মুখ ও মুখোশ……………

প্রথমে হাড়ির খবর দিয়ে শুরু করি, হাড়ির নয় নিজের ভাতের থালা দিয়েই শুরু করছি। আমার বাবা একজন প্রান্তিক ব্যবসায়ী। আমাদের দোকানের খরিদ মূল্য ১২লাখ এবং এবং মূলধন ১৫ লাখ টাকা মোট টাকার পরিমাণ দাঁড়াল ২৭লাখ টাকা। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের সময় দৈনিক বিক্রয় হত গড়ে ১২০০ টাকা। ২০% লাভ ধরলে ২৪০ টাকা প্রতিদিন। মাস ২৫ দিন ধরে মোট আয় দাঁড়ায় ৬০০০ টাকা। ভাবা যায় ২৭ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাত্র ৬০০০ টাকা আয়। এবার আসা যাক খরচের কথায়, ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১০ লাখ টাকা ব্যাংক হতে ঋণ কর্তৃক প্রাপ্ত ১২% সুদ ধরে মাসিক সুদের পরিমাণ ১২০০০ টাকা, কর্মচারীর বেতন, ছেলে মেয়েকে লেখাপড়া, খাবার ও ঔষধ ইত্যাদি। মরার উপর খড়ার ঘা, বেড়ে গেল নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। সব মিলিয়ে খরচের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫০০০ টাকা। আয় ৬০০০ ব্যয় ৩৫০০০ অতএব খাতির পরিমাণ ২৯০০০ টাকা। আমাদের কপাল কিঞ্চিত ভালো। আমরা ৩ তলা একটি বাসা হতে ১৩৫০০ টাকা বাসা ভাড়া পাই। তবুও ক্ষতি থেকে যায় ১৫০০০ টাকা। ২ বছরে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮০০০০ টাকা। তবে ২ বছরে ২ টি রমজানের ঈদ থাকায় ক্ষতির পরিমাণ কমে দাঁড়ায় ২৫০০০০ টাকা। এই ক্ষতি এবং পূর্বের ঋণ মিলে মোট ঋনের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৫০০০০ টাকা। ১৩% সুদ হারে মাসিক সুদের পরিমাণ হবে ১৬০০০ টাকা। এছাড়া ব্যবসায়ের অধোগতি দেখে আমার বাবা তার দোকান বিক্রি করে দিলেন। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের ফলে বাজারে যে অর্থের তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল তার একজন ভুক্তভোগী আমাদের পরিবার।

যারা টাঙ্গাইলে বাস করে তারা জানে টাঙ্গাইল মূলতঃ ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা(SME), এবং কৃষক অধ্যুষিত এলাকা। এখানে ভোটার প্রায় ২৪ লাখ, অর্ধেক মহিলা ও অতিবৃদ্ধদের বাদ দিলে আমরা প্রায় ১০ লাখ কর্মক্ষম পুরুষ দেখতে পাব। ৬০%কৃষক এবং ১০% চাকুরিজীবী ধরেও যদি আমরা হিসাব করি তারপরেও ৩০% প্রান্তিক পেশাজীবি পাওয়া যাবে অর্থাৎ ৩ লাখ মানুষ ও তাদের উপর নির্ভরশীল তাদের পরিবার। ৩ লাখ পরিবারের অবস্থা সবারই প্রায় আমাদের মত। ৩ লাখ পরিবার যদি আর্থিক সঙ্কটে থাকে আর সেটা যদি অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তৈরিতে ইতিবাচক হয় তবে কিছুই বলার নাই। অনেকে বলতে পারেন এতে দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের দায় কোথায়? ব্যবসায়ী সমাজ অনেকটা রক্ত সংবহনতন্ত্রের মত। যে কোনো কারণেই তাদের যেখানে অবরুদ্ধ করা হবে সেখান হতেই ব্যবসায়ী সমাজের বন্ধাত্বতা শুরু হয়ে যায়। ব্যবসায়ী দুর্নীতিতে প্রতিরোধ নিচ হতে শুরু করতে হবে। অর্থাৎ আমার বাবাকে দিয়ে শুরু করতে হবে। ব্যাবসায়ীদের দুর্নীতি রোধে নীতি হতে হবে মাটি হতে আকাশ মুখি। তাড়াহুড়ো করার জন্য যদি কেও আকাশ থেকে মাটিতে নামার চেষ্টা করে তবে তাতে শুধু পা ভাঙবে। লাভের লাভ কিছু হবেনা। যেমনটা হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষেত্রে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তথাকথিত দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে ব্যাবসায়ীদের ভীত করার কারণে আমাদের দেশের GDP এর অবনমিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল ২০০৭ সালে ৬.২% এবং ২০০৮ সালে ৪.৯%( যদিও তৎকালীন অর্থনৈতিক উপদেষ্টা এই পরিসংখ্যান মানতে অস্বীকার করেন)। অপরদিকে দুর্নীতির দায়ে শাস্তি পাওয়া এরশাদ চাচুর আমলে ১৯৯০ সালে GDP এর পরিমাণ ছিল ৬.৬% (যা বাংলাদেশের GDP তে সর্বোচ্চ রেকর্ড)। বিশ্বে ১৯৯০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিলো তা জানিনা। কিন্তু বর্তমান সূচক এবং রাঙ্কিংকে তুলনা করলে রাঙ্কিং দাঁড়াতে পারে ৩৫ হতে ৪০ এর ঘরে। অর্থাৎ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ যে বছর দুর্নীতিতে প্রথম হল সেই বছর GDP ছিল ২য় সর্বোচ্চ। অর্থাৎ দুর্নীতি অর্থনীতির চাকাকে বন্ধ রাখেনা। বাংলাদেশের GDP এর মোট পরিমাণ হল ৮৭ বিলিয়ন ডলার। যদি খাতওয়ারি অবদানের কথা চিন্তা করি তবে বাংলাদেশের মাল্টি লেবেল ব্যবসায়ীদের অবদান ৩০ হতে ৩৫ শতাংশ। অর্থাৎ এদের বাদ দিলে বাংলাদেশের GDP এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ বিলিয়ন ডলারে। আর সূচক দাঁড়াবে ৪.৫ শতাংশে। আর এই সূচকে আমরা শুধুমাত্র অন্ধকারাচ্ছন্ন আফ্রিকার সংঘাতময় রাষ্ট্র হতে এগিয়ে থাকব। এখনমাত্র ৪৯% লোক দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে তখন করবে ৭০% লোক। মাল্টিলেভেল ব্যবসায়ী আর রাজনীতিতে ২য় বা ৩য় শ্রেনীর রাজনীতিবিদদের এক কাতারে ফেলা সমীচীন নয়। রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করে দেশের টাকা বাইরে পাচার করে।আর ব্যবসায়ীরা টাকাকে মুলধনে নিযুক্ত করে উৎপাদন বাড়ায়, এর ফলে বহু কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। TIB কর্তৃক প্রতিবছর যে সব খাতকে দুর্নীতিগ্রস্থ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে কখনো বেসরকারিখাত অভিযুক্ত হয়নি।

মালয়েশিয়ার উন্নতির কাহিনী পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে মনে হত কবে বাংলাদেশের এমন সরকার আসবে যিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী হবেন। উল্লেখ্য মহাথির প্রধানমন্ত্রী পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী ছিলেন। ফখরুদ্দিন প্রধান উপদেষ্টা হওয়ায় আমার দুধের স্বাদ ঘোলে মিট’ল। কিন্তু তার আমলেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির পথের অন্তরায়গুলো পরিষ্কার হলোনা। তিনি তার জানাশোনা গলি বাদ দিয়ে অজানা গলি রাজনৈতিক শুদ্ধতা নামলেন। কিন্তু এ কাজে তিনি অভিজ্ঞ ছিলেন না। তবুও যে কেন তিনি কলের পুতুলের মত এ কাজে মনোনিবেশ করেছিলেন আমি বুঝতে পারিনা। হয়ত বাইরেরে চাপ। অগনতান্ত্রিক সরকারকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য অনেক কিছুই করতে হয়। এখানে national interest নয় regime interest বেশি কাজ করে।

ভারতের মোট GDP এর পরিমাণ ৩.০৬ ট্রিলিয়ন ডলার। রতন টাটা,অনিল আম্বানি, ধিরুভাই আম্বানি, বিজয় মালিয়া ও বিড়লাদের মত ব্যবসায়ীদের বাদ দিলে তাদের GDP ২ ট্রিলিয়নে নেমে আসবে। এখানে দুর্নীতি বা ভারতীয় ভাষায় ভ্রষ্টাচারের অভিযোগে তারাও চিহ্নিত। কিন্তু ভারত সরকার কখনই এসব ব্যবসায়ীদের হয়রানি এবং ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। কারণ তারা জানে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ তৈরিতে ব্যবসায়ী সমাজের ভূমিকা কত ব্যাপক।তারা যে চরিত্ররই হোক না কেন। তারা অনেকটা রেশম কীটের মত। রেশম পোকা তুত গাছ নষ্ট করছে বিনিময়ে দিয়ে যাচ্ছে রেশম। এক্ষেত্রে আমরা রেশমকে মনে রাখছি কিন্তু তারা যে তুত গাছকে নষ্ট করছে তা যাচ্ছি ভুলে। কিন্তু ব্যবসায়ী্দের ক্ষেত্রে হয়েছে উলটো।আমরা দেখছি তারা তুত গাছ নষ্ট করছে কিন্তু বিনিময়ে দেওয়া রেশমকে লক্ষ্য করছিনা।

যথাযথ চিন্তা ভাবনা ছাড়া পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে কত লাখ মানুষের কত কোটি টাকা খোয়া গেছে তার খবর কে রেখেছে। BNP সরকারের আমলে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ATCL কে নিষিদ্ধ করার কারণে কয়েক লাখ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে তার খবর কেও রাখেনি। পরবর্তিতে দেখা গেল ATCL এর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি সরকারদলীয় মন্ত্রী এবং এমপি নাম মাত্র মূল্য কিনে নিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন ক্ষতিপূরণ পান নাই। ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য কয়েক মাস পূর্বে ফরম ছাড়া হয়েছিল তা নেওয়ার জন্য যে লাইন হয়েছিল তা PASSPORT প্রার্থীদের লাইন থেকে কম নয়। তাই বারবার বলছি ব্যবসায়ীদের বেসরকারি দুর্নীতি আর রাজনীতিবিদ এবং আমলাদের প্রশাসনিক দুর্নীতি এক কথা নয়। একদল জনগণের টাকার উপর নৃত্য করে অন্য দল দুর্নীতিপরায়ন সরকারকে টাকা বা রাজস্ব না দিয়ে তা বিনিয়োগ করে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ ছিল তা হল ঋনখেলাপি এবং সরকারকে রাজস্ব না দেওয়ার জন্য টাকার প্রকৃত পরিমাণ গোপন করা। কথা খাতিরে ধরে নিলাম তারা অন্যায় করেছেন। তাদের উচিত ছিল সরকারকে রাজস্ব দেওয়া। যদি তারা প্রকৃত পরিমাণ রাজস্ব দিতেন তবে কি উপকার হত। কিছুই হতনা!! সরকারি কোষাগারে আর বেশী টাকা দেখে তারেক, কোকো,মামুন গংরা খুশিতে বগল চাপ্‌ড়াতেন। আজ বিভিন্ন ব্যাংকে তাদের যে পরিমাণ অর্থের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে তার সাথে আর কয়েকশ কোটি টাকা যোগ হত। তাই হয়ত CHERYL W. GRAY AND DANIEL KAUFMANN বলেন দুর্নীতিপরায়ন রাজনৈতিক ব্যাবস্থায় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি অর্থনৈতিক চাকা সচল করতে গ্রিজ এবং পেট্রল অয়েলের কাজ করে।
আমরা জানি পৃথিবীতে এখন শুরু হয়েছে নয়া উপনিবেশবাদ। অর্থাৎ অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ। এর victim হল LDC ভুক্ত দেশসমুহ। কিন্তু তাদের প্রধান প্রতিবন্ধকতা হল শেয়ার বাজার এবং দেশীয় ব্যবসায়ী সমাজ। এই কারণে উন্নত দেশ সমূহ LDC ভুক্ত দেশসমুহের শেয়ার বাজার শক্তিশালী হতে তারা অনেক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। এর ফলে বিদেশী ব্যাংকের প্রতি মাঝারি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বেশি নির্ভরশীল থাকে। এর ফলে এসব দেশের ব্যাংক এর সুদের হার কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
প্রতিবছরই বাজেট প্রনয়নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। যাতে টাকা অলস না পড়ে থাকে। অপ্রদর্শিত টাকা মূলধন রূপান্তরিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। এই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ মাত্র উতপাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ করা যাবে। কেননা উতপাদনমুখী এবং রপ্তানি নির্ভর খাতে অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে। এটাও একটি অর্থনৈতিক দুর্নীতির ইতিবাচক দিক। দেশের গণ্যমান্য অর্থনীতিবিদরাও এমনটাই মনে করে। এসব ব্যবসা ও অর্থভিত্তিক দুর্নীতিকে নৈতিকতার ভিত্তিতে নয় বরং অর্থনীতির মাপকাঠিতে বিচার করতে হবে। দেখতে হবে এটা ইতিবাচক না নেতিবাচক।

আবার ব্যবসায়ী শ্রেনীর মধ্যে যারা মজুদদারি মাধ্যমে অতিমুনাফা অর্জনের চেষ্টা করে আর উতপাদনমুখী ব্যবসায়ী মূলধন গঠনের জন্য দুর্নীতি এক কথা নয়। দুর্নীতি প্রকার এবং স্বরূপ বুঝতে হবে। মুখ ও মুখোশ দুটোকেই চিনতে হবে।

একটি গল্প দিয়ে শেষ করি, আমাদের মহানবী (সা) সর্বদা বলতেন মিথ্যা বলা মহাপাপ। কখনো মিথ্যা বলবে না। একদা তিনি কতিপয় অমুসলিম কর্তৃক অত্যাচারের স্বীকার হন। তিনি দৌড়ে একটি পাহাড়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন। তাকে লোকাতে একজন বৃদ্ধা দেখে ফেলে। অমুসলিমরা তার কাছে মহানবীর অবস্থান জানতে চান। বৃদ্ধা সত্যি বলে দেখিয়ে দেন। অমুসলিমরা মহানবীকে ধরে ফেলে। বৃদ্ধার আচরণ মহানবী ব্যথিত হন। আল্লাহ তাকে অভিসম্পাত দেন। বৃদ্ধা তৎক্ষণাৎ পাথরে পরিণত হন। সত্যি বলার নির্মম পুরস্কার। কেননা এই তথাকথিত সত্য হতে মিথ্যা অনেক ভালো এবং পুন্যের কাজ হত। মিথ্যা পাপ কিন্তু সবসময় নয়। স্থান কাল এবং পাত্র ভেদে মিথ্যা অনেক কল্যাণকর ও জীবনদায়ী হয়ে উঠে। অনেক অন্যায় মানবতার জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে।

লেখা শেষে হঠাত করে আমার যতিন সরকারের একটি কথা মনে পড়ে গেল। এক সেমিনারে তিনি কথাটি বলেছিলেন হয়তবা তিনি নিজেও ভুলে গেছেন কিন্তু কথাটি আমার এতটাই ভালো লেগেছিল আমি কথাটা কখনো ভুলতে পারি না। পন্থিবাদী বুদ্ধিজীবী এবং স্বার্থবাদী পেশাজীবী যে দেশে থাকে সে দেশের উন্নতি কল্পনাতে সীমাবদ্ধ মাত্র। আমার মনে হচ্ছে আমিও স্বার্থবাদীর মত ব্যবসায়ীদের পক্ষে কথা বলছি, শুধুমাত্র আমার বাবা একজন ব্যবসায়ী বলে।

১,৭১৩ বার দেখা হয়েছে

১৮ টি মন্তব্য : “মুখ ও মুখোশ……………”

  1. মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

    অনেক চিন্তাশীল লেখা। বিষয়টা বেশ জটিল কিন্তু অনেক সহজ করে লেখার কারনে লেখাটা বুঝতে একটুও কষ্ট হয়নি......।।

    সম্পূর্ণ কৃতিত্ব লেখকের। খুবই সুন্দর লিখেছিস............ :boss: :boss:

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    জাহিদ, তোমার বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। সব থেকে বেশি ভালো লেগেছে নিজেদের অভিজ্ঞতাকে আলোচনায় নিয়ে আশা। তবে তোমার অবজারভেশনে কিছু অতিসরলীকরণ আছে। যেমন, ব্যবসায়ী মাত্রই প্রয়োজনে দূর্নীতি করে, বিনিয়োগ হলেই কর্মসংস্থান হয়, রাজকোষের টাকা শুধুই রাজনীতিকরা ভাগ করে খায়- এইসব। উদাহরণ দেই,

    - পাটকল বা টেক্সটাইলে বিনিয়োগ হলে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কর্মসংস্থান হয়, কিন্তু 'শক্তি দই'য়ের ব্যবসা খুললে আবার বিদ্যমান কর্মসংস্থানও উল্টা সংকুচিত হয়। ব্যবসায়ীরা দূর্নীতির শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশ থেকে গাড়ী এনে বিশাল ব্যবসা করতে পারে, কিন্তু তা'তে কর্মসংস্থান হয় না। সরকারের নির্ধারিত শিল্পের জন্য ঋণ নিয়ে তা' অধিক মুনাফার জন্য অন্য ব্যবসায় খাটালে তা'তে কর্মসংস্থানের দিক থেকে লাভ হয় না। আর সরকার ব্যবসায়ীদেরকে মূলত নিয়ন্ত্রন করে আমলাতন্ত্র দিয়ে, দূর্নীতিতে যাদের দায় সবথেকে বেশি, এমনকি রাজনীতিবিদদের থেকেও। আমাদের সচিব আর জেলাপ্রশাসকদের জীবনযাত্রার দিকে লক্ষ্য করলেই এটা বুঝবে।

    তবে তোমার সাথে আমি পুরাই একমত যে, তত্ত্বাবধায়কের দূর্নীতিবিরোধী অভিযানটা আসলে ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। তা না হলে দেশের ক্ষুদ্র আর মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাজাটা ঠিকই ভাংলো, অথচ মিডিয়ায় বারবার আসল যে মাত্র ৬/৭ জনের একটা সিন্ডিকেট বাজারমূল্যকে আকাশে নিয়ে গেছে, তাদের কিছুই করলো না (আসলে করা মুরোদও ছিলনা, এখনো নাই।)। ঐ অভিযানের প্রতক্ষ্য একটা ফলাফল বলি,-
    সারাদেশেস্থানীয় হাট-বাজারগুলোয় অনেকাংশে সরকারী জমির উপরে অনেক ক্ষুদ্র+মাঝারি ব্যবসায়ী দোকান তুলে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। দূর্নীতিবিরোধী জিহাদে তাদেরকে উচ্ছেদ করা হয়েছে মাত্র ২/৩ সপ্তাহের নোটিসে, কোন প্রকার বিকল্পের ব্যবস্থা না করেই। তা'তে যেটা হয়েছে, আমাদের দেশীর বাজার থেকে ক্ষুদ্র+মাঝারী উদোক্তাদের অধিকাংশ উচ্ছেদ হয়েছে। তারমানে বাজার ফাঁকা- সেইখানে বৃহত পুঁজি, অর্থ্যাত মাল্টিনেশনাল ও তাদের দেশীয় সহযোগীরা সেই বাজার দখল করে নিয়েছে+নিচ্ছে, যেমন- আটা আর ভোজ্যতেল। ('ইফাদ'কে মনে পড়ে)।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      ভাইয়া আমি কিন্তু মজুদ্দারির কথা বলে ব্যাবসায়ীদের মধ্যে এক্তা পৃথকিকরনের চেষ্টা করেছি। আর হা সব উতপাদনমুখি ব্যাবসা যে কল্যানকর হবে তাও না। যেমন মদের কথাই ধরি।আর আমলাদের কথাও আমি বলেছি। আসলে লেখাতি লিখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে ব্যাবসায়ীদের দুর্নীতির ইতিবাচক দিক নিয়ে ২০০ পৃষ্ঠার একটি বই লেখা যাবে। এমনকি বিগত ২ বছরের পত্রিকা হতেই অনেক সাহায্য নেওয়া যাবে। এছারাও অনেক অর্থনীতির সুত্র আছে , আমি অর্থনীতির ছাত্র না হওয়াতে বিশ্লেষণ করতে পারি নাই।

      জবাব দিন
    • মেহেদী হাসান (১৯৯৬-২০০২)

      উচ্ছেদ অভিযানে আমদের দেশের কোন লাভই হয়নি। সরকারের এমন একটা বাজে সিদ্ধান্তের কারনে মধ্যখানে সেনাবাহিনীর উপর সাধারন মানুষের একটা আক্রোশ তৈরী হয়েছে এবং ভ্রান্ত ধারনা সৃষ্টি হয়েছে যা আমাদের মোটেও কাম্য ছিল না।

      জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    জিরো লেভেল অফ করাপশন যে অপ্টিমাম লেভেল অফ করাপশন নয়- এই কথাটা আমাদের প্রিন্সটন পিএইচডিধারী তৎকালীন সরকার প্রধান কেন বুঝতে পারলেননা এইটা আমার কাছে এখনো এক বিস্ময়।তবে মাসুদ ভাই,শুধু জিডিপির ভিত্তিতে উন্নইয়নের যে কথা বললেন তা আমার কাছে একটু অতি সরলীকরণ বলে মনে হল।জিডিপি গ্রোথ কোনভাবেই একমাত্র মাপকাঠি হতে পারেনা,এর সাথে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ যা থাকতে হবে সেটি হচ্ছে সম্পদের সুষম বন্টন।টাটা বিড়লা আম্বানীদের দেশেই কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি গরীব লোক বসবাস করে,বলিউড আর স্টার প্লাস সিরিয়ালের চাকচিক্য দিয়ে ভারতকে বিচার করা যাবেনা কোনভাবেই(আমি বলছিনা আপনি তা করেছেন,কিন্তু বিড়লা আম্বানীদের দুর্নীতি বন্ধ হলে ভারতের উন্নতিটা কম হত এটাও বিনা বিচারে মেনে নেয়া যায়না)।

    কাজেই,আমি মনে করি দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান ঠিকই আছে।ব্যবসায়ীদের দুর্নীতি মাপ করব কিন্তু পেশাজীবীদের করবনা-এটা একটা ভ্রান্ত মতবাদ বলে আমি মনে করি-দুর্নীতি দুর্নীতিই,প্রকারান্তরে দুর্নীতি কিন্তু ক্ষতি করে সাধারণ মানুষগুলোকে।বড় ব্যবসায়ীদের দুর্নীতিতে কিন্তু উপরে ওঠার পথ বন্ধ হয়ে যায় আপনার বাবার মত সৎ,প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের।তবে অভিজ্ঞতার অভাবে একসাথে সবাইকে আক্রমণ করতে গিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটা বেড়াছেড়া লাগিয়েছিল এটা সত্যি,কিন্তু যেভাবে চলছিল সেভাবে চলতে দেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।পরবর্তীতে দুর্নীতিবাজরা দুর্নীতি করবার সময় ওয়ান ইলেভেনের পরিণতির কথা মাথায় রেখে কিছুটা হলেও দ্বিধা করবে-এটাও কিন্তু কম পাওনা নয়।আর ভবিষ্যতে দুর্নিতি বিরোধী অভিযান অতীতের ভুলগুলো কাটিয়ে উঠবে এটাও আশা করা একেবারে দুরাশা নয়।

    সবশেষে বলা যায়-সাময়িক লাভের আশায় যদি দুর্নিতির মত জঘন্য একটা জিনিসকে প্রশ্রয় দেয়া হয় তবে তা কিন্তু "এথিকাল" দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়,ঐতিহাসিকভাবেই ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।রোমান সভ্যতার শেষের দিকে মৃত্যদন্ডপ্রাপ্ত আসামীর মৃত্য কুঠারের এক কোপে যন্ত্রণাহীন ভাবে হবে নাকি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাকে মারা হবে তা নির্ধারিত হত বেচারার আত্মীয়-স্বজনেরা জেলারকে(হ্যাঁ,সে ব্যবসায়ী ছিল না কিন্তু যেভাবে সে অর্থ নিত সেটা নিঃসন্দেহে ব্যবসা-"সেবা"(??!)র ব্যবসা) কি পরিমাণ ঘুষ দিতে পারছে তার উপর।রোমান অর্থনীতিতে এই জাতীয় কুপ্রথা প্রথা কিছুটা বেশি হলেও তারল্য সৃষ্টি করেছিল সন্দেহ নেই-কিন্তু এধরণের ভয়াবহ নৈতিক অধঃপতনের ফলাফল কি হয়েছিল তা আমাদের সবারই জানা।

    আমার ব্যক্তিগত মতামত-দুর্নীতিকে সুগার কোটেড করে দেখার কোনই উপায় নেই।

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      আমি সরল্ভাবেই লিখছি। কিন্তু তোমার কথার উত্তর কিন্তু আমি দিয়েছি।ব্যাবসায়িদের দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে হবে নিচ থেকে। আরেকটা কথা gdp কখনই সব নয় কিন্তু এটাও আবার অনেক কিছু তবে কল্যাণকর রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক দারা শুরু করার জণ্য সম্পদের সুষোম বন্টন এটা মানি কিন্তু এটাও সবসময় কাজ় দেয় না যেমন শ্রীলঙ্কা।

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        ভাইয়া আমি যেটা বলতে চেয়েছি সেটা হচ্ছে,দুর্নীতিবাজ বড় বড় ব্যবসায়ীদের ছাড় দিলে জিডিপি গ্রোথ হয়তো বেশি হয় কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের উপকার খুব বেশি হয় এটা হলফ করে বলা যাবেনা।হ্যাঁ,বড় ব্যবসায়ী ক মিয়া বাংলাদেশের নাগরিক,তাকে দুর্নীতির সুযোগ দিলে সে অনেক টাকাপয়সা বানানোর ফলে সামগ্রিক জিডিপি গ্রোথ বাড়বে(ক মিয়ার উন্নয়ন তো এক অর্থে দেশেরই উন্নয়ন!)কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষ কতটা লাভবান হবে তা ভেবে দেখার অবকাশ আছে।বরং চোরাচালান করে সস্তায় জিনিস বিক্রি করা ক মিয়াকে জেলে পাঠিয়ে সঠিক পথে জিনিস আনা ব্যবসায়ীদের পথ সুগম করলে লাভ বই ক্ষতি কিন্তু হবেনা।আমার মূল বক্তব্য সেই আগের মতই,দুর্নীতি দুর্নীতিই-এটাকে সুগার কোটেড করার কোন উপায় নেই।আর শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সংকটায়িত হবার পেছনে মূল কারণটাও আমাদের সবার জানা যা হচ্ছে জাতিগত সংঘাত,সম্পদের অসম বন্টন বা ব্যবসায়ীদের ছাড় না দেয়া নয়।যেহেতু সদ্য এ সংকট আপাতদৃষ্টিতে মিটে গেল,পরবর্তীতে কি হবে তার জন্যে অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।

        অফ টপিক-ভাইয়া আমি কিন্তু আপনার লেখা সরল করে লিখেছেন কিনা সে ব্যাপারে মন্তব্য করিনি,বড় ভাইয়ের সাথে অতবড় স্পর্ধা দেখানোর আগে আমার কল্লাটা মাটিতে পড়ে গেলেই খুশি হব।আমি শুধু বলতে চেয়েছিলাম যে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ীর উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপি গ্রোথের উন্নয়নকে দেশের উন্নয়ন হিসেবে ভাবাটা কিছুটা অতি সরলীকৃত বলে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়েছে।

        জবাব দিন
        • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

          সত্যি কথা হল আমি অর্থনীতি নয় রাজনীতির ছাত্র। আর জি ডি পি ছারা অন্য কোনো পরিমাপক নাই। তবে কল্যাণকর অর্থনৈতিক সুচক বা আপামর জনসাধারনকে ভিত্তি ধরে লিখতে গেলে অনেক গবেষোনা করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে প্রাথমিক তথ্যের। আর এজণ্য দরকার হবে সময় এবং কিছু টাকার। তবে আমার মাথ্য রইল সময় ও সু্যোগ হলে মাঠে নামব।আর ধন্যবাদ একটা ভালো টপিক পাওয়া গেলো এসাইনমেন্ট করার জন্য। আর সমালোচনা করতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহন করাই উতকৃষ্ট গণতন্ত্রের নমুনা। সবথেকে বর কথা হলো কেও সবজান্তা নয়।

          জবাব দিন
  4. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    তোর নতুন পোস্ট দেখে মনে হয়েছিল আরো একটা সিরিজ মনে হয় চালু করলি 😕

    অনেক সরল ভাবে বক্তব্য তুলে ধরেছিস বলে পড়তে ও বুঝতে অনেক সহজ হয়েছে...

    আর ঐ দুবছরের আগে কি পরিমানে আয় হতো তা উল্লেখ করলে মনে হয় তুলনা করা যেত।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  5. ফয়েজ (৮৭-৯৩)

    ভাইরে দেশ চালাতে জ্ঞান লাগে সবচেয়ে বেশি। শুধু শৃংখলা দিয়ে দেশ চলে না।

    আমাদের সমস্যা, আমরা "প্রায়োটাইজিং" করতে পারিনা ঠিক মত। শর্ট-টার্ম প্ল্যানে চলে সব।


    পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।