একজন সরোস ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ।

বারাক ওবামার নাম আমরা সবাই জানি কিন্তু তার সৃস্টিকর্তাদের একজন জর্জ সরোসের নাম আমরা অনেকেই জানিনা। তিনি একজন বিনিয়োগকারী, বিনিয়োগ গবেষক, অর্থনীতিবিদ, জনহিতৈষী। তার জন্ম ১৯৩০ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে, তিনি তার শৈশবে নাজি বাহিনীর হাতে আটক হন এবং পরবর্তি সময়ে সভিয়েত কমিনিজ্যমের দ্বারা অত্যাচারিত হন। তিনি একজন ইহুদী। এবং অন্যান্য আট দশটা ইহুদীদের মত তিনিও ফ্যাসিস্ট ও কমিনিজ্যম বিরোধি। তিনি উদারনৈতিকবাদে বিশ্বাসী।

এবার আসি আসল কথায় ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার জন্য ২ জন দায়ী ব্যাক্তির একজন তিনি। তিনি ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০০৮ সালে বার বার অর্থনৈতিক বিপর্যয় তথা পুজিবাদের ধ্বসের কথা বলেছেন। এখানে তার এই আগাম সতর্কতার পিছনে একটি প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, তা হল প্রতিবার আমেরিকার সাধারণ নির্বাচনের পুর্বে তার পছন্দনীয় পার্থীর বিজয়ে সহায়তা করা। ২০০৪ সালে বুশ প্রশাসনকে পরাজিত করতে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যায় করেন। তিনি ৫২৭ টি গ্রুপকে প্রায় ২৩,৫৮১,০০০ মার্কিন ডলার ডেমোক্রাটদের বিজয়ের জন্য দান করেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বারাক ওবামার প্রতিদন্দ্বী প্রাথী জন ম্যাককেইনের Bipartisan Campaign Reform Act এর একজন সমর্থক ছিলেন সরোস, কিন্তু ২০০৪ সালে নির্বাচনে ডেমোক্রাটদের বিজয়ের জন্য অর্থ দান করার কারণে তাদের সম্পর্কে ইতি ঘটে। পরবর্তিতে সরোস ৪ বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহন করেন যার ফসল ওবামা। তাকে বিজয়ী করার জন্য ২০০৮ সালে কৃত্তিমভাবে finance bubble তৈরি করা হয়। এবং প্রমান হয় বুশ প্রশাসনের পরিবর্তন দরকার। এবং ম্যাক কেইন শুদু বুশের ছায়া মাত্র। যার ফলে we want change এবং vote for change স্লোগান ব্যাপক জনপ্রিয়তা অ গ্রহণযোগ্যতা পায়। পরবর্তি ফলাফল আমাদের সকলেরই জানা।

তিনি মূলত বিখ্যাত ১৯৯২ সালের Black Wednesday স্ক্যান্ডালের জন্য। তিনি একা ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডকে দেওলিয়া করে ফেলেছিলেন। তিনি ইংল্যান্ডের রক্ষনশীল শাষকদেরকে সুকৌশলে বাজার হতে পাউন্ড তুলে নিতে বাধ্য করে, সংকট জিইয়ে রাখা এবং সুচারু ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে তিনি অতিদ্রুত ১.১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মুনাফা করেন।

তিনি মার্কিনযুক্ত রাষ্ট্রে মারিজুয়ানা বৈধ করার পক্ষে এবং মেক্সিকান অভিবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার বিপক্ষে। তার মতে মেক্সিকান অভিবাসীদের অপরাধ মুলক কাজকর্ম মারিজুয়ানা হতে বিপজ্জনক। এছারাও মারিজুয়ানা চালান প্রতিরোধ করতে মার্কিন সরকারকে বছরে প্রায় কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যায় করতে হয়। তার মতে মার্কিন সমাজে এর হতে ভয়ঙ্কর অপরাধী কার্যকলাপ রয়েছে, সরকারের উচিত ঐসব কার্যকলাপ বন্ধ করার জন্য এই অর্থ ব্যয় করা।

তিনি সভিয়েত পতনের জন্য কাজ করেছেন। বিশেশ করে পূর্ব ইউরপে। প্পূর্ব ইউরোপে কমিনিজ্যমের পতনের জন্য তার প্রচুর অবদান আছে।

আগেই বলা হয়েছে তিনি একজন উদারতাবাদী। তিনি Open Society Institute নামে একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। এই প্রতিষ্ঠাণের কাজ হল উদারতাবাদকে বিভিন্ন দেশে প্রচার ও বিকাশিত করা। তার সরস ফাউন্ডেশন নামে আরো একটি প্রতিষ্ঠাণ আছে। হয়ত অবাক হতে পারেন গ্রামীন ব্যাংকের অনুদান বা ঋণের একটি বড় অংশ আসে Open Society Institute হতে।

জর্জ সরোস এমন ক্ষমতাধর ব্যাক্তি যিনি যে কোন রাষ্ট্রে অর্থনৈতিক ব্যাবস্থাকে বিপর্যস্ত করতে পারেন। একটি সাধারণ নমুনা দেই………… ১৯৯৭ সালের এশিয়ান বিনিয়োগ সংকট সৃস্টিকারী ছিলেন সরোস। মহাথির মোহাম্মাদ এই সম্পর্কে বলেন “ সরোস, মায়ানমারকে আসিয়ানভুক্ত করার শাস্তি হিসাবে এই কৃত্তিম সংকট সৃস্টি করেছিলেন”।

যেখানে একজন ব্যাক্তির কাছে বিশ্ব বিনিয়োগ কতইনা অসহায়। সেখানে বহুজাতিক কোম্পানির নিকট আমাদের দেশের সরকার যে অসহায় হবে সেটাইতো স্বাভাবিক। তাই আমি সবসময় liberal নয় subsistence economy/ trade এর সমর্থক।

২,৭৬০ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “একজন সরোস ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ।”

  1. গুলশান (১৯৯৯-২০০৫)

    এটা অনেকটা কন্সপিরেসি থিওরীর মত লাগল পড়ে। বিভিন্ন কন্সপিরেসী থিওরীতে বিভিন্ন সংস্থার নাম শোনা গেলেও ব্যক্তির নাম মনে হয় এই প্রথম শুনলাম। তবে একটা ব্যাপারে মিল পাচ্ছি। তা হল বিশ্বের মূল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ ইহুদীদের হাতে থাকার থাকার বিষয়টা।
    আমি এমন কিছু শুনলেই অন্ধভাবে বিশ্বাস করার পক্ষপাতী নই। আবার অনেকের মত স্রেফ উড়িয়ে দেওয়াটাকেও পছন্দ করি না। সেজন্য ভাইয়া কোন লিংক দিয়ে দিলে মনে হয় ভাল হত।

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      সত্যি বলেছেন .............................. শুধু ওবামা না এখানে যেসব প্রসঙ্গের অবতারনা করা হয়েছে সবি ২ বা ৩ বাক্যে শেষ করার একটা প্রবণতা আমার মাঝে কাজ করেছে। ওবামার নির্বাচনের বিজয় নিয়েও আলাদা একটা ব্লগ লেখা যায়। পরবর্তিতে যথেষ্ঠ সময় পেলে লিখব আর সেখানে জর্জ সরোস এর জন্য না হয় একটু বেশি শব্দ ব্যাবহার করব।

      জবাব দিন
  2. সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

    মাসুদ,

    জর্জ সরসকে নিয়ে লেখার জন্যে ধন্যবাদ, তবে লেখাটা বড্ড একপেশে হয়ে গেছে। আমি প্রথম জর্জ সরসের নাম শুনি '৯৭-এর এশিয়ান ক্যাপিটাল মার্কেটের ধস নামার পর। তার পর থেকে আমি সুযোগ পেলেই জর্জের বিভিন্ন কার্যকলাপ দেখার চেষ্টা করি। জর্জের অনেকগুলি ইন্টারভিউ প্রোগ্রাম আমি দেখেছি।

    তুমিও যদি খোজ করে এগুলি দেখার চেষ্টা করো, আমি যতেষ্ট নিশ্চিত যে তুমি তোমার দৃষ্টি ভঙ্গি বদল করবে।

    কেউ মুসলমান হলেই যে সে 'টেরোরিষ্ট' হয় না, তেমনি কেউ ইহুদী হলেই যে সে এক জন 'ভিলেন' এমন ভাবা উচিৎ নয়।

    আশা করবো জর্জের ব্যাপারে আরও জানার পর, তুমি তোমার নতুন লেখায় আমাদেরকে আরও অনেক কিছু জানাতে পারবে।

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      ভাইয়া ধন্যবাদ ................................. আমি একটা কথা খুব বিশ্বাস করি তা হল পৃথিবীতে সবাই খুব যুক্তিবাদি প্রথমে আমি ভাবতাম এভাবে শুধু আমিই চিন্তা করি করি তবে পরে দেখতে পাই হেগেলের দ্বান্দিক মতবাদ হুবুহু আমার মত.............................. জর্জ সরোস যা করেছে তা তার দৃস্টিতে অবশ্যই ঠিক আমিও এতে দোষের কিছু দেখিনা। আমি শুধু কিছু তথ্য সবার সাথে শেয়ার করেছি। আপনার মন্তব্য তার সম্পর্কে অধিক জানতে আমাকে অনুপ্রেরনা দিচ্ছে। আমি তার নাম প্রথম শুনতে পাই যখন ইরান সরকার ওপেন সোস্যাইটি তার দেশ হতে বহিষ্কার করে।

      জবাব দিন
      • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

        মাসুদ,

        আমার মন্তব্যটা করার পরে ভয় হচ্ছিল যে তুমি হয়তো এটাকে ব্যাক্তিগত ভাবে নিয়ে মনক্ষুন্য হবে। সেটা যে হয়নি তাতে আমি খুশী।

        প্রাথমিক ভাবে উইকি থেকে শুরু করতে পার জর্জের ব্যাপারে জানার জন্যে। নীচে লিঙ্ক দিলাম। তার এক পুরুষে আয় করা ১৪ বিলিয়নের মধ্যে ৭ বিলিয়ন সে ইতিমধ্যে বিভিন্ন জনহিতকর কাজে ব্যায় করেছে। বাংলাদেশের গ্রামীন ব্যাঙ্ক ও লাভ করেছে সেখান থেকে।


        জর্জ সরস

        ভাল থাক এবং পারলে আরও লেখো।

        জবাব দিন
        • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

          ভাইয়া মনক্ষুন্ন হওয়ার প্রশ্নই উঠেনা.................. আমি এমনটা মনে করি শুধুমাত্র প্রসংসা বা সমালোচনাপুর্ণ মন্তব্য নয় ব্যক্তিগত মতাদর্শ এবং দৃষ্টিকোণ হতে মত প্রকাশের মাধ্যমেই আমাদের জানার পরিধি বাড়তে পারে আর এটাই সম্ভবত ব্লগিং এর অন্যতম উদ্দেশ্য। আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

          আমার আরেকটি বিশ্বাস হল যে লেখক তার নিজের লেখার সমালোচনাকে ব্যক্তিগত আক্রমন মনে করে তার লেখা প্রকাশের অধিকার নেই।

          জবাব দিন
          • সাইফ শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

            মাসুদ,

            তোমার এই পরিনত দৃষ্টিভঙ্গির জন্যে ধন্যবাদ।

            কয়েকটা তথ্য দিই এখানে - তোমাদের চিন্তার খোরাক হিসাবে। বর্তমানে আমেরিকার ব্যালান্স ডেফিসিট ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের মত। এখানকার জিডিপি ১৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ডেফিসিট ১০%-এর মধ্যে থাকলে ভাল হতো [এটা অবশ্য আপেক্ষিক ধারনা -কেউ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারবে না এ ধারনা সঠিক কিনা]।

            যুদ্ধের খরচ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার।

            এই সংখ্যা গুলির সাথে তুলনা করো - পৃথিবীর বর্তমান ডেরিভেটিভ মার্কেটের [হেজ ফান্ড, ইত্যাদি] পরিমান প্রায় ৬০০ ট্রিলিয়ন ডলার

            ডেরিভেটিভ মার্কেটে টাকা খাটানো অনেকটা 'পকার' খেলার মত। বুদ্ধিমানের জুয়া খেলা এটা। আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু আছে যে পকার খেলতে এক্সপার্ট। সে গত কয়েক বছরে পকার খেলে দেড় লাখ ডলার আয় করেছে। এগুলি সবই লিগাল এবং আয়ের টাকার উপর যথারীতি ইনকাম ট্যাক্স দিয়ে চলেছে। এ সবই লিগাল।

            জর্জ সরসের কার্য কলাপও লিগাল। বরং সে পৃথিবীর সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে 'পুজিবাদের' অসুভ দিকগুলি। তার মানে আমি বলছি না যে সোভিয়েত স্টাইলের সমাজতন্ত্রে ফিরে যাবার কথা।

            আমি চাই সবাই চোখ কান খোলা রেখে আমাদের সবার এবং আমাদের উত্তরসুরীদের জন্যে ভাল কিছু পন্থা বের করুক।

            এতটা কথা বললাম এই আশা করে যে তুমি এবং তোমাদের মত বুদ্ধিমান ছেলে-মেয়েরা এই ব্যাপারে পড়া-শুনা করে অন্যদেরকে জানাবে সত্যিকারের 'সত্যি' কথাগুলি।

            শুভেচ্ছে রইল।

            জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাইফুদ্দাহার শহীদ (১৯৬১-১৯৬৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।