গার্হস্থ্য পরিবেশ একটি পৃথক বিষয় ও পরিবেশ রক্ষায় অবদান

গার্হস্থ্য অর্থনীতির মত গার্হস্থ্য পরিবেশ আমাদের দেশে প্রচলিত বিষয় নয়। গার্হস্থ্য পরিবেশ বিষয়টি Interior Architecture হতে ভিন্ন, আবার গার্হস্থ্য পরিবেশ ঘরোয়া পরিবেশ বা ঘরের পরিবেশ হতেও পৃথক। গার্হস্থ্য পরিবেশের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Home Ecology। Home Ecology বিষয়টি Family Ecology হতেও ভিন্ন। Interior Architecture Family Ecology, Home environment, Homely Environment ইত্যাদি বিষয়সমূহ Home Ecology এর অন্তর্ভুক্ত বিষয়গত উপাদান হিসেবে আলোচনা হতে পারে। অন্যদিকে গার্হস্থ্য অর্থনীতির পাঠও গার্হস্থ্য পরিবেশের অধ্যায়ন ব্যাতিত সম্পুর্ণ হতে পারেনা।

গার্হস্থ্য পরিবেশ কি? গার্হস্থ্য পরিবেশ হল ঘরোয়া কাজ সমূহকে বিশ্লেষণ করা যা পরিবেশের উপর ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আবার অন্যভাবে বলা যায় গৃহকর্মসমূহ ও পরিবেশের মাঝে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করাই হল গার্হস্থ্য পরিবেশের কাজ। অনেক পরিবেশবাদী বিশেষজ্ঞ পরিবেশ রক্ষায় গার্হস্থ্য পরিবেশের ভুমিকা নিয়ে বিস্তৃত পর্যালোচনা করেছেন। আবার অনেকেই শুধুমাত্র জীবনযাত্রার মানোউন্নয়নের জন্য গার্হস্থ্য পরিবেশ আলোচনা করেছেন। গার্হস্থ্য পরিবেশের বিষয়গত উপাদানসমুহ আলোচনায় দেখা যায় গার্হস্থ্য পরিবেশের শিক্ষা নিশ্চিতভাবে টেকসই উন্নয়নে গতি সঞ্চার করে। টেকসই উন্নয়ন মানেই পরিবেশ সংরক্ষন ও জীবনযাত্রার মানোউন্নয়নের সমন্বয়। তাই গার্হস্থ্য পরিবেশের আলোচনা পরিবেশ সংরক্ষন ও জীবনযাত্রার মানোউন্নয়ন উভয়দিক হতে আলোচনা করা যায়। তবে উভয়ের মাঝে কোনটিকে কেন্দ্র করে পর্যালোচনা করা হবে তা বিশেষজ্ঞদের নিজস্ব পছন্দ ও হাইপোথেসিস এর উপর নির্ভর করে। তবে কাগজে কলমে পর্যলোচনা যে আংগিকে বা ত্বাত্তিকেই করা হোক না কেন হাতে কলমে একে ঘরোয়া জীবনে বাস্তবায়িত করলে পরিবেশ নিশ্চিতভাবে সংরক্ষিত হবে।

গার্হস্থ্য পরিবেশের প্রয়োজনীয়তা এত ব্যপক যে স্বল্পপরিসরে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই এখানে গার্হস্থ্য পরিবেশের আলোচনা শুধুমাত্র পরিবেশ সংরক্ষনের আংগিকে আলোচনা করা হল। পরিবেশ সংরক্ষনে বিশ্ব অনেক সম্মেলন করেছে। কিন্তু আশাব্যাঞ্জক কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। কপ-১৫ সম্মেলনে পরিবেশ ঝুকিপুর্ণ রাষ্ট্রসমুহের দাবি ছিল ২% পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং উষ্ণতা বৃদ্ধির গতিরোধ। কোপেনহেগেন সম্মেলনে উন্নয়নশীল বিশ্ব বিশেষত BIC রাষ্ট্র (ব্রাজিল, ইন্ডিয়া, চীন) এবং উন্নত বিশ্বের দ্বন্দের কারণে পরিবেশ রক্ষায় কোনো কার্যকর উদ্দ্যোগ গ্রহন করা সম্ভব হয়নি। সম্মেলনের কিছু কৌশলগত ভুল (ইচ্ছাকৃত) কার্বন বানিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছে। ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কার্বন বানিজ্য পরিবেশ ঝুকির মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। কপ-১৫ সম্মেলন কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও গার্হস্থ পরিবেশ দিতে পারবে। পরিবেশবাদীদের এক গবেষণায় দেখা যায় ঘরোয়া কর্মকান্ডে সচেতনতা ২% পর্যন্ত কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করতে পারে। আমরা সবসময় বাণিজ্যিক কার্বণ নিঃসরণ নিয়ে আলোচনা করছি গৃহের কার্বন নিঃসরণ প্রসংঙ্গ এড়িয়ে চলছি। কারণ বানিজ্যিক কার্বন নিঃসরণ আলোচনা, সম্মেলন ও চুক্তির মাধ্যমে হ্রাস ও তদারকি করা সম্ভব কিন্তু গৃহস্থ কার্বন চুক্তি বা পারস্পারিক সমঝোতার মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব নয়। গৃহস্থ কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের জন্য প্রয়োজন জনসাধারনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি। আর এই সচেতনতা সৃষ্টির জন্য গার্হস্থ্য পরিবেশকে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় পৃথক অধিতব্য বিষয় বা ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে সন্নিবেষিত করা প্রয়োজন। দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিষয় সমুহের মত গার্হস্থ্য পরিবেশ উচ্চ শিক্ষায় যেমন পৃথক অধিতব্য বিষয় হিসাবে সংশ্লেষ করা যেতে পারে তেমনি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে জাতীয় পাঠ্যপুস্তকের কলেবরে সন্নিবেশিত করা যেতে পারে। এছাড়াও পঞ্চম শ্রেণী হতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত সমাজ বিজ্ঞান ও সাধারণ বিজ্ঞানে একটি পৃথক পরিচ্ছেদ হিসাবে সংক্ষিপ্ত পরিসরে আলোচনা করা যেতে পারে।
মোট কথা হলো পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও একে রক্ষার জন্য গার্হস্থ শিক্ষাকে গণমানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।

গার্হস্থ্য পরিবেশের কর্মক কারা গার্হস্থ্য শব্দটি যুক্ত থাকায় আমাদের সহজেই মনে হতে পারে বিষয়টি শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দায়বদ্ধতা ও কর্তব্য হতে পুরুষদের এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই ক্ষেত্রে পুরুষদের দায়িত্ব অধিক কেননা পুরুষদের গার্হস্থ পরিবেশের শিক্ষা তাদের কর্মক্ষেত্রেও বাস্তবায়িত করতে হবে।এতএব গার্হস্থ্য পরিবেশের কর্মক নারী পুরুষ উভয়ই। একে শুধুমাত্র নারীবাদী বা ফেমিনিজমের আংগিকে বিশ্লেষণ করার প্রচেস্টা অন্যায় এবং বোকামি। শুধুমাত্র ফেমিনিজমের দৃষ্টিকোণ হতে বিশ্লেষণ করা হলে এর আসল উদ্দেশ্য ব্যহত হবে।

গৃহস্থ কিছু উপাদান গার্হস্থ্য পরিবেশ শিক্ষার আলোকে ব্যবহার করা আমাদের কর্তব্য।

পানিঃ পরিবেশ বা গৃহকর্মে পানি সর্বাধিক অত্যাবশকীয় উপাদান। গৃহকাজে আমরা পানি ব্যবহারে আমরা সচেতন তথা মিতব্যায়ী নই। এর প্রধান কারণ আমরা আমাদের চারপাশে প্রচুর পানি দেখতে পাই কিন্তু অনুধাবন করতে পারিনা এর অতিক্ষুদ্র একটি অংশ সুপেয়। পৃথীবির মোট জলরাশির মাত্র ৩ শতাংশ পানি সুপেয়। কিন্তু ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক প্রাপ্তি ও ভূপৃষ্ঠে পয়ঃনিষ্কাষন অব্যাবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের সুপেয় পানির বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ।

আমরা ভোরের দাতমাজা হতে শুরু করে রাতে ঘোমানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক বেশি পরিমান পানি অপচয় করি। একটি সাধারণ হিসাবে দেখা যায় নাগরিক জীবনে প্রতিটি পানির ট্যাপ বা নল হতে বছরে ৩০-৫০ হাজার লিটার পানি অপচয় হয়। অপচয় পানিকে পুনঃরায় সুপেয় পানিতে ফিরিয়ে আনতে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এইরুপ অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা আমাদের বিদ্যুত ও জ্বালানি সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে। শুধুমাত্র পানির মিতব্যায়ী ব্যাবহারে আমরা দৈনিক ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় করতে পারি। ইংল্যান্ডে একটা প্রবাদ আছে, “ এক টাকা সঞ্চয় করার অর্থ হল এক টাকা উপার্জন করা”।

পানির মিতব্যায়ী বযাবহারের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি পানি সরবরাহ, সঞ্চালন ও সঞ্চয় ব্যাবস্থাপনাও গার্হস্থ পরিবেশের পঠিতব্য বিষয় হিসাবে অন্তর্ভুক্ত। পানি ব্যাবস্থাপনার ক্ষেত্রে গার্হস্থ্য পরিবেশ পাঠক ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিতে পারবে। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই দিক নির্দেশনা সমুহ গ্রাম ও শহরের জন্য পৃথকভাবে আলোচনা করতে হবে। কারণ গ্রাম ও শহরের আর্থ সামজিক অবকাঠামোগত উন্নয়নে বৈষম্য। শহরে পানির প্রাচুর্যতা না থাকলেও বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা গ্রাম হতে অধিক অপরদিকে গ্রামে পানির প্রাচুর্যতা থাকলেও বিশুদ্ধ পানির নিশ্চয়তা প্রায় শুন্যের কাছাকাছি। গ্রামের ভুগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিক এবং ভূপৃষ্ঠস্থ জলরাশিতে কৃষিকাজে ব্যাবহৃত কীটনাশক ও সারের মিশ্রন পানিকে দুষিত করছে। শহরে ওয়াসা, পৌর কর্পরেশন, সিটি কর্পোরেশন বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করছে। কিন্তু গ্রামের সাধারন মানুষ সরকারের এসব নাগরিক সেবা হতে বঞ্চিত। এতএব গ্রামের সাধারণ মানুষকে বিশুদ্ধ পানির সার্বভৌমত্ব অর্জন করার জন্য নিজেদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। পানি বিশুদ্ধকরণে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৌশল সমূহ বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তিতে গ্রামের জনসাধারণকে সাহায্য করতে পারে। পাতন, ছাকন, পরিস্ফুটন, ও পরিশোধন নানাবিদ কৌশল সমূহ গার্হস্থ্য পরিবেশের অধিতব্য বিষয় হিসাবে আলোচিত হতে পারে। যেমনঃ বাশেঁর কয়লা পানি বিশুদ্ধ করার একটি সহজ সরল ও সাশ্রয়ী কৌশল।

আরো একটি কৌশল হলো rain water harvesting। বৃষ্টির পানি ধরে রাখা ও ব্যবহারের এই কৌশলটি আমাদের পানি সমস্যা হতে মুক্তি দিতে বিশেষ সাহায্য করতে পারে। তবে এই কৌশলটি ব্যবহারেও গ্রাম ও শহরে ভিন্ন ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বিদ্যুত ও জ্বালানীঃ বাংলাদেশের মত LDC ভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর উন্নয়নে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হলো বিদ্যুত ও জ্বালানীর ঘাটতি। বাংলাদেশের শিল্পকারখানার প্রসার ও বৈদেশিক বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করা যাচ্ছেনা শুধুমাত্র নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের নিশ্চয়তার অভাবে। আমরা যদি আমাদের গৃহকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুতের একটি বড় অংশ নিজেরা উৎপাদন করতে পারি তবে জাতীয় গ্রিডে উৎপাদিত বিদ্যুতের বৃহৎ অংশ শিল্পকারখানায় ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে দেশের GDP বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুত ও জ্বালানীর জন্য অতিরিক্ত অর্থ ব্যায় না করার ফলে আমাদেরও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাবে। বিদ্যুত ও জ্বালানীর মিতব্যায়ী ব্যবহার ও নিজস্ব বিদ্যুত উৎপাদন, পরিচালন কৌশল সমূহ নিয়ে গার্হস্থ্য পরিবেশ পর্যালোচনা করতে পারে।

প্রতিদিন যে হারে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বাজারে আসছে এবং তার ব্যবহার বাড়ছে তাতে বিদ্যুত ও জ্বালানীর মিতব্যায়ী ব্যবহার সম্পর্কে সম্যক ঞ্জান ও সচেতনতা থাকা জরুরী। এছাড়াও আমরা আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস সমূহকে যেভাবে অবহেলায় অব্যাবহৃত রাখছি, এটাও এক ধরণের অপচয়। এই নবায়নযোগ্য উৎস সমূহ হতে সহজ সরল ও স্বল্প পুজিঁতে বিদ্যুত উৎপাদন করার কৌশল নিয়ে আলোচনা করাও গার্হস্থ্য পরিবেশের অধিতব্য এবং গবেষণার বিষয়। ব্যক্তিগত উদ্যোগ অথবা সমবায় ভিত্তিক বিদ্যুত জ্বালানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে গার্হস্থ্য পরিবেশ পৃথকভাবে আলোচনা করতে পারে। এক্ষেত্রে আমরা হিন্দি সিনেমা স্বদেশকে রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহার করতে পারি।

বায়ো-গ্যাস প্লান্ট, সৌরশক্তি, বায়ু চালিত শক্তি ইত্যাদি ব্যবহার করা বিদ্যুত উৎপাদন করা যায়। আবার প্রত্যেকটি কৌশল সমন্বিত করে যৌথ ব্যবস্থাপনা (hybrid plant) স্থাপন করতে পারা যায়। একটি গবেষণায় দেখা যায়, নবায়নযোগ্য শক্তির যৌথ ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করার মাধ্যমে ৫/৬ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি পরিবার তার বিদ্যুত চাহিদা সম্পুর্ণভাবে মিটাতে পারে। wind solar hybrid plant চীন ও ভারতে দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। এর মূল কারণ হল solar panel রাতে বিদ্যুত উৎপাদন করতে না পারলেও wind panel রাতে বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারে, এর ফলে রাত দিন ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত পাওয়া যায়।

ভারতের জ্বালানী বিভাগ একটি গবেষণায় দেখিয়েছে বায়ুকে জ্যালানী হিসাবে ব্যাবহার করে ৫০,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার সামর্থ্য তাদের রয়েছে এবং তারা ১১,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে। ভারতের তথ্যগুলো বাংলাদেশে প্রতিস্থাপন করে আমরা অনুমান করতে পারি, আমাদের ৪০০০/৫০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করার সামর্থ্য আছে। কিন্তু আমাদের উৎপাদনের পরিমান শুন্য। গার্হস্থ পরিবেশ আমাদের নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারে এবং আমাদের স্বাবলম্বি হতে সাহায্য করতে পারবে।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অধ্যয়নযোগ্য বিষয় হতে পারে এমন ধারণা আমাদের হাস্য কৌতুকের বিষয় হতে পারে, কিন্তু এর গুরুত্ব অনেক বেশি। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলে রাখা বিপজ্জনক বিশেষভাবে কিচেন ডাস্ট ও ক্লিনিকাল ডাস্ট যেখানে সেখানে ফেলে রাখা সাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকারক। কিচেন ডাস্ট পচে গলে মিথেন গ্যাসের সৃস্টি হয়।মিথেন গ্যাস গ্রীন হাউজ গ্যাস হিসাবে কার্বন ডাই অক্সাইড হতে বিশগুন ক্ষতিকারক। তাই কিচেন ডাস্ট যত্রতত্র ফেলা অথবা উম্মুক্তভাবে প্রাকৃতিক সার তৈরিতে কাচামাল হিসাবে ব্যাবহার করা পরিবেশের জন্য মারাত্নক বিপজ্জনক। কিচেন ডাস্ট কে একমাত্র বায়ো-গ্যাস প্লান্টে কাচামাল হিসাবে ব্যবহার করা পরিবেশের জন্য নিরাপদ। এতে আমরা উপজাত হিসাবে যেমন জ্বালানী গ্যাস সেই সাথে সাথে প্রাকৃতিক সার পাব। এটি একটি ত্রিমুখী লাভজনক কৌশল।

বর্জ্য আবর্জনা ২ ধরণের – ডিসট্রাবল ও ননডিসট্রাবল। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে পরিবেশ ও সাস্থ্যসম্মত করার জন্য আমাদের কোন আবর্জনা ডিসট্রাবল ও ননডিসট্রাবল তা জানা অতি জরুরী। যেমন পলিথিন একটি ননডিস্ট্রাবল আবর্জনা। ৪ টি পলিথিন ব্যাগকে কৃত্তিমভাবে ডিসট্রাবল করলে প্রায় ১ কেজি কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন হয়। অপরদিকে রদ্দি কাগজ, টিন, সীসা, প্লাস্টিক ও রাবার জাতীয় আবর্জনাসমুহ রিসাইকেল করে পুনঃরায় বযবহারযোগ্য করা যায়। বর্জ্য আবর্জনা কে রিসাইকেল করতে অনেক কম বিদ্যুত প্রয়োজন হয়। ১ টন কাগজ রিসাইকেল করলে ১৭ টি গাছ নিধন হতে রক্ষা পায়। পরিবেশ গবেষকরা এক হিসাবে দেখিয়েছেন একটি গাছ তার স্বল্প আয়ুর জীবনে আমাদের প্রায় ২০ লাখ টাকার অধিক মুল্যবান বস্তু প্রদান করে থাকে।

বাংলাদেশে বর্জ্য আবর্জনা কাচামাল ভিত্তিক কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠাণ গড়ে উঠেনি। এর একমাত্র কারণ হল বর্জ্য আবর্জনাকে আমরা ডিসট্রাবল ও ননডিসট্রাবল একত্রে ডাস্টবিনে ফেলে দেই। এর ফলে ডিসট্রাবল ও ননডিসট্রাবল, কিচেন ডাস্ট, পেপার ডাস্ট, মেটাল ডাস্ট, ও গ্লাস ডাস্ট এসব ক্যাটাগরিতে ভিবক্ত করতে উদ্যোগতাদের প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হবে, যাতে পণ্যের উৎপাদন খরচ যাবে অনেক বেড়ে এবং এই উদ্যোগ অলাভজনক হয়ে দাঁড়াবে।

আমরা যদি ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে বর্জ্য আবর্জনা ডাস্টবিনে রাখার ব্যবস্থা করি তাহলে আমরা পরিবেশকে যেমন রক্ষা করতে পারব তেমনি দেশজ সম্পদের সঠিক ব্যবহার করতে শিখব।

এছাড়াও সময়, খাদ্য, বাজার করা, পুনঃউৎপাদন, যোগাযোগ (গ্রীন ট্রান্সপোর্ট), বায়ু, স্বাস্থ (নন টক্সিক হোম), আলো, উদ্যান বা বাগান পরিচর্যা, গৃহপালিত পশুর লালন পালন, শিশু পরিচর্যা, বিনোদন ইত্যাদি গার্হস্থ্য পরিবেশের অধিতব্য বিষয় হিসাবে পর্যালোচনা করা যায়।

এসবই গার্হস্থ্য পরিবেশের আলোচনার বিষয় যা আমাদের দেশজ সম্পদ রক্ষা, জাতীয় আয় বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি পরিবেশ রক্ষায় বিশেষভাবে ভুমিকা রাখবে।

১,৯৮০ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “গার্হস্থ্য পরিবেশ একটি পৃথক বিষয় ও পরিবেশ রক্ষায় অবদান”

  1. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    অনেক দরকারী একটা পোষ্ট। আমি আমার বাবার বাসার ছাদে একটা বাসা করেছিলাম, যদিও এতো কিছু না বুঝেই। বাসার ফ্লোর প্ল্যানটা পুরা আমার নিজের করা ছিল। ডিজাইন করার সময় আমার আথায় ছিল কয়েকটা ব্যাপার, যেমনঃ
    ১। প্রচুর আলোবাতাস খেলা করবে- আলহামদুলিল্লাহ আমার বাসাতে আলো বাতাসের কোন অভাব নাই। দিনের বেলাতে বৈদ্যুতিক লাইট জালালে সেতা দেখা যায় না প্রাকৃতিক আলোর জন্য। কেউ হয়তো বিশ্বাস করবে না, এই ঢাকা শহরে ইলেকট্রিসিটি চলে গেলে আমার বাসাতে তেমন কোন সমস্যাই হয় না।
    ২। সামনে সবুজ থাকবে- আমার বাসার সামনে ছোট একটু বাগানের মত করেছি আর ছাদের উপরে ঢালাও মাটি ফেলে দিয়ে করেছি সবজির ক্ষেত। পরিতৃপ্তির সাথে বলছি, আমার বাজার থেকে অন্তত দৈনন্দিন সবজি কিনে খেতে হয় না। আমার তিন বছরের মেয়ে যখন কোনটা কন সবজি গাছ তা সনাক্ত করতে পারে বা বাসার সামনে উঠোনে খাবার ছিটিয়ে দিয়ে ভিড় করে থাকা পাখিদের সাথে খেলায় মেতে উঠে আর ফুল গাছগুলোকে নেঁচে নেঁচে গান শুনায়...মনে মনে একট হলেও শান্তি পাই, পরবর্তি প্রজন্মের জন্য সামান্য কিছু দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা তো অন্তত করে গিয়েছি।
    ৩। একটা ছোট জলাধার- কনস্ট্রাকশনের সময় ইট ভেজানোর জন্য একটা জলাধার তৈরী করা হয়েছিল সেটাকে মেরামত করে নিয়েছি পরবর্তিতে। উদ্দেশ্য ছিল, সাতার না জানাতে নিজের জীবনের ষোল আনাই বৃথা হওয়াতে ওটাতে মেয়েকে সাতার শেখাবো। বৃষ্টির পানি এতো সুন্দর ধারন করে ওটি, যে গাছে পানি দেওয়া সহ টুকটাক কাজ গুলো হওয়ার পরও অনে...ক পানি অপচয় হয়, ফেলে দিতে হয়। মাসুদের এই লেখাটি পরে মনে হচ্ছে এই পানিটুকু কাজে লাগানো যেতেই পারে।
    ৪। কাঠের বিকল্প- কিছুটা গর্বের সাথেই বলছি আমার বাসাতে এক চুল পরিমানও কাঠ আমি ব্যাবহার করিনি। দুইটা কারনে করিনি, এক হচ্ছে, কাঠ ইস্ত্রী নিয়ে আমার খুবই খারাপ অভিজ্ঞতা আছে। দ্বিতীয়তঃ আমি পরিবেশ নিয়ে এক আধটু ভাবি মাঝে সাঝে। অবাক হোচ্ছ? তা কি করে সম্ভব? দরজাতে তো অন্তত লেগেছে! নাহ, আমার বাসার দরজা গুলো স্টিলের!!! আলী বাবা সিকিউরিটি দোর্স নামে এক কম্পানী আছে যারা এমন দরজা বাজারজাত করছে। অবশ্য দেখে বোঝার কোন উপায়ই নাই যে এগুলো কাঠের না।
    ৫।আমার এবং আমাদের এই ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দা রা তাদের বাসার পঁচনশীল বর্জ্য ছাদে নির্দিষ্ট একটা বিরাট বালটিতে জমা করে, যেটা গাছে জৈব সার হিসেবে ব্যাবহার করি আমরা।
    ইচ্ছা ছিল সৌর বিদ্যুত স্থাপন করার, কিন্তু কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলে দেখেছি, সত্যি বলতে কি, ঠিক পোষানো যাবে না। তবে আমার মনে হয় কিছু কিছু বিষয়ে আমরা যদি একটু সতর্ক হই, আমরা সত্যি আমাদের পরবর্তি প্রজন্মের কাছে একটা বাসযোগ্য পরিবেশ রেখে যেতে পারি...এখনো সময় আছে মনে হয়।
    null


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন
    • মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

      ভাইয়া দুতি সময় পানি একটু বেশি অপচয় হয় ১। অযু ও দাত ব্রাশ করার সময় ২। মটর দিয়ে ছাদে পানি তোলার সময়। আমাদের কর্তব্য দাত ব্রাশ করার সময় নল বন্ধ রাখা এবং অযু করার সময় পানির গতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা। প্রতিবার অযু করার সময় ৫ হতে ৬ লিটার পানি অপচয় হয়। মটর দিয়ে পানি তোলার সময় লক্ষ রাখতে হবে কত মিনিটে পানির ট্যাংক সম্পুর্ন ভর্তি হয় ঠিক তত মিনিট পর মটর বন্ধ করতে হবে।

      জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    চমৎকার বিষয় ও লেখা মাসুদ। ধন্যবাদ, আমাদের এ নিয়ে সচেতন করার জন্য। সত্য হলো, এসব বিষয় অল্পবিস্তর আমরা সবাই জানি। কিন্তু পালন করি না, মানি না। পানি ও বিদ্যুতের অপচয় কমানো, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা- এ বিষযগুলো নাগরিক জীবনে কি যে জরুরি হয়ে উঠেছে তা আজকের ঢাকা-বাংলাদেশের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। ঢাকা শহরে এখন গভীর নলকূপে পানি পেতে নাকি ৪০০ মিটারের বেশি গভীরে যেতে হয়! সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার এই দেশ, ৬০০ কোটির বেশি মানব সন্তানের এই বিশ্বকে আমরা বসবাসের অযোগ্য রেখে যাচ্ছি। পরের প্রজন্ম গালি ছাড়া আমাদের স্মরণ করবে না।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. মাসুদুর রহমান (৯৬-০২)

    কারেন ক্রিসটেনসন এর বই হতে অনুপ্রাণিত হয়ে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বই লেখার ইচ্ছা আছে। তাই আমি প্রায় ১ বছরের অধিক সময় ধরে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমার পরিকল্পনা এবং সংগৃহিত তথ্যের অনেক ছোট একটি অংশ। তারপর মনে হচ্ছে অনেক বড় হয়ে গেছে। তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি আমার একার পক্ষে এই বই লেখা সম্ভব না। আমি শুধুমাত্র সম্পাদনার কাজ করতে পারি। কিন্তু এর জন্য অনেক সময় ও লোকবল প্রয়োজন।

    জবাব দিন
  4. সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

    মাসুদ, তোমার এই ক্ষেত্রে আগ্রহ আছে বলে একটা কার্টুন এ্যানিমেশন ভিডিও এর লিঙ্ক দিচ্ছি। দেখতে পারো। আমার মেয়েকে এটা দেখিয়ে বেশ ভালো প্রভাব ফেলতে পেরেছি। পারলে "school house rock" নামের এই কার্টুন সিরিজটা যোগাড় করে নিতে পারো। আশা করি ভালো লাগবে। কতখানি মজার আর সহজ করে পৃথিবীর শক্তি রক্ষার বিষয়গুলো তুলে ধরেছে...আরো একটা কার্টুন শো ছিলো, captain planet নামে, যেটি খুব সম্ভব ইউ এন ও এর পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরী হয়েছিলো। সেখানেও অনেক সুন্দর করে জিনিসগুলো উপস্থিত করা হয়েছিল।
    http://www.youtube.com/watch?v=jkcDOpp0Dps


    You cannot hangout with negative people and expect a positive life.

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : সাবিহা জিতু (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।