একটি ব্লেজার স্মরনে

যুবরাজ

:salute: (আন্তরিক কৃ্তজ্ঞতা মডারেটর ও এডমিন এর প্রতি, আমার অতি প্রিয় এ ব্লগে লেখার সুযোগ দেয়ার জন্য।)
আমি ক্যাডেট কলেজে ঢুকিনি বলে জীবনে প্রথম আক্ষেপ হল বিএমএতে যাওয়ার পর।আমার ২৮ জেনারেশনে কেউ সেনাবাহিনীতে ছিলনা। নিজেকে সিভিলিয়ানের কোন ধাপে ফেলা যায় সেটা নিয়ে আমি নিজেও সন্দিহান।“ র সিভিলিয়ান” বলে একটা কথা আছে, আমি বোধহয় সেই গোত্রের।
আইএসএসবিতে চান্স পাওয়ার পর, আমার শতভাগ ধারনা হয়ে গেল, আমি বোধহয় ক্যাপ্টেন/ মেজর জাতীয় কিছু একটা হয়ে গেছি। রাস্তা-ঘাটে পুলিশ দেখলে খামখা কারন ছাড়া চোখ গোল গোল করে তাকাতাম ভাব “ ব্যাটা তুই চিনোস আমারে?”
যেহেতু বিএমএতে যাব, অফিসার মানুষ, আমাকে অবিশ্যি, অবিশ্যিই ভাল কাপড় চোপড় সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। কে যেন আমাকে বুদ্ধি দিল, প্রথম দিন ভাল কাপড় পরে যেতে হবে।কারন ইম্প্রেশনের একটা ব্যাপার আছে। “ Love at first sight” বলে একটা কথা আছে। কথাটা আমার মনে ধরল।আমি বাপের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফেরদৌস থেকে কঠিন এক’খান ব্লেজার বানালাম।
বিএমএ তে যেদিন গেলাম, সেদিন অঝোর বৃষ্টি, রেল-লাইন বন্ধ।বহু কষ্টে ভাটিয়ারীতে পৌছালাম।যত-যাই হোক, আমি আমার ব্লেজারে, এক ফোঁটাও পানি লাগতে দেইনি।
ক্লীন সেইভড, স্যুটেড-বুটেড, ফারেনহাইট সুগন্দীর মৌ মৌ গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে আমি বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীতে ঢুকলাম। আমার সাথে আরো ৩/৪ জন ছিল, যারা আমারই মত সিভিল কলেজ থেকে আসা।তাদের মধ্যেই কেউ কেউ বলছিল, এত ভাল কাপড় পরে আসা কি ঠিক হচ্ছে? আমি তাদের অভয় দিয়ে জানালাম, ইম্প্রেশনের একটা ব্যাপার আছে।
বিএমএ’র গেট ধরে ঢুকে বাম দিকে একটা লম্বা রাস্তা ধরে যেতে হয়।অনেক দূরে ৩/৪ টা ছেলেকে দেখা গেল আমাদের কে দূর থেকে ইশারা করে ডাকতে।তারা ইংরেজিতে কি যেন “ Double up” জাতীয় কিছু বলছিল।আমাদের মধ্যে একজনের কেন যেন অই সময়টা তেই বিশ্রী রকমের ব্লাডারে প্রেশার পরে গেল।বেচারা কোন উপায় না দেখে, রাস্তার পাশে একটা নারকেল গাছের আশ্রয়ে প্যান্টের জিপার খুলে দিল।তার দেখা দেখি বাকি দুই জন ও সামিল হল। আমি ব্লেজারের ইজ্জতের জন্যই হোক, আর অন্য কিছু ভেবেই হোক, জিপার খোলা থেকে বিরত থাকলাম।মিলিটারী একাডেমীতে এসে রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়া আমার কাছে ভাল ঠেকলনা, তাছাড়া ইম্প্রেশনের ও একটা ব্যাপার আছে।যাইহোক, ২ মিনিটে কাজ শেষ করে আবার এক সাথে যাত্রা শুরু করলাম। দূরে দাড়াঁনো ছেলে গুলাকে দেখে মনেহল তারা ইলেকট্রিক শক খেয়েছে। আমি আমার সঙ্গিদের বললাম কাজ টা ঠিক হয়নি। কারন ছোটবেলা থেকেই আমার সিক্স সেন্স খুবই প্রখর। বিপদের গন্ধ আগেই টের পাই। যেদিন আব্বার হাতে মার খাওয়ার নাম্বার আসত, আমি আগে থেকেই বুঝতাম। আজ এরকম একটা গন্ধ পেলাম ছেলে গুলার তাকান দেখে। যাইহোক, ছেলেদের সম্মুখে গিয়ে স্মার্টলী জিজ্ঞেস করলাম, এক্সকিউজ মি, আমাদের কোথায় রিপোর্ট করতে হবে, কাইন্ডলী একটু বলবেন কি? এক সাথে মনে হল বাজ পড়ল মাথার উপরে ৮/১০ টা। গগনবিদারী চিৎকার বলে বাংলা ভাষায় একটা কথা যে আসলেই আছে তখন টের পেলাম। “ ফাকেন চো-চো-চো-চো-চো-চো-ট, স্টার্ট ফ্রন্ট রোল।“ প্রথমে আমি ঠিক বুঝলাম না, ছেলে গুলি কি বলতে চাচ্ছে। আমি আবার কি যেন জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিলাম, তার আগেই দেখি, আমার সঙ্গীরা ব্যাগ মাটিতে রেখে কাদার মধ্যে গড়াগড়ি দিচ্ছে। আমি ব্লেজারটা একজনের হাতে দিয়ে সাবধানে রাখার জন্য কি বলতে যাব, আমার মুখের কথা মহাশুন্যে মিলিয়ে গেল পরবর্তী “ফাখাআআআআআআআআর” শব্দ শুনে।আমি অত্যন্ত মর্মাহত হলাম তাদের মুখে এসব অশ্লীল কথা শুনে।এদের কি বাপ- ভাই নেই?বুঝলাম, রঙ যায়গায় চলে এসেছি। এরপর যে কি হল তা আর আমি নিজেও জানিনা। মাঝখানের কয়টা দিন, মেমরী থেকে পুরা কে যেন কন্ট্রোল+অল্ট+ডিলিট মেরে দিয়েছে।কোন ভাবেই আর মনে করতে পারিনা, ঐ কয়টা দিন আমি কি করেছি।কিন্ত আমার ঐ সাধের ব্লেজার, ওটা মাত্র একদিন ই আমি পরেছিলাম, এর পর এটা পৃথিবীর সেরা লন্ড্রির পক্ষেও পরিস্কার করা সম্ভব ছিলনা।

৪,৮৭৭ বার দেখা হয়েছে

৫৯ টি মন্তব্য : “একটি ব্লেজার স্মরনে”

  1. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    ভাই ধরে নিচ্ছি আপনি আমার সিনিয়রই হবেন।
    ব্লগে স্বাগতম :clap: :hug:

    আমার অতি প্রিয় এ ব্লগে লেখার সুযোগ

    আপনি ক্যাডেট না হয়েও এ ব্লগকে প্রিয় বলার জন্য প্রথমেই :hatsoff:
    বেশ মজা করে লিখেছেন সেজন্য আবারও :hatsoff:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন
  2. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    আরে ব্যাপার না। এইসব ধোলাই না হলে সিভিল পানি শরীর থেকে বের হয় না।

    আমি তোমার লেখার পাংখা, পুরাই পাংখা বলতে পার। সচলে তোমার সিরিজটা আমার পড়া প্রিয় একটা সিরিজ।

    তুমি করে বললাম। সায়েদ যেহেতু "যুবরাজ, যুবরাজ" বলছে, তুমি আমার ছোটই হবে মনে হয়।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    যুবরাজ ভাই, প্রথমেই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাদের প্রাণপ্রিয় এই ব্লগটাকে আপনারও প্রিয় ব্লগে অন্তর্ভুক্ত করায়।
    সচলে আপনার "লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া" সিরিজের রীতিমত ভক্ত আমি।

    লেখাটা পড়ে খুব মজা পেলাম।
    আপনার লেখা ভবিষ্যতে আরো পাব এই প্রত্যাশায় রইলাম।

    জবাব দিন
  4. যুবরাজ ভাই নাকি 😀
    তাইলে লেখেন লাইবেরিয়া থেকে আমরা পড়ি :thumbup:
    আপনার লেখা নিয়া কিছু বলার নাই কারন আপ্নে নিজেকে আগেই প্রমাণ করছেন তাই চলুক আপনার লেখা :guitar:

    জবাব দিন
  5. সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

    আপনার লেখাটা খুব ভালো লাগলো...নিয়মিত লিখবেন প্লীজ...

    সচলের "লেটার ফ্রম লাইবেরিয়া"র লিঙ্কটা দিয়েন তো...


    "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
    আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

    জবাব দিন
  6. তাইফুর (৯২-৯৮)

    যুবরাজ ... বুখে আয় ... :hug:

    "সিলট হামার, সিলট তুহুমার
    সিলট গলার মালারে এ এ এ এ
    বাবা শাহ ফুরানোর দ্যাশ
    সিলট ভূমি রে"

    আমাদের ব্লগে স্বাগতম তোকে ...


    পথ ভাবে 'আমি দেব', রথ ভাবে 'আমি',
    মূর্তি ভাবে 'আমি দেব', হাসে অন্তর্যামী॥

    জবাব দিন
  7. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    কিন্ত আমার ঐ সাধের ব্লেজার, ওটা মাত্র একদিন ই আমি পরেছিলাম, এর পর এটা পৃথিবীর সেরা লন্ড্রির পক্ষেও পরিস্কার করা সম্ভব ছিলনা।

    খুব মজা লাগলো :)) :))
    চমৎকার ওপেনিং যুবরাজ :clap: :clap:

    ভাই যুবরাজ, সিসিবিতে স্বাগতম :hug:
    আপনার লেখা আগে পড়েছি। খুব ভালও লেগেছিলো। :boss: :boss:
    সিসিবিতে লেখার জন্য ধন্যবাদ :clap: :clap:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  8. সিসিবি'র অতিথি

    আমার লেখা আপনাদের ব্যাপক আনন্দ দিয়াছে বলিয়া আমি যারপরনাই আহ্লাদিত। :party:
    আর ও লেখা আসিতেছে, ক্যাডেট কলেজ নিয়া...

    তুমি করে বললাম। সায়েদ যেহেতু “যুবরাজ, যুবরাজ” বলছে, তুমি আমার ছোটই হবে মনে হয়।

    ফয়েজ ভাই,নিচ্চিন্তে তুমি করে বলেন, কোনই সমস্যা নাই।

    তাইফ... আয় দোস্ত বুখে আয় :hug: ...

    জবাব দিন
  9. রহমান (৯২-৯৮)

    স্বাগতম বন্ধু, সুস্বাগতম :hatsoff: :boss:

    এই ব্লগে তোকে দেখতে পেয়ে খুব ভাল লাগছে। এজন্য একই সাথে সায়েদ কেও জানাই কৃতজ্ঞতা :boss: ।

    আশা করি এখন থেকে এখানেও নিয়মিত লেখবি, মজার মজার সব গল্প আর ঘটনাগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করবি :guitar:

    জবাব দিন
  10. সাইফ (৯৪-০০)

    বস,ভালো হইসে...........................আমি কোন দিন সচলায়তন না কি যেন,ওখানে ঢুকি নাই,কিান্তু আপনার লেখার প্রশংসা সবার কাছ থেকে অনেক আগেই শুনেছি,আজ তার প্রমাণ পেলাম............কাউকে ব্যক্তিগত ভাবে আক্রমন করছি না,আমদের দেশে যারা একটু প্রগতিশিল মনে করে নিজেকে,ছোট খাট ব্যাপারে র আর সি আই এ এর গন্ধ পায় সব কিছুতে,আর পণ্ডিতন্মন্য যারা,তাদের ধারণা আর্মির লোকজন কিছুই বুঝে না,লেফট রাঈট ছাড়া,শিল্প সংস্কৃতির ক অক্ষর গোমাংস ও আর্মি বুঝে না,
    বাস্তবে প্রশাসনিক ব্যস্ততা আর চাকরির নীতিগত সীমাবদ্ধতা অনেক কেই এসব থেকে দূরে রাখে.....................।
    সেইখান থেকে আপনি সচলায়তনে লিখে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আমাদের,প্রশংসা কুড়িয়েছেন সকলের,এর জন্য আপনাকে :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: :salute: আর সিসিবি তে স্বাগতম.........সিসিবির সংগী হয়ে থাকবেন .........আগামির পথ চলায় সদা সর্বত্র.........।।এই আশাবাদ ও কামণা রইল

    জবাব দিন
  11. জ়ে এম সারোয়ার মুজিব ( এডিসন) (১৯৭৯-১৯৮৫)

    এটা শুনে আমার ব্যাপারটা বলার লোভ সামলাতে পারলামনা।
    আমার অবস্তা একটু অন্যরকম হয়েছিল।
    আমরা ক্যাডেট কলেজে সিনিয়রদের একটা নাম দিতাম। আমাকে ধরলো আমার কলেজের এক সিনিয়র, আমার উপর বিশেষ কারনে উনার রাগ ছিল। একপর্যায়ে উনি আমকে জিজ্ঞাশা করলেন," What is my name ?" আমিতো কলেজে তার দেওয়া নামটা ব্যাবহার করতাম। আমার আর সঠিক নাম মনে আসছেনা শুধু আমদের দেয়া নামটা মনে আসছে। কি আর করা নাম বলা হলোনা। উনি ভাবলেন আমি আউল হইয়া গেছি তাই আ্মাকে ছেড়ে পরবর্তি শিকারের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন।

    আর একটা সমস্যা হলো, আমি কয় তলায় থাকতাম এটা ভুলেগিয়েছিলাম। শুধু আমার রুমমেটের চেহারা মনে আছে। ও নটরডেমিয়ান ওর আবার স্মরণশক্তি ভাল। পরে ওর সাথে গিয়ে রুম খুজে পেলাম এবং রুম নাম্বার, কয়তলায়, ডানে না বামে এগুলো ভাল করে মুখস্ত করলাম ।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।