পথের প্যাচালী

প্যাচালী ১

আমাদের এস এস সি রেজিস্ট্রেশনের সময় একজন ভুল করে বাবার নামের জায়গায় নিজের নাম লিখে ফেলে। ভিপি স্যার অনেক ঝাড়ি দেয় এবং সব শেষে মজা করে বলে “এই রেজিস্ট্রেশনের কাগজটা যত্ন করে রেখে দাও, তোমার ছেলের রেজিস্ট্রেশনের সময় কাজে লাগবে।”

প্যাচালী ২

এডজুটেন্টে মেজর আজিজের বাচ্চা হওয়া উপলক্ষ্যে ডাইনিং হলে টি ব্রেকের সময় স্যারের তরফ থেকে মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয় ক্যাডেটদের জন্যে। টি ব্রেকের আগে এডজুটেন্ট স্যার আর ম্যাডাম আসে ডাইনিং হলে। টি ব্রেকের আগে আজিজ স্যার সবার উদ্দেস্যে বলে যে উনি যেন ভবিষ্যতে আর অনেক মিষ্টি খাওয়াইতে পারে সেই দোয়া করতে। এই কথা শুনে ম্যাডাম মনে হয় খুব লজ্জা পেয়েছিল।

প্যাচালী ৩

আমাদের হাউজের সাইফের একবার ইন্ডিয়া থেকে একটা চিঠি আসে। চিঠির মুল বক্তব্য ছিল “তোমার দাদা অনেক অসুস্থ”। সাইফ তো চিঠির আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারলো না। কারন ওর দাদা ওর জন্মের আগেই মারা গেছে। তবুও ও চিন্তায় পরে গিয়েছিল। পরে বের হয় যে চিঠিটা আসলে ক্যাডেট ইসহাকের (ডাক নাম সাইফ ক্যাডেট নাম্বার ৮৭৪), ক্যাডেট সাইফের (ক্যাডেট নাম্বার ৮৭৫) না।

প্যাচালী ৪

অঙ্কের একজন স্যার প্রায়ই রেগে গেলে বলতেন “তোরে বিলাকবোর্ড (ব্ল্যাকবোর্) ছুড়ে মারবো”। “ডাস্টার ছুড়ে মারবো” কে রেগে গেলে ” বিলাকবোর্ড (ব্ল্যাকবোর্ড) ছুড়ে মারবো” বলতেন।

প্যাচালী ৫

আমাদের কলেজ সুইমিং টিমের জন্য প্রথমে কোন কোচ ছিলনা। তখন কোচের দায়িত্ব পালন করতেন একজন স্যার। স্যার খুবই উতসাহের সাথে সেই দায়িত পালন করতেন। তিনি একবার আমাদের কিভাবে ডাইভ দিতে হয় দেখাচ্ছিলেন। স্যার ডাইভ দেয়ার পর অনেক্ষন পানির নিচে থেকে উঠেননি। অনেকক্ষন পরে উঠার পর বললেন “সরি আমার প্যান্টটা খুলে গেছিল পানির ধাক্কায়”।

প্যাচালী ৬

২১শে ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠানে কতিপয় ক্যাডেট অনুপুস্থিত ছিল। কিন্তু ৪-৫ জনকে স্টাফ ধরে এডজুটেন্টের কাছে নিয়ে যায়। অনুষ্ঠানের শেষে এডজুটেন্ট তাদের খুবই চমতকার একটা পানিশমেন্ট দেয়। প্রত্যেককে ৩০ মিনিট করে ২১শে ফেব্রুয়ারীর উপর উপস্থিত ভাষন দিতে হবে, এবং বাকিদের তা শুনতে হবে। ১ ঘন্টার প্রোগ্রাম ফাকি দিয়ে অপরাধীদের ২-৩ ঘন্টা ভাষন শুনতে হয়েছিল।

প্যাচালী ৭

আমাদের ব্যাচ ক্লাস ইলেভেনে জুনিয়র প্রিফেক্ট থাকা অবস্থায় একজন প্রিফেক্ট জুনিয়র ব্যাচের কাছে গুপ্ত প্রকাশনীর বই পায়। গুপ্ত প্রকাশনীর পাঠককে রুমে এনে পানিশমেন্ট শেষে স্টেটম্যান্ট লিখানো হচ্ছে। এমন সময় আমাদের সিনিয়র ব্যাচের একজন ভাইয়া রুমে খুশীতে প্রবেশ করে বলে ” নতুন জিনিস নাকি পাওয়া গেছে? তারাতারি দাও, আমার সিরিয়াল ১ নাম্বার।” উনি খেয়াল করে নাই যে, ক্লাস নাইনের ছেলেটা তখন ওই রুমে ছিল। পরে আমাদের প্রিফেক্ট আর টুয়েলভের ভাইয়াটা খুবই লজ্জা পেয়েছিল।

প্যাচালী ৮

আমাদের কলেজের স্টাফরা অনেক ব্যকরনহীন ইংরেজী বলত। কয়েকটা নমুনা দিলাম

” Why laugh?”

“I like you but discipline”

“Why late?”

একবার লেট করার কারনে এক ক্যাডেটকে একজন স্টাফ জিজ্ঞাস করল ইংরেজীতে “Why late?”

ক্যাডেট তখন ষ্টাফের মত ইংরেজ়ীতে উত্তর দিল ” Staff, I late, because I toilet.”

২,৩৪৯ বার দেখা হয়েছে

২৫ টি মন্তব্য : “পথের প্যাচালী”

  1. আদনান (১৯৯৩-১৯৯৯)

    লেখাটা সত্যি ভাল হয়েছে। কিছু কিছু ছোট ছোট ঘটনা আছে যা আসলে প্রতি কলেজেই কমন। তবে প্যাচালী ১ এর ভিপি স্যারের ঘটনাটা আর কোন কলেজে মনে হয় নাই হয়েছে।
    সুন্দর একটি লেখার জন্য বাহলুল্ কে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  2. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    সরি আমার প্যান্টটা খুলে গেছিল পানির ধাক্কায়

    :)) =)) =)) এত আনন্দ কোথায় রাখি :party: ???
    সত্যিই "দোজ ওয়ার দ্যা ডেজ, মাই ফ্রেন্ড"। আমার পেলে আসা হীরক সময়....।


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  3. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    বাহলুলের স্টাফদের ইংলিশ সংক্রান্ত অংশটা পড়ে এগুলা মনে পড়লো...

    ১ ফলইন এ দাড়ায়া পোলাপাইন কথা বলতেছে দেইখা ঝাড়ি, "dont be side talk"

    ২ একজনের সাথে ঝাড়িপট্টি নিচ্ছিলো জনৈক স্টাফ, সেসময় আরেকজন ক্যাডেট কথা বলতে গেলে সেই স্টাফের ডায়লগ, " i talk, he talk, then why you middle talk??"


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : জিহাদ (৯৯-০৫)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।