বাণী চিরন্তণী-১

ছোটবেলায় আমাদের বাসায় ইত্তেফাক রাখা হত।এখন যেমন পেপার খুলেই সরাসরি খেলার পাতায় চলে যাই তখন সেই রকম ছিলনা।ইত্তেফাকের দুটি জিনিস আমার জন্য বরাদ্দ থাকত-একটা হল আমার নিজের আগ্রহের…টারজানের কার্টুন,আরেকটা আমার বাবা কর্তৃক বরাদ্দকৃত…বাণী চিরন্তনী।বাবা এই জন্য আমাকে একটা রুল টানা খাতাও কিনে দিয়েছিলেন প্রতিদিনকার বাণীগুলো লিখে রাখার জন্য।তখন অবশ্য এইসব বাণী-টাণী মাথায় ঢুকত না…লিখতে বলেছেন,তাই লিখতাম।কিন্তু এর ফলে যা হল,আমার বাণী পড়ার অভ্যাসটা চিরস্থায়ী হয়ে গেল।

এখনও আমি কোথাও বাণী দেখলেই টুক করে পড়ে নেই…..এইভাবে অনেক বাণীই মনে দাগ কেটেছে খুব গভীরভাবে,আবার অনেক ফাউল বাণীও পেয়েছি..যেমন,অবিস্মরণীয় গাইডের লেখক এম. এ. ছালাম সাহেবের বাণী-
“আমি এমন কি করলাম যার জন্য এদেশর মানুষ আমাকে আজীবন মনে রাখবে!!”

যাই হোক,মুখ থাকলেই বাণী দেওয়া যায়…কিন্তু মানুষ যখন নিজের অভিজ্ঞতা থেকে কোন একটা কথা বলে,সেটার মত ধ্রুব সত্য খুব কম জিনিসই হয়..এইটা বেশি টের পাই পরীক্ষার সময়..সময়ের এক ফোঁড়,অসময়ের দশ ফোঁড়,time & tide,wait for none…এইসব প্রবাদের মাধ্যমে।

বাণীর যে জিনিসগুলো আমাকে টানে তা হল এর সার্বজনীন দিকটি..এটি কখনই কোন গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়..এবং প্রায় প্রত্যেকটি ব্যাক্তির ক্ষেত্রেই এই কথাগুলো প্রযোজ্য।আর দ্বিতীয়ত হল,মানুষের অভিজ্ঞতার সংক্ষিপ্ততম প্রকাশ এবং এটাকেই আমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।সেই সাথে অবশ্য মাঝে মাঝে অণূপ্রেরণার বিষয়টিও কাজ করে।

অনেক বড় ভুমিকা দিয়ে ফেল্লাম।এইবার পাঁচটি বাণী দিয়ে শেষ করছি…এবং এই পর্বের বাণীগুলো কম-বেশি সাফল্য বিষয়ক….

১.সাফল্য হচ্ছে ফুটবলের গোলের মত…যেখানে বাকি সবকিছুই ধারাভাষ্য – ব্রায়ান ট্রেসি

২.কেবলমাত্র তখনই তুমি সফল হবে,যখন কেউ তোমার উপর বিশ্বাস রাখতে পারবে না,তখনও তুমি যদি তোমার উপর বিশ্বাস রাখতে পার – সুগার রে রবিনসন

৩.সাফল্য একটি মইয়ের মত এবং কেউ কখনই পকেটে হাত রেখে মইয়ে উঠতে পারেনি- জিগলার

৪.তোমার যদি কোনো সমালোচক না থাকে,তবে জেনো,তোমার কোনো সাফল্যও নেই-ম্যালকম ফ্রোবেস

৫.কোনো কিছুরজন্য চেষ্টা করে বিফল হওয়াকে আমি নিচেষ্ট থেকে সফল হওয়ার চেয়ে প্রাধান্য দেই- রবার্ট শুলার

এইবার একটা বোনাস :

“Don’t dream it. Be it!” – Richard O’brian

৪,৫৮৩ বার দেখা হয়েছে

৪০ টি মন্তব্য : “বাণী চিরন্তণী-১”

  1. শার্লী (১৯৯৯-২০০৫)

    আমার আব্বু ক্লাস সেভেনে আমাকে প্রথম যে চিঠিটা লেখেন তাতে একটা কথা লিখেছেন। সেই কথাটা আমার জীবনের শ্রেষ্ট বাণী হিসেবে আমি আজও মানি। বাণীটা হল-"সজরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহাইবা তাহাই সয়"। আর নিজের জীবন থেকে শীক্ষা নিয়ে আমি একটা কথা সবস্ময়ই বলি, জানিনা এটা কতটা বাণী, কিন্তু এটা যে একটা উপলব্ধি তাতে কোন্সন্দেহ নাই। কথাটা হল-"তুমি ততটুকুই সৌভাগ্যবান, যতটুকু তুমি মনে কর আর ততটাই দুর্ভাগা যতটা নিজেকে তুমি মনে কর"।

    জবাব দিন
  2. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহায় তাহাই সয়”

    ঠিক একই বাণী আমার আব্বার কাছ থেকে অসংখবার শুনছি।আরেকটা বাণী উনি দেন-
    "কাঁটার মুখ চোখাইয়া দেওন লাগেনা 😮 "(এইটার ভাবার্থ হইল-যার প্রতিভা আছে এম্নিতেই সেটা প্রকাশ পাবে,কাঁটার মুখ ত চোখাই থাকে তাইনা :)) )

    জবাব দিন
    • বন্য (৯৯-০৫)

      আমার আব্বা আমারে একবার বলসিলেন..
      আহার.নিদ্রা,ভয়
      যত করে তত হয়

      সেইটা একদিন কথায় কথায় আমার রুমমেট মইনুলরে বলাতে ও সেইটারে বানাইল...

      আহার.নিদ্রা,ভয়
      যত করে তত হয়
      না করলে ক্ষতি হয়
      বেশি করা উচিৎ নয়
      পরিমিত করতে হয় 😡 😡

      জবাব দিন
  3. কামরুল হাসান (৯৪-০০)

    আমাদের ভুগোলের নুরুল হোসেন স্যার সব সময় বলতেনঃ
    দুনিয়ায় দুই ধরনের মানুষ আছে, একদল ভালো আর একদল ক্যাডেট। 😛


    ---------------------------------------------------------------------------
    বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
    ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

    জবাব দিন
  4. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)

    প্রকৃতি শুন্যস্থান পছন্দ করেনা,তাই
    স্ত্রী কিংবা গার্লফ্রেন্ড থেকে দূরে থাকা উচিৎ না-মহামতি আব্রাহাম খোরশেদ লিংকন। :khekz: :khekz:
    এইটা আমার এক ফ্রেন্ড আমাদের মেইন দড়জায় লাগায় রাখছে।প্রতিদিন বাসা থেকে বের হওয়ার সময় চোখে পড়ে :goragori:

    জবাব দিন
  5. আব্দুল্লাহ্‌ আল ইমরান (৯৩-৯৯)
    খালি কলসি বেশি বাজে” : ফককের বাংলা শিক্ষক আক্কাস আলী

    স্যার বুঝতে পারেননাই আপনি খালি কলসি না,কিছু মনে কইরেননা স্যার মুরুব্বি মানুষ ! বরং আপনি মোড়ক উন্মোচন করেন আর খালি করেন :grr: :khekz: :goragori:

    জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    "যার লাগি মজে মন
    কিবা হরি কিবা ডোম"

    (নসুতে উড়াধুড়া সুন্দরী এক তন্বীর সাথে মৈনাক পর্বত সাইজের গরিলা মার্কা গান্ধা এক পোলারে দেইখা আমাদের চাপা উসখুশ শুইনা পার্ট টাইম নাটক শিক্ষক ইসরাফীল শাহীন স্যারের ডায়ালগ-বাংলা সাহিত্যের কই জানি এইটা আছে)

    জবাব দিন
  7. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    তিরিশ বছর বয়স তোমার ভাবছ মনে মনে
    ষাট বছরের পিতা থাকতে আমি মরব ক্যানে...

    (জর্জ বেস্টের মৃতদেহের সামনে তার পিতার ছবির নিচের ক্যাপশন-মূল উৎস লোকজ বাংলা সাহিত্য)

    জবাব দিন
  8. টিটো রহমান (৯৪-০০)

    খব ভালো পোস্ট হইছে.অবিস্মরণীয় সালাম সােহেবর কথা মনে করাইয়া দিলি.......

    এবার বন-বাদারের দুয়েকটা বাণী শোনা...... :grr:


    আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আব্দুল্লাহ (১৯৯৩-১৯৯৯)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।