আরেকজন হুমায়ূন

humayunahmed-1

হুমায়ূন আহমেদ । বাংলাদেশ, বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য নাম । প্রিয় অথবা অপ্রিয় যেটাই হোক না কেন, এ যাবত কালের সবচাইতে প্রভাবশালী লেখক। যার কলমের কয়েকটি আকিবুকিই অসংখ্য বই পড়ুয়া তৈরী করেছে। আমিও তাদের মধ্যে একজন।।
আমি মানি উনার লেখার গভীরতা তেমন ছিল না । পরবর্তীতে অন্যান্য লেখকের বই পড়ে মনে হয়েছে, হাতে গোনা কয়েকটা বই বাদে হুমায়ূন আহমেদ এর ভালো বই নেই বললেই চলে । কিন্তু উনার লেখার ধরণ প্রশংসার যোগ্য । কেননা তিনি বুঝেছিলেন রসিক বাঙ্গালী গুরুগম্ভীর কথার ধার ধারবে না । আর তাইতো তিনি মধ্যবিত্তদের সাধারণ জীবন যাপন এর চিত্র তুলে ধরেন অসাধারণ দক্ষতায় ।হিমু,মিসির আলি,মুনা,বাকের ভাই,তিথি সবাই মধ্যবিত্তদের প্রতিনিধিত্য করে । মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও তিনি বেশ সাবলীল ভাবে লিখেছেন বেশ কয়েকটি গল্প ও উপন্যাস ।আমার পড়া উনার কয়েকটি অসাধারণ বই-কোথাও কেউ নেই,অয়ময়,শ্রাবণ মেঘের দিনে, লীলাবতী মেঘ বলেছে যাব যাব শঙ্খনীল কারাগার , জোস্না ও জননীর গল্প ,নন্দিত নরকে , মধ্যান্ন,কবি ,এপিটাফ,সাজঘর ও অন্যান্য ।
তার এইসব ভিন্নধারার ও অদ্ভুত সব চরিত্র ও গল্পের কারনে এই বিশাল বই পড়ুয়াদের অধিকাংশই হচ্ছে কিশোর-কিশোরী আর যুবক-যুবতী। যেই সময়ে একটু ভুলেই বা পথ নির্দেশনার অভাবে এদের যে কেওই বিপথে চলে যেতে পারে,হতে পারে মাদকাসক্ত বা সন্ত্রাসী।কিন্তু আমি বা আমারা অনেক ভাগ্যবান। কেননা জীবনের ওইরকম জটিল সময়টা আমারা বুদ হয়ে ছিলাম উনার বইয়ের পাতায়। জ্যোৎস্না বিলাস,বৃষ্টি বিলাস,সমুদ্র বিলাস সহ নানা রকম ধারনার মাধ্যমে বিভিন্ন অনুভূতির সাথে করিয়েছেন পরিচয় ।বই পড়া যে দুনিয়ায় সবচাইতে সুস্থ বিনোদন,অসীম কল্পনার ভুবন যে বই পড়ার মধ্যেই নিহীত,সেইটা প্রথমে উনিই বুঝিয়েছেন ।
আজ এই মহান লেখকের ২য় মৃত্যু বার্ষিকী।উনার জন্য রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ।তবে কষ্ট হয় পরের প্রজন্মের জন্য, যারা বেড়ে উঠবে যান্ত্রিক ভাবে,ফেবু আর কম্পিউটার গেমস এর মোড়কে। ব্যাস্ততার বাস্তবে আবেগ তখন হয়ত হবে আরও সংকীর্ণ। যখন নতুন বইয়ের গন্ধ ঢাকা পরবে পি ডি এফ এ।
আর তাই আমার মনে হচ্ছে ‘আমাদের আরেকজন হুমায়ুন এর বড় দরকার।

২,২৬২ বার দেখা হয়েছে

১৭ টি মন্তব্য : “আরেকজন হুমায়ূন”

  1. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    একমতঃ হয়তো শ্রেষ্ঠ লেখকের তালিকায় তাকে স্থান দেওয়া নিয়ে ভয়াবহ বিতর্ক হবে, উনার লেখার মান নিয়ে কটু কথা চলতে পারে। এছাড়া উনার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে রসালো কথা তো আছেই। কিন্তু উনি টাকা উপার্জন করার ধান্দায় হোক, আর কল্যাণের লক্ষ্যেই হোক, উনার লেখা বইগুলো একটি চেষ্টা করে গিয়েছেঃ মানুষজন উনার বই খুলেছে, কিনেছে, পড়েছে অর্থাৎ মানুষজন বই পড়েছে। এখন গেমিং কনসোল, ফেইসবুক, দ্রুত গতির জীবনের ধাক্কায় বই কয়জন আর খুলে দেখে? দিনে দিনে পাঠকের সংখ্যা কমছে। কৈশোরের পড়ার অভ্যাস তৈরী করার জন্য উনার বইগুলো বেশ ভাল একটা প্লাটফর্ম। যারা সুনীল, শরৎ, শীর্ষেন্দু দিয়েই যাত্রা শুরু করেছে তারা (হয়তো) সৌভাগ্যবান। আমি এই দুই পথের কোনটাতেই যাই নি তবে বই পড়ার অভ্যাসটি মোটামুটি ধরে রেখেছি। মধুসূদনের মত ইংরেজী লেখায় আগ্রহ বেশী।

    দ্বিমতঃ কাগজের বইয়ের চাহিদা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার সময় হয়েছে প্রায় বহু বছর। গাছগুলোকে এবার ছাড় দেয়া দরকার। যদিও এরসাথে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা জড়িত। সীমিত বিষয় ছাড়া কাগুজে বইকে বিদায় জানানো উচিৎ। সমস্যাটা হলো, কাগুজের বই হোক বা হোক ই-বুক, আমাদের দেশে শুধু লিখালিখি করে পেট চালানো দায়। তাই কেউ এই পথে সহজে আসতে চায় না। ৯-৫টা চাকুরী করা আমাদের মাঝেও প্রচুর ভাল লেখক কিন্তু আছেন। তারা চাইলেই লিখতে পারেন। কিন্তু তাদের স্বপ্ন ফেইসবুকের স্ট্যাটাস, ও গন্ডায় গন্ডায় লাইক কামানো পর্যন্ত। ইউরোপ আমেরিকায় প্রচুর লেখক আছেন যাদের মূল পেশা ডাক্তারী, আইন, আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার কিন্তু অফিসের পাশাপাশি এক দুই পাতা করে লিখে বছর শেষে নামিয়ে ফেলছেন চমৎকার এক লোমহর্ষক থ্রিলার। আমাদের এই ফেইসবুক লেখকরা চাইলেই কাজটা করার চেষ্টা করতে পারি। তবে কথা হলো বই ছাপাতেও তো খরচ লাগে। সেই খরচের টাকা উঠানো, লাভে যাওয়া, পাবলিশারকে পটানো, ইত্যাদি হাজারো কাজ কেউ করতে চায় না। দিনের শেষে ঘরে এসে ফেইসবুকই ভরসা। আমার মতে আমাদের আরো একজন হুমায়ুন আহমেদ নয় বরং একাধিক লেখক লাগবে। যারা তাদের সখের লেখালেখির অভ্যাসটিকে আরেকটু উস্কে দিয়ে একটি বইয়ে রূপ দিবে। এক স্ট্যাটাসে হাজারখানেক লাইক পড়লে উনার লেখা বইয়ের হাজারখানেক পাঠক থাকা উচিৎ।

    পুনশ্চঃ গদ্য লেখার ক্ষেত্রে আরেকটু বড় হলে ভাল হয়। 🙂 :thumbup:


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন
  2. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    হুমায়ূন আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা, উনি অসাধারন কিছু বই এবং নাটক উপহার দিয়েছে। আমি অবশ্য তথাকথিত হুমায়ূন ফ্যান ক্লাবের সদস্য না। তার মৃত্যুবার্ষিকীতে নেগেটিভ কথা বলা শোভনীয় হবে না।

    তবে হুমায়ূন পাঠকদের ব্যাপারে আমার একটা অভিযোগ হলো এদের একটা বড় অংশ হুমায়ূনেই আটকে থাকে, বই পড়ার অভ্যাস বা পরিধি বড় করে না। জানি মন্তব্যটা বেশ জেনারাইজ হয়ে গেল তারপরো আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে কথাটা বলা।

    আর বর্তমান প্রজন্মের বই পড়ার অভ্যাসের ব্যাপারে একমত, ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল আর কম্পিউটারের যুগে বই বিমুখ যে প্রজন্ম তোরী হচ্ছে তাদের চিন্তা চেতনার পরিধি কতটুকু বিস্তৃত হবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান।

    পিডিএফ বা ই বুকের ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই, বই পড়াটাই মূল কথা। ই বুক রিডার বাঁ মোবাইলের ই বুক রিডার সফটওয়্যারগুলো বই পড়া অনেক কনভিনিয়েন্ট করে দিয়েছে। আমার নিজেরই মাঝে তিন-চার বছর বই পড়ার অভ্যাসটা চলে গিয়েছিল কিন্তু মোবাইলের কল্যানে সেটা আবার ফেরত এসেছে, হাজার হাজার পৃষ্টা বই এখন হাতের মুঠোয়, সবচেয়ে বড় কথা বই পড়ার জন্য আমার আলাদা কোন সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। যেকোন মুহুর্তে হঠাৎ অবসর পেয়ে গেলেই বই পড়া শুরু।

    পুনশ্চঃ মোকাব্বিরের মত আমিও বলবো, লেখা আরেকটু বড় হলে পড়ে পূর্ণতা পাওয়া যায়।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  3. হোসনে মোবারক (০৪-১০)

    আহসান ভাই, আমি যখন লিখতে বসি হুট করেই বসি। কাজেই গুছিয়ে লেখার অভ্যেস এখনো হয়ে উঠেনি। পরের বার অবশ্যই চেষ্টা করবো। আর আপনার কথার সাথে আমিও একমত হুমায়ুন পাঠকগন হুমায়ুন এর বাইরে যেতে পারে নি। তবে বেশীরভাগ পাঠকই হুমায়ুন এর হাত ধরে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে। এইটা তার বিরাট ক্রেডিট। আর যাই বলেন ভাই, কাগজের বইয়ের অন্য ফ্লেবার

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমে বিশাল একটা পাঠক শ্রেনী তৈরী হয়েছে এটা সত্য এবং এজন্য অবশ্যই তাকে ক্রেডিট দিতে হবে, কিন্তু এদের কত অংশ বাংলা সাহিত্যের পাঠক হয়েছে সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান তবে তার দায় কতটুকু হুমায়ূন আহমের উপরে পড়ে বাঁ আদৌ পড়ে কি না সে ব্যাপারে সন্দিহান।

      আর কাগজের বইয়ের ফ্লেভার সম্পূর্ণ আলাদা এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু ঐ ফ্লেভার পাওয়া থেকে বই পড়া মনে হয় বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমার মতে ইবুক ই বইয়ের ভবিষ্যত। কাগজের বইয়ের প্রোডাকশন খরচের কারনে এর দাম হু হু করে বাড়ছে, আবার ছাপানো বই থেকে প্রকাশকদের কাছ থেকে যথাযথ রয়ালিটি প্রাপ্তির ব্যাপারেও লেখদের অভিযোগের অভাব নেই, সেই সাথে সব জায়গায় বই এর সহজপ্রাপ্যতাও একটা ইস্যু। এসব সমস্যার দারুন সমাধান হতে পারে ইবুক। একটা ভাল অনলাইন পেমেন্ট ব্যবস্থা দাড় করাতে পারলে লেখকেরা সরাসরি বা কোন ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পাঠকদের কাছে তাদের বই পৌছে দিতে পারবে এতে করে একদিকে পাঠকেরা যেমন অনেক স্বল্প মূল্যে বই পাবে অন্যদিকে লেখকরাও বই বিক্রী থেকে আসা অর্থের মূল অংশটা উপার্জন করবে। আর তথাকথিত ফেসবুক প্রজন্মকে বই পড়ায় উৎসাহিত করতেও ইবুক দারুন ভূমিকা রাখতে পারে। এত কিছু বলার পরেও এটা বলবো এখনো কাগজের বই পড়ে আমি ইবুক থেকে অনেক বেশি তৃপ্তি পাই তবে ইবুক এ মুহুর্তে আমার বই পড়ার সময়, বইয়ের সংখ্যা এবং প্রাপ্যতাকে অনেক বেশি প্রসারিত করেছে।

      আশা করি আরো লেখা পাব তোমার কাছ থেকে, গোছালো বা আগোছালো বিষয়টা আপেক্ষিক, ওটা নিয়ে বেশি চিন্তা করো না।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
    • মোকাব্বির (৯৮-০৪)

      হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী টেকনোলজীরে সরাইতে গেলে খারাপ তো লাগবেই! 🙂


      \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
      অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

      জবাব দিন
  4. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    আমার মতে হুমায়ূন আহমেদ এর দুটো জিনিস খুব অসাধারণ ছিল- সেন্স অব হিউমার এবং পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা। সম্ভবত ব্যাপারটা পারিবারিক!
    বাকি আর কিছু না বলি...


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  5. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    হোসনে মোবারক তোমার লেখাটি ভালো লেগেছে।

    বছর খানেক আগে হুমায়ুন আহমেদ-কে নিয়ে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম, 'অতি দূর থেকে দেখা একজন হুমায়ুন আহমেদ।' ক্যাডেট কলেজ ব্লগ ও কয়েকটি অনলাইন পত্রিকায় লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিলো।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মোকাব্বির (১৯৯৮-২০০৪)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।