নাটিকা : চোথাকন্যা

চরিত্র:
———
বড়া ল্যাগার — নায়ক
ছোট ল্যাগার — বড়া ল্যাগারের চ্যালা
মিলি — নায়িকা
এবং মিলির প্রেমিক ।

প্রথম দৃশ্য:
————
(স্থান বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে।নায়ক বড়া ল্যাগার ছোটা ল্যাগারকে নিয়ে সিগারেট খাচ্ছে।এমন সময় নায়িকা মিলি পাশ দিয়ে যাবে)

বড়া ল্যাগার – কি সুন্দরী,একা নাকি?
মিলি – না,সাথে স্যান্ডেল ও আছে..কেন? কোন দরকার?
বড়া ল্যাগার – না মানে বলতে চাইতেসিলাম ..স্যান্ডেল তো থাকলই…লগে আমরাও একটু থাকি?
মিলি – শয়তান…তোদের ঘরে কি মা-বোন নেই?
ছোটা ল্যাগার: আবে হালায় ঘরই তো নাই..হলে থাকি।
মিলি: (কি বলবে বুঝতে না পেরে)শয়তান…তোদের হলে কি গার্ড নেই?
বড়া ল্যাগার: থাকবে না ক্যান?কিন্তু হলের গার্ডের সাথে তোমার কি দরকার!!
মিলি: (রাগান্বিত)না না,আমার কি দরকার!কিন্তু তোমরা কারা ?কি চাও?
ছোটা ল্যাগার: আরে চেইতো না…আমরা হইলাম গিয়া ল্যাগার পার্টি।তুমি কি মনে করছ তোমার লগে আমরা পীরিত করতে আসছি?
মিলি: ল্যাগার!!! কি চাস তোরা আমার কাছে?
ছোট ল্যাগার:(রেগে গিয়ে) আরে আবার তুই তোকারী কর ক্যান??
বড়া ল্যাগার: আরে ব্যাটা,থাম থাম।(মিলির দিকে তাকিয়ে)শুনছি তোমার কাছে নাকি বহুত ভালা ভালা চোথা আছে…..
মিলি: হ্যা,আছে।তো ?
বড়া ল্যাগার : ভাল জিনিস সবাইরে দিয়া খাইতে হয়,জানো না সুন্দরী?
মিলি : ছেড়ে দে শয়তান…তোরা আমার মন পেলেও চোথা পাবিনা ।

(বলে মিলি তাড়াতাড়ি চলে যাবে।)

বড়া ল্যাগার : (দাত কিড়মিড় করতে করতে) সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কত ডিগ্রীতে ব্যাকা করতে হয় তা এই বড়া ল্যাগারের ভালই জানা আছে।

দ্বিতীয় দৃশ্য
————

(স্হান লাইব্রেরী।মিলির সাথে বসে তার হাফলেডিস প্রেমিক a.k.a. জাতে আতেঁল,তালেও আতেঁল)

মিলি – জানো,আজকে কি হয়েছে?
প্রেমিক – কি গো?
মিলি – আরে আজকে পথের মধ্যে দুইটা ল্যাগার না…
(কথা শেষ হয় না …প্রেমিক মিলিকে জড়িয়ে ভয় পাওয়া গলায় ..)
প্রেমিক – বলো কি ল্যাগার !!
মিলি – (বিরক্ত হয়ে ) ওকি ,তুমি ভয় পাচ্ছ ক্যান?
প্রেমিক – না,না তুমি জান না…চোথার জন্য ওরা যা খুশি তাই করতে পারে ।
মিলি – করে তো নাই…তুমি এইরকম করছ কেন ।
প্রেমিক – (একটু সোজা হয়ে) ও তাই তো..(বুকে ফুঁ)..হ্যা বল তারপর।
মিলি – তারপর আর কি…চোথার জন্য আমাকে যা না তাই বলল !!
প্রেমিক – (বড় বড় চোখে )তুমি কি করলে ?
মিলি – কি করব? ঝাড়ি মেরে চলে এলাম…ইচ্ছে করছিল দুটোকে মেরে…
প্রেমিক – (ভাব নিয়ে) মারনি!!তুমি ওদের মারনি?
মিলি (একটু অবাক হয়ে)…কেন,কোন অসুবিধা?
প্রেমিক : অসুবিধা না?আমি থাকলে তো দিতাম একদম নাকশা ফাটায়া…পিটায়া….
মিলি – থামো,থামো…বাব্বাহ…খুব সাহস দেখছি…
প্রেমিক – ঠিকই তো…পেতাম একবার সামনে..দেখিয়ে দিতাম….
মিলি – কিন্তু একটু আগে তো নাম শুনেই আঁচলের তলায় পালাচ্ছিলে..
প্রেমিক – (লজ্জা পেয়ে…) ওটা তো একটা অভিনয়..তোমার কাছাকাছি থাকার জন্য..
মিলি – হয়েছে হয়েছে…আর অভিনয় করতে হবেনা…সামনা সামনি দেখা হলেই বুঝবো কত ধানে কত চাল।

তৃতীয় দৃশ্য :
————

বড়া ল্যাগার – কিরে ,তোকে যে মিলির নাম্বার যোগাড় করতে বলেছিলাম,করেছিস?
ছোটা ল্যাগার – না বস,তবে ওর দাদীর নাম্বার যোগাড় করেছি।
বড়া ল্যাগার – আবে..তোকে ওর দাদীর নাম্বার যোগাড় করতে কে বলল?
ছোটা ল্যাগার – বস,আপনিই না বলছিলেন ওর মা,বাপ,দাদা- দাদীসহ চৌদ্দগুষ্ঠির ফোন নাম্বার দিতে?
বড়া ল্যাগার – শালার ল্যাগার গুলাকে নিয়ে কাজ করতেও প্রবলেম…মাথায় কিচ্ছু নাই। যাই হোক কালকের মধ্যেই মিলির মোবাইল নাম্বারসহ পিন কোড,পাক কোড…না থাক…শুধু মোবাইল নাম্বার টা আমাকে দিবি..ওকে?

(এমন সময় প্রেমিককে নিয়ে মিলির প্রবেশ…)

বড়া ল্যাগার – আরে মিলি যে…তোমার কথাই হচ্ছিল।
মিলি -(রুঢ় গলায়) ..কি নিয়ে কথা হচ্ছিল জানতে পারি?
বড়া ল্যাগার – অবশ্যই অবশ্যই….তা সেদিনের ব্যাপারে তো কিছু বললে না…
মিলি – দেখুন,আমাকে এভাবে অযথা ডিসটার্ব করবে না…তাছাড়া আজকে কিন্তু আমি একা নই…সাথে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে..ও আজকে আপনাদের এমন প্যাদানী দেবে…

(হঠাৎ প্রেমিক মিলির মুখে হাত চাপা দিয়ে না সূচক মাথা নাড়ে)

প্রেমিক – মিলি আমি একটু টয়লেটে যাব?
মিলি – কি???????
প্রেমিক – কি করব বল?প্রয়োজনটা আর্জেন্ট…ভাইয়া যাই?

(বলেই প্রেমিক দৌড়ে পালাবে।)

বড়া ল্যাগার – হা হা হা …এইগুলা কি নিয়ে ঘুর মিলি?আশেপাশে এত হ্যানছাম হ্যানছাম গাইজ থাকতে তোমরা এইগুলা কি দেইখা পছন্দ কর দেখি বলতো…
মিলি – দেখুন,আমার প্রচন্ড মাথা ধরেছে…আমাকে যেতে দিন প্লিজ।
বড়া ল্যাগার – আরে শিউর শিউর…আগে পালাইল যে ওই লেডিস টারে সাইজ করি ,এরপর তোমার সাথে বাকি কথা…

(মিলি চলে যাবে)

বড়া ল্যাগার – চোথার কথাটা মাথায় রাইখো কিন্তু….
তারপর ছোটা ল্যাগারের দিকে ফিরে..
– ওই…শালারে ধইরা আনতো যা…..

চতুর্থ দৃশ্য:
———–
(স্হান ক্যাফের সামনে ।মিলি ও বড়া ল্যাগার আবারও মুখোমুখি)

বড়া ল্যাগার – মিলি ,এই মিলি।
মিলি – উফফফফ…আবার আপনি!
বড়া ল্যাগার – আরে শোনোইনা…
মিলি – আপনি বারবার কেন আমাকে ডিস্টার্ব করছেন বলুন তো…স্টুডেন্টস এ গেলেই তো আপনি দুনিয়ার সব চোথা পাবেন!
বড়া ল্যাগার – আরে রাখো তোমার স্টুডেন্টস…..তোমার যেই ফ্রেশ চোথা…সেইটা এরা কই পাইব?তুমি যিরাম সুন্দর..তোমার চোথাও সিরাম জোস…স্টুডেন্টস এর মামা যিরাম কাইল্যা,হালার চোথাও কাইল্যা..কোন লেখাই ঠিকমত বুঝা যায়না। আইচ্ছা যাউজ্ঞা…..আজকে তোমার জন্মদিন না?
মিলি – ওমা,আপনি জানলেন কিভাবে?
বড়া ল্যাগার – জানি জানি….তোমার সবই আমাকে জানতে হয়…আমি তো একবার ভাবছিলাম..একটা ব্যানার লাগায়ে দিব গেটের সামনে…বড় করে লেখা থাকবে..আজকে মিলির জন্মদিন…নিচে..ছোট্ট করে..সহযোগিতায়..উদ্ভাস।
মিলি – না না..এসব পাগলামী করতে যাবেন না..
বড়া ল্যাগার – আরে তোমার জন্য আমি সব করতে পারি…বাদ দাও। দেখ তোমার জন্য কি এনেছি?
মিলি – কি?
বড়া ল্যাগার – এই যে দেখ..

(একটা প্যাকেট বেরোবে।প্যাকেট খুলতেই আনন্দে মিলি চিৎকার দিয়ে উঠবে..)

মিলি – ওমা, সেনজেলের বই !!
বড়া ল্যাগার – হ্যা…আজকালকার চোথা বুঝছো..ভালো কোন বইয়ের রেফারেন্সই থাকেনা…চোথার মান কইমা যাইতেছে…ল্যাগার হইলে কি হইবো…জিনিসগুলা আমি ফিল করি বুঝছো…

(এমন সময় মিলির প্রেমিক আসবে..)

প্রেমিক – মিলি,মিলি..

(বড়া ল্যাগারকে দেখেই ভয়ে হ্যান্ডসআপ পজিশনে চলে যাবে)

বড়া ল্যাগার – দেখছ..দেখছ অবস্থাটা। আরে হালারে তো ডাইনিংয়ে মেসবয়ের কামে লাগায়া দেওয়া উচিৎ।
মিলি – কি বলতে এসেছ তুমি?
প্রেমিক – মিলি….টয়লেট…
মিলি – তো আমাকে বলতে এসছে কেন?
প্রেমিক – যাই?? ভাইয়া যাই??

(বলে আবার দৌড়ে পালাবে…..)

শেষদৃশ্য :
———-
(স্থান লাইব্রেরী।আবারও মিলি বসা তবে এইবার সাথে আছে বড়া ল্যাগার)

বড়া ল্যাগার – বুঝছো মিলি…খালি আঁতেল হয়ে থাকলে কোন কাম হয়না….
মিলি – হ্যাঁ,বলছে তোমাকে..
বড়া ল্যাগার – আরে তোমার ওই হাফলেডিসটারেই দেখনা…তবে হ্যাঁ..আঁতেল হলে তুমি অনেকক্ষন টয়লেটে থাকতে পারবা এইটা ঠিক।
( হাসি)
মিলি – তবে যাই বলো…তোমার এই টার্মের পর টার্ম ল্যাগ খাওয়াটা কিন্তু আমার মোটেও ভাল লাগেনা…
বড়া ল্যাগার – আরে ল্যাগ তো খাইতাম সিরাম কোন চোথা পাইনাই বলে…আর এখন তো স্বয়ং চোথাকন্যাই আমার হাতে…..এইবার দেইখো…ফাইনালে আমি জাষ্ট ফাডায়ালামু…

(এমন সময় ছোটা ল্যাগার এর প্রবেশ…)

ছোটা ল্যাগার – বস, আমার ক্লাস টেষ্টের মার্ক দিসে।
বড়া ল্যাগার – কত পাইছস?
ছোটা ল্যাগার – জিরো বস।
বড়া ল্যাগার – বুঝছি…তোরও আমার মত ভাল চোথা লাগব…চলতো দেখি….

(শেষ)

৫,৪৮৩ বার দেখা হয়েছে

৬৩ টি মন্তব্য : “নাটিকা : চোথাকন্যা”

  1. রকিব (০১-০৭)

    কামরুল ভাই এইটা নিয়া একটা নাটক বানাইলে আমারে ছুডু ল্যাগারের চরিত্রটা দিয়েন; আর বইন্য ভাইরে বড় ল্যাগার।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    আজকে মিলির জন্মদিন…নিচে..ছোট্ট করে..সহযোগিতায়..উদ্ভাস।

    :)) =)) :pira:

    বন্যকে পুরা পাকা মাল হওয়ায় অভিনন্দন, সহযোগিতায়..উদ্ভাস। 😀


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. টুম্পা (অতিথি)

    :khekz: :khekz: জটিল জটিল!! সেইরকম হইছে! :clap:
    পুরা মনে হচ্ছিল অডিটোরিয়াম এ বসে স্টেজ পারফরমেন্স দেখতেছি।
    বন্য, তুমি তো কঠিন বস পাবলিক রে ভাই!! :boss:

    নিচে..ছোট্ট করে..সহযোগিতায়..উদ্ভাস।

    সোহাগের সাথে দেখা হলে বলতে হবে... 😛

    জবাব দিন
  4. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বন্য মনে হয় পোস্ট দিয়াই ল্যাগারের ডরে প্রেমিকারে ফালাইয়া টয়লেটে ঢুকছে!! ওরে কেউ বড়নাডা আগাইয়া দাও। আরে বেটা ডরাছ ক্যান, আমরা আছি না!!

    ;;; ;;; ;;;


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  5. বন্য (৯৯-০৫)

    যারা মন্তব্য করেছেন তাদের সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।আসলে আমার এখন নেট নাই....তাই মাঝে মাঝে পোষ্ট দিচ্ছি শুধু সিসিবির সাথে থাকার জন্যই..সবাই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

    আর অনেক টার্ম মনে হয় অনেকে বুঝে নাই..পরে অবশ্য কেউ না কেউ মন্তব্যে ক্লিয়ার করেছে..তাদেরকেও ধন্যবাদ।একটা নির্ঘন্ট দেওয়া উচিৎ ছিল...তবে আমি জানতাম চোথা,ল্যাগার এই টার্মগুলা সব ভার্সিটিতেই আছে..সেই আন্দাজেই লিখেছিলাম..যাইহোক দুঃখিত এবং ধন্যবাদ সবাইকে আবারও।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।