    তবু স্থিরতর নয়;
    প্রতিটি দিনের নতুন জীবাণু আবার স্থাপিত হয়।

    ভালো লাগলো, শাহরিয়ার


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
  2. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    তারপর জীবনের জাদু তার অমোঘ প্রসারিত ইচ্ছেহস্তের কুশলী কেতায় বাস্তবতাকে ভাসায় দীঘির কালো জলে। তার প্রকম্পিত ঢেউয়ের সাথে স্পন্দন তরংগায়িত হতে থাকে ... ভূবনেশ্বর ... মিহিজাম ... হেমন্তরাগ ... চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা ... চোখের সীমানায় ভেসে যাওয়া পাখির ঝাঁক ক্রমশ সরে যেতে থাকে ফ্রেমের চৌকাঠ থেকে ... সরে যেতে থাকে জীবন থেকে ... অনির্বাণ উৎসবের দিকে ... দীর্ঘতম যাত্রাপথের অনাড়ম্বর এক শুরুর দিকে ...

    চলুক শাহরিয়ার অমন কথার গ্রন্থন ।

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    সিসিবিতে আমি দিনলিপির অনুরাগী পাঠক, ভাইয়া। স্বপ্নবাজ মানুষের দিনলিপি পড়তে আমার দারুণ লাগে!

    তোমার 'রঙিন মেঘ ফড়িঙ হয়' বেশ লাগলো হে; গদ্যটির ঝলমলানি রূপসুধাটিও বেড়ে লাগলো। তোমার নীলের দেশের আরো গল্প শুনতে চাই।

    জবাব দিন
  4. ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

    আহা লোকেন বোস... আহা জীবন বাবু... 🙁

    [ সিসিবিতে জীবনাক্রান্ত মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয় দেখি। ]



     

    এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...

    জবাব দিন
  5. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    উপরে আকাশ রেখায় তামাটে সূর্য, নীচে জলে তারই প্রতিচ্ছবি, আর সেই ছবির নীচে নীল হৃদে সাঁতার কাটার গল্প, চিৎ হয়ে শুয়ে পাখি দেখার গল্প, বাতিঘরে সংকেতময় বাতি জ্বলে উঠার গল্প, সব মিলে পড়তে খুবই ভালো লাগলো।
    তোমার লেখায় পাঠকেরা কথা বলে যায়,
    তোমার কোন আওয়াজ পাওয়া যায়না,
    তবে পেলে ভালো হয়!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ইশহাদ (১৯৯৯-২০০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।