যাচ্ছে জীবন – ৩

অনেক দিন কিছুই লেখা হয় না। তাতে যে বিশেষ কোন অসুবিধা হচ্ছে তা নয়। মাঝে মাঝে খালি মাথায় অনেক বিষয় ঘুরে লেখার জন্যে, কিন্তু যথারীতি তা মাথায় থেকে যায়।

দুনিয়া জুড়ে এত্তো গেঞ্জাম চলছে মাঝে মাঝে মনে হয় ফেসবুকের গ্রুপের মতো বলি “খোদা! আমারে উডায় নাও! নাইলে দড়ি ফালাও, বায়া উডি যাই!”। অর্থনীতি যে কবে সচল হবে কে জানে, চাকুরীতে ছাটাই চলছেই, যেই বাড়ির দাম আগে দুইশ হাজার ছিল এখন তার দাম দুইশ হাজারের কম। মানুষ এখন খরচ কমায়ে দিচ্ছে, সেইদিন পেপারে পড়লাম ইংল্যান্ডে মুদ্রাস্ফীতির হার কমেছে যদিও খাদ্যপণ্যর দাম কমে নাই কিন্তু তারপরও মুদ্রাস্ফীতি কম, কারণ হলো এইবার দোকানগুলো গ্রীষ্মকালীন সেল আগে আগে শুরু করেছে এবং অন্যান্য বছরের তুলনায় কাপড় এবং অন্যান্য অনেক পণ্যর দাম অনেক কমিয়েছে। সরকার কি করছে তারাই জানে। তবে একটা কাজ করেছে, তা হলো এখানের পড়তে আসা ছাত্রদের জন্য নিয়ম কানুন একদম যা ছিল তার পুরাই বিপরীত নিয়ম কানুন নিয়ে আসছে। এখানে আসা আগের চেয়ে অনেক কঠিন হয়েছে, যারা প্রাইভেট কলেজগুলোতে আসবে তার আর আগের মতো কাজ করতে পারবে না, আগে ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স পাশ করলে দুই বছরের পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যেতো সামনের বছর থেকে তাও বন্ধ। আমার পরিচিত অনেকেই বাংলাদেশে ফেরত যাবার কথা ভাবছে, বেশ কিছুজন চলেও গেছে। ইমিগ্রেশন ল ও বদলিয়েছে সরকার, এতে করে নাকি ব্রিটিশ নাগরিকদের জন্য চাকুরীর বাজার তৈরী হবে। কিন্তু ইউ দেশগুলো থেকে মানুষ এসে সমানে চাকুরীগুলো দখল করছে তা বন্ধ করার উপায় নাই।

তবে অর্থনীতি চাংগা করার কৌশল শেখার জন্য মিঃ ক্যামেরুন মিঃ অসর্বোন কে আমাদের মুহিত সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন, উনি হয়তো নতুন কোন একটা থিওরি দিয়ে দিতে পারবেন। মুহিত সাহেব বড়ই জ্ঞানী অর্থমন্ত্রী, কি সুন্দর থিওরী দিয়েছেন – ‘যেসব পণ্যর দাম বেড়েছে আমরা তা কিনবো না আর তাতে কয়েকদিন পরে আপনা আপনাই সেইসব পণ্যর দাম কমে যাবে’। উনি মনে হয় হাওয়া দিয়ে কোন খাবার বানিয়েছেন, মানুষজন সব খাদ্য পণ্য কেনা বন্ধ করে দিয়ে ওই কয় দিন সেই হাওয়ার খাবার খেয়ে থাকবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ সুদানে উনার এই হাওয়ার খাবার রপ্তানী করলেই পারে, তাতে ওখানকার মানুষজন আর না খেয়ে মারা যাবে না। ২০১১ সালে বাংলাদেশ বোধ হয় আরেক জন নোবেল বিজয়ী পেয়েই গেলো।

ক্যাডেট কলেজের রেজাল্ট নিয়ে খুব বির্তক চললো দেখলাম। একটা কথা আমার সব সময়ে মনে হয় আমাদের ক্যাডেট কলেজে অনেক আগলিয়ে রাখতো, ক্যাডেট কলেজ থেকে বেড়িয়ে এসে আমরা বাস্তবতায় পড়ে কুল কিনারা খুজে পাই না তখন। অনেকেই সেই ধাক্কা আর সামলিয়ে উঠতে পারে না। আমার বন্ধুদের মধ্যেই তা দেখেছি।

ভালো লাগছে না আজকাল বড্ড, মধ্যবয়স্ক জনীত জটিলতায় ভুগছি মনে হয়। একটা ছুটিতে যাওয়া দরকার, কিন্তু চাকুরীর পরিস্থিতি খুব খারাপ, ছুটি থেকে ফিরলে চাকুরী থাকবে কিনা কোন নিশ্চয়তা নাই। আজকে জিন্দেগী মিলেগা নেহী দুবারা দেখলাম ওইখানে ঋত্মিক চাকুরী ছেড়ে দিয়ে ক্যাটরিনার পিছে পিছে মরোক্কো চলে যায়। বাস্তবতা ভিন্ন এখানে আমি চাকুরির তোয়াক্কা না করে চলে যেতে পারি না। একটাই জীবন যতোই মুখে বলি যা মন চায় তা করা উচিত, কিন্তু জানি তার বেশীভাগই করা হবে না। খুব শিঘ্রী একদিন দেখব খাটে চড়ে যাত্রা শুরু করেছি।

এবিসি রেডিও তে এখন এই গানটা বাজছে, মনটা ভালো লাগছে না, গানটা আরো বেশি মন খারাপ করে দিচ্ছে।

১,৭১৩ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “যাচ্ছে জীবন – ৩”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আপনার মন খারাপটা আমাকেও ছুঁয়ে গেল সামি ভাই 🙁


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রাব্বী (৯২-৯৮)

    ঠিকই বলছেন সামি ভাই, দুনিয়াজোড়া পরচুর গিয়ানজাম। মধ্য-বয়সটয়স কিছু নাই, এতো তাড়াতাড়ি বুড়ায় যেয়েন না।

    “খোদা! আমারে উডায় নাও! নাইলে দড়ি ফালাও, বায়া উডি যাই!”

    =)) =))


    আমার বন্ধুয়া বিহনে

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রেজা শাওন (২০০১-২০০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।