আমার প্রথম ই,ডি,

আমাদের কলেজে ইডি খাওয়ার ঘটনা খুব কম ছিল। খুব গুরুতর অপরাধ করলে ইডি ইসু করা হত। আমাদের ১৯৯৩ ইনটেকের সিলেট ক্যাডেট কলেজের অনেকে নাকি ২৫-৩০ টা ইডি খাইছে। কিন্তু রংপুরে আমাদের ব্যাচের কেউ মনে হয় ৫ টার বেশি ইডি খায়নি ৬ বছরে। অধিকাংশ ক্যাডেট ৬ বছর ইডি না খেয়েই ক্যাডেট কলেজ পার পেয়েছে। যেই সামান্য কয়েকজনের ইডি খাওয়ার সৌভাগ্য হয়, আমি ছিলাম তাদের মধ্যে একজন। শুধু তাই না, আমার প্রথম ইডি আমি খাই ক্লাশ ৯ এ। ৬ বছরে আমার কপালে জুটে মোট ২টি ইডি। আমি মনে হয় আমাদের ব্যাচের প্রথম ৩-৪ জন ইডিখোরের মধ্যে একজন ছিলাম।

আমার প্রথম ইডি খাওয়ার ঘটনাটা বলি। ঘটনাটা রিভার্স ওর্ডারে বললে মনে হয় বেশি ইন্টারেস্টিং হবে। কলেজ থেকে আমার আম্মার কাছে চিঠি আসে। চিঠির প্রথমেই যা লিখা ছিল তা ছিল অনেকটা এইরকম- “আপনার ছেলের কাছে অবৈধ জিনিস পাওয়া গেছে। আপনার ছেলেকে শেষবারের মত সতর্ক করা হচ্ছে”। চিঠির প্রথম অংশ পরেই আমার আম্মা অনেক ভয় পায়। ভাবছিল যে আমার কাছে মনে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্র-টস্র পাইছে। পুরা চিঠি পরার পর বুঝতে পারল যে আমার কাছে অবৈধ চকলেট পাওয়া গেছে। হে হে।

আসল ঘটনা হইল, প্যারেন্টস ডে এর পর আমার এক মামাত ভাইকে বলছিলাম দেয়ালের বাইরে থেকে আমাকে চকলেট ঢিল দিয়ে দেয়ার জন্য। কথামত আমার সেই ভাই প্যারেন্টস ডে শেষে আমাকে চকলেট ঢিল দেয়। “পরবি পর মালির ঘাড়ে, সে ছিল গাছের আরে”। ধরা খাই ইসলামিয়াতের আনিস স্যারের কাছে। স্যার তখন মাত্র জয়েন করছে আমাদের কলেজে। বয়স মাত্র ২৮-৩০। আমার মনে হয় স্যার আমাকে ধরে অনেক আনন্দিত হয়েছিল। ক্রিকেটে ক্যাচ ধরার পর খেলোয়াররা যেইরকম আনন্দ করে ঠিক সেইরকম আনন্দিত হয়েছিল স্যার। স্যার পরে ক্লাসে সবসময় বলত ” বয়েজ বাহলুলকে আমার ইডি দেয়ার কোন ইচ্ছা ছিলনা, কিন্তু my hands are tied”। সেই ইডি ছিল আমার জীবনের খাওয়া প্রথম ইডি এবং স্যারের জীবনে দেয়া প্রথম ইডি।

আনিস স্যার আসলে আমদের অনেক স্নেহ করত। বিশেষ করে আমাকে অনেক স্নেহ করত। স্যারের সাথে ক্যাডেট কলেজ পাস করার পর দেখা হয় আই, ইউ, টির সামনের প্রিন্স রেস্টুরেন্টে। আমি তখন ৪র্থ ইয়ারে পরি আই,ইউ,টি তে। স্যার বিসিএস দিয়ে সরকারি কলেজে জনেয় করে। কলেজের কাজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল। আমকে প্রথম দেখাতেই স্যার চিনতে পারে আর সবার সামনে চিল্লাইয়া বলে ” আমার বাহলুল”। অনেকে ছিল রেস্টুরেন্টে, তাই লজ্জা পেয়েছিলাম।

বছর ২/১ আগে শুনলাম স্যার হার্ট এটাকে মারা গেছে। ইন্না লিল্লাহ ……। অনেক কষ্ট পাই শুনার পর। বয়স ছিল ৪০ এর নিচে। স্যারের আত্তার মাগফিরাত কামনা করি।

৬,১৬৪ বার দেখা হয়েছে

৬৩ টি মন্তব্য : “আমার প্রথম ই,ডি,”

  1. জিহাদ (৯৯-০৫)

    কন্কি!! আপনাদের কেউ ছয়টা সাতটার বেশি ইডি খাইতোনা? !!

    আমাদের ব্যাচে হায়েস্ট ইডিখোর মনে হয় আসিফ আর হোসেন। ৪০+ এর মত। আমি সবচে কম খাওয়াদের একজন। মাত্র পাঁচটা। 🙁

    ভাইয়া আপনে আই ইউ টি তে ছিলেন জানা ছিলনা। কোন ব্যাচ, কোন ডিপার্টমেন্ট?


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  2. কনক রায়হান (৯৮-০৪)

    আমি ২ টা ইডি খাইসি,কিন্তু দুইনাম্বারটা যেদিন খাবো সেইদিনই appointment পেয়েছিলাম তাই ওইটা রেস্ট্রিশনে কনভার্ট হয়ে গেছিলো। আমাদের ব্যাচ এর হাইয়েস্ট মনে হয় ১১০ তা ইডি।

    জবাব দিন
  3. আশিক (১৯৯৬-২০০২)

    চিঠির প্রথমেই যা লিখা ছিল তা ছিল অনেকটা এইরকম- “আপনার ছেলের কাছে অবৈধ জিনিস পাওয়া গেছে। আপনার ছেলেকে শেষবারের মত সতর্ক করা হচ্ছে”। চিঠির প্রথম অংশ পরেই আমার আম্মা অনেক ভয় পায়। ভাবছিল যে আমার কাছে মনে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষ অস্র-টস্র পাইছে। পুরা চিঠি পরার পর বুঝতে পারল যে আমার কাছে অবৈধ চকলেট পাওয়া গেছে। হে হে।

    =)) হেভি মজা পাইলাম! =))

    ক্যাডেট কলেজ ব্লগের অনেক ক্যাডেটই দেখি আইইউটির! 😮

    জবাব দিন
  4. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    স্যারের কথা শুইনা আমাদের ফর্ম মাস্টার মনসুর স্যারের কথা মনে পড়ল।লোকটা নেহায়েতই সাদাসিদা লোক কিন্তু জুনিয়র ক্লাশের কাছে ত্রাস।তো একদিন তিনি আমাদের ফর্ম ক্লাশে এসে বোর্ডে লিখলেন DED.তো আমরা কিছু বলার আগেই তিনি বললেন,তোমাদের এখানে পানিশমেন্টের নাম কি?আমরা বুঝতে পারছিলাম না কী বলছেন?তিনি নিজে থেকেই বললেন,ইডি।তো আমি তার আগে একটা ডি যোগ করে দিছি।ডাবল এক্সট্রা ড্রিল।আমি কিন্তু দুইটা ছাড়া ইডি দেই না।আমার কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খাইলেই একটু খোজ নিতেই সব পরিষ্কার হয়ে গেল।স্যার সেদিন প্রথম কাউকে ইডি দিছেন এবং সেটা দুইটা।
    আবার ম্যাথ মান্নান স্যারের কথা মনে পড়ে ।তিনি আমাদের ক্লাশে এসে নানা ধরণের গল্প করতেন।তো একদিন বললেন ফৌজদারহাটের এক কলেজ প্রিফেক্ট কে একবার আমি একটা চড় দিছিলাম । আমি যতদিন ছিলাম সে আমাকে দেখে মাথা নিচু করে চলত।আমরা কিছুটা অবাকই হলাম খোজ নিতে জানা গেল,তিনি ক্লাশ সেভেনে এক ছেলেকে চড় দেন ।এবং সেই ছেলে পরে কলেজ প্রিফেক্ট হয়।উল্লেখ্য ঐ ছেলে এইটে ওঠার আগেই তিনি ঐ কলেজ থেকে বদলি হয়ে গেছিলেন।

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    আমাদের এক ক্লাসমেট(অন্য কলেজ) একবার পেয়ারা বাগানে পেয়ারা চুরি করতে গিয়া ধরা খাইলো।হাউস নোটিশ বর্ডে কারণ হিসেবে উল্লেখ ছিলঃ"নিষিদ্ধ এলাকায় গমনের কারণে ইডি"।
    ওর বাসায় এই কারণ জানার পরে মরাকান্না শুরু হইলোঃ"হায় হায় এমন নামকরা বংশের ছেলে আজকাল নিষিদ্ধ এলাকায় যায়,তাও এত অল্প বয়েসে...পোলাডারে ক্যাডেটে দিয়াই এই অবনতি,আগেরকালের মত ছোটবেলাতেই বিয়া দিয়া দিলে এই সর্বনাশ হইত না..."

    এই "নিষিদ্ধ এলাকা" যে সেই "নিষিদ্ধ এলাকা" না সেইটা বুঝাইতে আমার সেই বন্ধুকে গলদ্ঘর্ম হতে হয়েছিল। :))

    জবাব দিন
  6. জিহাদ (৯৯-০৫)

    ক্যাডেট কলেজের ইডি নোটিশ জিনিসটা আসলেই পুরা ক্লাসিক জিনিস। এমন সব কিম্ভুতকিমাকার রিজন যে ছিল। আমার দুইটা ইডির কারণ হিসেবে ছিল মনোগ্রামে টিপ বোতাম ছিলনা। :grr:


    সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

    জবাব দিন
  7. আমার ইনটেক এ প্রথম ই.ডি খাওয়া ৩ জনের মাঝে আমি একজন।
    beating case এ প্যারেন্টস কল না হয়ে ই.ডি. হয়েছিল।

    ccr এ ই.ডি. শব্দটা museum এ চলে গেছে, নয়তো কি যে ছিল কপাল এ।

    বাহলুল ভাইয়াও ই.ডি. খেয়েছেন ??????? অবাক হলাম খুব.........cause আমি না হয় কালার্ড ছিলাম but apni keno?????????????

    জবাব দিন
  8. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    আমাগো কলেজে তো গেমস টাইমে ই ডি'র মহোৎসব লাইগা থাকতো।
    সিনিয়রগো লাইগা ইসপিশ্যাল শেল ই ডি তো আছিলোই।
    একবার ই ডি'র সময় এতো পোলাপইন ফলইন দিছে যে শেষ-মেষ এডজুট্যান্ট দেখলো 15 টা শেল শেষ হবার পরও দুইজন বাকি।
    ওগোরে পাশেই পইড়া থাকা মাত্রই কাইটা আনা দুইটা বিশ ফুটি সুপারি গাছ ধরায়া দিলো, ঐটা ঘাড়ে নিয়াই দৌড়াদৌড়ি উঠ বস সবকিছু।
    খবর হয়া গেছিলোরে ভাই 😕


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
    • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

      আমাগো শেল ছিলনা।শেল আর লগ খাইছি বিএমে তে।আল্লাহ আমারে সাইজটা দিছে ৬ ফুটের উপরে(বুদ্ধি কম দেওনের কমতি পোষায় দিতেই মুনে হয়)।স্টাফ এই কারনে মনে করত শেলে আমার কিছু হয়না(ভুল কথা...... :(( )।তাই আমারে লগ ধরায় দিত।আরো দুষ্কের কথা, লগ ধরার কথা দুই ক্যাডেটের কিন্তু উনার ধারনা ছিল আমার আসলে ২ জন, খোদা অজানা কারণে একটা কইরা পাঠাইছে।ইয়া বড় লগ আমার কান্ধে একা নিয়া দৌড়াইতে হইত...আগে কি কষ্টে দিন কাটাইতাম... 🙁 কিন্তু সেই দিঙ্গুলা মনে পড়লে এখনো মজা লাগে... 😀

      জবাব দিন
  9. আমাদের ক্যাডেট্রা ED খাইতে কখনও লজ্জাবোধ হতে দেখি নাই।কিন্ত ১টা কারনে ED খাইলে লজ্জাবোধ হত।
    কারনটা ছিল......"বগল অপরিষ্কার ছিল"
    আমাদের মির্জাপুরে এই ED টা মাঝে মাঝেই দিত।

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আশিক (১৯৯৬-২০০২)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।