ত্রিভুজ প্রেমের হর্ষ বিষাদ

লেখাটি মূলতঃ একাডেমি ধারার অর্থাৎ অনেকটা তাথ্যিক। লেখাটিকে প্রবন্ধ বললে ভুল বলা হবে।

তামিলরা মূলতঃ ভারত হতে চা শ্রমিক হিসাবে শ্রীলঙ্কা গিয়েছিল। আর তাদের নিয়ে গিয়েছিল বৃটিশরা । সিনহলিজরা এখানে আদিবাসী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠি। এছাড়া আছে কিছু শিবানুজ মানে শিব ভক্ত হিন্দু সম্প্রদায়। সিংহলী এবং শিবানুজদের বাস মূলভুমিতে। শ্রীলঙ্কার উত্তারাংশে বসবাস করে তামিল এবং সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়। ঐতিহাসিকভাবে তামিল এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক নাই। পন্নাবালাম রামনাথন ১৯০০ সালে মুসলিম এবং তামিলদের একই জাতিগোষ্ঠী বলে ঘোষণা করেন। তখন তামিল মুসলিম বিশেষতঃ মুসলিম সম্প্রদায় এর বিরোধিতা করে। ১৯১৫ সালে যখন শ্রীলঙ্কায় জাতিগত দাঙ্গা দেখা দেয় ব্রিটিশ সরকার শুধুমাত্র এর জন্য মুসলমানদের দায়ী করেন। তখন পন্নাবালাম রামনাথন যে তামিল মুসলিম ও মুসলিমদের কে নিজেদের গোত্রভুক্ত করতে ছেয়েছিলেন কৌশলে তিনি এই বিপদে পাশে দাঁড়ান নাই। তামিল এবং মুসলিমদের মাঝে একধরনের অবিশ্বাস দেখা দেয়। এছাড়া মুসলমানরা এসেছিল ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য হতে। এরা এসেছিল বণিক্‌ হিসাবে ব্যাবসা করতে। তাই তাদের নিকট খণ্ডিত শ্রীলঙ্কা হতে পূর্ণ শ্রীলঙ্কা অনেক বেশি ব্যাবসা বান্ধব হবে। ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কার শ্রীলঙ্কান ফ্রিডম পার্টি সরকার আমদানী রপ্তানী সরকারীকরন করে। এতে মুসলিমরা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের জমি ও ব্যাবসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় শিক্ষায় অগ্রসর মুসলিমরা শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান। আজকের শ্রীলঙ্কার প্রায় শতকরা একশত ভাগ শিক্ষিতের হারের পিছনে মুসলমানদের অবদান অনেক। ১৯৭৭ সালে দেশের অর্থনীতি আবার পুজিবাজারে ফিরে আসে। কিন্তু মুসলিম বনিকদের যা ক্ষতি হওয়ার তা আবার পুষিয়ে নেওয়া সম্ভবপর ছিল না।১৯৮৫ সালে তামিল ও মুসলিম পুনরায় দাঙ্গা শুরু হয়। তামিল সহস্র কিছু ব্যক্তির হাতে নামাজরত অবস্থায় ৩ জন মুসুল্লি শহীদ হন। এই ঘটনায় সর্বাধিক লাভবান্‌ হয় ক্ষমতাসীন UNP সরকার। তারা মান্নার দ্বীপে তামিল এবং মুসলিমদের মাঝে একটি বিভেদ রেখা তৈরি করতে সমর্থ হয়। ১৯৮৫ সালের ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গার সূত্রপাত হয় তাতে LTTE মুসলিমদের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে ফেলে। পরবর্তিতে তামিল্রা মুসলিমদের বন্ধুকের মুখে শরণার্থী হতে বাধ্য করে। তামিলদের পতনের পূর্বে মুসলিমরা শরণার্থী শিবির থেকে নিজেদের বাসস্থান ফেরার প্রহর গুনছে। মুসলিমদের প্রতি তামিলদের যে আচরণ ছিল তা গনহত্যার ন্যায়। এর ফলে তামিলরা মুসলিমদের সহানুভূতি লাভে চিরতরে ব্যর্থ হয়। ১৯৯০ সালে তামিলদের হাতে মুসলিমরা পুনরায় শরণার্থী হতে শুরু করে। এমনকি ১৯৮৫ সালের দাঙ্গার পর শ্রীলঙ্কান মুসলিম কংগ্রেস ও LTTE এর মধ্যে যে চুক্তি হয় তা অমান্য করে LTTE শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী বিরুদ্ধে মুসলমানদের মানববর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। তামিলরা মূলতঃ এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিল যেখানে তামিল জাতিগোষ্ঠী ব্যতীত অন্য জাতি বসবাস করবে না।

পরবর্তী পর্ব রবিবার প্রকাশ করতে পারবো বলে আশা করি।

~x(

১,৩৫১ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “ত্রিভুজ প্রেমের হর্ষ বিষাদ”

  1. তৌফিক (৯৬-০২)

    আমার ল্যাবে কিছু শ্রীলংকান আছে। একটা তো বাসায় চলে গেল প্রভাকরণের মৃত্যুর খবর শুনে। অবশ্যই বগল বাজাইতে বাজাইতে। সিনহালা সাইডের স্টোরি শোনা, তামিল সাইডেরটা শুনতে হবে এখন। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

    জবাব দিন
  2. মাহমুদ (১৯৯০-৯৬)

    ঐ মিয়া, কি কইবার্চাও ভালো মত কয়া ফালাও, সোপ অপেরার মত অল্প একটু কয়া অপেক্ষায় রাইখো না কিন্তু কইলাম :grr:

    অফটপিকঃ ভালো উদ্যোগ, থেমো না।


    There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx

    জবাব দিন
  3. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    অপেক্ষায় আছি...

    বেশ কয়েকটা ধারাবাহিক করে বসে আছি

    সবগুলো এক সাথে না চালিয়ে একটা একটা করে শেষ করলে কি ভাল হয় না?


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : Ugly_duck

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।