ভদ্রলোকের নাম নাথ বাবু।সম্পূর্ণ নাম কি ছিল আজ আর মনে নেই।১৯৮৭~৮৮’র দিকে চট্টগ্রামে কৃষি ব্যাংক এর ডি জি এম ছিলেন। তুখোড় অংকবিশারদ। সেই সুবাদে অনুরোধে আমাদের ভাগিনা ‘রনি’ কে অংকে সাহায্য করার জন্যে শেলি আপা’র বাসায় যাতায়াত ছিল।
এই পর্বে এসে সংশ্লিষ্ট সকলের সঠিক নাম-পরিচয় উল্লেখ করবো মনস্থ করেছি, না হয় আবার কেউ আমাকে “কল্প কাহিনীকার” ভেবে বসতে পারেন।সঠিক নাম-পরিচয়ের সুবিধা হোলো, হয়তো কারো পরিচিত গণ্ডির মধ্যেই পরে গেলে, এতে করে ঘটনার ‘বস্তু নিষ্ঠতা’ যাচাই করেও দেখতে পারবেন।
হোটেল আগ্রাবাদের মালিকদের একজন নবাব আলি ভাইয়ের বাসায় দুপুরে খাবার নেমন্তন্য।নাথ বাবুর সাথে খাবার টেবিলেই পরিচয়। শেলী আপা হাস্যচ্ছলে নাথ বাবুকে দেখিয়ে বললেন ‘আজিজ, দাদার কাছ থেকে ভূত ভবিশ্যত সব জেনে নাও! উনি বলে দিতে পারেন!!
যদিও বিষয়টা অত্যন্ত চমকপ্রদ, কিন্তু ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার কারনে কখনো কাওকে ভবিশ্যত বলার জন্যে অনুরোধ করিনি, যদি এমনিতে নিজে থেকে বলেও, সেটা বিশ্বাস করিনি। কারন কোরআন হাদিসে ভবিশ্যত জানা,মানা’র উপর স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে।
“Those people who go to soothsayers ( those people who talk about unseen your future)or check horoscopes ….
Should fear for their Emaan”
“He who goes to one who claims to tell about matters of the Unseen and believes in him, his Salat (prayers) will not be accepted for forty days.”
[Muslim হাদিসে বর্ণীত].
All such things are unlawful because Allah Alone knows the invisible world.
কিন্তু ভদ্রলোক আমাকে বেশ আগ্রহ নিয়েই বলতে শুরু করলেন। ভবিশ্যত তো যাহোক একটা বানিয়ে বলে দেয়া যায়, সেজন্যে অতীত বর্ণনা দিয়ে শুরু করলেন।
অনেক কথা ইনি হুবাহু বলে গেলেন। বিশেষ করে প্রাক বৈবাহিক নারী সম্পর্কে বেশ ভালই বললেন। আমি এটা আপা-ভাগিনার যোগ সাজশে নাথ বাবুকে দিয়ে আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা ধরে নিলাম।
কিন্তু তিনি এক পর্যায়ে এমন সমস্ত তথ্য দেয়া শুরু করলেন, যা আমি ছাড়া অন্য কারো জানা অসম্ভব।হাতের ইশারায় থামতে বলায় তিনি আমাকে বর্তমানের যে কোন বিষয়ে প্রস্ন করতে বললেন।
সকলের অজানা এমন কোন কঠিন প্রশ্ন করতে হবে। অনেক ভেবে আজই ব্যাংকে কত টাকা জমা দিয়েছি, সেটা জানতে চাইলাম। ঠিক হোল এমাউন্টটা ‘ও’ জানানোর পরে, আমার ব্রিফ কেইসে রক্ষিত জমা রশিদ থেকে সকলকে নিয়ে মিলিয়ে দেখা হবে।
মধুর একটি হাসি দিয়ে চ্যালেঞ্জটা গ্রহন করলেন তিনি। রনিকে ডেকে সাদা একটি খাতার কাগজ আনিয়ে আমাকে বললেন, শুন্য থেকে যে কোন ২০,২৫,৫০ টি সংখ্যা লিখে দিন, কোন এক ফাকে আপনার জমা দেয়া টাকার সংখ্যা টাও লিখে দিবেন।তাই করলাম।
সংখ্যা গুলির উপর বার বার আঙ্গুল বুলিয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যায় এসে আঙ্গুল থেমে গেল। তিন বার ঠিক ঐ সংখ্যায় থেমে আমাকে নির্দেশ করলেন, “এটা” !!
একদম সঠিক।
এর পর অনেক ভবিষ্যতের কথা বলতে লাগলেন।আমার যেহেতু ভবিষ্যতের অজানা কাহিনী নিয়ে আগ্রহ ছিলনা,এনিয়ে আর ঘাঁটাই নি।অনেকগুলি সম্পূর্ণ সঠিক হয়েছে আবার কোনটার কিছু কিছু।
কিন্তু আমার মূল আগ্রহ ছিল অন্য জায়গায়। তাই ওর প্রতি ঘুরে ফিরে প্রশ্ন ছিল ” আপনি ‘এসব’ কিভাবে বলেন?”
সরা সরি উত্তর না দিয়ে আমাকে উনি ভাগনের পড়ার ঘড়ে নিয়ে দরজা বন্ধ করলেন। একটু মনে মনে ভয়ই পেলাম, না জানি কি হবে।
তেমন কিছুই না।উনি পড়ার টেবিলে দুইটা মোম একদম গায়ে গায়ে বসিয়ে জ্বালালেন।রুমের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে এক দৃষ্টিতে জলন্ত মোমের আলোর দিকে বড় বড় চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সুইচ আন করলেন।কিছুই হল না। ভূত,প্রেত,অশরীরী কারো কোন আগমন-নির্গমন দেখলাম না।
ভদ্রলোককে প্রশ্ন করায়, নিভিয়ে ফেলা পাশাপাশি রাখা মোমবাতি দুইটার দীকে ইশারা করে দেখালেন।আগাগোঁড়া চিনা বাদামের মত জোড়া লেগে গেছে।
বললেন, ‘পাশাপাশি এভাবে মোম জ্বালিয়ে চেষ্টা করে দেখেনতো আগাগোড়া এরকম জোড়া লাগে কিনা? এটাই হোলো “শক্তি” !! সাধনে মিলে’ !
এর পর আর মাত্র একদিন দেখা হয়েছে ভদ্রলোকের সাথে। এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুর পিরা পিরিতে ওকে দেখা করাতে নিয়ে গিয়েছিলাম। অনেকক্ষণ বসে থেকে যখন উঠবো, ঠিক তখন ধুলি ধূসরিত নাথ বাবু ঢুকলেন।টায়ার্ড। ব্যাংকের ইন্সপেকশনে সিতাকুন্ড গিয়েছিলেন।তবু বন্ধুর রিকোয়েস্টে ওর হাতের রেখাগুলি আলগোছে একবার দেখে বল্লেনঃ আশির দশকের প্রথমার্ধে যদি কোন পরীক্ষা দিয়ে থাকেন, তবে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছেন!
আমি আর আমার বন্ধুটি আক্ষরিক অর্থেই হা করে তাকিয়ে রইলাম। বন্ধুটির নাম খালেদ হাসান খসরু। ১৯৮২ সালের চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে ও অনার্সে “ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়েছে”!
জানিনা ভদ্রলোক এখনো বেঁচে আছেন কিনা। ঢাকায় সেটেল করেছে শুনেছি। আর দেখা হয়নি, করতেও চাইনি অবশ্য। ওর আর আমার রাস্তা কোনদিনই এক জায়গায় মিলবে না।
শুধু একটি জায়গা ছাড়া ! কি সেই “শক্তি” এবং সেই “শক্তির” উৎসই বা কি, তা জানার আমার ঐকান্তিক আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসা!
পুনশ্চঃ রাশিয়ার এক ছোট্ট বালিকার চোখের শক্তি দিয়ে গ্লাশ ভাঙ্গা, লোহা বাঁকানোর কথা পড়েছিলাম। ওকে পরিক্ষার জন্যে নাকি নিয়ে যাওয়া হয়েছিল “লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি অফ সাইনটিস্ট” দের কাছে।তারা পরিক্ষার জন্যে বিশেষ কক্ষে নিয়ে এক খণ্ড মেটাল দিয়ে বাঁকা করতে বললেন চোখের শক্তি দিয়ে।
বেচারি অনেক চেষ্টা করেও পারলেন না। হতাশ হয়ে সব বিজ্ঞানি ফিরে চললেন। কিন্তু কারো গাড়ির চাবিই গাড়িতে ফিট হল না। কারন মেয়েটাকে লোহার পাতের পরিবর্তে ‘টাইটানিয়ামের’ খণ্ড দেয়াতে বাঁকাতে পারছিলনা যদিও, কিন্তু বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকের পকেটের গাড়ির চাবিতো লোহারই ছিল, সব বেঁকে বসে আছে!
কি সেই শক্তি?
আপনার এই সিরিজ টা পড়ে খুব মজা পাচ্ছি । আরও আছে নাকি ভাই?
গা ছম ছমে কিছু ঘটনা আছে, লিখবো????
Smile n live, help let others do!
হুম ভাই লিখুন তাড়াতাড়ি । পর্বে পর্বে লিখবেন । আপনার এই সিরিজ টা অনেক জমজমাট হবে আসা করি । 🙂
স্যার,
অপেক্ষায় আছি।
স্যার,
অপেক্ষায় আছি।
সবুরে মেওয়া ফলে। 😀
Smile n live, help let others do!
স্যার,
এতো অল্প মেওয়ায় পেট ভরেনা 😕
ভাই,
রুজি রোজগার, পরিবার-সন্তান, ক্লাব এক্তিভিটিজ- সামাজিকতা সব করার পর, যে টুকু সময় পাই, লিখতে চেষ্টা করি। আশা করি বুঝতে পারবেন।
Smile n live, help let others do!
লিখুন ভাই, আগ্রহ নিয়ে পড়ছি আপনার লেখাগুলি।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা প্রায় শেষ। দেখি অথেনটিক নিকট জনের কোন ঘটনা ধার পাই কিনা!
Smile n live, help let others do!
আসলেই আজিজুল ভাই! ভাল লাগছে...।।
Islam, CCR (1996-2002)
আমি যদি ঘটনা গুলির ডিটেইলে যেতাম, তাহলে একেকটা ৫/১০ পর্ব হয়ে যেত। কিন্তু আলসে মানুষ 😛 টাইপ করতে চাইনা, ...তাই যতটুকু পারি সংক্ষিপ্ত করে ফেলি, মূল বক্তব্য ঠিক রেখে।
Smile n live, help let others do!
ইন্টারেস্টিং ব্যাপার সেপার।
আপনার স্টক তো প্রচুর আজিজ ভাই।
পরের পর্বের অপেক্ষায়...
হুমাউন আহমেদের মত একটা বই নামিয়ে ফেলবো নাকি হে?
অথবা নুরা পাগলা সারের মত?
ইস যদি একটা বাংলা জানা "সুন্দরী স্টেনো" থাক তো,...। 😡
Smile n live, help let others do!
:clap: :clap: :clap: :clap:
খেয়া (২০০৬-২০১১)
ধন্যবাদ খেয়া। ভাল থেকো !
Smile n live, help let others do!
আজিজ ভাই, আমি তখন ক্লাস ফোর বা ফাইভে পড়ি। আমাদের বাসায় ভাড়া থাকতো এক ফ্যামিলি। তাদের আয়ুর্বেদের ব্যবসা ছিল। তারা দোকানের পাশাপাশি বিভিন্ন বাজারে যেয়ে যেয়ে আসর জমিয়ে তাদের ঔষধ বিক্রি করতো। স্বাভাবিকভাবেই এইজন্য একটা দল প্রয়োজন ছিল। তো দলে গায়িকা, বাদক, যাদুকর অনেক কিছুই ছিল। 😀
একটা ছেলে ছিল, বয়স ১৫-১৬ হবে, সে এলুমিনিয়ামের গামলাতেই খুব চমৎকার ঢোল বাজাতে পারতো। সে আবার টুক-টাক যাদুও জানতো। তো একদিন তার যাদু দেখবো এবং সে কোন ট্রিক্সের আশ্রয় নিচ্ছে কিনা দেখার জন্য মুখোমুখি বসলাম। যখন জাদু দেখানোর সময় আসল, তখন আমাকে বলল, যে বিসমিল্লাহ না বলে ধরো। আমারও তখন মনে ছিল না বিসমিল্লাহ বলার। আমি আচ্ছা ঠিক আছে বলে ধরলাম এবং জাদুটা দেখলাম। জাদুটা শেষে আমি জিজ্ঞেস করলাম বিসমিল্লাহ বলে ধরলে কি জাদুটা হতো না? সে উত্তর দিল যে, না, বিসমিল্লাহ বলে ধরলে জাদুর প্রভাব নষ্ট হয়ে যায়।
সূরা বাকারার ১০২ নম্বর আয়াতে জাদু বিদ্যার কথা উল্লেখ আছে। এই বিদ্যা পারদর্শিতার/ প্রয়োগের কারনে তাদের "পরকাল" বলে কিছুই থাকবেনা!
ধর্মীয় মূল্যবোধের সাথে এ বিদ্যা সম্পূর্ণ বিপরীত ধর্মী !
"But the Children of Israel certainly knew that whoever purchased the magic would not have in the Hereafter any share. And wretched is that for which they sold themselves, if they only knew". Al- Qur'an 2:102
Smile n live, help let others do!
খুব ভাল লাগল পরে ভাই। পরের লেখার জন্য অপেক্ষায় রইলাম।
"মরনের বীথিকায় জীবনের উচ্ছ্বাস,
জীবনের যাতনায় মৃত্যুর মাধুরী"
ধন্যবাদ ! চার নম্বর ইপিসোড প্রকাশ করলাম, কষ্ট করে পড়ে নিও।
Smile n live, help let others do!
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:dreamy:
Smile n live, help let others do!