স্মৃতিচারণ

রাত ১১.১৫।

করিডোরের লাইট ছাড়া সব বাতি অফ হয়ে গিয়েছে আগেই।ডিউটি মাষ্টার মনে হয় এখন ঘুম পাড়ানী মাসীর সাথে ব্যস্ত। দরজা দিয়ে পেঙ্গুইনের মত আস্তে মুখটা বের করে চারপাশের পরিস্থিতি যাচাই করে টুক করে ডেস্কটা নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।

গন্তব্য বাথরুম…
দৃশ্যমান উদ্দেশ্য পড়ালেখা করা… :-B

রাত ১১.২০।

বাথরুমে গিয়ে দেখা গেল আমার আগেই আরও অনেক বান্দাই সেখানে ডেস্ক নিয়ে হাজির।মোটামুটি হুলস্থুল ব্যাপার…পড়াশোনার বিরাট তোড়জোড় শুরু হয়ে গেসে…ইশ্বরচন্দ্র নাকি স্ট্রিটল্যাম্পের আলোয় পড়েছিলেন,আর আমরা এযুগের ইশ্বরচন্দ্রের পুরা স্কোয়াড নেমে পড়ছি আজকে… জয় হো…. :ahem:

রাত ১২.৩০।

সব রেডি।হালকা প্রস্তুতি স্বরুপ এক দফা আড্ডা চলছে..একটু ফ্রেশ হয়ে নেওয়া আরকি…যদিও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে রাতের অনেকটুকু সময় ধরে শুধু ফ্রেশ হওয়াই চলবে।নোমানকে দেখা যাচ্ছে এক কোনে ধুমায়া অংক করতেসে…এক রাতেই শালা যে বাজিমাত করে…আবার কতক্ষন পরে আইসা গল্পে তেলও দিয়া যাইতেসে….নাসিবুল মাম্মারে আজীবন প্রেপ টাইমেও ঘুমাইতে দেখলাম…উনিও নাকি আজকে ফাটায়া পড়বেন..ঘোর্কলির্কাল…কলির্কাল্কে একটু দুরে রাখার জন্য আমিও যোগ দিলাম…. 😀

রাত ১২.৩৫।

ব্যাপক উত্তেজনা।মাজহার কি একটা চাপা মারসে আর মতি সেইটা ধরে ফেলসে….শুধু ধরে ফেললেই হইত…নিজ দায়িত্বে সে আবার সব রুমে খবর দিয়া আসছে।জিহাদ এসে মাজহারের বাকি দায়িত্ব স্বেচ্ছায় নিজ কাধে তুলে নিল…আমার আমরা চারপাশে দাড়িয়ে সেই দায়িত্ব লাঘবের জন্য যে যতটুকু পারছি অবদান রাখছি… ;;;
হাসনাইন অবশ্য কিছুক্ষন পরপরই বিরক্তিকর গলায় বয়েজ বাদ দে বলছে..কিন্তু বাদ আর দেওয়া হচ্ছেনা… :hug:

রাত ১২.৪০।

চারদিকে শুনশান নীরবতা।ডিউটি মাষ্টার স্যার বাথরুমে উকি দিলেন…না কাউরে দেখা যাচ্ছেনা…অবশ্য তিনি জানেন,শয়তান সব তার দশহাতের মধ্যেই আছে…কিন্তু দশহাতের সেই দরজা পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছাটা তার আজ আর হলনা…থাক …ছেলেগুলা একটু মজা করুক….এই স্মৃতিগুলোই ছেলেগুলার একসময়ের সবচে বড় সম্পদ হয়ে থাকবে,তিনি জানেন… :hatsoff:

রাত ১২.৫০।

বাজার সরগরম।দোতলার রহমান আসছে ওদের হাউজে কে কেমনে একটু আগে স্যারের কাছে ধরা খাইল তার লাইভ প্রতিবেদন নিয়া…হাসতে হাসতে পিড়া যাইতেসি সবাই….প্রতিবেদন শেষ হওয়ার পর আচমকা নেক্সট আইটেম নিয়া আসল জিহাদ…নাহ,অনুষ্ঠানটা ভালই জমছে দেখা যায়…মাঝে অবশ্য স্লোগানও দেয়া হচ্ছে…আলম..আলম…. :awesome:

রাত ২.৩০।

আবারও সেমি-শুনসান নীরবতা…আসল বান্দারা এখনও টিকে আছে..নকল সবাই রণে ভংগ দিয়া ঘুমে ঘুমায়িত।নাহ..কালকে পরীক্ষাটায় যে কি হবে….ধুর প্রবলেম নাই,সকালে পিটিতে দৌড়ের সময় জুবায়েরের কাছে হালকা একটা মৌখিক কোচিং করে নিলেই হবে…মনে আসে,এক পরীক্ষার মাত্র ৫ মিনিট আগে হোসেন বিলাসী গল্পের সারমর্ম শুনে নিয়ে খাতায় ফাটায়া বিলাসীর চরিত্র লিখসিলো…. খালি হোসেনই না…পোলাপাইন বেশিরভাগই ইরাম…খালি একটা ক্লু পাইলেই ব্যাস..চারপাতা-পাঁচপাতা কোন ব্যাপার না….. B-)

যাইগা….ঘুমাই…. :grr:

এইবার ফাটাফাটি একটা ট্র্যাক : স্মৃতিচারণ by রাফা from album ক্রমান্বয় by ফুয়াদ

২,৮২১ বার দেখা হয়েছে

৪৬ টি মন্তব্য : “স্মৃতিচারণ”

  1. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    পরীক্ষার আগে ডাইনিং হল থেকে পরীক্ষার্থী হিসাবে চা পাওয়া যেত। আমরা বেশ ঘটা করে বাসা থেকে ফ্লাস্ক নিয়ে যেতাম। ফৌজদারহাট বাজার থেকে কিনে আনতাম বেলা বিস্কিট। ডিনারের পর বেশ জোস করে চা সংগ্রহ করতাম। লাইটস অফের পর হাউস মাস্টার চলে গেলে ঘটা করে পড়া শুরু হতো। রুমের জানালা-দরজায় কম্বল ঝুলিয়ে লাইট জ্বালিয়ে শুরু হতো পড়ার কাজ। প্রথমে আড্ডা, চাপাবাজি, চিপাবাজি (কাউরে কাউরে টার্গেট করে পঁচানো) শেষে হতো চা পান। চা শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টা পর দেখা যেত বড়জোর এক তৃতীয়াংশ টিকে আছে পড়ার জন্য!!

    কি মনে করাইলা বন্য ভাই........ :guitar: :guitar: :guitar:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  2. রাশেদ (৯৯-০৫)

    দোতালা আর তিনতলা সবখানের কাহিন মনে হয় এক 😀

    খালি তোর লেখায় নোমানের জায়গায় রহিম বাদশা, নাসিবুলের জায়গায় সাইমন সাহেব, মাযাহারের জায়গায় সরোয়ার, জিহাদের জায়গায় হাসান বা রহমান 😛

    আহারে রাতের এই পড়ার টাইম নিয়া কত যে তেলেসমতি কায়কারবার ছিল 😉


    মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

    জবাব দিন
  3. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    অসাধারণ। পাঁচ তারা দাগাইলাম। এই সময়গুলো খুব মিচ করি। তবে আমি কখনো বই খাতা লইয়া বাইর হইতাম না। পাঠাভ্যাসরত যোদ্ধাদের সাথে কিছু সুন্দর সময়ের অভিপ্রায়েই আমার গমন হত। তয় আমাগো পুলাপান বড়ই খারাপ, আমারে প্রায়ই বাইর কইরা দিত কারণ আমি থাকলে পড়ালেখা হয় না শুধু আড্দাই হয়। আপসুস।

    জবাব দিন
  4. লেখাটা পড়ে অনেক কথা মনে পড়ে গেল ভাইয়া। যদিও আমি কখনো টয়লেটে পড়িনি, অত বাজে গন্ধ সহ্য হত না। খুব ভোরে উঠে পড়তাম। ভোর বলতে এমনও আছে যে রাত ৩টার সময় ঘুম থেকে উঠে পড়েছি। ওই সময় লাইট জ্বালানো দেখে প্রায়ই স্যাররা প্রশ্ন করতেন। আমি বলতাম, "স্যার, আমি তো ঘুম থেকে উঠে তারপর পড়ছি, আমার তো ভোর হয়ে গেছে!"

    জবাব দিন
  5. ফাহাদ (২০০২-২০০৮)

    সব ঠিক ই ছিল কিন্তু ঘুমাইতে জাবার আগে জুনিওর গুলারে ভয় দেখান :goragori: র পানি দিয়া ভিজানর :gulti: কথা তা বলা হয় নাই। ফুয়াদ ভাই , জিহাদ ভাই , মতিউর ভাই র রেদয়ান ভাই এই কাজটাতে expert :clap: :boss: ছিল। আবার মাঝে মাঝে ২ তলার রাহমান ভাই, হাসান ভাই র নিচ তলার ইরফান ভাইএর দেখাও মিলত। :)) :)) আমার মনে আছে কারন আমার রুমেও ১ দিন হামলা চালাইছিল , ২য় বেদ এ ছিলাম বইল্লা বাইচ্চা গেছিলাম। বেচারা আশরাফ ১ম বেদ এ ছিল। :khekz: হতাথ মায রাতে উথে আমারে ঝারি মারা সুরু করছিল 😡 😡 অনেক বুঝাইয়া সান্ত করছিলাম। nxt weak এই জিহাদ ভাই র মতিউর ভাই ধরা খাইয়া গেছিল :goragori: :awesome: :awesome: :khekz: :khekz:

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : ফয়েজ (৮৭-৯৩)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।