৬ বছর বা ২২০৩ দিন – ১৩তম পর্ব

টুট টুট, আই পি এস এর শব্দে বুঝতে পারলাম ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেছে। এখন কম্পিউটার অফ করে দিতে হবে অনিচ্ছা সত্তেও। জরুরী বিষয়গুলো সেভ করে সেটা করতে মিনিট পাচেক লেগে গেল। লোডশেডিং, বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই পর্বের স্মৃতিও এই লোডশেডিংকে উৎসর্গ করা।

ক্যাডেট কলেজেও লোডশেডিং হত বা এখনও নিশ্চয় হয়। কিন্তু দেশের অন্যতম ভাল প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি হওয়ার সুবাদে ক্যাডেট কলেজগুলোতে লোডশেডিং হওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে জেনারেটরের মাধ্যমে ইলেক্ট্রিসিটি বরাদ্ধ করা হয়ে থাকে। তো এই ৩০ সেকেন্ড পুরো কলেজে ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে থাকার কারণে ক্যাডেটরা তার সুব্যবহার করতে কখনই ভুল করে না, আমরাও করিনি।

যেমন ক্লাস সেভেনে থাকতে আমাদের কাছে লোডশেডিং মানেই ছিল একটুখানি মনের সুখে চিল্লাচিল্লি করা। অবশ্য মাঝে মাঝে এর জন্য পাঙ্গানিও কম খাইনি। আর প্রেপটাইমে লোডশেডিং এর সময়েই এটা সম্ভব হত। আর প্রেপে যদি সাহাবুল স্যারের ডিউটি থাকত তাহলে ফর্মের সামনে বাগানে লাগানো পাতাবাহারের ডালের বাড়ি খায়নি এমন ক্যাডেট বোধহয় নেই। আর যদি প্রেপে বড় ভাই লীডার থাকতেন তাহলে দুই-চারটা সাউটের সাথে সাথে চিল্লাচিল্লি থেমে যেত।

এমনই একদিন লোডশেডিং হল, তখন আমরা সবে ক্লাস এইটে উঠেছি। হাল্কা চিল্লাচিল্লি করে আমরা ভালমানুষ সেজে বসে রইলাম। কিন্তু ইলেক্ট্রিসিটি আর আসে না।দুই মিনিট পরে শুনলাম যে জেনারেটরের তেল ফুরিয়ে গেছে। ইলেক্ট্রিশিয়ান ভাই(তার নাম আমার মনে নেই, পাঠক কোন ভাইয়ের মনে থাকলে মন্তব্যে জানানোর জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি) গিয়েছেন তেল আনতে।
তারমানে দেরি হবে। অন্ধকারে থাকতে হবে আমাদের আরও বেশ কিছু সময়। তারমানেই মজা করার সময়। তখন আমি ছিলাম সহকারী ফর্ম লীডার আর আমাদের ফর্ম লীডার ছিল ফেরদৌস। তো আমরা দুজনে সবাইকে চুপ করে থাকার জন্য সামনে দাঁড়িয়ে আমরাই চিল্লাচিল্লি বেশি করছিলাম। হঠাৎ করে পাশের ফর্ম থেকে আমাদের রিফাত এসে আমাদেরকে শাসাতে লাগল, আমাদেরকে চুপ করতে বলল যেন সে আমাদের সিনিয়র ভাই। সে হাউসের টয়লেটে বা ফাকায় পাইলেই এই মজাটা করত( ফেরদৌস বেশ কিছু বার ওর শিকার হয়েছিল)।

তো আমরাও ওরে পাত্তা দিলাম না, বরং উলটো ওরে শাসালাম ও যদি এখনই চলে না যায় তাহলে মারার হুমকিও দিলাম। কিন্তু ও গেল না। আমরাও ওরে আইজকা পাইছি বলে মার দেওয়া শুরু করলাম।হঠাৎ শুনলাম যাকে মারছি সে বলছে সে রিফাত নয়, অন্য কেউ। আমরা দ্রুত তাকে ছেড়ে দিয়ে নিজেদের সিটে চলে এলাম। বুঝতে পারলাম কত বড় ভুল কইরা ফালাইছি। কারণ যার উপরে আমরা আমাদের রাগ ঝেড়েছি সে আসলে আমাদের তিন ব্যাচ সিনিয়র ভাই ছিলেন( নাম বলা যাবে না) যিনি পাশে ‘এ’ ফর্মে প্রেপ লীডার ছিলেন। কিন্তু ভাই মনে হয় আমাদের কিছু বলেননি কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন পুরো ব্যাপারটাই আসলে ভুল বোঝাবুঝি ছিল।

এইটা ছিল ঐদিন প্রেপে নিচতলার ঘটনা। কিন্তু উপর তলায়ও মজার একটা ঘটনা ঘটেছিল। যদিও আমি প্রত্যক্ষদর্শী ছিলাম না, কিন্তু পাবলিকের মুখে মুখে যেভাবে শুনেছি সেটাই বলছি। আমাদের রসায়ন বিভাগের নতুন লেকচারার জনাব শাহীন(সাল্টু) স্যার কলেজে নয়া যোগ দিয়েছেন। ঐ রাতে তার উপরের তলায় ডিউটি ছিল। তিনি কোন এক রুমে দাঁড়িয়ে সেই রুমের ক্যাডেটদের শান্ত হতে বলছিলেন, কিন্তু পুরো কলেজ তখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। ঠিক তখনই ভাইস প্রিঞ্চিপাল জাইদুল হক স্যার সেই রুমে ঢোকেন এবং হাতের সামনে শাহীন স্যারকে পেয়ে ক্যাডেট ভেবে কষে এক চড় মারেন। তাদের সম্ভাব্য কথপোকথন ছিল অনেকটা এমন –

শাহীন স্যার- স্যার আমি শাহীন, আমি শাহীন।
জাইদুল স্যার- আপনি, আপনি এখানে কি করছেন?
শাহীন স্যার- না মানে ক্যাডেটরা বেশ গন্ডগোল করছিল।
জাইদুল স্যার চড় মারার ব্যাপারটা ধামাচাপা দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে শাহীন স্যারকে ধমকে বললেন, “জান এখান থেকে”। কিন্তু চড়ের শব্দ কি আর ক্যাডেটদের খাড়া কান এড়িয়ে যায় তাও যদি এক স্যার অন্য এক স্যারকে মেরে থাকেন………………………( চলতে থাকবে )

১,০৫৮ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “৬ বছর বা ২২০৩ দিন – ১৩তম পর্ব”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    আমাদের ক্যান্ডিডেট লাইফ আর ইলেভেন কেটেছে হারিকেনের আলোয়, জেনারেটর নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দারুন সময় কাটিয়েছি।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জাহিদ (১৯৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।