প্রথম পোস্ট: নিজেকে উপস্থাপন

অনেক দিন হয়ে গেল সিসিবিতে নীরব পাঠকের ভুমিকায়। সাহসের অভাবে কোন পোস্ট করা হয়ে উঠেনি। তবে কালে ভদ্রে দুই-একটা মন্তব্য করেছি। আর এই সাহসের অভাবটা আমার চিরদিনই ছিল। প্রতিটি ব্যাচে ভেজাবেড়াল টাইপের দুই-একটা ক্যাডেট থাকে। তদেরই মতো আমি একজন। ভেজাবেড়াল কি রকম? ধরেন, নিচে নিচে বহুত দুষ্টামি ফাজলামি করবে কিন্তু সিনিয়রদের সামনে গেলে, বেটা কিছুই বোঝে না। স্যারদের সামনে গেলেতো অবস্থা আরো বেগতিক, ছাইড়া দিলো দিলো অবস্থা। আমার ধারনা আমাকে আমার কলেজের ব্যাচমেটরা বাদে সিনিয়র কিংবা জুনিয়র এরা খুব একটা চিনবে বলে মনে হয় না।

কলেজে থাকতে আমার বিশেষ দুইটা গুন বাদে আর কোন রকমের গুন বা বেগুন কোনটাই ছিল না। সেই বিশেষ দুইটা গুন হলঃ
১। রুম ক্রিকেট খেলার জন্য জবরদোস্ত মোজার বল বানাইতে পারতাম।
২। আর যে কোন টাইপের তালা নিমিষেই খুলে ফেলতে পারতাম।
এই দুইটা বিশেষ গুনের জন্য কিছুটা হলেও আমার কদর ছিল। সিনিয়ররাও আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখত বল বানিয়ে দেবার জন্য। আর দ্বিতীয় গুনের জন্য আমার একটা নতুন নামই জুটে গেল ”তালা ইঞ্জিনিয়ার”। চাবি হারিয়েছে, কোন ডেস্কের তালা ভাঙ্গা লাগবে? ইঞ্জিনিয়ার হাজির। চুরি করে ছাদে উঠা লাগবে? ডাকো তালা ইঞ্জিনিয়ারকে। মোটামোটি এইরকম নানাবিধ কাজে আমাকে তলব করা হত।

আজ সত্যি সত্যি আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার। তবে তালা চাবির না; ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ার। এই খবর যদি আমাদের বেলাল স্যার জানত তবে নির্ঘাত ঐখানেই সটাং। কেন? কলেজে কেমিস্ট্রিতে আমার পাশের হার বড়জোর ৫%। অর্থাৎ, যদি ১০০ টা পরীক্ষা দিয়েছি তার মধ্যে ৯৫টাতে ছিলাম ফেল। প্রতি ক্লাসে বেলাল স্যার দরজা দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে বলতেন, “মহিউদ্দিন সাহেব” আমি বলতাম “জ্বী স্যার” ওনি বলতেন “জে পড়া শিখছেন?” আমি থাকতাম চুপ করে। “শিখলে বলেন, না শিখলে কান ধরে নীলডাউন হউন” আমি আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা নীলডাউন। একবার মনে আছে, টার্মটেস্ট পরীক্ষায় ২৫ এ ২৩ পেয়েছিলাম। তার মূল কারন বাতেন স্যার, উনি আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য ঐবার সর্বোচ্চ মার্ক আমাকেই দিলেন। অবশ্য গোপন খবর হল, ফেল করতে করতে আর না পেরে ঐবার একটু সাইড ওয়ার্ক করেছিলাম।

কেমন কাঠখোট্টা ধরনের লেখা লিখে যাচ্ছি, এবার দুইটা মজার ঘটনা বলে শেষ করব। একটা আমার রুমমেট রাকিবের আরেকটা হল সিনিয়র রুমমেট থাক নাম বলালাম না, কেউ বুঝতে পারলে ভালো।

১। কলেজ এ্যাথলেটিক্সের আর দুইদিন বাকি, পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে। হাউস মাস্টার মোল্লা স্যার প্রাকটিস গ্রাউন্ডে উপস্থিত। মোল্লা স্যার আমাদের এক ক্লাসমেট কে ডেকে পাঠালেন ৪০০মিঃ দৌড় দিবার জন্য, কেউ একজন তাকে ডাকতে গেল। সে আর খেয়াল করেনি তার পাশে যে মোল্লা স্যার নিজে এসে হাজির হয়েছে। বার্তাবাহক যেই তাকে কে বলল,” ভাইয়া আপনাকে মোল্লা স্যার ডাকছে” সে তাচ্ছিল্য করে বলে উঠল “মোল্লার কল্লারে বল পারবো না”। মোল্লা স্যারতো কথা শুনে রেগে আগুন, সহ্যের সীমা হারিয়ে বলে উঠলেন “এইবার ছুটিতে বাড়ি গিয়ে দেখবি তোর একটা ভাই হইছে, জানিস তার বাপ কে? আমি, আমি”।

২। এইবার বড় ভাইয়ের ঘটনা। ঐ ভাই এবং তার আরেক ফ্রেন্ড দুজনে মিলে দুষ্টামি করছিল। সময় রাতের প্রেপ। ঘটনা ক্রমে তার ফ্রেন্ড ঐ ভাইয়ের নিচে মারলো হাত। বাস্‌, ভাইজান তো গেলো ক্ষেপে, এইবার ফ্রেন্ডের নিচে হাত দিবার পালা। ফ্রেন্ড দৌড়ে পালালো। আর তখনি বিদ্যুৎ গেল চলে। ভাইজান ও না বুঝে ফ্রেন্ড কে ধরতে পেরেছে মনে করে নিচে দিল হাত। সাইজ বুঝে বলে উঠল “ কিরে তোরটা তো অনেক বড়”। পর মুহুর্তে দমাদম কিল গুষি মার কারাতে। অল্পক্ষন বাদে যখন জেনারেটর আসলো, দেখা গেল কবির স্যার ভাইজান কে বেদম প্রহার করছেন।

২৯ টি মন্তব্য : “প্রথম পোস্ট: নিজেকে উপস্থাপন”

    • মশিউর (২০০২-২০০৮)

      ভাই আমাদের ব্যাচেও একজন তালা ইঞ্জিনিয়ার ছিলো । সে কলেজের এমন কোন তালা নাই যে খুলে নাই । কম্পিউটার ল্যাব থেকে শুরু করে লাইব্রেরির তালা পর্যন্ত খুইলা ফালাইছিল । আর কেমিস্ট্রি ল্যাবের তালা এসিড দিয়া গলায় ফেলছিলো ।

      জবাব দিন
      • আমি ভাই তালাতো খুলছি। আবার এমন ভাবে তা লাগাই দিছি যে মাগার কেউ বিন্দুমাত্র টের পায় নাই। মোটামোটি যত গুরুত্বপূর্ন তালাগুলো ছিল। সব গুলোর চাবি বানায়া ফেলছিলাম। যাদের চাবি হারায় যাইতো তাদের তালা খুলে দিয়ে আবার চাবি বানিয়ে দিতাম।

        জবাব দিন
  1. মোল্লা স্যারের কথাটা খুবই খারাপ লাগল - একজন টিচারের জন্য শোভন না। কলেজে থাকতে মোল্লা স্যারকে শুধু চর-থাপ্পর মারতেই দেখেছি - আর সারাদিন ঘোত ঘোত করতে। কলেজে থাকতে স্যারকে পছন্দ করত এ রকম কম কাউকেই চিনি - যদিও বাইরে এসে সবাই নস্টালজিয়ায় ভোগে - তারপরও আমি বলব স্যার অনেক বাড়াবাড়ি করতেন। হাউসের জন্য খাটাখাটনি করতেন বটে, ক্লাসে গণিতও ঠিক করাতেন, আর বিসিসিতেই উনি কাটিয়ে দিয়েছেন সব সময় - সে হিসেবে কলেজে যথেষ্ট অবদান থাকলেও স্যার কিছুটা অদ্ভুত ছিলেন।

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ব্লগে স্বাগতম মহিউদ্দিন ভাই 😀 মোল্লা স্যারকে নিয়ে কাহিনি লিখে শেষ করা যাবে না। তার কন্ঠ নকল করে কথা বলতে বলতে মাঝখানে আমাদের নরমাল কথাবার্তাও সেভাবে বলা শুরু হয়ে গিয়েছিল 😛


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. অয়ন মোহাইমেন (২০০৩-২০০৯)

    আমাদের ভিপি হয়ে আসছিলো মোল্লা স্যার, থাপ্পর খাইতে খাইতে খবর হয়ে গেসে আমাদের। আজকে এই কাহিনী শুনে ব্যাপক মজা পাইলাম :khekz: :khekz: =)) :khekz: :khekz: ।

    জবাব দিন
  4. আমার উপরের কমেন্টের সাথে আরো যোগ করব যে, একজন টিচার হওয়া মানে যমদুতের মত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের চর-থাপ্পর মেরে বেড়ানো আর তাদের আতংকে রাখা নয়। মোল্লা স্যার কি অংক করাতেন খেয়াল নেই, অন্যরাও কেউ খারাপ পড়াতেন না। এখানে তাকে নিয়ে আগেও কিছু লেখা পড়েছি। তার কাছ থেকে সত্যিকার ভাবে কি শিখেছি আমি মনে করতে পারছি না। স্যার খুবই 'সেকেলে' মানসিকতার ছিলেন। এর চেয়ে বরং যারা 'আধুনিক' মানসিকতার ছিলেন এবং 'এপ্রোচেবল' ও নমনিয় ছিলেন যেমন ইংরেজির এনায়েত হোসেন স্যার, পরিসংখ্যানের অলোক স্যার, বা এরকম আরো অনেকেরই নাম বলা যায়, এদের কাছেই অনেক বেশি শিখেছি বলে আমি মনে করি। যারা ক্যাডেট কলেজের টিচার হতে চায় তাদের কেউ এ লেখা পড়লে বা কলেজ এডমিনিস্ট্টেসনের কেউ এ লেখা পড়লে আমি বলব যে ক্যাডেট কলেজের সব টিচারদের যেন ছোটদের সাইকোলোজির উপর কোনো ধরনের ট্রেনিং/কোর্স করানো হয় হেডকোয়ার্টার থেকে। যারা ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে সারাটা সময় কাটায় এবং শেখায়, তারা কেন জেলখানার ওয়ার্ডেনের মত সারাদিন ব্যবহার করবে এটা আমার বোধগম্য না।

    জবাব দিন
    • রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

      আশিক ভাই,শুরু করেন বাসাতেই 😀


      আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
      ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
      ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
      সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
      ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
      আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

      জবাব দিন
  5. রুম্মান (১৯৯৩-৯৯)

    মহিউদ্দিন , ১ম ব্লগ । স্বাগতম :thumbup:


    আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
    ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
    ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
    সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
    ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
    আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।

    জবাব দিন
  6. সাকিব (২০০২-২০০৮)

    মোল্লা সারের ক্লাসে ঘুমানোর জন্য যেই কুংফু কারাতে গুলা খাইসিলাম :duel:
    একবার আমাদের সুইমিং কম্পিটিশনের আগে বৃস্টির জন্য প্র্যাকটিস বন্ধ ছিল, উনি টেবিল আর বেঞ্চ এনে সুইমারদের বাতাসে হাত পা নাড়ায় প্র্যাকটীস করাইসিলো। হাউস এর জন্য উনি সব করতে পারেন।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মহিউদ্দিন (৯৫-০১ বকক)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।