আমার কথা

পান্থ(অতিথি লেখক)

ডিসক্লেমারঃ আমি ক্যাডেট নই। আমার ছোট দুই ভাই এখানকার পরিচিত মুখ। একজন কামরুলতপু আরেকজন হল কনক রায়হান। আমি ওদের বড়ভাই। সবসময় পড়ি কিন্তু তপুর বাবা কতদিন দেখি না তোমায় পড়ে লেখা দিতে ইচ্ছা করল।
****************************************************************
তপু তোর লেখা পড়ে আজ মনে হল বাবাকে নিয়ে লিখি। লেখালেখি আমাকে দিয়ে হবেনা এটুকু জানি। আমাকে দিয়ে যে কি হয় তা আজও জানতে পারলাম না। এখানে সবাই যারা তপু, কনক কে চিনেন তারা মোটামোটি আমাকে জানেন। আজ হয়ত আমার সম্বন্ধে আপনাদের একটা ধারণা দিতে পারব।
তপু ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবাদে আব্বুর শাসন খুব কমই পেয়েছে তাতেই তার কত অভিযোগ। আর কনক তো ছোট্ট হিসেবে আদরই বেশি পেয়েছে। আমি বড় হিসেবে আদর কম পেয়েছি বলব না তবে ঝড় ও কম যেত না আমার উপর দিয়ে। আমার আদর পাওয়ার পিছনে নিজস্ব একটা যুক্তি আছে। প্রত্যেক দম্পত্তির জীবনের সবচেয়ে বড় যে চাওয়া তা তাদের প্রথম সন্তান। প্রথম বাবা/মা এই কারণেই প্রথম সন্তানের উপর স্বভাবতই দুর্বল থাকে। এটাকে আদর বলা ঠিক হবে না। জাস্ট ফিলিংস তা না হলে আমার ছোট দুই ভাই থেকে আমি সব কিছুতেই পিছনে। আমি কখনই ক্লাসে প্রথম তো দূরে থাক দশ জনের মধ্যেই আসতে পারি নি।
আমি সিগারেট ধরি ক্লাস এইটে। নাইন থেকে বলা যায় আমি সেইরকম খোর। অবশ্যই সারাদিন সিগারেট খেয়ে রাতে দুইটা চকলেট খেয়ে তবেই বাসায় ঢুকতাম। এরকম চলছিল সব আমার মত করে। তখন ৯৬। টেস্ট পরীক্ষার পরপর আমাদের স্কুলে কোচিং চলত। যথারীতি কোচিং এর একঘন্টা আগে বাসা থেকে বের হয়ে পাড়ার দোকানে আরো ২-৩ জন সহ আড্ডা দিতাম। আব্বু তখনো পুরোপুরি অসুস্থ হয়নি। একটা সার্জারী হয়েছে। তখন বায়োপসি করাতে বলেছে ডাক্তার। তখন আব্বু কোন সলিড খাবার খেতে পারত না। লিকুইড করে আব্বুকে খাবার দেওয়া হত। তাই আব্বু অফিস গিয়ে ২-৩ ঘন্টা থেকেই চলে আসত। সেইদিনও আব্বু ফিরছিল। আমায় দেখলেন আমি আমি আমার বয়সি ২-৩ জনের বেষ্টিত। আর তাদের ২ জনের হাতেই সিগারেট। আমি উপরওয়ালার বিশেষ রহমতে তখনো সিগারেট এ টান দেইনি। আব্বু আমাকে ক্রস করে গেলেন কিন্তু কিছুই বললেন না ডাক ও না একটা। আমি জানতাম আজ খবর আছে সন্ধ্যায়। আমি আর সিগারেট খাইনি ঐদিন। আম্মু আমার সাথেই বের হয়ে মাসিক বাজারের যে নির্দিষ্ট দোকান আছে সেখানে গিয়েছিলেন। আমি তখনই ওখানে গিয়ে আম্মুকে ধরলাম। আম্মু অবাক কি ব্যাপার। আমি বললাম , আম্মু আমি গলির মুখে কিছু বড় ভাইর সাথে কথা বলছিলাম তো ওনারা সিগারেট খাচ্ছিল আব্বু এইসময় আমাকে দেখেছে। আপনি দেখেন আমি সিগারেট খাইনি। মুখ বাড়িয় দিয়ে আম্মুকে গন্ধ শুকে দেখতে বললাম। আম্মু আমাকে আস্বস্ত করলেন যে আম্মু আব্বুকে বুঝিয়ে বলবেন। ওখান থেকে একটু দূরে গিয়েই আমি সিগারেটে টান দিয়ে স্কুলে চলে গেলাম।
তখন হয়ত বাবাকে/মাকে ধোঁকা দিয়েছিলাম বুঝি নাই। এখন এমন সময় এসেছে যখন বুঝি কিন্তু তারপর ও ক্ষমা চাওয়ার উপলব্ধি হলেও ক্ষমা চাওয়ার মানুষটা আজ আর নাই।
আমি আব্বুকে স্বপ্ন দেখি না অনেকদিন । হয়ত আমার উপর অনেক রাগ ওনার আমি যে তার স্বপ্নে দেখা কোন কিছুর মতই হতে পারিনি।
আমি যে বখে যাওয়া…

২০ টি মন্তব্য : “আমার কথা”

  1. কামরুলতপু (৯৬-০২)
    তপু ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুবাদে আব্বুর শাসন খুব কমই পেয়েছে তাতেই তার কত অভিযোগ

    ভাইয়া শাসন নিয়ে আমার কোনই অভিযোগ নেই এটা তুমি ভাল করেই জান। আমি আব্বুর থেকে আম্মুর মাইর বেশি খাইছি সো...

    কিন্তু তারপর ও ক্ষমা চাওয়ার উপলব্ধি হলেও ক্ষমা চাওয়ার মানুষটা আজ আর নাই

    ক্ষমা চাওয়ার জন্য এই কথা বলাটা একটা রেওয়াজ মনে হয়। উপলব্ধি যদি হয় তাহলে আম্মুর কাছে ক্ষমা চাও। আর যেটা করেছ সেটা বন্ধ করলেই তো হয়... হাহাহাহা।

    জবাব দিন
  2. মৌরী (১৯৯৫-২০০১)

    ভাইয়া,
    আপনাদের ফ্যামিলির অনেক গল্পই আমার শোনা। আর তাই আপনার শেষ বাক্যটির সাথে একমত হতে পারলাম না। আঙ্কেল চলে যাবার পর তাই আপনি আপনার ফ্যামিলি এর জন্য যা করেছেন তাতে আমি জানি উনি তার এই বখে যাওয়া ছেলেকে নিয়ে গবিত। ভালো থাকবেন।

    জবাব দিন
  3. ফয়েজ (৮৭-৯৩)
    আমি যে বখে যাওয়া

    আপনার এই কথারে মাইনাস। কারন কই,

    আমি হইলাম গিয়া বাপের সবচেয়ে আদরের পোলা। আমার ভাইয়েরা দিনে গন্ডায় গন্ডায় চড় খাইলে আমি খাইতাম মাসে-বছরে একটা। আবার যেদিন চড় খাইতাম সেইদিন খাবার টেবিলে আমার পছন্দের চিংড়ী -ভূনা মাছ পাইতাম।

    আমি কিন্তু আমার বাবাকে একবারও স্বপ্নে দেখি নাই। একবারও না। অথচ আমার মাইজ্জা ভাই, আব্বা তাকে গুলি করার জন্য বন্দুকও বের করেছিলেন, সে নাকি প্রায়ই রাতে আব্বাকে স্বপ্নে দেখে। আব্বা নাকি তাকে এখনো রেগুলার বকাঝকা করে, একদিন নাকি লাঠি দিয়ে মারতেও চাইছে। 🙁

    বাবারা আসলে আজব কিসিমের হয়। কোনো পোলাকে মাইরা মাইরা আদর করে, আর কোনো পোলারে কোলে তুইল্যা আদর করে। দুইটাই আদর, প্রয়োগিক ভিন্নতা আরকি। 😀

    এইটা আমার থিসিস।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  4. কামরুলতপু (৯৬-০২)
    অথচ আমার মাইজ্জা ভাই, আব্বা তাকে গুলি করার জন্য বন্দুকও বের করেছিলেন, সে নাকি প্রায়ই রাতে আব্বাকে স্বপ্নে দেখে। আব্বা নাকি তাকে এখনো রেগুলার বকাঝকা করে, একদিন নাকি লাঠি দিয়ে মারতেও চাইছে।

    পুরা আমার কাহিনী। মাইজ্জা গুলা কি স্বপ্নেই ঝাড়ি/মাইর খায় নাকি। এইটা কি রুল হইল। খেলুম না।

    জবাব দিন
  5. তানভীর (৯৪-০০)

    পান্থ ভাইয়া, লেখাটা চমৎকার হয়েছে।
    আমাদের বেলায় উল্টা হয়েছে। আমার বড় ভাই আব্বুর মার খেয়েছে সবচেয়ে বেশি, আমি মোটামুটি, আর আমার ছোট ভাই একদমই খায়নি।

    জবাব দিন
  6. কনক রায়হান (৯৮-০৪)

    আমি তো পিচ্চি কালে অনেক গোয়েন্দাগিরি করতাম...মনে হতো আহারে আমার বড় ভাইয়টা সিগারেট খেয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এই জন্যে আম্মুর কাছে ওরে ধরায় দিছি... :))
    ভাইয়া সরি.... 😛
    আর ভাইয়া তুমি এতো সরি হইয়ো না ....শুনেছি মারা গেলেও পোলাপাইন কি করে মানুষ তা দেখে...তুমি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে দেখবা আব্বু খুশী হয়ে গেছে 😀 😀
    তানভীর ভাই,আমিও ছোটছেলে হিসেবে আব্বুর মার খুব একটা খাই নাই :-*

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : রকিব (০১-০৭)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।