ফিরে আসা-৪।

যারা ধ্যৈর্য ধরে আমার ‘ফিরে আসা’র শেষ দুই খণ্ড পড়েছেন, তাদের মধ্যে যদি মনবিজ্ঞানি থাকেন, নিশ্চয়ই Illusive Mental Disorder বা Imaginative, Hallucinatory Syndrome বা  Paranoid Behavior বা ইংরেজি কোন খট্-বটে নামে আমার পূর্ববর্তি অধ্যায় দুইটির মূল্যায়ন করবেন, যার সোজা বাংলায় কোন মানসিক বিকারগ্রস্তের কাছে পিঠে কিছু হবে।আমি সেই সব জ্ঞানি গুনিদের সাথে তর্কে যাবোনা , কারন পৃথিবীর সব কিছু নিয়ে তর্ক করা সম্ভব, শুধু “মা” কে ছাড়া। আমি মনে প্রানে বিশ্বাস করি সকলের ‘মা’ ই পৃথিবীতে সর্ব শ্রেষ্ঠ !

একজন হ্যাংলা-পাতলা, পাঁচ ফিটে চেয়েও ছোট একজন মানুষের ক্ষমতা, প্রভাব কত হতে পারে ‘হিটলার’ সেটা দেখিয়ে গেছে হিংস্রতা দিয়ে।আর মা ‘র “ভালবাসার” প্রভাব সম্ভবত কৃষ্ণ বিবরের মত শুষে নেয় সব কিছু, মানুষতো কোন ছাড়, বিলীন হয়ে  যায় গ্রহ নক্ষত্র সব।মারাফতের ভাষায় যাকে ” ফানা ফিল্লাহ ” স্তর বলা হয়।

“বাবা ‘সিকেরেট’ আর খাইশ না। কেমনে কাশতেছস্ !” তোর আব্বাও অনেক আগে খাইতো, আল্লায় ছারাইসে ! কথা গুলিকে হাল্কা করার নিমিত্তেই প্রতি বারই হেসে বলেছি ” আম্মা ‘সিকেরেট’ নয়, জিনিশটার নাম “সিগারেট” !  আর এটাতো খায়ও না, ধুঁয়া, ছেড়েই দেয়”।কিছু বলতেন না আর।শুধু হাসতেন। দাঁত গুলি যখন খুলে রাখতেন, সেই ফোকলা গালের হাসি! কি ছিল ওঁর মধ্যে? আঠার-বিশ বছর ডাইবেটিস এ তিন বেলা ইন্সুলিন ইঞ্জেকশান নিয়ে চর্মসার ছোট খাট একজন মানুষ। যার জগত ছিল নামাজ-দোয়া,সন্তানের জন্য ভাবনা, গরিব-দুঃখী, জাকাত-ফেতরা এইতো!

সব আছে, শুধু এই ছোট্ট মানুষটি নেই, তাই চারিদিকে এত শুন্য লাগে কেন?

আরেকটা আবদার করতেন সব সময়, শুধু ‘মাগ্রেবের’ নামাজ না, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজটা ধরার জন্যে। ক্যাডেট কলেজের অভ্যাস থেকে মাগরিবটাই বেশি পড়া হত। বেপারগুলি নিয়ে সিরিয়াসলি কখনো ভেবেও দেখেনি কোনদিন।এক্ষণ ভাবছি। প্রতিটা ছোট ছোট কথা, অনুরোধ আবদার মনে পরে যাচ্ছে। আহারে কতো কথাইতো তখন শুনিনি, অথবা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। কেন করেছি? একটি বার যদি আবার সময়কে রিওয়াইন্ড করা সম্ভব হতো ! তাইতো ওঁর সব সময়ের প্রিয় ডাইলগ ছিল ” দাঁত থাকতে তোরা দাঁতের মর্ম বুঝবিনা “। এখন হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি, কি বুঝাতে চেয়েছেন।

মার জিব্দশায় যে অভ্যাস গুলি ত্যাগ করা সম্ভব হয়নি, দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে, সে সব অবলীলায় ত্যাগ করতে কই এখন কোন কষ্টইতো হয়নি।

আজ তুমি নেই, মা দেখ, তোমার ছেলে আজ এগার বছর ধরে “সিকেরেট” খায় না, তুমি যা যা চাইতে, সব একাগ্র চিত্তে মনোযোগের সাথে করে যাচ্ছে তুমি যেদিন থেকে দেখার জন্যে নাই, সে দিন থেকে। তোমার অনুরোধ আব্দারের সেই পথে সে “ফিরে এসেছে “!

 

পুনশ্চ ঃ সহি হাদিসের বর্ণনায়  প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সম্মানের স্থান রাসুলুল্লাহ (সঃআঃ) যথাক্রমে “মা” কেই দিয়েছেন, পিতার স্থান চতুর্থে।

 

৮০১ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “ফিরে আসা-৪।”

  1. সামিয়া (৯৯-০৫)

    এই লেখাটা যতবার পড়েছি, এত খারাপ লেগেছে...
    আপনার ফিরে আসা সিরিজের লেখাগুলো খুবই কষ্টের আর মন খারাপের। প্রথমদিনই পড়ে ফেলেছিলাম, কমেন্ট করতে পারিনি। আজকে এসে করলাম। আমার ধারণা সবারই একই অবস্থা। (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    সামিয়ার সাথে সহমত। ফিরে ফিরে এই লেখাটা পড়েছি, কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনি কিছু।
    ৪র্থ পর্বে এসে ফিরে আসা থেমে গেলো, এই পর্বটির জন্যেই আগের পর্বগুলোর অবতারণা - তাও কোন শব্দ, বাক্য যোগাচ্ছিলোনা মন।
    আজিজ ভাই, এই পর্বে থামিয়ে না দিয়ে ফিরে আসা-কে আবারো ফিরিয়ে আনুন।
    আপনার জীবনকে দেখার স্টাইল অনেক আলাদা, জীবন আপনাকে যে জীবনদর্শন দিয়েছে তা আমাদের সাথে ভাগে করে নিন।

    জবাব দিন
    • আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

      নুপুর, যখন আর আমি থাকবোনা, তখন আমার জীবনের এই টুকরো টুকরো ঘটনাগুলি সময়ের ক্রমে সাজিয়ে নিও। হয়তো মোটামুটি একটা ছবি দাড় করাতে পারবে! ( অবশ্য অবাধ্য যৌবন কাল বাদ দিয়ে 😡 )
      দেখি আর একটা 'ফিরে আসা' দাড় করানো যায় কিনা তোমার অনুরোধে!


      Smile n live, help let others do!

      জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : আজিজুল (১৯৭২-১৯৭৮)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।